“দেশের ভবিষ্যত ও ফ্যাসিজম: আমরা কোথায় যাচ্ছি?”

- Update Time : ০২:১৮:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / ১৩৭ Time View
আজ সকাল থেকে মনটা ভীষণ খারাপ লাগছে। ফেসবুক খুললেই ষড়যন্ত্র, ইউটিউবে গেলেও একই আলোচনা, আর নিউজপেপারের পাতায় পাতায় দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে অস্থিরতার খবর—সব মিলিয়ে যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে। দেশ কোন দিকে যাচ্ছে, কী ঘটছে পর্দার আড়ালে, আমরা সাধারণ মানুষ তা জানতেও পারছি না, বুঝতেও পারছি না। আমার স্ত্রী সবসময় বলে, “আদা ব্যাপারীর জাহাজের খবর নিয়ে লাভ কী? এত খোঁজ নিয়ে কী হবে, তোমার কথায় কিছু বদলাবে?” ভাবতেই অবাক লাগে, সত্যিই তো, আমার কী আছে? না আছে টাকা-পয়সা, না আছে কোনো উচ্চপদ, তাহলে আমার কথা শুনবেই বা কে? হয়তো কেউ শোনে না, হয়তো আমার বলা কথাগুলো বাতাসে মিলিয়ে যায়, তবু আমি থামবো না, কারণ সত্য উচ্চারণ করাটাই আমার ঈমানী দায়িত্ব।কেউ শুনুক বা না শুনুক— আমি বলবো।
আমি আমার স্ত্রীকে বলি, “তুমি জানো, আমার বাবা ছিলেন একজন সার্টিফিকেট ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা। তিনি কোন অফিসিয়াল প্রশংসাপত্র না পেয়ে একদমই সহজ জীবন কাটিয়েছেন, কিন্তু আমাদের জন্য তিনি ছিলেন সত্যিকার একজন নায়ক। তার কাছে কখনো কিছু চাওয়ার সুযোগ পাইনি, কিন্তু দেশের জন্য তার ত্যাগ, তার অবদান কখনো ভুলতে পারবো না। আমরা, যারা তাঁর মতো মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান, কখনো তাদের অবদান নিয়ে আফসোস করব না। আমাদের অন্তরে তাঁদের আদর্শ বেঁচে থাকে, তা জানিয়ে আমি আরও বলি, ‘আমার সন্তানদের কাছে আমি চেষ্টা করেছি, সেই মুক্তিযুদ্ধের মূল্য বুঝিয়ে দিতে, যাতে তারা কখনো মিথ্যা ইতিহাসে বিশ্বাস না করে।'”
তারপর আমি বলি, “তুমি তো জানো, যখন আমি সৌদি আরবে ব্যাংকের রেমিট্যান্স সেন্টারে অপারেশন ম্যানেজার ছিলাম, কতো কঠিন সময়ে, কতো মানুষকে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে উৎসাহিত করেছি। প্রায় ২৫ বছর ধরে বাংলাদেশিদের সহায়তা করতে, তাদের এই ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের সুবিধাগুলো জানাতে কখনো এক মিনিটের জন্যও থেমে থাকিনি। আমি জানতাম, রেমিট্যান্স আমাদের দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এটা আমাদের অর্থনীতির প্রাণ। অথচ, সেই সময় আমি প্রতিদিন কতজন প্রবাসীকে বোঝাতাম, ‘হুন্ডিতে টাকা না পাঠিয়ে, ব্যাংকিং চ্যানেলই ব্যবহার করো, কারণ এটা দেশের জন্য ভালো, দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে।’ আমি জানতাম, যদি একটুও মানুষকে বুঝাতে পারি, তাহলে তা দেশের উন্নতিতে সহায়ক হবে, আর সেই জন্য আমি পরিশ্রম করেছি। প্রতিদিন শত শত মানুষকে রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য উৎসাহিত করা, সাহায্য করা, এটা আমার কাজ ছিল।”
“কিন্তু আজ আমি যা দেখছি, তা কেমন? দেশের ব্যাংকগুলোর বর্তমান অবস্থা, রিজার্ভের অস্বাভাবিক হ্রাস, সবকিছু যেন ধ্বংস হয়ে গেছে। আজকের রাজনৈতিক নেতৃত্বের দিকে তাকালে মনে হয়, আমরা এক বিশাল ফাঁদে পড়েছি। ব্যাংকগুলো আজ দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা আর নানান অপকর্মে ডুবে আছে। তাদের অবস্থা এমন যে, দেশের অর্থনীতি একেবারে বিপর্যস্ত এবং এর জন্য দায়ী বিগত আওয়ামীগ সরকার , এই ফ্যাসিস্টরা দেশের সম্পদ লুটে নিয়ে বিদেশে পাচার করছে, দেশের জনগণের সাথে বেঈমানি করছে। আর আজ আমরা, যারা সৎ পথে চলেছি, যারা দেশকে ভালোবাসি, একেবারে বিপন্ন অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছি।”
“আজ আমাদের পরিস্থিতি এমন যে, আমরা কোনো দিশা পাচ্ছি না, না জানি কেমন হবে ভবিষ্যৎ, না বুঝতে পারছি দেশ কোথায় যাচ্ছে। অথচ, আমরা নিজেদের জীবনব্যাপী দেশের জন্য কিছু একটা করতে চেয়েছি, অন্যদের জন্য কিছু ভালো কিছু করতে চেয়েছি। অথচ এখন দেখছি, সবকিছু যেন আমাদের হাতের মুঠো থেকে ফসকে যাচ্ছে, আর যারা দেশের সম্পদ লুটে নিচ্ছে, তারা নির্বিঘ্নে তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এটা কি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায়?
