এনবিআর ও আইআরডি বিলুপ্ত করে নতুন দুটি বিভাগ গঠন: সরকারের আকস্মিক সিদ্ধান্তে রাজস্ব প্রশাসনে সঙ্কট, মাঠপর্যায়ে বিক্ষোভ ও বিভ্রান্তি

- Update Time : ১১:২১:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫
- / ১৯৭ Time View
গত সোমবার (১২ মে ২০২৫) রাতে বাংলাদেশ সরকার একটি গেজেটের মাধ্যমে আকস্মিকভাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্ত ঘোষণা করে। একইসঙ্গে ঘোষণা করা হয় দুটি নতুন সংস্থার— ‘রাজস্ব নীতি বিভাগ’ এবং ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ’। সরকার বলছে, এটি একটি কাঠামোগত সংস্কার এবং রাজস্ব প্রশাসনের আধুনিকায়নের অংশ। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এই সিদ্ধান্তকে নীতিগতভাবে প্রশ্নবিদ্ধ বলে মনে করছেন এবং এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে তারা কর্মসূচি পালন শুরু করেছেন।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: এনবিআরের ভূমিকায় সাত দশকের ঐতিহ্য
১৯৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এনবিআর দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের রাজস্ব আদায় ব্যবস্থার মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে আসছে। এটি শুধুমাত্র আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক সংগ্রহই নয়, নীতি প্রণয়ন, বাজেট প্রস্তুতি, ব্যবসাবান্ধব সংস্কারসহ অর্থনীতির নানামুখী কার্যক্রমে ভূমিকা রাখে। দেশের মোট অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয়ের প্রায় ৮৫% এনবিআর-এর মাধ্যমেই অর্জিত হয়।
অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (IRD) এনবিআরের ওপর একটি নীতিনির্ধারণী ও তদারক সংস্থা হিসেবে কাজ করত, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হতো। এই দুটি সংস্থার মধ্যে দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব নিয়ে মাঝেমধ্যেই দ্বন্দ্ব দেখা যেত, যা মাঠপর্যায়ে জটিলতা সৃষ্টি করত বলে অনেক সময় অভিযোগ ওঠে।
নতুন গঠিত দুটি বিভাগ: কাঠামো ও কার্যাবলি
সরকারের জারি করা অধ্যাদেশ অনুযায়ী:
- রাজস্ব নীতি বিভাগ (Revenue Policy Division):
এই বিভাগ সরাসরি রাজস্ব সম্পর্কিত নীতি প্রণয়ন, বাজেট ও কর কাঠামো নির্ধারণ, রাজস্ব পূর্বাভাস এবং রাজস্ব সংক্রান্ত গবেষণার কাজে নিয়োজিত থাকবে। এটি মূলত পরিকল্পনা, আইন সংশোধন, নীতিগত কৌশল এবং ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা ঠিক করবে। - রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ (Revenue Administration Division):
এটি মাঠপর্যায়ে রাজস্ব আদায়, করদাতা সেবা, যাচাই-বাছাই, অডিট, এনফোর্সমেন্ট, প্রশিক্ষণ এবং প্রযুক্তি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করবে। বর্তমানে যে কার্যক্রম এনবিআর পরিচালনা করত, তার অধিকাংশই এই বিভাগের অধীনে চলে যাবে।
সরকারের যুক্তি ও লক্ষ্য
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কর ব্যবস্থার দক্ষতা, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এই সংস্কার অপরিহার্য হয়ে উঠেছিল। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি অভ্যন্তরীণ নথিতে উল্লেখ রয়েছে, “রাজস্ব আদায়ে দীর্ঘদিনের অদক্ষতা, অনিয়ম ও অসংগতি দূর করতে কাঠামোগত পুনর্গঠন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।”
এছাড়াও সরকারের লক্ষ্য হলো ২০৩০ সালের মধ্যে রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত ১৫ শতাংশে উন্নীত করা। বর্তমানে এটি ৮.৫ শতাংশের আশেপাশে ঘোরাফেরা করছে, যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন।

কর্মকর্তাদের প্রতিক্রিয়া ও আন্দোলনের ধরন
সরকারি এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা অভিযোগ করছেন, এই সিদ্ধান্তটি নেয়া হয়েছে একতরফাভাবে, কর্মকর্তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা বা পূর্বাভাস ছাড়াই।
এনবিআরের দ্বিতীয় শ্রেণির এক কর্মকর্তা বলেন,
“আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে প্রথম এই সিদ্ধান্ত জানতে পারি। এটি একটি প্রশাসনিক অপমান। আমাদের ৩০-৪০ বছরের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, এবং অর্গানোগ্রাম একরাতে বিলুপ্ত করে দেওয়া হলো!”
