সময়: বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলা:তিন দশক পর হাইকোর্টের চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৯ জনসহ সব আসামি খালাস

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ১২:২৪:০৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / ৭২ Time View

তিন দশক আগে পাবনার ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় হাইকোর্ট চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেছে। দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়া শেষে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জনসহ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ২৫ জনকেও খালাস দেওয়া হয়েছে।

হাইকোর্টের রায়: একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত

আজ ( ফেব্রুয়ারি, ২০২৫) বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুবউল ইসলাম বিচারপতি মোহাম্মদ হামিদুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। আদালত তার পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেন যে, ১৯৯৪ সালে পাবনার ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে শেখ হাসিনার ট্রেনে হামলার অভিযোগে দায়ের করা মামলাটি ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিদ্বেষমূলক। বিচারিক আদালতের রায় ছিল আইনের সঠিক প্রয়োগ থেকে বিচ্যুত এবং অমানবিক।

মামলার প্রেক্ষাপট: ৩০ বছরের দীর্ঘ লড়াই

১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর, পাবনার ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার ট্রেনকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। ওই সময় শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের একটি কর্মসূচিতে অংশ নিতে যাচ্ছিলেন। ঘটনায় তৎকালীন বিএনপি সরকার বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করে বলে আসামিপক্ষ দাবি করে আসছিল।

২০১৯ সালের বিচারিক আদালতের বিতর্কিত রায়

দীর্ঘদিন মামলা চলার পর ২০১৯ সালের জুলাই পাবনার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতএর বিচারক রুস্তম আলী এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।

জনকে মৃত্যুদণ্ড
২৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
১৩ জনকে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড

বিএনপি এই রায়কে ফরমায়েশি রায় বলে দাবি করেছিল এবং মামলাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক বলে উল্লেখ করেছিল।

হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ রায়

হাইকোর্ট আজকের রায়ে বলেছে যে, মামলাটি রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত ছিল এবং যথাযথ সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাব ছিল। আদালতের মতে, এটি একটি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করার উদ্দেশ্যে করা মামলা ছিল, যেখানে

নিরপেক্ষ তদন্ত বিচার হয়নি।

আসামিদের পরিচয়: মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস

হাইকোর্টের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জন যাদের খালাস দেওয়া হয়েছে, তারা হলেন:

জাকারিয়া পিন্টু (ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক)
মকলেছুর রহমান বাবলু (সাবেক মেয়র, বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতা)
শামসুল আলম (পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক প্যানেল মেয়র)
কে এম আখতারুজ্জামান (পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি)
মাহবুবুর রহমান পলাশ (বিএনপি নেতা)
রেজাউল করিম ভিপি শাহিন (ঈশ্বরদী উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি)
শহিদুল ইসলাম অটল (বিএনপি নেতা)
আজিজুর রহমান শাহিন (উপজেলা যুবদলের সভাপতি)
মোস্তফা নুরে আলম শ্যামল (ছাত্রনেতা)

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ

এই রায়ের পর বিএনপি নেতারা একে ন্যায়বিচারের জয় বলে উল্লেখ করেছেন, অন্যদিকে সরকারপন্থী বিশ্লেষকরা বলছেন যে, মামলার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে আরও তদন্ত করা প্রয়োজন।

বিএনপির প্রতিক্রিয়া: বিএনপি এই রায়কে ন্যায়বিচারের জয় বলে উল্লেখ করেছে এবং বলেছে যে, এই মামলায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করার জন্য সাজানো মামলা করা হয়েছিল।
সরকারপন্থী প্রতিক্রিয়া: আওয়ামী লীগপন্থী বিশ্লেষকরা বলছেন, এই মামলা বাতিল হলেও শেখ হাসিনার ওপর হামলা একটি বাস্তব ঘটনা, যা ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে।
আইন বিশেষজ্ঞদের মতামত: অনেক আইন বিশেষজ্ঞের মতে, এই মামলার রায় বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতার একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন।

এই রায়ের ভবিষ্যৎ প্রভাব

হাইকোর্টের এই রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার স্বচ্ছতা নিরপেক্ষতা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। এই রায় দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে বিএনপি আওয়ামী লীগের মধ্যকার রাজনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে।

এই মামলার দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়া এবং আজকের চূড়ান্ত রায় বাংলাদেশের আইনি ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে থাকবে।

