ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ডিসি-এসপি রোডে ওয়ার্কশপে আগুন: এলাকাবাসীর ক্ষোভ, জেলা প্রশাসক ও এসপির কাছে অনিরাপদ স্থাপনা সরানোর অনুরোধ

- Update Time : ০২:৩০:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫
- / ১৪৪ Time View
– ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
আজ রবিবার দুপুর আনুমানিক ১টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের ডিসি-এসপি রোডের জাফর ম্যানশনের পূর্ব পাশে একটি সরু গলিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। গলিটির ভিতরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ইজিবাইক এবং অন্যান্য যানবাহনের রিচার্জ ও মেরামতের কাজ চলতো—সরজমিনে দেখা গেছে এমন একটি অবৈধ ওয়ার্কশপ থেকেই আগুনের সূত্রপাত ।
প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। তবে এরই মধ্যে ওয়ার্কশপটি সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে যায় এবং জাফর ম্যানসন নামের বাড়িটির পূর্ব পাশের অংশ পুরুপুরি পুড়ে যায়, দুইটি এসি ব্লাস্ট হয় এবং জানালার কাচ ফেটে ২ তলা এবং ৩ তলার ভিতরে আগুন প্রবেশ করে ফ্রিজ এবং আসবাবপত্র পুড়ে যায় এবং পুরু মহ্ললায় আতকংক ছড়িয়ে পড়ে, আশপাশের কয়েকটি বসতবাড়ির আংশিক ক্ষয়ক্ষতি হয়।সৌভাগ্যবশত, এতে কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।
জানা যায় যে,কিছুদিন আগে ও শাহিন ভিলা এবং মাশাল্লাহ ভবনের মাঝখানে কাঠের ফার্নিচারের কারখানায় রাত ৩ টা বাজে আগুন লাগে এবং ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিভায়, অনেকেই এখন নিজ নিজ বাড়ির নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত।
বিতর্কিত ওয়ার্কশপ, উপেক্ষিত আপত্তি
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, এই ওয়ার্কশপটি শুরু থেকেই বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। জাফর ম্যানশনের মালিক জনাব জাফর আহমেদ মৌখিকভাবে বারবার আপত্তি জানিয়েছিলেন এই স্থানে ওয়ার্কশপ স্থাপনের বিরুদ্ধে। তিনি স্থানীয় সবাইকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন বলে দাবি করেন। তবে ওয়ার্কশপ মালিক মোঃ শামীম এবং জমির মালিক সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় সমস্ত আপত্তি উপেক্ষা করে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে থাকেন।
অভিযোগ রয়েছে, ওয়ার্কশপ মালিক এবং সংশ্লিষ্টরা প্রভাব খাটিয়ে এবং হুমকি দিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের নীরব থাকতে বাধ্য করেন। এমনকি, ঘটনাস্থলের মালিকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়, যা আগুন লাগার পর পরিস্থিতি আরও রহস্যজনক করে তোলে।
এলাকাবাসীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ
ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এলাকার অনেক সম্মানিত ব্যক্তি। অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ শরীফ আহমেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “ডিসি-এসপি রোডের কলেজপাড়ায় প্রতিনিয়ত গড়ে উঠছে গাড়ির ওয়ার্কশপ ও কাঠের ফার্নিচারের কারখানা। এসব প্রতিষ্ঠান কোনো নিয়মনীতি মানে না। এতে এলাকাবাসীর নিরাপত্তা চরম হুমকির মধ্যে পড়ছে।”
কলেজপাড়ার তরুণ সমাজসেবক মোঃ আলমগীর হোসেন বলেন, “আমরা বারবার বলেছি—এমন ব্যবসা আবাসিক এলাকায় চলতে পারে না। আজকের এই আগুন শুধুই শুরু। প্রশাসন এখন ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে আরও বড় বিপদ অনিবার্য।”
প্রশাসনের প্রতি এলাকাবাসীর দাবি
কলেজপাড়ার পক্ষে একাধিক বাসিন্দা নতুন প্রতিদিন-কে জানান, তাঁরা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহের প্রতি জোর অনুরোধ জানাচ্ছেন যেন দ্রুত এসব অনিরাপদ ওয়ার্কশপ, কাঠের কারখানা ও ঝুঁকিপূর্ণ দোকান সরিয়ে ফেলা হয়। তারা একটি সুনিরাপদ আবাসিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।
আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা
এই ঘটনার পর এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। কিছুদিন আগে ও শাহিন ভিলা এবং মাশাল্লাহ ভবনের মাঝখানে কাঠের ফার্নিচারের কারখানায় রাত ৩ টা বাজে আগুন লাগে এবং ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিভায়, অনেকেই নিজ নিজ বাড়ির নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। স্থানীয় একজন বাসিন্দা রুজি আক্তার বলেন, “দিনে-রাতে গলির মধ্যে আগুন লাগার আশঙ্কায় থাকতে হয়। আজ যদি কেউ ঘুমিয়ে থাকতো, তাহলে বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারতো।”
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা বলেন, “জায়গাটি অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এবং ওয়ার্কশপে দাহ্য পদার্থ মজুদ ছিল, যা আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার জন্য দায়ী। আমরা সময়মতো না পৌঁছালে বিপদ আরও বাড়তো।”
শেষকথা,এই ঘটনা ফের প্রমাণ করে দিয়েছে, নিয়ন্ত্রণহীন এবং অনুমোদনহীন ব্যবসায়িক কার্যক্রম কিভাবে জননিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে দিতে পারে। স্থানীয়দের আহ্বান, প্রশাসন যেন আর কালবিলম্ব না করে কলেজপাড়াসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আবাসিক এলাকাগুলিকে নিরাপদ রাখতে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
Please Share This Post in Your Social Media

