সময়: বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিএনপি আমাদের বিরোধিতা করছে, তা বিশ্বাস করতে চাই না: জামায়াত আমির

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ০৭:২৯:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / ৫৭ Time View

dd012395dc26f86dc3cebc50333d50ad 67b170a0bdfb5

dd012395dc26f86dc3cebc50333d50ad 67b170a0bdfb5

সম্প্রতি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে বলে বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে। দুই দলের নেতাদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য এবং রাজনৈতিক কৌশলের পার্থক্য জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। বিএনপি যেখানে দ্রুত নির্বাচন চায়, সেখানে জামায়াত নির্বাচনের আগে পূর্ণ সংস্কারের দাবি তুলছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে একে অপরকে কটাক্ষ করেও মন্তব্য করছে দুই দলের নেতারা।

বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক সম্পর্কের পটভূমি

বিএনপি ও জামায়াতের রাজনৈতিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপি যখন সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসন পায়নি, তখন জামায়াত তাদের সমর্থন দিয়েছিল। এরপর ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত চারদলীয় জোট গঠন করে সরকার গঠন করে, যা ২০০৬ সাল পর্যন্ত টিকে ছিল। তবে ২০০৮ সালের পর থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক বাস্তবতায় তাদের সম্পর্ক শিথিল হতে শুরু করে।

বিএনপি-জামায়াত দূরত্বের কারণ

অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে দূরত্বের মূল কারণ আদর্শিক পার্থক্য এবং বর্তমান রাজনৈতিক কৌশল। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে যে বিতর্ক রয়েছে, সেটি এখনো বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপি একদিকে গণতান্ত্রিক নির্বাচন চায়, অন্যদিকে জামায়াত সাংবিধানিক সংস্কারের কথা বলছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক চাপ এবং বাংলাদেশে রাজনৈতিক বাস্তবতা বদলানোর কারণে বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব রাখতে চাইছে বলে মনে করা হয়।

জামায়াতের অবস্থান

তবে এসব আলোচনা ও দূরত্বের ধারণা পুরোপুরি নাকচ করেছেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। দেশের একটি গণমাধ্যমে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “বিএনপি আমাদের বিরোধিতা করছে—এটা আমি বিশ্বাস করতে চাই না। যদি তারা সত্যিই আমাদের বিরোধিতা করত, তাহলে ১৯৯১ সালে যখন সরকার গঠনের জন্য তাদের প্রয়োজনীয় আসন ছিল না, তখন আমাদের সমর্থন কেন চেয়েছিল?”

তিনি আরও বলেন, “তৎকালীন বিএনপি নেত্রী, যিনি এখনও দলের চেয়ারপারসন, তখন জামায়াত কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থে নয়, বরং দেশের স্বার্থেই বিএনপিকে সমর্থন দিয়েছিল। এরপর ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের দুঃশাসন যখন দেশকে অতিষ্ঠ করে তুলল, তখন শুধু দূর থেকে সমর্থন দেওয়া হয়নি; বরং লিখিত চুক্তির ভিত্তিতে চারদলীয় জোট গঠন করা হয়েছিল। তখন তো কেউ এ প্রশ্ন তোলেনি, এখন কেন তোলা হচ্ছে? এর জবাব বিএনপিকেই দিতে হবে।”

style="text-align: justify;">বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

বর্তমানে বিএনপি ও জামায়াত উভয়েই সরকারবিরোধী অবস্থানে রয়েছে, তবে তাদের রাজনৈতিক কৌশলে পার্থক্য দেখা যাচ্ছে। বিএনপি একদিকে বিরোধী দলগুলোর বৃহত্তর ঐক্য গড়তে চায়, অন্যদিকে জামায়াত এখনো এককভাবে টিকে থাকার কৌশল অবলম্বন করছে। নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে দুই দলের সম্পর্কের গতিপথ কী হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে নানা মত রয়েছে।

বিএনপি ও জামায়াতের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নির্ভর করবে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, জনগণের প্রতিক্রিয়া এবং আন্তর্জাতিক মহলের অবস্থানের ওপর। তবে আপাতত, দুই দলের মধ্যে দূরত্ব থাকা সত্ত্বেও তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ অভিন্ন থাকায় ভবিষ্যতে আবারও জোটবদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনাকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

