রাষ্ট্রে হাসিনা সরকারের দোসরদের থাকা কি ফ্যাসিবাদের চিহ্ন নয়? প্রশ্ন মুশফিকুল ফজল আনসারীর

- Update Time : ০৪:৫২:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / ৮৭ Time View
ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে ভারতে পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাড়িসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্থাপনা বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন মেক্সিকোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া
নিজের ব্যক্তিগত অবস্থান জানিয়ে বুধবার রাতে ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তিনি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের মাটিতে ফ্যাসিবাদের চিহ্ন থাকবে কি না, কিংবা ব্যক্তিকেন্দ্রিক পূজা-অর্চনার স্থান টিকে থাকবে কি না- এ সিদ্ধান্ত একমাত্র দেশের জনগণের।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘তবে আমার প্রশ্ন, অগণিত ছাত্র-জনতার রক্ত যাদের হাতে, সেই নরপিশাচরা ও তাদের নেত্রী এত স্পর্ধা দেখায় কীভাবে? এই সাহস আসে কোথা থেকে? যারা এমন অপরাধ করেছে, যার সর্বোচ্চ শাস্তি হলেও ক্ষতিপূরণ হবার নয়, তাদের প্রতি কি কোনো সহানুভূতি প্রদর্শনের সুযোগ থাকতে পারে? শুধু ইট-বালু-পাথরের কংক্রিটই ফ্যাসিবাদের চিহ্ন? রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার বাঁকে বাঁকে এবং সুশীল সমাজের আবরণে হাসিনা সরকারের দোসরদের ঘাপটি মারা অবস্থান কি ফ্যাসিবাদের চিহ্ন নয়?’
বিতর্ক ও প্রতিক্রিয়া
মুশফিকুল ফজল আনসারীর এই মন্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কিছু মহল তার বক্তব্যকে সাহসী এবং জনগণের অধিকারের পক্ষে বলে ব্যাখ্যা করছেন, আবার কিছু মহল একে কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘনের উদাহরণ হিসেবে দেখছেন। অনেক বিশ্লেষকের মতে, একজন কূটনীতিকের এ ধরনের স্পষ্ট রাজনৈতিক অবস্থান গ্রহণ করা কূটনৈতিক শিষ্টাচারের পরিপন্থী হতে পারে।
বিরোধী দলগুলো মুশফিকুল ফজল আনসারীর বক্তব্যকে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে সাহসী অবস্থান বলে প্রশংসা করেছে, অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতারা এই বক্তব্যকে দায়িত্বজ্ঞানহীন ও বিভ্রান্তিকর হিসেবে অভিহিত করেছেন।
ব্যক্তিগত মতামত ও কূটনৈতিক প্রভাব
প্রসঙ্গত, স্ট্যাটাসটি একান্ত ব্যক্তিগত মত হিসেবে উল্লেখ করেন এই রাষ্ট্রদূত। তবে, একজন দায়িত্বশীল কূটনীতিকের এ ধরনের মন্তব্য কূটনৈতিক পরিমণ্ডলে কী প্রভাব ফেলতে পারে, তা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তার এই বক্তব্য ভবিষ্যতে বাংলাদেশ-মেক্সিকো কূটনৈতিক সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলতে পারে কিনা, তা পর্যবেক্ষণ করা দরকার।
সরকারের অবস্থান
সরকারের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে, আওয়ামী লীগের একাধিক নেতারা বলেছেন, কূটনৈতিক দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় রাষ্ট্রদূতদের উচিত নিরপেক্ষতা বজায় রাখা এবং রাষ্ট্রীয় শিষ্টাচার মেনে চলা। এর ফলে তার এই মন্তব্য রাষ্ট্রদূতের ভবিষ্যত কর্মজীবনে কোনো প্রভাব ফেলবে কি না, সেটি নিয়েও আলোচনা চলছে।
ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা
এ ধরনের মন্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিচ্ছে। কূটনৈতিক শিষ্টাচার মেনে রাষ্ট্রদূতদের নিজেদের ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশে আরও সংযত হওয়া উচিত কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাংলাদেশ সরকারের উচিত এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা প্রদান করা, যাতে বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি না ছড়ায়। একই সঙ্গে কূটনীতিকদের রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়ার বিষয়টি নিয়েও নতুন করে নীতিমালা প্রণয়ন করা হতে পারে।
সরকার বা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসা এখনো বাকি। তবে বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহলে আলোচনা চলমান রয়েছে এবং ভবিষ্যতে এটি আরও গুরুত্ব পেতে পারে।
Please Share This Post in Your Social Media

