আ.লীগকে নিষিদ্ধের দাবি : বাংলাদেশের জনগণের ন্যায্য অধিকার

- Update Time : ০৬:০৬:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ মে ২০২৫
- / ৮০ Time View
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে বহুবার রাজনৈতিক সংকটে পড়েছে দেশটি। তবে বিগত ১৬ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকার যে ধরনের শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছে, তা আজ প্রশ্নের মুখে। মানবাধিকার লঙ্ঘন, দুর্নীতি, অর্থপাচার, বিচারবহির্ভূত হত্যা, ভিন্নমতের দমন ও গণতন্ত্রহীনতার অভিযোগে ক্ষুব্ধ হয়ে জনগণের একটি বড় অংশ আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক নিষিদ্ধকরণের দাবি জানাচ্ছে। এই দাবি নিছক রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের চাওয়া নয়, বরং একটি বৈধ এবং যৌক্তিক নাগরিক অধিকার হিসেবে প্রতিভাত হচ্ছে।
ভোটাধিকার হরণের ১৬ বছর : একটি গণতন্ত্রের মৃত্যু
২০০৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ প্রথমদিকে গণতান্ত্রিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচন এবং ২০১৮ সালের “নির্বাচনের আগের রাতে ভোট দেওয়া” প্রহসনের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার কার্যত হরণ করা হয়।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থা ফ্রিডম হাউস, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিবেদনে এই নির্বাচনগুলোকে অস্বচ্ছ, অনিয়মপূর্ণ এবং গণতন্ত্রবিরোধী বলা হয়েছে। জনমতের প্রতিফলনহীন একটি সরকার যদি বছরের পর বছর রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকে, তবে তা কেবল স্বৈরতন্ত্রই নয়, বরং জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া এক ধরনের রাজনৈতিক দাসত্ব।
দুর্নীতির সংস্কৃতি : রাষ্ট্রব্যবস্থার ক্যান্সার
আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে দুর্নীতির পরিমাণ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তা রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে ছড়িয়ে পড়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় অন্যতম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ।
অর্থপাচার : জনগণের ঘামঝরা টাকা বিদেশে বিলাসবহুল জীবনের পুঁজি
বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (BFIU) তথ্য অনুযায়ী, গত এক দশকে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে। এসব অর্থ মূলত:
- সরকারি প্রকল্পের লুটপাট,
- ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে ফাঁকি,
- রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিদেশে বিনিয়োগ।
‘বেগমপাড়া’ নামে পরিচিত কানাডার একটি অভিজাত এলাকায় বাংলাদেশি রাজনীতিবিদদের স্ত্রী ও সন্তানরা বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন। এসব অর্থের উৎস নিয়ে যখন প্রশ্ন ওঠে, তখন দেখা যায়, প্রশাসন ও ব্যাংকিং ব্যবস্থাও এসব লেনদেনের দায় এড়ায়।
অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “একটি রাষ্ট্রের অর্থনীতির জন্য অর্থপাচার কেবল রাজস্ব ক্ষতিই নয়, এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বপ্নহীনতার প্রতীক।”
র্যাব ও বিচারবহির্ভূত হত্যা : ভয়ঙ্কর রাষ্ট্রযন্ত্র
যুক্তরাষ্ট্র সরকার ২০২১ সালে র্যাব ও তার কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। বিশেষত বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের গুম, অপহরণ, এবং ক্রসফায়ারে হত্যার অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে।
র্যাবের হাতে গুম হওয়া ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমসহ অনেক নেতার ভাগ্যে কী ঘটেছে, আজও জানা যায়নি। বিচারবহির্ভূত হত্যার এ সংস্কৃতি এখন বিরোধী মতকে ভয় পাইয়ে রাখার হাতিয়ার।