সূত্র: প্রথম আলো

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

বিএনপি আমাদের বিরোধিতা করছে, তা বিশ্বাস করতে চাই না: জামায়াত আমির

Update Time : ০৭:২৯:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

dd012395dc26f86dc3cebc50333d50ad 67b170a0bdfb5

সম্প্রতি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে বলে বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে। দুই দলের নেতাদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য এবং রাজনৈতিক কৌশলের পার্থক্য জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। বিএনপি যেখানে দ্রুত নির্বাচন চায়, সেখানে জামায়াত নির্বাচনের আগে পূর্ণ সংস্কারের দাবি তুলছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে একে অপরকে কটাক্ষ করেও মন্তব্য করছে দুই দলের নেতারা।

বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক সম্পর্কের পটভূমি

বিএনপি ও জামায়াতের রাজনৈতিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপি যখন সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসন পায়নি, তখন জামায়াত তাদের সমর্থন দিয়েছিল। এরপর ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত চারদলীয় জোট গঠন করে সরকার গঠন করে, যা ২০০৬ সাল পর্যন্ত টিকে ছিল। তবে ২০০৮ সালের পর থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক বাস্তবতায় তাদের সম্পর্ক শিথিল হতে শুরু করে।

বিএনপি-জামায়াত দূরত্বের কারণ

অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে দূরত্বের মূল কারণ আদর্শিক পার্থক্য এবং বর্তমান রাজনৈতিক কৌশল। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে যে বিতর্ক রয়েছে, সেটি এখনো বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপি একদিকে গণতান্ত্রিক নির্বাচন চায়, অন্যদিকে জামায়াত সাংবিধানিক সংস্কারের কথা বলছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক চাপ এবং বাংলাদেশে রাজনৈতিক বাস্তবতা বদলানোর কারণে বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব রাখতে চাইছে বলে মনে করা হয়।

জামায়াতের অবস্থান

তবে এসব আলোচনা ও দূরত্বের ধারণা পুরোপুরি নাকচ করেছেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। দেশের একটি গণমাধ্যমে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “বিএনপি আমাদের বিরোধিতা করছে—এটা আমি বিশ্বাস করতে চাই না। যদি তারা সত্যিই আমাদের বিরোধিতা করত, তাহলে ১৯৯১ সালে যখন সরকার গঠনের জন্য তাদের প্রয়োজনীয় আসন ছিল না, তখন আমাদের সমর্থন কেন চেয়েছিল?”

তিনি আরও বলেন, “তৎকালীন বিএনপি নেত্রী, যিনি এখনও দলের চেয়ারপারসন, তখন জামায়াত কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থে নয়, বরং দেশের স্বার্থেই বিএনপিকে সমর্থন দিয়েছিল। এরপর ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের দুঃশাসন যখন দেশকে অতিষ্ঠ করে তুলল, তখন শুধু দূর থেকে সমর্থন দেওয়া হয়নি; বরং লিখিত চুক্তির ভিত্তিতে চারদলীয় জোট গঠন করা হয়েছিল। তখন তো কেউ এ প্রশ্ন তোলেনি, এখন কেন তোলা হচ্ছে? এর জবাব বিএনপিকেই দিতে হবে।”

style="text-align: justify;">বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

বর্তমানে বিএনপি ও জামায়াত উভয়েই সরকারবিরোধী অবস্থানে রয়েছে, তবে তাদের রাজনৈতিক কৌশলে পার্থক্য দেখা যাচ্ছে। বিএনপি একদিকে বিরোধী দলগুলোর বৃহত্তর ঐক্য গড়তে চায়, অন্যদিকে জামায়াত এখনো এককভাবে টিকে থাকার কৌশল অবলম্বন করছে। নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে দুই দলের সম্পর্কের গতিপথ কী হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে নানা মত রয়েছে।

বিএনপি ও জামায়াতের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নির্ভর করবে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, জনগণের প্রতিক্রিয়া এবং আন্তর্জাতিক মহলের অবস্থানের ওপর। তবে আপাতত, দুই দলের মধ্যে দূরত্ব থাকা সত্ত্বেও তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ অভিন্ন থাকায় ভবিষ্যতে আবারও জোটবদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনাকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

সূত্র: প্রথম আলো