বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের লকার ফ্রিজ: দুদকের নির্দেশনায় গভর্নরের পদক্ষেপ

- Update Time : ০৫:২৫:২৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / ১৮১ Time View
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরাপত্তা ভল্টে রক্ষিত লকারে কর্মকর্তাদের রাখা অর্থসম্পদ সাময়িক সময়ের জন্য স্থগিত (ফ্রিজ) করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ব্যাংকটির গভর্নরকে অনুরোধ জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কেউ যেন লকার খুলে রক্ষিত মালামাল নিতে না পারে, তা নিশ্চিত করার জন্যও পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।
দুদকের চিঠি ও তদন্তের পটভূমি
গত রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) দুদক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে এই অনুরোধ জানানো হয়েছে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েন ভল্টে রক্ষিত সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরীর ‘সেফ ডিপোজিট’ তল্লাশি করা হয়েছিল। এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য ছিল অবৈধ অর্থ ও সম্পদের ব্যবহার এবং সংরক্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ।
দুদকের অনুসন্ধান ও উদ্ধৃত সম্পদ
- ২৬ জানুয়ারি আদালতের অনুমতি নিয়ে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে দুদকের একটি দল ওই ভল্ট তল্লাশি করে।
- তিনটি সিলগালা কৌটা খুলে পাওয়া যায়:
- ৫৫ হাজার ইউরো
- ১ লাখ ৬৯ হাজার ৩০০ মার্কিন ডলার
- ১ কেজি ৫ দশমিক ৪ গ্রাম সোনা
- ৭০ লাখ টাকার এফডিআর (ফিক্সড ডিপোজিট রসিদ)
- এই বিশাল পরিমাণ সম্পদের প্রকৃত উৎস ও করযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দুদক নিশ্চিত করতে চায় যে এগুলো অবৈধভাবে অর্জিত হয়নি।
আরও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সন্দেহ
তল্লাশিকালে রেজিস্ট্রার পরীক্ষা করে দেখা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্য কয়েকজন কর্মকর্তাও সিলগালা করে অর্থসম্পদ রেখেছেন। দুদক মনে করছে, এসব সিলগালা কোটায়ও অপ্রদর্শিত সম্পদ থাকতে পারে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের আয়ের উৎস ও কর পরিশোধের হিসাব তদন্ত করে দেখা হবে।
চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার, ঘুষ গ্রহণ, এবং দুর্নীতি-সম্পর্কিত নানা অভিযোগে অনুসন্ধান চলমান থাকার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
সম্পদ ফ্রিজ করার অনুরোধ
এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের লকারে থাকা অর্থসম্পদ সাময়িকভাবে স্থগিত (ফ্রিজ) করার অনুরোধ জানিয়েছে দুদক। লকার ফ্রিজ করার ফলে ওই কর্মকর্তারা কোনো ধরনের সম্পদ সরাতে পারবেন না এবং তদন্ত কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে না।
অর্থ উপদেষ্টার সম্মতি
বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত সম্পদ নিয়ে গত ৩০ জানুয়ারি অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে দুদকের চেয়ারম্যানের আলোচনা হয়। চিঠিতে বলা হয়েছে, অর্থ উপদেষ্টা ওই ভল্টে রক্ষিত সম্পদ সাময়িক স্থগিত করার (ফ্রিজ) সম্মতি দিয়েছেন।
ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ ও আইনি কার্যক্রম
- বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
- দুদক সন্দেহভাজন কর্মকর্তাদের সম্পদ বিবরণী চেয়ে নোটিশ দিতে পারে।
- অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পেলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হতে পারে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে দুর্নীতি দমন কমিশনের চলমান তদন্ত আরও গভীরে গিয়ে অর্থ পাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়টি খতিয়ে দেখার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এটি দেশের আর্থিক খাতের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
Please Share This Post in Your Social Media

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের লকার ফ্রিজ: দুদকের নির্দেশনায় গভর্নরের পদক্ষেপ

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরাপত্তা ভল্টে রক্ষিত লকারে কর্মকর্তাদের রাখা অর্থসম্পদ সাময়িক সময়ের জন্য স্থগিত (ফ্রিজ) করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ব্যাংকটির গভর্নরকে অনুরোধ জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কেউ যেন লকার খুলে রক্ষিত মালামাল নিতে না পারে, তা নিশ্চিত করার জন্যও পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।
দুদকের চিঠি ও তদন্তের পটভূমি
গত রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) দুদক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে এই অনুরোধ জানানো হয়েছে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েন ভল্টে রক্ষিত সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরীর ‘সেফ ডিপোজিট’ তল্লাশি করা হয়েছিল। এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য ছিল অবৈধ অর্থ ও সম্পদের ব্যবহার এবং সংরক্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ।
দুদকের অনুসন্ধান ও উদ্ধৃত সম্পদ
- ২৬ জানুয়ারি আদালতের অনুমতি নিয়ে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে দুদকের একটি দল ওই ভল্ট তল্লাশি করে।
- তিনটি সিলগালা কৌটা খুলে পাওয়া যায়:
- ৫৫ হাজার ইউরো
- ১ লাখ ৬৯ হাজার ৩০০ মার্কিন ডলার
- ১ কেজি ৫ দশমিক ৪ গ্রাম সোনা
- ৭০ লাখ টাকার এফডিআর (ফিক্সড ডিপোজিট রসিদ)
- এই বিশাল পরিমাণ সম্পদের প্রকৃত উৎস ও করযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দুদক নিশ্চিত করতে চায় যে এগুলো অবৈধভাবে অর্জিত হয়নি।
আরও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সন্দেহ
তল্লাশিকালে রেজিস্ট্রার পরীক্ষা করে দেখা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্য কয়েকজন কর্মকর্তাও সিলগালা করে অর্থসম্পদ রেখেছেন। দুদক মনে করছে, এসব সিলগালা কোটায়ও অপ্রদর্শিত সম্পদ থাকতে পারে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের আয়ের উৎস ও কর পরিশোধের হিসাব তদন্ত করে দেখা হবে।
চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার, ঘুষ গ্রহণ, এবং দুর্নীতি-সম্পর্কিত নানা অভিযোগে অনুসন্ধান চলমান থাকার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
সম্পদ ফ্রিজ করার অনুরোধ
এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের লকারে থাকা অর্থসম্পদ সাময়িকভাবে স্থগিত (ফ্রিজ) করার অনুরোধ জানিয়েছে দুদক। লকার ফ্রিজ করার ফলে ওই কর্মকর্তারা কোনো ধরনের সম্পদ সরাতে পারবেন না এবং তদন্ত কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে না।
অর্থ উপদেষ্টার সম্মতি
বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত সম্পদ নিয়ে গত ৩০ জানুয়ারি অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে দুদকের চেয়ারম্যানের আলোচনা হয়। চিঠিতে বলা হয়েছে, অর্থ উপদেষ্টা ওই ভল্টে রক্ষিত সম্পদ সাময়িক স্থগিত করার (ফ্রিজ) সম্মতি দিয়েছেন।
ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ ও আইনি কার্যক্রম
- বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
- দুদক সন্দেহভাজন কর্মকর্তাদের সম্পদ বিবরণী চেয়ে নোটিশ দিতে পারে।
- অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পেলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হতে পারে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে দুর্নীতি দমন কমিশনের চলমান তদন্ত আরও গভীরে গিয়ে অর্থ পাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়টি খতিয়ে দেখার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এটি দেশের আর্থিক খাতের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।