বর্তমানে মাঠপর্যায়ে কর্মসূচি হিসেবে পালন করা হচ্ছে:
- কালো ব্যাজ ধারণ
- প্রতীকী অবস্থান কর্মসূচি
- বিক্ষোভ সভা
- কার্যক্রমের ধীরগতি
- কর অফিসগুলোতে ‘নীরব অসহযোগ’
বুধবার থেকে ঢাকাসহ বড় শহরের কর অঞ্চলে স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে, ফলে করদাতাদের ভোগান্তি বাড়ছে।
অর্থনীতিবিদদের বিশ্লেষণ
অর্থনীতিবিদ ও রাজস্ব বিশ্লেষকদের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
ড. সৈয়দ আলী রেজা, সাবেক এনবিআর সদস্য ও বর্তমান ট্যাক্স পলিসি বিশ্লেষক বলেন,
“বিষয়টি নীতিগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হলেও বাস্তবায়নের পদ্ধতি ছিল দুর্বল। এনবিআরের মতো একটি সুপ্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত করা হলে একটি ‘ট্রানজিশন প্ল্যান’ প্রয়োজন ছিল। এখানে হঠাৎ গেজেট প্রকাশ করে প্রশাসনিক অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।”
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)-এর এক গবেষক জানান, এনবিআরের বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধানে প্রয়োজন ছিল অর্গানাইজেশনাল অডিট, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও প্রযুক্তিনির্ভর সংস্কার। কিন্তু সম্পূর্ণ নতুন কাঠামো তৈরি করলে প্রাথমিকভাবে রাজস্ব আদায়ে ধাক্কা লাগতে পারে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তাদের মতে, সরকার প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ স্তরে নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতেই এনবিআর বিলুপ্ত করে দুইটি সরকার-নিয়ন্ত্রিত বিভাগ গঠন করেছে। কেউ কেউ এটিকে আগামী বাজেট বাস্তবায়নের আগে ‘গভর্নেন্স কৌশল’ বলেও ব্যাখ্যা করছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলাম লেখক মাহফুজ পারভেজ বলেন,
“এই সিদ্ধান্ত আগামী জাতীয় বাজেট এবং সরকারের আর্থিক প্রস্তাবনায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। কর্মকর্তাদের বিরোধিতা ও অচলাবস্থা সামনে রাজনৈতিক বিরোধেও রূপ নিতে পারে।”
সরকারের এই প্রশাসনিক সংস্কার সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে একটি বড় পদক্ষেপ। তবে কোনো ধরনের রূপান্তর তখনই সফল হয় যখন সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শ করে পরিকল্পিতভাবে তা বাস্তবায়ন করা হয়। এনবিআর ও আইআরডি বিলুপ্ত করে নতুন দুটি বিভাগের গঠনের ফলে এখন রাজস্ব প্রশাসনে একধরনের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।
সরকারের উচিত হবে, দ্রুত একটি অন্তর্বর্তীকালীন ট্রানজিশন কমিটি গঠন করে, মাঠপর্যায়ে কর্মকর্তাদের উদ্বেগ প্রশমন করা এবং একটি সময়োপযোগী রূপান্তর পরিকল্পনা প্রকাশ করা। অন্যথায়, রাজস্ব আদায়ে ভাটা পড়া ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে বিশৃঙ্খলা আগামী বাজেট বাস্তবায়নসহ সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
©billal Hossain
বিল্লাল হোসেন
কলামিস্ট ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক | Notun Protidin | Bidibo News
Please Share This Post in Your Social Media

এনবিআর ও আইআরডি বিলুপ্ত করে নতুন দুটি বিভাগ গঠন: সরকারের আকস্মিক সিদ্ধান্তে রাজস্ব প্রশাসনে সঙ্কট, মাঠপর্যায়ে বিক্ষোভ ও বিভ্রান্তি