এজন্য আজ আমি কথা বলছি, কারণ মনকে আর শান্ত করতে পারছি না। দেশে কী হচ্ছে, কেমন চলছে সবকিছু, তা নিয়ে আমার ভেতর তীব্র ক্ষোভ আর হতাশা জমে উঠেছে। দিনরাত যখন দেখি রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি, অর্থ পাচার আর জনগণের টাকা লুটপাটের খবর, তখন মনে হয় যেন আমি আর সহ্য করতে পারছি না। এর জন্য যদি আমাকে কোনো শাস্তি হয়, যেমন জেল, জরিমানা কিংবা ফাঁসি—তাহলে সেটাও আমি মেনে নেবো, কারণ সত্য বলতে আর চুপ থাকা সম্ভব নয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠার পর ছয় মাস পেরিয়ে গেছে , অনেকেই গ্রেফতার হয়েছে, যারা দেশি-বিদেশি ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ টাকা পাচার করেছে, আর কিছু ব্যাক্তি ডিফল্ট লোনের কারণে দেশের ব্যাংকিং সিস্টেমকে সংকটে ফেলেছে। তাদের গ্রেফতার তো হয়েছে, কিন্তু কেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে তাদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে না? কেন দেশের জন্য তাদের অবৈধ সম্পদ ফিরিয়ে আনতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না? কেন দেরি করা হচ্ছে এই অপরাধীদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে?
আজ আমরা এমন এক পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আছি যেখানে জনগণ চুপ করে বসে থাকবে না, চুপ থাকার কোনো মানে নেই। সরকারের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা, এবং যেখানে দরকার সেখানে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করা। অথচ তা করা হচ্ছে না। তাদের অবৈধ সম্পদের পাহাড়ের পর পাহাড় বানানো হচ্ছে, আর জনগণ দরিদ্র হয়ে পড়ছে। আর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, কেন আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে এসব ফ্যাসিস্ট খুনিদের বিরুদ্ধে শাস্তির আওতা তৈরি হচ্ছে না? আর কত প্রমাণ দরকার, যে এতদিন ধরে আমাদের দেশকে শোষণ করা হয়েছে? এরা কি পার পেয়ে যাবে? শুধু আমার ভয় নয়, পুরো জাতির ভয়—আসল অপরাধীরা হয়তো একসময় পার পেয়ে যাবে এবং তাদের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডগুলো অব্যাহত থাকবে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়া হলে দেশ কখনোই উন্নতির পথে এগিয়ে যেতে পারবে না। দেশে তো মীরজাফরের অভাব নেই, যারা দেশের ভালো-মন্দের চেয়ে তাদের নিজেদের স্বার্থটাই বড় মনে মীরজাফরেরা যদি একসাথে এসে এই ফ্যাসিস্টদের সঙ্গে হাত মিলায়, তাহলে দেশ আরও বড় বিপদে পড়বে, এবং তার পরিণতি হবে সাংঘাতিক। তারাই যদি শোষণকারী শক্তির পাশে দাঁড়ায়, তাহলে দেশের সাধারণ মানুষের ভবিষ্যৎ কি হবে? জনগণের অধিকার কোথায় যাবে? এসব প্রশ্ন আমাকে গভীরভাবে ভাবাচ্ছে এবং আমি জানি, আমার মতো আরো অনেকে এসব নিয়ে চিন্তা করছে।
বলতে আর অপেক্ষা রাখে না, কারণ দেশে যে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তাতে সত্যিই আমাদের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। আমরা এখন এক অদ্ভুত পরিস্থিতিতে আছি, যেখানে ফ্যাসিস্টদের তৈরি করা পরিবেশের মধ্যে আমাদের প্রতিদিনের জীবন চলছে। সরকার ও প্রশাসনের অনেক অংশ, এমনকি দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর, ফ্যাসিস্টদের সমর্থক বা তাদের সহযোগীদের দ্বারা পূর্ণ। এমনকি অনেক আমলাও তাদেরই সঙ্গে যুক্ত, যারা এই পরিবেশকে আরও