 

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলা:তিন দশক পর হাইকোর্টের চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৯ জনসহ সব আসামি খালাস

Update Time : ১২:২৪:০৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

তিন দশক আগে পাবনার ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় হাইকোর্ট চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেছে। দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়া শেষে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জনসহ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ২৫ জনকেও খালাস দেওয়া হয়েছে।

হাইকোর্টের রায়: একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত

আজ ( ফেব্রুয়ারি, ২০২৫) বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুবউল ইসলাম বিচারপতি মোহাম্মদ হামিদুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। আদালত তার পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেন যে, ১৯৯৪ সালে পাবনার ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে শেখ হাসিনার ট্রেনে হামলার অভিযোগে দায়ের করা মামলাটি ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিদ্বেষমূলক। বিচারিক আদালতের রায় ছিল আইনের সঠিক প্রয়োগ থেকে বিচ্যুত এবং অমানবিক।

মামলার প্রেক্ষাপট: ৩০ বছরের দীর্ঘ লড়াই

১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর, পাবনার ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার ট্রেনকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। ওই সময় শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের একটি কর্মসূচিতে অংশ নিতে যাচ্ছিলেন। ঘটনায় তৎকালীন বিএনপি সরকার বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করে বলে আসামিপক্ষ দাবি করে আসছিল।

২০১৯ সালের বিচারিক আদালতের বিতর্কিত রায়

দীর্ঘদিন মামলা চলার পর ২০১৯ সালের জুলাই পাবনার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতএর বিচারক রুস্তম আলী এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।

জনকে মৃত্যুদণ্ড
২৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
১৩ জনকে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড

বিএনপি এই রায়কে ফরমায়েশি রায় বলে দাবি করেছিল এবং মামলাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক বলে উল্লেখ করেছিল।

হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ রায়

হাইকোর্ট আজকের রায়ে বলেছে যে, মামলাটি রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত ছিল এবং যথাযথ সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাব ছিল। আদালতের মতে, এটি একটি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করার উদ্দেশ্যে করা মামলা ছিল,

যেখানে নিরপেক্ষ তদন্ত বিচার হয়নি।

আসামিদের পরিচয়: মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস

হাইকোর্টের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জন যাদের খালাস দেওয়া হয়েছে, তারা হলেন:

জাকারিয়া পিন্টু (ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক)
মকলেছুর রহমান বাবলু (সাবেক মেয়র, বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতা)
শামসুল আলম (পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক প্যানেল মেয়র)
কে এম আখতারুজ্জামান (পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি)
মাহবুবুর রহমান পলাশ (বিএনপি নেতা)
রেজাউল করিম ভিপি শাহিন (ঈশ্বরদী উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি)
শহিদুল ইসলাম অটল (বিএনপি নেতা)
আজিজুর রহমান শাহিন (উপজেলা যুবদলের সভাপতি)
মোস্তফা নুরে আলম শ্যামল (ছাত্রনেতা)

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ

এই রায়ের পর বিএনপি নেতারা একে ন্যায়বিচারের জয় বলে উল্লেখ করেছেন, অন্যদিকে সরকারপন্থী বিশ্লেষকরা বলছেন যে, মামলার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে আরও তদন্ত করা প্রয়োজন।

বিএনপির প্রতিক্রিয়া: বিএনপি এই রায়কে ন্যায়বিচারের জয় বলে উল্লেখ করেছে এবং বলেছে যে, এই মামলায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করার জন্য সাজানো মামলা করা হয়েছিল।
সরকারপন্থী প্রতিক্রিয়া: আওয়ামী লীগপন্থী বিশ্লেষকরা বলছেন, এই মামলা বাতিল হলেও শেখ হাসিনার ওপর হামলা একটি বাস্তব ঘটনা, যা ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে।
আইন বিশেষজ্ঞদের মতামত: অনেক আইন বিশেষজ্ঞের মতে, এই মামলার রায় বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতার একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন।

এই রায়ের ভবিষ্যৎ প্রভাব

হাইকোর্টের এই রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার স্বচ্ছতা নিরপেক্ষতা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। এই রায় দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে বিএনপি আওয়ামী লীগের মধ্যকার রাজনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে।

এই মামলার দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়া এবং আজকের চূড়ান্ত রায় বাংলাদেশের আইনি ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে থাকবে।