সময়: বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সরকারের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও আইএমএফ ঋণের প্রেক্ষাপট

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ০৯:৪৮:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / ১৬৮ Time View

Dr Saleh uddin ahmed

 

 

বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চলমান কর্মসূচির চতুর্থ কিস্তিসহ কোনো দাতা সংস্থার ঋণের জন্য একেবারে মরিয়া হয়ে নেই বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি জানিয়েছেন, দেশের কারেন্ট অ্যাকাউন্ট এবং ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স বর্তমানে ভালো অবস্থানে রয়েছে, যা অর্থনীতির স্থিতিশীলতা নির্দেশ করে।

রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজারের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি এবং ঋণ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সরকার একটি সুপরিকল্পিত কৌশল গ্রহণ করছে।

বিশ্বব্যাংকের শর্ত পূরণ নীতিগত পরিবর্তন

অর্থ উপদেষ্টা জানান, বিশ্বব্যাংকের দেওয়া শর্তগুলোর প্রায় সবগুলো পূরণ করেছে সরকার। নীতি প্রণয়ন ও রাজস্ব আদায়ের জন্য পৃথক বিভাগ গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে, যা রাজস্ব বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি করছাড় কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, যা অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক হবে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, আগামী জুনের মধ্যে আরও কিছু শর্ত বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।

আইএমএফের চতুর্থ কিস্তি সম্ভাব্য বিলম্ব

চতুর্থ কিস্তির ৬৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার ছাড়ের প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, মুদ্রাবিনিময় হার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে না দেওয়া এবং কর–রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় আইএমএফ ইতোমধ্যে পাঁচ ফেব্রুয়ারি থেকে এক মাস পিছিয়েছে।

তিনি বলেন, “আগামী মার্চে তাদের বোর্ড মিটিং হবে। এটি জুন পর্যন্ত পিছিয়ে যেতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি হলো— বর্তমানে দেশের কারেন্ট অ্যাকাউন্ট এবং ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স ভালো। তাই আমরা একেবারে মরিয়া হয়ে উঠিনি। শুধু আইএমএফের চতুর্থ কিস্তিই নয়, যেকোনো ঋণের বিষয়েই একই কথা।” তিনি আরও জানান, মার্চের আগে আইএমএফের সঙ্গে সরকারের আলোচনা হবে এবং ঋণের অন্যান্য শর্ত নিয়েও আলোচনা করা হবে।

বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনার বিষয়বস্তু

বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজার জানান, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে দেওয়া পরিসংখ্যানের স্বচ্ছতা, অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ বাড়ানো এবং অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে অন্যান্য সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে নীতি প্রণয়ন ও রাজস্ব আদায়ের জন্য দুটি পৃথক বিভাগ করার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আলোচনায় উঠে এসেছে। অর্থ উপদেষ্টা জানিয়েছেন যে, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে বিষয়টি অনুমোদিত হয়েছে এবং এটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে মার্টিন রাইজার বলেন, বিশ্বব্যাংক আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই এসব সংস্কারের অগ্রগতি দেখতে চায়। তবে তিনি স্বীকার করেন যে, সরকারের নির্দিষ্ট একটি প্রক্রিয়া রয়েছে এবং এর বাস্তবায়ন সময়সাপেক্ষ হতে পারে।

বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতি ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

অর্থনীতির বর্তমান চ্যালেঞ্জের বিষয়ে মার্টিন রাইজার বলেন, “সামষ্টিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তবে বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় দেশ।” তিনি আরও বলেন, করছাড় বা নতুন কর আরোপের মতো বিষয়গুলো আইনি প্রক্রিয়ায় বাজেটের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা উচিত। বিশ্বব্যাংক সরকারকে এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ স্পষ্ট করেন যে, সরকার কোনো আন্তর্জাতিক ঋণের জন্য মরিয়া নয়, বরং সুদূরপ্রসারী অর্থনৈতিক পরিকল্পনার ভিত্তিতে কাজ করছে। দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সরকার বিভিন্ন নীতিগত সংস্কার গ্রহণ করছে, যা ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভিত্তি স্থাপন করবে।