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ : ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ
সরকার ২০১৮ সালে পাস করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মতে একটি ‘ভয় দেখানো আইন’। এই আইনের অপপ্রয়োগে শতাধিক সাংবাদিক, ব্লগার, লেখক, এমনকি সাধারণ নাগরিককেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সাংবাদিক শরীফ উদ্দিন দুর্নীতির খবর প্রকাশের জন্য চাকরি হারিয়েছেন, হয়রানির শিকার হয়েছেন। ছাত্র ও শিক্ষকদেরও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টের কারণে জেল খাটতে হয়েছে।
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রোধ করা একটি ফ্যাসিস্ট সরকারের বৈশিষ্ট্য — আর বাংলাদেশে সেটাই ঘটছে।
শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রলীগের আধিপত্য ও সহিংসতা
বুয়েটের আবরার ফাহাদ হত্যা সারা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। কারণ, তার অপরাধ ছিল—সে সরকারের ভারতপন্থী নীতির সমালোচনা করেছিল।
ছাত্রলীগের নির্যাতন, চাঁদাবাজি, নিয়োগ বানিজ্য এবং নারী নির্যাতনের ঘটনা একের পর এক সামনে এসেছে। তবু সংগঠনের শীর্ষ নেতারা দায় এড়িয়ে গেছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যেন ক্ষমতাসীন দলের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
বিচারব্যবস্থার দলীয়করণ ও রাষ্ট্রীয় দমননীতি
বিচার বিভাগ এখন স্বাধীন নয়—এ কথা দেশের প্রধান প্রধান আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বারবার বলেছেন। অনেক সময় দেখা গেছে, বিরোধী দলের নেতার বিরুদ্ধে মামলা চলেছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে, অথচ ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা বছর বছর আটকে থাকে।
রাষ্ট্রের তিনটি স্তম্ভ—আইনসভা, নির্বাহী, বিচারব্যবস্থা— সবই এখন দলীয় নিয়ন্ত্রণে। একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার এটাই সবচেয়ে ভয়াবহ দিক।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ আশঙ্কা
বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের ভূমিকা আন্তর্জাতিক মহলেও বিতর্কিত হয়ে উঠেছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট, আমেরিকা, জাতিসংঘসহ বহু সংস্থা মানবাধিকার লঙ্ঘন, ভোট অধিকার হরণ ইত্যাদিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের অবস্থা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, বৈদেশিক বিনিয়োগ সংকট, এবং আন্তর্জাতিক আইনি জটিলতায় পড়তে পারে। এমনকি আ.লীগকে তালেবান বা ব্রাদারহুড ধরনের নিষিদ্ধ সংগঠনের মতো দেখা শুরু হতে পারে।
নিষিদ্ধের দাবি: ইতিহাস ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট
বিশ্ব ইতিহাসে বহু দল জনগণের ওপর অন্যায় শাসনের কারণে নিষিদ্ধ হয়েছে:
- জার্মানিতে নাৎসি পার্টি
- তুরস্কে কুর্দি দলগুলি
এইসব দৃষ্টান্ত দেখায়, যদি একটি রাজনৈতিক দল নাগরিক অধিকার লঙ্ঘন করে, দমন চালায়, রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ক্ষমতা ধরে রাখে, তাহলে তাদের নিষিদ্ধ করা যুক্তিসঙ্গত এবং আন্তর্জাতিকভাবেও গ্রহণযোগ্য।
জনতার রায়ই চূড়ান্ত
বাংলাদেশ আজ এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। একটি রাজনৈতিক দল যদি বারবার রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, জনগণের কণ্ঠ রোধ করে, গণতন্ত্রকে হত্যা করে—তাহলে সে দলকে গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে নিষিদ্ধ করা জরুরি হয়ে পড়ে।
জনগণের এই দাবি কোনো ষড়যন্ত্র নয়, বরং এটি সংবিধান, মানবাধিকার এবং ন্যায়ের প্রতি আস্থাশীল একটি ন্যায্য আন্দোলন। ইতিহাসের পাঠ বলে, যে শক্তিই জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়—তার পতন অনিবার্য। আজ না হোক, আগামীকাল—জনগণ জাগবেই।
