ডেসটিনির রফিকুলের ‘আ-আম জনতা পার্টি’: গ্রাহকের টাকা ফেরতের আগে রাজনীতি করার অধিকার আছে কি ?

- Update Time : ০২:৫৮:৫১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫
- / ১০৬ Time View
নতুন প্রতিদিন ডেস্ক:
ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড কেলেঙ্কারির অন্যতম মূল হোতা এবং বর্তমানে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত রফিকুল আমীন সম্প্রতি নতুন একটি রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। দলটির নাম—‘আ-আম জনতা পার্টি’। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে রফিকুল আমীন আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন, তবে এবার রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে। প্রশ্ন উঠছে—যে ব্যক্তি দেশের হাজার হাজার মানুষের কষ্টার্জিত অর্থ আত্মসাৎ করে এখনো সেই দায় মেটাননি, তিনি কীভাবে রাজনৈতিক ময়দানে ফিরতে পারেন?
ডেসটিনি কেলেঙ্কারি: এক নজরে
ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড দেশের ইতিহাসে অন্যতম বড় পিরামিড স্কিম (Ponzi Scheme) কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত একটি কোম্পানি। ২০০০ সালের দিকে “অল্প সময়ে বেশি লাভ”—এই স্লোগানে ডেসটিনি হাজার হাজার সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করে। তারা নানা প্যাকেজে লগ্নি সংগ্রহ করে বন প্রকল্প, মাল্টিপারপাস কোম্পানি ও মিডিয়া প্রতিষ্ঠানের নামে। সময়ের সঙ্গে অভিযোগ উঠতে থাকে—ডেসটিনি কোনো প্রকৃত ব্যবসা না করে শুধুমাত্র এক শ্রেণির গ্রাহকের টাকা অন্যদের লাভের নামে ব্যবহার করছে।
২০১২ সালে দুদক তদন্ত শুরু করে এবং ২০১৬ সালে রফিকুল আমীন ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় উঠে আসে প্রায় ৪,২০০ কোটি টাকার অবৈধ লেনদেন ও আত্মসাতের চিত্র। দীর্ঘ তদন্ত ও বিচার শেষে ২০২২ সালে রফিকুল আমীনকে ১২ বছরের কারাদণ্ড এবং বড় অঙ্কের অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।
গ্রাহকদের হতাশা ও প্রশ্ন
ডেসটিনির সঙ্গে জড়িত বহু সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে প্রবাসী শ্রমিক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও গৃহবধূ—নিজেদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে প্রতিষ্ঠানটিতে বিনিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু এখনো অধিকাংশই তাদের অর্থ ফেরত পাননি। অনেকেই আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত, কেউ কেউ চাকরি হারিয়েছেন, কেউ বাড়িঘর বিক্রি করে দেন।
এই বাস্তবতায় রফিকুল আমীন যখন ‘আ-আম জনতা পার্টি’ নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দেন, তখন ক্ষোভে ফেটে পড়েন ভুক্তভোগীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে তারা প্রশ্ন তুলছেন—“আমাদের
রাজনীতির সুযোগ নাকি দায়মুক্তির চেষ্টা?
সমালোচকদের মতে, এটি কেবল একটি রাজনৈতিক দল নয়, বরং নিজের সামাজিক অবস্থান পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং ভবিষ্যতে আইনি দায় এড়ানোর কৌশল হতে পারে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রভাবশালী পরিচয় অনেক সময় জবাবদিহি থেকে রক্ষা পাওয়ার একটি মোক্ষম হাতিয়ার। তাই এই দল গঠনের পেছনে রফিকুল আমীনের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এছাড়া, নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত দলটির নিবন্ধন দেয়নি, তবে ‘আ-আম জনতা পার্টি’ নামে মাঠে নামার প্রচেষ্টা স্পষ্ট।
আইন ও নৈতিকতার প্রশ্ন
বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে কোনো দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন না। কিন্তু রাজনৈতিক দল গঠন বা তার নেতৃত্বে থাকা বিষয়টিতে সরাসরি নিষেধাজ্ঞা নেই। এই ফাঁকফোকর দিয়েই অনেক বিতর্কিত ব্যক্তি আবারও রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন।
তবে নৈতিকতার জায়গা থেকে এই প্রশ্নটি আজ সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক—
👉 গ্রাহকের টাকা ফেরতের আগে একজন দণ্ডপ্রাপ্ত অর্থ আত্মসাৎকারী কীভাবে জনতার প্রতিনিধি হতে পারেন?
জনগণের প্রত্যাশা ও প্রশ্ন
আজ সময় এসেছে এই প্রশ্নগুলো জনসমক্ষে আরও জোরালোভাবে তোলার। যারা জনগণের অর্থ আত্মসাৎ করে, তাদের রাজনীতিতে জায়গা দেওয়া মানে কী আমরা দুর্নীতিকে বৈধতা দিচ্ছি? একজন রাজনীতিবিদ হওয়ার আগে একজনকে হতে হয় সৎ, দায়বদ্ধ ও ন্যায়পরায়ণ। রফিকুল আমীন কি সে মানদণ্ডে উত্তীর্ণ?
যতদিন না দেশের সাধারণ মানুষ তাদের কষ্টার্জিত অর্থ ফেরত পাচ্ছেন, ততদিন ‘আ-আম জনতা পার্টি’ নামে কোনো রাজনৈতিক শক্তির উত্থান শুধু একটি কৌতুকই নয়—একটি চরম অন্যায়ের প্রতীক হয়ে থাকবে।
Please Share This Post in Your Social Media

ডেসটিনির রফিকুলের ‘আ-আম জনতা পার্টি’: গ্রাহকের টাকা ফেরতের আগে রাজনীতি করার অধিকার আছে কি ?