 

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সরকারের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও আইএমএফ ঋণের প্রেক্ষাপট

Update Time : ০৯:৪৮:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

 

 

বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চলমান কর্মসূচির চতুর্থ কিস্তিসহ কোনো দাতা সংস্থার ঋণের জন্য একেবারে মরিয়া হয়ে নেই বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি জানিয়েছেন, দেশের কারেন্ট অ্যাকাউন্ট এবং ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স বর্তমানে ভালো অবস্থানে রয়েছে, যা অর্থনীতির স্থিতিশীলতা নির্দেশ করে।

রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজারের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি এবং ঋণ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সরকার একটি সুপরিকল্পিত কৌশল গ্রহণ করছে।

বিশ্বব্যাংকের শর্ত পূরণ নীতিগত পরিবর্তন

অর্থ উপদেষ্টা জানান, বিশ্বব্যাংকের দেওয়া শর্তগুলোর প্রায় সবগুলো পূরণ করেছে সরকার। নীতি প্রণয়ন ও রাজস্ব আদায়ের জন্য পৃথক বিভাগ গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে, যা রাজস্ব বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি করছাড় কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, যা অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক হবে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, আগামী জুনের মধ্যে আরও কিছু শর্ত বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।

আইএমএফের চতুর্থ কিস্তি সম্ভাব্য বিলম্ব

চতুর্থ কিস্তির ৬৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার ছাড়ের প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, মুদ্রাবিনিময় হার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে না দেওয়া এবং কর–রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় আইএমএফ ইতোমধ্যে পাঁচ ফেব্রুয়ারি থেকে এক মাস পিছিয়েছে।

তিনি বলেন, “আগামী মার্চে তাদের বোর্ড মিটিং হবে। এটি জুন পর্যন্ত পিছিয়ে যেতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি হলো— বর্তমানে দেশের কারেন্ট অ্যাকাউন্ট এবং ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স ভালো। তাই আমরা একেবারে মরিয়া হয়ে উঠিনি। শুধু আইএমএফের চতুর্থ কিস্তিই নয়, যেকোনো ঋণের বিষয়েই একই কথা।” তিনি আরও জানান, মার্চের আগে আইএমএফের সঙ্গে সরকারের আলোচনা হবে এবং ঋণের অন্যান্য শর্ত নিয়েও আলোচনা করা হবে।

বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনার বিষয়বস্তু

বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজার জানান, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে দেওয়া পরিসংখ্যানের স্বচ্ছতা, অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ বাড়ানো এবং অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে অন্যান্য সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে নীতি প্রণয়ন ও রাজস্ব আদায়ের জন্য দুটি পৃথক বিভাগ করার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আলোচনায় উঠে এসেছে। অর্থ উপদেষ্টা জানিয়েছেন যে, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে বিষয়টি অনুমোদিত হয়েছে এবং এটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে মার্টিন রাইজার বলেন, বিশ্বব্যাংক আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই এসব সংস্কারের অগ্রগতি দেখতে চায়। তবে তিনি স্বীকার করেন যে, সরকারের নির্দিষ্ট একটি প্রক্রিয়া রয়েছে এবং এর বাস্তবায়ন সময়সাপেক্ষ হতে পারে।

বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতি ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

অর্থনীতির বর্তমান চ্যালেঞ্জের বিষয়ে মার্টিন রাইজার বলেন, “সামষ্টিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তবে বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় দেশ।” তিনি আরও বলেন, করছাড় বা নতুন কর আরোপের মতো বিষয়গুলো আইনি প্রক্রিয়ায় বাজেটের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা উচিত। বিশ্বব্যাংক সরকারকে এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ স্পষ্ট করেন যে, সরকার কোনো আন্তর্জাতিক ঋণের জন্য মরিয়া নয়, বরং সুদূরপ্রসারী অর্থনৈতিক পরিকল্পনার ভিত্তিতে কাজ করছে। দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সরকার বিভিন্ন নীতিগত সংস্কার গ্রহণ করছে, যা ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভিত্তি স্থাপন করবে।