Please Share This Post in Your Social Media

আ.লীগকে নিষিদ্ধের দাবি : বাংলাদেশের জনগণের ন্যায্য অধিকার

বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে বহুবার রাজনৈতিক সংকটে পড়েছে দেশটি। তবে বিগত ১৬ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকার যে ধরনের শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছে, তা আজ প্রশ্নের মুখে। মানবাধিকার লঙ্ঘন, দুর্নীতি, অর্থপাচার, বিচারবহির্ভূত হত্যা, ভিন্নমতের দমন ও গণতন্ত্রহীনতার অভিযোগে ক্ষুব্ধ হয়ে জনগণের একটি বড় অংশ আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক নিষিদ্ধকরণের দাবি জানাচ্ছে। এই দাবি নিছক রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের চাওয়া নয়, বরং একটি বৈধ এবং যৌক্তিক নাগরিক অধিকার হিসেবে প্রতিভাত হচ্ছে।
ভোটাধিকার হরণের ১৬ বছর : একটি গণতন্ত্রের মৃত্যু
২০০৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ প্রথমদিকে গণতান্ত্রিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচন এবং ২০১৮ সালের “নির্বাচনের আগের রাতে ভোট দেওয়া” প্রহসনের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার কার্যত হরণ করা হয়।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থা ফ্রিডম হাউস, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিবেদনে এই নির্বাচনগুলোকে অস্বচ্ছ, অনিয়মপূর্ণ এবং গণতন্ত্রবিরোধী বলা হয়েছে। জনমতের প্রতিফলনহীন একটি সরকার যদি বছরের পর বছর রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকে, তবে তা কেবল স্বৈরতন্ত্রই নয়, বরং জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া এক ধরনের রাজনৈতিক দাসত্ব।
দুর্নীতির সংস্কৃতি : রাষ্ট্রব্যবস্থার ক্যান্সার
আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে দুর্নীতির পরিমাণ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তা রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে ছড়িয়ে পড়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় অন্যতম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ।
অর্থপাচার : জনগণের ঘামঝরা টাকা বিদেশে বিলাসবহুল জীবনের পুঁজি
বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (BFIU) তথ্য অনুযায়ী, গত এক দশকে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে। এসব অর্থ মূলত:
- সরকারি প্রকল্পের লুটপাট,
- ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে ফাঁকি,
- রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিদেশে বিনিয়োগ।
‘বেগমপাড়া’ নামে পরিচিত কানাডার একটি অভিজাত এলাকায় বাংলাদেশি রাজনীতিবিদদের স্ত্রী ও সন্তানরা বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন। এসব অর্থের উৎস নিয়ে যখন প্রশ্ন ওঠে, তখন দেখা যায়, প্রশাসন ও ব্যাংকিং ব্যবস্থাও এসব লেনদেনের দায় এড়ায়।
অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “একটি রাষ্ট্রের অর্থনীতির জন্য অর্থপাচার কেবল রাজস্ব ক্ষতিই নয়, এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বপ্নহীনতার প্রতীক।”
র্যাব ও বিচারবহির্ভূত হত্যা : ভয়ঙ্কর রাষ্ট্রযন্ত্র
যুক্তরাষ্ট্র সরকার ২০২১ সালে র্যাব ও তার কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। বিশেষত বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের গুম, অপহরণ, এবং ক্রসফায়ারে হত্যার অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে।
র্যাবের হাতে গুম হওয়া ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমসহ অনেক নেতার ভাগ্যে কী ঘটেছে, আজও জানা যায়নি। বিচারবহির্ভূত হত্যার এ সংস্কৃতি এখন বিরোধী মতকে ভয় পাইয়ে রাখার হাতিয়ার।