খারাপ করে চলেছে। আমাদের দেশের জনগণের মধ্যে আশা ছিল, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কারের মাধ্যমে কিছু পরিবর্তন নিয়ে আসবে, একটা নতুন দিশা দেখাবে। আমরা সবাই অনেক খুশি হয়েছিলাম, কারণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ছিল একটি সম্ভাবনা, যে কিছুটা হলেও আমাদের সমস্যার সমাধান করতে পারবে। কিন্তু আজ, যত দেরি হচ্ছে, তত ফ্যাসিস্টরা তাদের পুরোনো সহযোগীদের হাত ধরে আবার ক্ষমতায় ফিরে আসতে চাইছে এবং চেষ্টা করছে প্রতিনিয়ত।
আর তাই, যখন আমরা দেখছি, ফ্যাসিস্টদের দোসররা এখনো আমাদের সমাজে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, তখন সত্যিই অবাক লাগে। কেন তারা গ্রেফতার হচ্ছে না? কেন তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না? আজও তাদের অবস্থান অনেক শক্তিশালী, আর এই শক্তি তারা ব্যবহার করছে নিজেদের স্বার্থে। যেহেতু এরা সমাজের এক বড় অংশ, তারা নিজেদের অবস্থান শক্ত করার জন্য আরও বেশি অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের প্রশ্ন, যখন দেশের উন্নতির জন্য এসব অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি, তখন কেন তারা ছাড়া পাচ্ছে? তাদের যদি শাস্তি না হয়, তাহলে আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা কি কখনো পূর্ণ হবে? দেশের ভবিষ্যৎ কি সত্যিই বিপন্ন হবে না? আজ যদি ফ্যাসিস্টদের মোকাবিলা না করা যায়, তাহলে ভবিষ্যতে এই শক্তি আরও বেড়ে যাবে এবং সমাজে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের মন্তব্য যে, “ফ্যাসিস্টদের মাথা দেশ থেকে চলে গেলেও শরীরটা দেশে রয়ে গেছে,” এটি একদিকে যেমন দেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা ও পরিস্থিতি সম্পর্কে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করছে, তেমনি এটি দেশের ভেতরকার শক্তি সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইঙ্গিতও দেয়। তারেক রহমানের এই বক্তব্য আসলে এক গভীর তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের প্রতিফলন, যেখানে তিনি দেশে শোষণ, নির্যাতন ও অপশাসনের দীর্ঘদিনের প্রভাবের কথা উল্লেখ করছেন। তিনি এখানে জানাচ্ছেন যে, ফ্যাসিস্ট শক্তির ক্ষমতা হয়তো বিলুপ্ত হয়েছে, তবে তাদের সমর্থকরা এখনও সমাজের বিভিন্ন স্তরে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করছে, এবং তারা একসময় পুনরায় শক্তিশালী হতে পারে, যা দেশের গণতন্ত্র এবং নাগরিক স্বাধীনতার জন্য মারাত্মক হুমকি হতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে, দেশের সাধারণ জনগণের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হওয়া অস্বাভাবিক নয়, কারণ এ ধরনের রাজনৈতিক শক্তি যখন সক্রিয় থাকে, তখন জাতির উন্নতি এবং স্বাধীনতার জন্য বিপদ সৃষ্টি হয়। এই ফ্যাসিস্ট শক্তির ‘শরীর’ এখনও সক্রিয় থাকার কারণে, দেশের আইনের শাসন, গণতন্ত্র, বিচার ব্যবস্থা, এবং মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো বিপদের মুখে পড়ছে। তাদের চালিত অপশাসন এবং দুর্নীতি জাতির জন্য বিপর্যয়কর প্রভাব ফেলতে পারে, যা একসময় জাতিকে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিকভাবে পিছিয়ে ফেলতে পারে।