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ডিসি-এসপি রোডে ওয়ার্কশপে আগুন: এলাকাবাসীর ক্ষোভ, জেলা প্রশাসক ও এসপির কাছে অনিরাপদ স্থাপনা সরানোর অনুরোধ

– ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
আজ রবিবার দুপুর আনুমানিক ১টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের ডিসি-এসপি রোডের জাফর ম্যানশনের পূর্ব পাশে একটি সরু গলিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। গলিটির ভিতরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ইজিবাইক এবং অন্যান্য যানবাহনের রিচার্জ ও মেরামতের কাজ চলতো—সরজমিনে দেখা গেছে এমন একটি অবৈধ ওয়ার্কশপ থেকেই আগুনের সূত্রপাত ।
প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। তবে এরই মধ্যে ওয়ার্কশপটি সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে যায় এবং জাফর ম্যানসন নামের বাড়িটির পূর্ব পাশের অংশ পুরুপুরি পুড়ে যায়, দুইটি এসি ব্লাস্ট হয় এবং জানালার কাচ ফেটে ২ তলা এবং ৩ তলার ভিতরে আগুন প্রবেশ করে ফ্রিজ এবং আসবাবপত্র পুড়ে যায় এবং পুরু মহ্ললায় আতকংক ছড়িয়ে পড়ে, আশপাশের কয়েকটি বসতবাড়ির আংশিক ক্ষয়ক্ষতি হয়।সৌভাগ্যবশত, এতে কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।
জানা যায় যে,কিছুদিন আগে ও শাহিন ভিলা এবং মাশাল্লাহ ভবনের মাঝখানে কাঠের ফার্নিচারের কারখানায় রাত ৩ টা বাজে আগুন লাগে এবং ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিভায়, অনেকেই এখন নিজ নিজ বাড়ির নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত।
বিতর্কিত ওয়ার্কশপ, উপেক্ষিত আপত্তি
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, এই ওয়ার্কশপটি শুরু থেকেই বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। জাফর ম্যানশনের মালিক জনাব জাফর আহমেদ মৌখিকভাবে বারবার আপত্তি জানিয়েছিলেন এই স্থানে ওয়ার্কশপ স্থাপনের বিরুদ্ধে। তিনি স্থানীয় সবাইকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন বলে দাবি করেন। তবে ওয়ার্কশপ মালিক মোঃ শামীম এবং জমির মালিক সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় সমস্ত আপত্তি উপেক্ষা করে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে থাকেন।
অভিযোগ রয়েছে, ওয়ার্কশপ মালিক এবং সংশ্লিষ্টরা প্রভাব খাটিয়ে এবং হুমকি দিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের নীরব থাকতে বাধ্য করেন। এমনকি, ঘটনাস্থলের মালিকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়, যা আগুন লাগার পর পরিস্থিতি আরও রহস্যজনক করে তোলে।
এলাকাবাসীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ
ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এলাকার অনেক সম্মানিত ব্যক্তি। অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ শরীফ আহমেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “ডিসি-এসপি রোডের কলেজপাড়ায় প্রতিনিয়ত গড়ে উঠছে গাড়ির ওয়ার্কশপ ও কাঠের ফার্নিচারের কারখানা। এসব প্রতিষ্ঠান কোনো নিয়মনীতি মানে না। এতে এলাকাবাসীর নিরাপত্তা চরম হুমকির মধ্যে পড়ছে।”
কলেজপাড়ার তরুণ সমাজসেবক মোঃ আলমগীর হোসেন বলেন, “আমরা বারবার বলেছি—এমন ব্যবসা আবাসিক এলাকায় চলতে পারে না। আজকের এই আগুন শুধুই শুরু। প্রশাসন এখন ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে আরও বড় বিপদ অনিবার্য।”
প্রশাসনের প্রতি এলাকাবাসীর দাবি
কলেজপাড়ার পক্ষে একাধিক বাসিন্দা নতুন প্রতিদিন-কে জানান, তাঁরা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহের প্রতি জোর অনুরোধ জানাচ্ছেন যেন দ্রুত এসব অনিরাপদ ওয়ার্কশপ, কাঠের কারখানা ও ঝুঁকিপূর্ণ দোকান সরিয়ে ফেলা হয়। তারা একটি সুনিরাপদ আবাসিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।
আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা
এই ঘটনার পর এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। কিছুদিন আগে ও শাহিন ভিলা এবং মাশাল্লাহ ভবনের মাঝখানে কাঠের ফার্নিচারের কারখানায় রাত ৩ টা বাজে আগুন লাগে এবং ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিভায়, অনেকেই নিজ নিজ বাড়ির নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। স্থানীয় একজন বাসিন্দা রুজি আক্তার বলেন, “দিনে-রাতে গলির মধ্যে আগুন লাগার আশঙ্কায় থাকতে হয়। আজ যদি কেউ ঘুমিয়ে থাকতো, তাহলে বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারতো।”
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা বলেন, “জায়গাটি অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এবং ওয়ার্কশপে দাহ্য পদার্থ মজুদ ছিল, যা আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার জন্য দায়ী। আমরা সময়মতো না পৌঁছালে বিপদ আরও বাড়তো।”
শেষকথা,এই ঘটনা ফের প্রমাণ করে দিয়েছে, নিয়ন্ত্রণহীন এবং অনুমোদনহীন ব্যবসায়িক কার্যক্রম কিভাবে জননিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে দিতে পারে। স্থানীয়দের আহ্বান, প্রশাসন যেন আর কালবিলম্ব না করে কলেজপাড়াসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আবাসিক এলাকাগুলিকে নিরাপদ রাখতে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করে।