রাষ্ট্রে হাসিনা সরকারের দোসরদের থাকা কি ফ্যাসিবাদের চিহ্ন নয়? প্রশ্ন মুশফিকুল ফজল আনসারীর

ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে ভারতে পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাড়িসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্থাপনা বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন মেক্সিকোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া
নিজের ব্যক্তিগত অবস্থান জানিয়ে বুধবার রাতে ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তিনি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের মাটিতে ফ্যাসিবাদের চিহ্ন থাকবে কি না, কিংবা ব্যক্তিকেন্দ্রিক পূজা-অর্চনার স্থান টিকে থাকবে কি না- এ সিদ্ধান্ত একমাত্র দেশের জনগণের।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘তবে আমার প্রশ্ন, অগণিত ছাত্র-জনতার রক্ত যাদের হাতে, সেই নরপিশাচরা ও তাদের নেত্রী এত স্পর্ধা দেখায় কীভাবে? এই সাহস আসে কোথা থেকে? যারা এমন অপরাধ করেছে, যার সর্বোচ্চ শাস্তি হলেও ক্ষতিপূরণ হবার নয়, তাদের প্রতি কি কোনো সহানুভূতি প্রদর্শনের সুযোগ থাকতে পারে? শুধু ইট-বালু-পাথরের কংক্রিটই ফ্যাসিবাদের চিহ্ন? রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার বাঁকে বাঁকে এবং সুশীল সমাজের আবরণে হাসিনা সরকারের দোসরদের ঘাপটি মারা অবস্থান কি ফ্যাসিবাদের চিহ্ন নয়?’
বিতর্ক ও প্রতিক্রিয়া
মুশফিকুল ফজল আনসারীর এই মন্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কিছু মহল তার বক্তব্যকে সাহসী এবং জনগণের অধিকারের পক্ষে বলে ব্যাখ্যা করছেন, আবার কিছু মহল একে কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘনের উদাহরণ হিসেবে দেখছেন। অনেক বিশ্লেষকের মতে, একজন কূটনীতিকের এ ধরনের স্পষ্ট রাজনৈতিক অবস্থান গ্রহণ করা কূটনৈতিক শিষ্টাচারের পরিপন্থী হতে পারে।
বিরোধী দলগুলো মুশফিকুল ফজল আনসারীর বক্তব্যকে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে সাহসী অবস্থান বলে প্রশংসা করেছে, অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতারা এই বক্তব্যকে দায়িত্বজ্ঞানহীন ও বিভ্রান্তিকর হিসেবে অভিহিত করেছেন।
ব্যক্তিগত মতামত ও কূটনৈতিক প্রভাব
প্রসঙ্গত, স্ট্যাটাসটি একান্ত ব্যক্তিগত মত হিসেবে উল্লেখ করেন এই রাষ্ট্রদূত। তবে, একজন দায়িত্বশীল কূটনীতিকের এ ধরনের মন্তব্য কূটনৈতিক পরিমণ্ডলে কী প্রভাব ফেলতে পারে, তা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তার এই বক্তব্য ভবিষ্যতে বাংলাদেশ-মেক্সিকো কূটনৈতিক সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলতে পারে কিনা, তা পর্যবেক্ষণ করা দরকার।
সরকারের অবস্থান
সরকারের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে, আওয়ামী লীগের একাধিক নেতারা বলেছেন, কূটনৈতিক দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় রাষ্ট্রদূতদের উচিত নিরপেক্ষতা বজায় রাখা এবং রাষ্ট্রীয় শিষ্টাচার মেনে চলা। এর ফলে তার এই মন্তব্য রাষ্ট্রদূতের ভবিষ্যত কর্মজীবনে কোনো প্রভাব ফেলবে কি না, সেটি নিয়েও আলোচনা চলছে।
ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা
এ ধরনের মন্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিচ্ছে। কূটনৈতিক শিষ্টাচার মেনে রাষ্ট্রদূতদের নিজেদের ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশে আরও সংযত হওয়া উচিত কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাংলাদেশ সরকারের উচিত এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা প্রদান করা, যাতে বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি না ছড়ায়। একই সঙ্গে কূটনীতিকদের রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়ার বিষয়টি নিয়েও নতুন করে নীতিমালা প্রণয়ন করা হতে পারে।
সরকার বা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসা এখনো বাকি। তবে বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহলে আলোচনা চলমান রয়েছে এবং ভবিষ্যতে এটি আরও গুরুত্ব পেতে পারে।