ফ্যাসিস্টদের পুনরায় ক্ষমতায় ফিরে আসার সম্ভাবনা নিয়ে যে ভয় তৈরী হয়েছে, তা সত্যিই উদ্বেগজনক। যদি তারা তাদের আগের অবস্থান পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়, তাহলে দেশ একটি অন্ধকার যুগের দিকে এগিয়ে যাবে, যেখানে মানুষের স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে। তাদের অস্তিত্ব সমাজের শোষণকারী ও বিভাজনকারী শক্তি হিসেবে কাজ করবে, যা দেশকে শুধু ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবে না, বরং দেশের জনগণের মধ্যে অসন্তোষ এবং বিদ্বেষও ছড়িয়ে দেবে।
এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে প্রয়োজন দেশের সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সব ধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। দেশের গণতন্ত্র, সুশাসন এবং মানবাধিকার রক্ষায় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা, এবং ফ্যাসিস্ট শক্তির পুনরায় উত্থান ঠেকাতে রাজনৈতিক এবং আইনি ব্যবস্থাগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। জনগণের একত্রিত কণ্ঠে এই শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে, যাতে তারা আর কোনোদিন দেশের ভবিষ্যত বিপন্ন করতে না পারে।
ফ্যাসিস্টরা যেন কোনোভাবেই দেশে আবার ফিরে আসতে না পারে, তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি, কারণ যদি তারা আবার ফিরে আসে, তবে দেশের পরিস্থিতি আগের মতোই বিপদমুক্ত থাকবে না। জনগণের অধিকার, স্বাধীনতা এবং দেশের গণতন্ত্রের প্রতি তাদের হুমকি চিরকালী হতে পারে। তারা দেশকে পিছিয়ে দিয়ে শোষণ ও অবিচারের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারে, যা দেশের ভবিষ্যতকে অন্ধকারে ফেলে দেবে। একে কেন্দ্র করে আমরা আজ, পুরো জাতি, একত্রিত হয়ে এই বার্তা দিতে চাই—ফ্যাসিস্টদের কোনো অবস্থাতেই আবার ক্ষমতায় আসতে দেওয়া যাবে না। এর জন্য প্রয়োজন যত দ্রুত সম্ভব অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাধ্যমে সঠিক সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা এবং নির্বাচন নির্ধারণ করা।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি দ্রুত সংস্কার কার্যক্রম শুরু না করে, তাহলে ফ্যাসিস্ট শক্তির পুনরুত্থান ঠেকানো সম্ভব হবে না। দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা তাদের পুনঃপ্রতিষ্ঠিত শক্তির বিরুদ্ধে অরক্ষিত থাকবে। দেশে আইনশৃঙ্খলা, সুশাসন এবং স্বচ্ছতার অভাব থাকলে, জনগণ কোনভাবেই নিরাপদ অনুভব করবে না। তাই, সরকারের কাছে আমাদের আকুল অনুরোধ—যত দ্রুত সম্ভব এই সংস্কারগুলো শেষ করে নিরপেক্ষ ও মুক্ত নির্বাচন পরিচালনা করুন, যাতে দেশের জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে সঠিক নেতৃত্ব নির্বাচন করতে পারে। এই নির্বাচনই হতে পারে আমাদের ভবিষ্যতের পথচলার সঠিক দিকনির্দেশনা, এবং এর মাধ্যমেই আমরা একটি নতুন, শক্তিশালী, এবং শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে পারব।
যত দ্রুত নির্বাচন হবে, তত দ্রুত দেশ তার সঠিক পথে ফিরতে পারবে। এ ছাড়া, দেশের জনগণের মধ্যে আস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ঘটবে এবং দেশের উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথ সুগম হবে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসেই দেশের সুষ্ঠু ভবিষ্যত নিশ্চিত হবে, যেখানে ফ্যাসিস্টদের আর কোনো জায়গা থাকবে না।
Please Share This Post in Your Social Media

“দেশের ভবিষ্যত ও ফ্যাসিজম: আমরা কোথায় যাচ্ছি?”

