ফ্যাসিস্ট শাসনের সময়ে জনগণকে নিপীড়নে ডিসিদের ব্যবহার করা হয়েছে: আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল

- Update Time : ০৫:৪০:৩৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / ৫৪ Time View
অন্তর্র্বতী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল অভিযোগ করেছেন যে, বিগত ফ্যাসিস্ট শাসকেরা জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) জনগণের নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, প্রশাসনের মেধাবী সদস্যদের যেন ভবিষ্যতে জনগণের দমন-পীড়নে ব্যবহৃত না করা হয়, বরং রাষ্ট্রের সেবায় তাদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো হয়।
ডিসিদের ভূমিকা ও প্রশাসনের অপব্যবহার
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) জেলা প্রশাসক সম্মেলনের শেষ দিনের প্রথম কর্ম অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আইন উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ডিসিরা অত্যন্ত মেধাবী ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে বাছাইকৃত প্রশাসনিক কর্মকর্তা। কিন্তু অতীতের স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠী তাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য নিপীড়নমূলক কাজে ব্যবহার করেছে।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রের এত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশাসনিক কাঠামোকে স্বৈরশাসকরা জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে, যা প্রশাসনের মর্যাদা ও দায়িত্বশীলতার পরিপন্থী। ডিসিদের ক্ষমতা ও দক্ষতাকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো হলে তারা প্রশাসনকে আরও কার্যকর ও জনমুখী করতে সক্ষম হবেন।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, স্বৈরশাসকরা প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে গণতান্ত্রিক অধিকারকে সংকুচিত করেছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, সাংবাদিক এবং বিরোধী দলীয় নেতাদের দমন করতে প্রশাসনকে ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কারচুপি, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের উপর দমন-পীড়ন এবং জনগণের কণ্ঠরোধে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
ভবিষ্যৎ প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা ও ডিসিদের কার্যকর ব্যবহার
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, প্রশাসনের দক্ষতা ও সম্পদ যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়, তবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত হবে, ভূমি ব্যবস্থাপনা আরও কার্যকর হবে এবং স্বাস্থ্যখাতেও ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। তিনি আরও বলেন, প্রশাসনিক কাঠামোর সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে সরকারের উচিত ডিসিদের ক্ষমতাকে জনগণের সেবায় কাজে লাগানো।
তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, ভবিষ্যতে যারা ক্ষমতায় আসবেন তারা প্রশাসনিক কাঠামোর এই বিশাল সম্ভাবনাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাবেন এবং স্বৈরাচারী দমন-পীড়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবেন না। ডিসিরা যদি নিরপেক্ষভাবে আইন ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে কাজ করেন, তাহলে প্রশাসনের প্রতি জনগণের আস্থা আরও দৃঢ় হবে এবং দেশের সার্বিক শাসন ব্যবস্থা আরও উন্নত হবে।
তিনি আরও বলেন, ডিসিদের উচিত তাদের ক্ষমতা শুধুমাত্র আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োগ করা। প্রশাসন যদি জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ থাকে, তবে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত হবে এবং সরকার ও জনগণের মধ্যে বিশ্বাস ও আস্থার সম্পর্ক সুদৃঢ় হবে।
স্বৈরাচারী শাসনের পরিপ্রেক্ষিত ও বর্তমান প্রশাসনের ভূমিকা
বিশ্লেষকদের মতে, অতীতের ফ্যাসিস্ট সরকার প্রশাসনিক শক্তিকে ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষার জন্য ব্যবহার করায় জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু নতুন সরকার প্রশাসনের কাঠামোকে ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করতে চাইছে। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের বক্তব্যকে প্রশাসনের কার্যকারিতা বৃদ্ধির একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যেখানে ডিসিরা সুষ্ঠু ও জবাবদিহিতার ভিত্তিতে তাদের দায়িত্ব পালন করবেন।
তিনি আরও বলেন, ডিসিদের মাধ্যমে শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করা হলে জনগণের মাঝে প্রশাসনের প্রতি আস্থাহীনতা তৈরি হয়। জনগণের করের টাকায় পরিচালিত প্রশাসনকে অবশ্যই জনসেবার জন্য কাজ করতে হবে, দমন-পীড়নের হাতিয়ার হয়ে ওঠা উচিত নয়।
প্রশাসনের স্বাধীনতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার প্রস্তাবনা
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল প্রশাসনের কার্যকারিতা বাড়াতে কয়েকটি প্রস্তাব দেন:
১. নিরপেক্ষতা বজায় রাখা: প্রশাসনের কর্মকাণ্ড রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হতে হবে। 2. জনসেবামূলক কাজের ওপর গুরুত্ব দেওয়া: আইনশৃঙ্খলা, ভূমি ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে প্রশাসনের ভূমিকা জোরদার করতে হবে। 3. জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা: প্রশাসনের কাজের স্বচ্ছতা বাড়াতে স্বাধীন নিরীক্ষা ব্যবস্থা চালু করা উচিত। 4. প্রশাসনের প্রতি জনগণের আস্থা বাড়ানো: ডিসিদের কার্যক্রম সম্পর্কে জনগণের মতামত নেওয়া এবং তাদের স্বার্থ রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ মনে করেন, প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ করতে হলে সরকারকে আরও সচেতন হতে হবে। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের মতে, ডিসিদের ক্ষমতার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে দেশের সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে এবং জনগণ প্রকৃত সেবা পাবে।
তিনি আরও বলেন, একটি উন্নত ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রশাসনকে অবশ্যই স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও জবাবদিহিতার ভিত্তিতে পরিচালিত হতে হবে। প্রশাসন যদি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়, তাহলে জনগণের ক্ষতি হবে এবং রাষ্ট্রের অগ্রগতির পথে বাধা সৃষ্টি হবে।
Please Share This Post in Your Social Media