গত সোমবার (১২ মে ২০২৫) রাতে বাংলাদেশ সরকার একটি গেজেটের মাধ্যমে আকস্মিকভাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্ত ঘোষণা করে। একইসঙ্গে ঘোষণা করা হয় দুটি নতুন সংস্থার— ‘রাজস্ব নীতি বিভাগ’ এবং ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ’। সরকার বলছে, এটি একটি কাঠামোগত সংস্কার এবং রাজস্ব প্রশাসনের আধুনিকায়নের অংশ। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এই সিদ্ধান্তকে নীতিগতভাবে প্রশ্নবিদ্ধ বলে মনে করছেন এবং এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে তারা কর্মসূচি পালন শুরু করেছেন।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: এনবিআরের ভূমিকায় সাত দশকের ঐতিহ্য
১৯৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এনবিআর দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের রাজস্ব আদায় ব্যবস্থার মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে আসছে। এটি শুধুমাত্র আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক সংগ্রহই নয়, নীতি প্রণয়ন, বাজেট প্রস্তুতি, ব্যবসাবান্ধব সংস্কারসহ অর্থনীতির নানামুখী কার্যক্রমে ভূমিকা রাখে। দেশের মোট অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয়ের প্রায় ৮৫% এনবিআর-এর মাধ্যমেই অর্জিত হয়।
অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (IRD) এনবিআরের ওপর একটি নীতিনির্ধারণী ও তদারক সংস্থা হিসেবে কাজ করত, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হতো। এই দুটি সংস্থার মধ্যে দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব নিয়ে মাঝেমধ্যেই দ্বন্দ্ব দেখা যেত, যা মাঠপর্যায়ে জটিলতা সৃষ্টি করত বলে অনেক সময় অভিযোগ ওঠে।
নতুন গঠিত দুটি বিভাগ: কাঠামো ও কার্যাবলি
সরকারের জারি করা অধ্যাদেশ অনুযায়ী:
- রাজস্ব নীতি বিভাগ (Revenue Policy Division):
এই বিভাগ সরাসরি রাজস্ব সম্পর্কিত নীতি প্রণয়ন, বাজেট ও কর কাঠামো নির্ধারণ, রাজস্ব পূর্বাভাস এবং রাজস্ব সংক্রান্ত গবেষণার কাজে নিয়োজিত থাকবে। এটি মূলত পরিকল্পনা, আইন সংশোধন, নীতিগত কৌশল এবং ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা ঠিক করবে। - রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ (Revenue Administration Division):
এটি মাঠপর্যায়ে রাজস্ব আদায়, করদাতা সেবা, যাচাই-বাছাই, অডিট, এনফোর্সমেন্ট, প্রশিক্ষণ এবং প্রযুক্তি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করবে। বর্তমানে যে কার্যক্রম এনবিআর পরিচালনা করত, তার অধিকাংশই এই বিভাগের অধীনে চলে যাবে।
সরকারের যুক্তি ও লক্ষ্য
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কর ব্যবস্থার দক্ষতা, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এই সংস্কার অপরিহার্য হয়ে উঠেছিল। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি অভ্যন্তরীণ নথিতে উল্লেখ রয়েছে, “রাজস্ব আদায়ে দীর্ঘদিনের অদক্ষতা, অনিয়ম ও অসংগতি দূর করতে কাঠামোগত পুনর্গঠন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।”
এছাড়াও সরকারের লক্ষ্য হলো ২০৩০ সালের মধ্যে রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত ১৫ শতাংশে উন্নীত করা। বর্তমানে এটি ৮.৫ শতাংশের আশেপাশে ঘোরাফেরা করছে, যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন।

কর্মকর্তাদের প্রতিক্রিয়া ও আন্দোলনের ধরন
সরকারি এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা অভিযোগ করছেন, এই সিদ্ধান্তটি নেয়া হয়েছে একতরফাভাবে, কর্মকর্তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা বা পূর্বাভাস ছাড়াই।
এনবিআরের দ্বিতীয় শ্রেণির এক কর্মকর্তা বলেন,
“আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে প্রথম এই সিদ্ধান্ত জানতে পারি। এটি একটি প্রশাসনিক অপমান। আমাদের ৩০-৪০ বছরের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, এবং অর্গানোগ্রাম একরাতে বিলুপ্ত করে দেওয়া হলো!”