আজ সকাল থেকে মনটা ভীষণ খারাপ লাগছে। ফেসবুক খুললেই ষড়যন্ত্র, ইউটিউবে গেলেও একই আলোচনা, আর নিউজপেপারের পাতায় পাতায় দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে অস্থিরতার খবর—সব মিলিয়ে যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে। দেশ কোন দিকে যাচ্ছে, কী ঘটছে পর্দার আড়ালে, আমরা সাধারণ মানুষ তা জানতেও পারছি না, বুঝতেও পারছি না। আমার স্ত্রী সবসময় বলে, “আদা ব্যাপারীর জাহাজের খবর নিয়ে লাভ কী? এত খোঁজ নিয়ে কী হবে, তোমার কথায় কিছু বদলাবে?” ভাবতেই অবাক লাগে, সত্যিই তো, আমার কী আছে? না আছে টাকা-পয়সা, না আছে কোনো উচ্চপদ, তাহলে আমার কথা শুনবেই বা কে? হয়তো কেউ শোনে না, হয়তো আমার বলা কথাগুলো বাতাসে মিলিয়ে যায়, তবু আমি থামবো না, কারণ সত্য উচ্চারণ করাটাই আমার ঈমানী দায়িত্ব।কেউ শুনুক বা না শুনুক— আমি বলবো।
আমি আমার স্ত্রীকে বলি, “তুমি জানো, আমার বাবা ছিলেন একজন সার্টিফিকেট ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা। তিনি কোন অফিসিয়াল প্রশংসাপত্র না পেয়ে একদমই সহজ জীবন কাটিয়েছেন, কিন্তু আমাদের জন্য তিনি ছিলেন সত্যিকার একজন নায়ক। তার কাছে কখনো কিছু চাওয়ার সুযোগ পাইনি, কিন্তু দেশের জন্য তার ত্যাগ, তার অবদান কখনো ভুলতে পারবো না। আমরা, যারা তাঁর মতো মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান, কখনো তাদের অবদান নিয়ে আফসোস করব না। আমাদের অন্তরে তাঁদের আদর্শ বেঁচে থাকে, তা জানিয়ে আমি আরও বলি, ‘আমার সন্তানদের কাছে আমি চেষ্টা করেছি, সেই মুক্তিযুদ্ধের মূল্য বুঝিয়ে দিতে, যাতে তারা কখনো মিথ্যা ইতিহাসে বিশ্বাস না করে।'”
তারপর আমি বলি, “তুমি তো জানো, যখন আমি সৌদি আরবে ব্যাংকের রেমিট্যান্স সেন্টারে অপারেশন ম্যানেজার ছিলাম, কতো কঠিন সময়ে, কতো মানুষকে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে উৎসাহিত করেছি। প্রায় ২৫ বছর ধরে বাংলাদেশিদের সহায়তা করতে, তাদের এই ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের সুবিধাগুলো জানাতে কখনো এক মিনিটের জন্যও থেমে থাকিনি। আমি জানতাম, রেমিট্যান্স আমাদের দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এটা আমাদের অর্থনীতির প্রাণ। অথচ, সেই সময় আমি প্রতিদিন কতজন প্রবাসীকে বোঝাতাম, ‘হুন্ডিতে টাকা না পাঠিয়ে, ব্যাংকিং চ্যানেলই ব্যবহার করো, কারণ এটা দেশের জন্য ভালো, দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে।’ আমি জানতাম, যদি একটুও মানুষকে বুঝাতে পারি, তাহলে তা দেশের উন্নতিতে সহায়ক হবে, আর সেই জন্য আমি পরিশ্রম করেছি। প্রতিদিন শত শত মানুষকে রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য উৎসাহিত করা, সাহায্য করা, এটা আমার কাজ ছিল।”
“কিন্তু আজ আমি যা দেখছি, তা কেমন? দেশের ব্যাংকগুলোর বর্তমান অবস্থা, রিজার্ভের অস্বাভাবিক হ্রাস, সবকিছু যেন ধ্বংস হয়ে গেছে। আজকের রাজনৈতিক নেতৃত্বের দিকে তাকালে মনে হয়, আমরা এক বিশাল ফাঁদে পড়েছি। ব্যাংকগুলো আজ দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা আর নানান অপকর্মে ডুবে আছে। তাদের অবস্থা এমন যে, দেশের অর্থনীতি একেবারে বিপর্যস্ত এবং এর জন্য দায়ী বিগত আওয়ামীগ সরকার , এই ফ্যাসিস্টরা দেশের সম্পদ লুটে নিয়ে বিদেশে পাচার করছে, দেশের জনগণের সাথে বেঈমানি করছে। আর আজ আমরা, যারা সৎ পথে চলেছি, যারা দেশকে ভালোবাসি, একেবারে বিপন্ন অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছি।”
“আজ আমাদের পরিস্থিতি এমন যে, আমরা কোনো দিশা পাচ্ছি না, না জানি কেমন হবে ভবিষ্যৎ, না বুঝতে পারছি দেশ কোথায় যাচ্ছে। অথচ, আমরা নিজেদের জীবনব্যাপী দেশের জন্য কিছু একটা করতে চেয়েছি, অন্যদের জন্য কিছু ভালো কিছু করতে চেয়েছি। অথচ এখন দেখছি, সবকিছু যেন আমাদের হাতের মুঠো থেকে ফসকে যাচ্ছে, আর যারা দেশের সম্পদ লুটে নিচ্ছে, তারা নির্বিঘ্নে তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এটা কি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায়?