ফ্যাসিস্ট শাসনের সময়ে জনগণকে নিপীড়নে ডিসিদের ব্যবহার করা হয়েছে: আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল

অন্তর্র্বতী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল অভিযোগ করেছেন যে, বিগত ফ্যাসিস্ট শাসকেরা জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) জনগণের নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, প্রশাসনের মেধাবী সদস্যদের যেন ভবিষ্যতে জনগণের দমন-পীড়নে ব্যবহৃত না করা হয়, বরং রাষ্ট্রের সেবায় তাদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো হয়।
ডিসিদের ভূমিকা ও প্রশাসনের অপব্যবহার
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) জেলা প্রশাসক সম্মেলনের শেষ দিনের প্রথম কর্ম অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আইন উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ডিসিরা অত্যন্ত মেধাবী ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে বাছাইকৃত প্রশাসনিক কর্মকর্তা। কিন্তু অতীতের স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠী তাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য নিপীড়নমূলক কাজে ব্যবহার করেছে।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রের এত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশাসনিক কাঠামোকে স্বৈরশাসকরা জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে, যা প্রশাসনের মর্যাদা ও দায়িত্বশীলতার পরিপন্থী। ডিসিদের ক্ষমতা ও দক্ষতাকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো হলে তারা প্রশাসনকে আরও কার্যকর ও জনমুখী করতে সক্ষম হবেন।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, স্বৈরশাসকরা প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে গণতান্ত্রিক অধিকারকে সংকুচিত করেছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, সাংবাদিক এবং বিরোধী দলীয় নেতাদের দমন করতে প্রশাসনকে ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কারচুপি, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের উপর দমন-পীড়ন এবং জনগণের কণ্ঠরোধে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
ভবিষ্যৎ প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা ও ডিসিদের কার্যকর ব্যবহার
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, প্রশাসনের দক্ষতা ও সম্পদ যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়, তবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত হবে, ভূমি ব্যবস্থাপনা আরও কার্যকর হবে এবং স্বাস্থ্যখাতেও ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। তিনি আরও বলেন, প্রশাসনিক কাঠামোর সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে সরকারের উচিত ডিসিদের ক্ষমতাকে জনগণের সেবায় কাজে লাগানো।
তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, ভবিষ্যতে যারা ক্ষমতায় আসবেন তারা প্রশাসনিক কাঠামোর এই বিশাল সম্ভাবনাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাবেন এবং স্বৈরাচারী দমন-পীড়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবেন না। ডিসিরা যদি নিরপেক্ষভাবে আইন ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে কাজ করেন, তাহলে প্রশাসনের প্রতি জনগণের আস্থা আরও দৃঢ় হবে এবং দেশের সার্বিক শাসন ব্যবস্থা আরও উন্নত হবে।
তিনি আরও বলেন, ডিসিদের উচিত তাদের ক্ষমতা শুধুমাত্র আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োগ করা। প্রশাসন যদি জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ থাকে, তবে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত হবে এবং সরকার ও জনগণের মধ্যে বিশ্বাস ও আস্থার সম্পর্ক সুদৃঢ় হবে।
স্বৈরাচারী শাসনের পরিপ্রেক্ষিত ও বর্তমান প্রশাসনের ভূমিকা
বিশ্লেষকদের মতে, অতীতের ফ্যাসিস্ট সরকার প্রশাসনিক শক্তিকে ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষার জন্য ব্যবহার করায় জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু নতুন সরকার প্রশাসনের কাঠামোকে ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করতে চাইছে। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের বক্তব্যকে প্রশাসনের কার্যকারিতা বৃদ্ধির একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যেখানে ডিসিরা সুষ্ঠু ও জবাবদিহিতার ভিত্তিতে তাদের দায়িত্ব পালন করবেন।
তিনি আরও বলেন, ডিসিদের মাধ্যমে শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করা হলে জনগণের মাঝে প্রশাসনের প্রতি আস্থাহীনতা তৈরি হয়। জনগণের করের টাকায় পরিচালিত প্রশাসনকে অবশ্যই জনসেবার জন্য কাজ করতে হবে, দমন-পীড়নের হাতিয়ার হয়ে ওঠা উচিত নয়।
প্রশাসনের স্বাধীনতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার প্রস্তাবনা
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল প্রশাসনের কার্যকারিতা বাড়াতে কয়েকটি প্রস্তাব দেন:
১. নিরপেক্ষতা বজায় রাখা: প্রশাসনের কর্মকাণ্ড রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হতে হবে। 2. জনসেবামূলক কাজের ওপর গুরুত্ব দেওয়া: আইনশৃঙ্খলা, ভূমি ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে প্রশাসনের ভূমিকা জোরদার করতে হবে। 3. জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা: প্রশাসনের কাজের স্বচ্ছতা বাড়াতে স্বাধীন নিরীক্ষা ব্যবস্থা চালু করা উচিত। 4. প্রশাসনের প্রতি জনগণের আস্থা বাড়ানো: ডিসিদের কার্যক্রম সম্পর্কে জনগণের মতামত নেওয়া এবং তাদের স্বার্থ রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ মনে করেন, প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ করতে হলে সরকারকে আরও সচেতন হতে হবে। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের মতে, ডিসিদের ক্ষমতার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে দেশের সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে এবং জনগণ প্রকৃত সেবা পাবে।
তিনি আরও বলেন, একটি উন্নত ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রশাসনকে অবশ্যই স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও জবাবদিহিতার ভিত্তিতে পরিচালিত হতে হবে। প্রশাসন যদি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়, তাহলে জনগণের ক্ষতি হবে এবং রাষ্ট্রের অগ্রগতির পথে বাধা সৃষ্টি হবে।