বর্তমানে মাঠপর্যায়ে কর্মসূচি হিসেবে পালন করা হচ্ছে:
- কালো ব্যাজ ধারণ
- প্রতীকী অবস্থান কর্মসূচি
- বিক্ষোভ সভা
- কার্যক্রমের ধীরগতি
- কর অফিসগুলোতে ‘নীরব অসহযোগ’
বুধবার থেকে ঢাকাসহ বড় শহরের কর অঞ্চলে স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে, ফলে করদাতাদের ভোগান্তি বাড়ছে।
অর্থনীতিবিদদের বিশ্লেষণ
অর্থনীতিবিদ ও রাজস্ব বিশ্লেষকদের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
ড. সৈয়দ আলী রেজা, সাবেক এনবিআর সদস্য ও বর্তমান ট্যাক্স পলিসি বিশ্লেষক বলেন,
“বিষয়টি নীতিগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হলেও বাস্তবায়নের পদ্ধতি ছিল দুর্বল। এনবিআরের মতো একটি সুপ্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত করা হলে একটি ‘ট্রানজিশন প্ল্যান’ প্রয়োজন ছিল। এখানে হঠাৎ গেজেট প্রকাশ করে প্রশাসনিক অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।”
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)-এর এক গবেষক জানান, এনবিআরের বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধানে প্রয়োজন ছিল অর্গানাইজেশনাল অডিট, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও প্রযুক্তিনির্ভর সংস্কার। কিন্তু সম্পূর্ণ নতুন কাঠামো তৈরি করলে প্রাথমিকভাবে রাজস্ব আদায়ে ধাক্কা লাগতে পারে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তাদের মতে, সরকার প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ স্তরে নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতেই এনবিআর বিলুপ্ত করে দুইটি সরকার-নিয়ন্ত্রিত বিভাগ গঠন করেছে। কেউ কেউ এটিকে আগামী বাজেট বাস্তবায়নের আগে ‘গভর্নেন্স কৌশল’ বলেও ব্যাখ্যা করছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলাম লেখক মাহফুজ পারভেজ বলেন,
“এই সিদ্ধান্ত আগামী জাতীয় বাজেট এবং সরকারের আর্থিক প্রস্তাবনায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। কর্মকর্তাদের বিরোধিতা ও অচলাবস্থা সামনে রাজনৈতিক বিরোধেও রূপ নিতে পারে।”
সরকারের এই প্রশাসনিক সংস্কার সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে একটি বড় পদক্ষেপ। তবে কোনো ধরনের রূপান্তর তখনই সফল হয় যখন সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শ করে পরিকল্পিতভাবে তা বাস্তবায়ন করা হয়। এনবিআর ও আইআরডি বিলুপ্ত করে নতুন দুটি বিভাগের গঠনের ফলে এখন রাজস্ব প্রশাসনে একধরনের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।
সরকারের উচিত হবে, দ্রুত একটি অন্তর্বর্তীকালীন ট্রানজিশন কমিটি গঠন করে, মাঠপর্যায়ে কর্মকর্তাদের উদ্বেগ প্রশমন করা এবং একটি সময়োপযোগী রূপান্তর পরিকল্পনা প্রকাশ করা। অন্যথায়, রাজস্ব আদায়ে ভাটা পড়া ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে বিশৃঙ্খলা আগামী বাজেট বাস্তবায়নসহ সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
©billal Hossain
বিল্লাল হোসেন
কলামিস্ট ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক | Notun Protidin | Bidibo News