নতুন প্রতিদিন ডেস্ক:
ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড কেলেঙ্কারির অন্যতম মূল হোতা এবং বর্তমানে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত রফিকুল আমীন সম্প্রতি নতুন একটি রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। দলটির নাম—‘আ-আম জনতা পার্টি’। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে রফিকুল আমীন আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন, তবে এবার রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে। প্রশ্ন উঠছে—যে ব্যক্তি দেশের হাজার হাজার মানুষের কষ্টার্জিত অর্থ আত্মসাৎ করে এখনো সেই দায় মেটাননি, তিনি কীভাবে রাজনৈতিক ময়দানে ফিরতে পারেন?
ডেসটিনি কেলেঙ্কারি: এক নজরে
ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড দেশের ইতিহাসে অন্যতম বড় পিরামিড স্কিম (Ponzi Scheme) কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত একটি কোম্পানি। ২০০০ সালের দিকে “অল্প সময়ে বেশি লাভ”—এই স্লোগানে ডেসটিনি হাজার হাজার সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করে। তারা নানা প্যাকেজে লগ্নি সংগ্রহ করে বন প্রকল্প, মাল্টিপারপাস কোম্পানি ও মিডিয়া প্রতিষ্ঠানের নামে। সময়ের সঙ্গে অভিযোগ উঠতে থাকে—ডেসটিনি কোনো প্রকৃত ব্যবসা না করে শুধুমাত্র এক শ্রেণির গ্রাহকের টাকা অন্যদের লাভের নামে ব্যবহার করছে।
২০১২ সালে দুদক তদন্ত শুরু করে এবং ২০১৬ সালে রফিকুল আমীন ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় উঠে আসে প্রায় ৪,২০০ কোটি টাকার অবৈধ লেনদেন ও আত্মসাতের চিত্র। দীর্ঘ তদন্ত ও বিচার শেষে ২০২২ সালে রফিকুল আমীনকে ১২ বছরের কারাদণ্ড এবং বড় অঙ্কের অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।
গ্রাহকদের হতাশা ও প্রশ্ন
ডেসটিনির সঙ্গে জড়িত বহু সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে প্রবাসী শ্রমিক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও গৃহবধূ—নিজেদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে প্রতিষ্ঠানটিতে বিনিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু এখনো অধিকাংশই তাদের অর্থ ফেরত পাননি। অনেকেই আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত, কেউ কেউ চাকরি হারিয়েছেন, কেউ বাড়িঘর বিক্রি করে দেন।
এই বাস্তবতায় রফিকুল আমীন যখন ‘আ-আম জনতা পার্টি’ নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দেন, তখন ক্ষোভে ফেটে পড়েন ভুক্তভোগীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে তারা প্রশ্ন তুলছেন—“আমাদের
রাজনীতির সুযোগ নাকি দায়মুক্তির চেষ্টা?
সমালোচকদের মতে, এটি কেবল একটি রাজনৈতিক দল নয়, বরং নিজের সামাজিক অবস্থান পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং ভবিষ্যতে আইনি দায় এড়ানোর কৌশল হতে পারে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রভাবশালী পরিচয় অনেক সময় জবাবদিহি থেকে রক্ষা পাওয়ার একটি মোক্ষম হাতিয়ার। তাই এই দল গঠনের পেছনে রফিকুল আমীনের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এছাড়া, নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত দলটির নিবন্ধন দেয়নি, তবে ‘আ-আম জনতা পার্টি’ নামে মাঠে নামার প্রচেষ্টা স্পষ্ট।
আইন ও নৈতিকতার প্রশ্ন
বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে কোনো দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন না। কিন্তু রাজনৈতিক দল গঠন বা তার নেতৃত্বে থাকা বিষয়টিতে সরাসরি নিষেধাজ্ঞা নেই। এই ফাঁকফোকর দিয়েই অনেক বিতর্কিত ব্যক্তি আবারও রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন।
তবে নৈতিকতার জায়গা থেকে এই প্রশ্নটি আজ সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক—
👉 গ্রাহকের টাকা ফেরতের আগে একজন দণ্ডপ্রাপ্ত অর্থ আত্মসাৎকারী কীভাবে জনতার প্রতিনিধি হতে পারেন?
জনগণের প্রত্যাশা ও প্রশ্ন
আজ সময় এসেছে এই প্রশ্নগুলো জনসমক্ষে আরও জোরালোভাবে তোলার। যারা জনগণের অর্থ আত্মসাৎ করে, তাদের রাজনীতিতে জায়গা দেওয়া মানে কী আমরা দুর্নীতিকে বৈধতা দিচ্ছি? একজন রাজনীতিবিদ হওয়ার আগে একজনকে হতে হয় সৎ, দায়বদ্ধ ও ন্যায়পরায়ণ। রফিকুল আমীন কি সে মানদণ্ডে উত্তীর্ণ?
যতদিন না দেশের সাধারণ মানুষ তাদের কষ্টার্জিত অর্থ ফেরত পাচ্ছেন, ততদিন ‘আ-আম জনতা পার্টি’ নামে কোনো রাজনৈতিক শক্তির উত্থান শুধু একটি কৌতুকই নয়—একটি চরম অন্যায়ের প্রতীক হয়ে থাকবে।