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ : ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ
সরকার ২০১৮ সালে পাস করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মতে একটি ‘ভয় দেখানো আইন’। এই আইনের অপপ্রয়োগে শতাধিক সাংবাদিক, ব্লগার, লেখক, এমনকি সাধারণ নাগরিককেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সাংবাদিক শরীফ উদ্দিন দুর্নীতির খবর প্রকাশের জন্য চাকরি হারিয়েছেন, হয়রানির শিকার হয়েছেন। ছাত্র ও শিক্ষকদেরও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টের কারণে জেল খাটতে হয়েছে।
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রোধ করা একটি ফ্যাসিস্ট সরকারের বৈশিষ্ট্য — আর বাংলাদেশে সেটাই ঘটছে।
শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রলীগের আধিপত্য ও সহিংসতা
বুয়েটের আবরার ফাহাদ হত্যা সারা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। কারণ, তার অপরাধ ছিল—সে সরকারের ভারতপন্থী নীতির সমালোচনা করেছিল।
ছাত্রলীগের নির্যাতন, চাঁদাবাজি, নিয়োগ বানিজ্য এবং নারী নির্যাতনের ঘটনা একের পর এক সামনে এসেছে। তবু সংগঠনের শীর্ষ নেতারা দায় এড়িয়ে গেছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যেন ক্ষমতাসীন দলের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
বিচারব্যবস্থার দলীয়করণ ও রাষ্ট্রীয় দমননীতি
বিচার বিভাগ এখন স্বাধীন নয়—এ কথা দেশের প্রধান প্রধান আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বারবার বলেছেন। অনেক সময় দেখা গেছে, বিরোধী দলের নেতার বিরুদ্ধে মামলা চলেছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে, অথচ ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা বছর বছর আটকে থাকে।
রাষ্ট্রের তিনটি স্তম্ভ—আইনসভা, নির্বাহী, বিচারব্যবস্থা— সবই এখন দলীয় নিয়ন্ত্রণে। একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার এটাই সবচেয়ে ভয়াবহ দিক।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ আশঙ্কা
বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের ভূমিকা আন্তর্জাতিক মহলেও বিতর্কিত হয়ে উঠেছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট, আমেরিকা, জাতিসংঘসহ বহু সংস্থা মানবাধিকার লঙ্ঘন, ভোট অধিকার হরণ ইত্যাদিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের অবস্থা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, বৈদেশিক বিনিয়োগ সংকট, এবং আন্তর্জাতিক আইনি জটিলতায় পড়তে পারে। এমনকি আ.লীগকে তালেবান বা ব্রাদারহুড ধরনের নিষিদ্ধ সংগঠনের মতো দেখা শুরু হতে পারে।
নিষিদ্ধের দাবি: ইতিহাস ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট
বিশ্ব ইতিহাসে বহু দল জনগণের ওপর অন্যায় শাসনের কারণে নিষিদ্ধ হয়েছে:
- জার্মানিতে নাৎসি পার্টি
- তুরস্কে কুর্দি দলগুলি
এইসব দৃষ্টান্ত দেখায়, যদি একটি রাজনৈতিক দল নাগরিক অধিকার লঙ্ঘন করে, দমন চালায়, রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ক্ষমতা ধরে রাখে, তাহলে তাদের নিষিদ্ধ করা যুক্তিসঙ্গত এবং আন্তর্জাতিকভাবেও গ্রহণযোগ্য।
জনতার রায়ই চূড়ান্ত
বাংলাদেশ আজ এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। একটি রাজনৈতিক দল যদি বারবার রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, জনগণের কণ্ঠ রোধ করে, গণতন্ত্রকে হত্যা করে—তাহলে সে দলকে গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে নিষিদ্ধ করা জরুরি হয়ে পড়ে।
জনগণের এই দাবি কোনো ষড়যন্ত্র নয়, বরং এটি সংবিধান, মানবাধিকার এবং ন্যায়ের প্রতি আস্থাশীল একটি ন্যায্য আন্দোলন। ইতিহাসের পাঠ বলে, যে শক্তিই জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়—তার পতন অনিবার্য। আজ না হোক, আগামীকাল—জনগণ জাগবেই।