ঋণ জালিয়াতির মামলায় সোনালী ব্যাংকের সাবেক এমডিসহ ১১ জনের কারাদণ্ড

- Update Time : ০৫:৪৯:৩৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫
- / ৯৬ Time View
সোনালী ব্যাংক থেকে ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের দায়ে ব্যাংকটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হুমায়ুন কবিরসহ ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ সোমবার (৭ এপ্রিল) ঢাকার বিশেষ দায়রা জজ আদালত-৬ এর বিচারক মো. জাকারিয়া হোসেন এই রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন সোনালী ব্যাংকের সাবেক ঊর্ধ্বতন সাত কর্মকর্তা—সাবেক এমডি হুমায়ুন কবির, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মাইনুল হক, জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) ননী গোপাল নাথ ও মীর মহিদুর রহমান, অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার (এজিএম) সাইফুল হাসান ও কামরুল হোসেন খান এবং ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) সফিজ উদ্দিন আহমেদ। এছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠান খান জাহান আলী সোয়েটার্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক আ. জলিল শেখ, পরিচালক রফিকুল ইসলাম এবং মীর মোহাম্মদ শওকত আলীকেও দণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সোনালী ব্যাংকের সাত কর্মকর্তাকে বিশ্বাসভঙ্গ ও বেআইনিভাবে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তিন বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার অর্থ অনাদায়ে তাদের আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। অপরদিকে খান জাহান আলী সোয়েটার্স লিমিটেডের চার কর্মকর্তাকে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের পাশাপাশি এক কোটি ১৪ লাখ ৭৫ হাজার ৬৬৮ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে, যা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত হবে। এছাড়া প্রতারণার দায়ে তাদের আরও সাত বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। এই দুই ধারার সাজা ধারাবাহিকভাবে কার্যকর হবে, ফলে তাদের মোট ১০ বছর কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।
রায়ের সময় চার আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আদালত তাদের সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বাকি সাত আসামি পলাতক রয়েছেন, যাদের বিরুদ্ধে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানাসহ সাজা পরোয়ানা জারি করেছেন।
মামলার নথি অনুযায়ী, খান জাহান আলী সোয়েটার্স লিমিটেডের চার কর্মকর্তা ২০১২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৭ মে পর্যন্ত সময়ে সোনালী ব্যাংকের হোটেল শেরাটন শাখা থেকে প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট বাবদ ১৪টি পিসির মাধ্যমে ১০টি এলসি ও কনট্রাক্ট দেখিয়ে মোট ১ কোটি ৩৮ লাখ ৮৯ হাজার ৮৩ টাকা উত্তোলন করেন। এর মধ্যে ২৪ লাখ ১৩ হাজার ৪১৫ টাকা পরিশোধ করা হলেও বাকি ১ কোটি ১৪ লাখ ৭৫ হাজার ৬৬৮ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এ কাজটি তারা ব্যাংক কর্মকর্তাদের সহায়তায় সম্পন্ন করেন।
ঘটনার পর ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তৎকালীন উপপরিচালক এস এম এম আখতার হামিদ ভূঞা রমনা মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে ২০১৪ সালের ২২ মে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৫ সালের ১৫ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। বিচার চলাকালে মামলার ৬১ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।
এর আগেও সোনালী ব্যাংকের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় বিভিন্ন মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। তবে দুঃখজনকভাবে দণ্ডপ্রাপ্তদের বেশিরভাগই পলাতক রয়েছেন, যা বিচার কার্যক্রম বাস্তবায়নে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিচ্ছে।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন, সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫
Please Share This Post in Your Social Media

ঋণ জালিয়াতির মামলায় সোনালী ব্যাংকের সাবেক এমডিসহ ১১ জনের কারাদণ্ড

সোনালী ব্যাংক থেকে ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের দায়ে ব্যাংকটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হুমায়ুন কবিরসহ ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ সোমবার (৭ এপ্রিল) ঢাকার বিশেষ দায়রা জজ আদালত-৬ এর বিচারক মো. জাকারিয়া হোসেন এই রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন সোনালী ব্যাংকের সাবেক ঊর্ধ্বতন সাত কর্মকর্তা—সাবেক এমডি হুমায়ুন কবির, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মাইনুল হক, জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) ননী গোপাল নাথ ও মীর মহিদুর রহমান, অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার (এজিএম) সাইফুল হাসান ও কামরুল হোসেন খান এবং ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) সফিজ উদ্দিন আহমেদ। এছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠান খান জাহান আলী সোয়েটার্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক আ. জলিল শেখ, পরিচালক রফিকুল ইসলাম এবং মীর মোহাম্মদ শওকত আলীকেও দণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সোনালী ব্যাংকের সাত কর্মকর্তাকে বিশ্বাসভঙ্গ ও বেআইনিভাবে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তিন বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার অর্থ অনাদায়ে তাদের আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। অপরদিকে খান জাহান আলী সোয়েটার্স লিমিটেডের চার কর্মকর্তাকে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের পাশাপাশি এক কোটি ১৪ লাখ ৭৫ হাজার ৬৬৮ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে, যা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত হবে। এছাড়া প্রতারণার দায়ে তাদের আরও সাত বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। এই দুই ধারার সাজা ধারাবাহিকভাবে কার্যকর হবে, ফলে তাদের মোট ১০ বছর কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।
রায়ের সময় চার আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আদালত তাদের সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বাকি সাত আসামি পলাতক রয়েছেন, যাদের বিরুদ্ধে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানাসহ সাজা পরোয়ানা জারি করেছেন।
মামলার নথি অনুযায়ী, খান জাহান আলী সোয়েটার্স লিমিটেডের চার কর্মকর্তা ২০১২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৭ মে পর্যন্ত সময়ে সোনালী ব্যাংকের হোটেল শেরাটন শাখা থেকে প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট বাবদ ১৪টি পিসির মাধ্যমে ১০টি এলসি ও কনট্রাক্ট দেখিয়ে মোট ১ কোটি ৩৮ লাখ ৮৯ হাজার ৮৩ টাকা উত্তোলন করেন। এর মধ্যে ২৪ লাখ ১৩ হাজার ৪১৫ টাকা পরিশোধ করা হলেও বাকি ১ কোটি ১৪ লাখ ৭৫ হাজার ৬৬৮ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এ কাজটি তারা ব্যাংক কর্মকর্তাদের সহায়তায় সম্পন্ন করেন।
ঘটনার পর ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তৎকালীন উপপরিচালক এস এম এম আখতার হামিদ ভূঞা রমনা মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে ২০১৪ সালের ২২ মে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৫ সালের ১৫ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। বিচার চলাকালে মামলার ৬১ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।
এর আগেও সোনালী ব্যাংকের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় বিভিন্ন মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। তবে দুঃখজনকভাবে দণ্ডপ্রাপ্তদের বেশিরভাগই পলাতক রয়েছেন, যা বিচার কার্যক্রম বাস্তবায়নে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিচ্ছে।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন, সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