এজন্য আজ আমি কথা বলছি, কারণ মনকে আর শান্ত করতে পারছি না। দেশে কী হচ্ছে, কেমন চলছে সবকিছু, তা নিয়ে আমার ভেতর তীব্র ক্ষোভ আর হতাশা জমে উঠেছে। দিনরাত যখন দেখি রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি, অর্থ পাচার আর জনগণের টাকা লুটপাটের খবর, তখন মনে হয় যেন আমি আর সহ্য করতে পারছি না। এর জন্য যদি আমাকে কোনো শাস্তি হয়, যেমন জেল, জরিমানা কিংবা ফাঁসি—তাহলে সেটাও আমি মেনে নেবো, কারণ সত্য বলতে আর চুপ থাকা সম্ভব নয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠার পর ছয় মাস পেরিয়ে গেছে , অনেকেই গ্রেফতার হয়েছে, যারা দেশি-বিদেশি ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ টাকা পাচার করেছে, আর কিছু ব্যাক্তি ডিফল্ট লোনের কারণে দেশের ব্যাংকিং সিস্টেমকে সংকটে ফেলেছে। তাদের গ্রেফতার তো হয়েছে, কিন্তু কেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে তাদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে না? কেন দেশের জন্য তাদের অবৈধ সম্পদ ফিরিয়ে আনতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না? কেন দেরি করা হচ্ছে এই অপরাধীদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে?
আজ আমরা এমন এক পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আছি যেখানে জনগণ চুপ করে বসে থাকবে না, চুপ থাকার কোনো মানে নেই। সরকারের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা, এবং যেখানে দরকার সেখানে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করা। অথচ তা করা হচ্ছে না। তাদের অবৈধ সম্পদের পাহাড়ের পর পাহাড় বানানো হচ্ছে, আর জনগণ দরিদ্র হয়ে পড়ছে। আর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, কেন আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে এসব ফ্যাসিস্ট খুনিদের বিরুদ্ধে শাস্তির আওতা তৈরি হচ্ছে না? আর কত প্রমাণ দরকার, যে এতদিন ধরে আমাদের দেশকে শোষণ করা হয়েছে? এরা কি পার পেয়ে যাবে? শুধু আমার ভয় নয়, পুরো জাতির ভয়—আসল অপরাধীরা হয়তো একসময় পার পেয়ে যাবে এবং তাদের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডগুলো অব্যাহত থাকবে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়া হলে দেশ কখনোই উন্নতির পথে এগিয়ে যেতে পারবে না। দেশে তো মীরজাফরের অভাব নেই, যারা দেশের ভালো-মন্দের চেয়ে তাদের নিজেদের স্বার্থটাই বড় মনে মীরজাফরেরা যদি একসাথে এসে এই ফ্যাসিস্টদের সঙ্গে হাত মিলায়, তাহলে দেশ আরও বড় বিপদে পড়বে, এবং তার পরিণতি হবে সাংঘাতিক। তারাই যদি শোষণকারী শক্তির পাশে দাঁড়ায়, তাহলে দেশের সাধারণ মানুষের ভবিষ্যৎ কি হবে? জনগণের অধিকার কোথায় যাবে? এসব প্রশ্ন আমাকে গভীরভাবে ভাবাচ্ছে এবং আমি জানি, আমার মতো আরো অনেকে এসব নিয়ে চিন্তা করছে।
বলতে আর অপেক্ষা রাখে না, কারণ দেশে যে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তাতে সত্যিই আমাদের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। আমরা এখন এক অদ্ভুত পরিস্থিতিতে আছি, যেখানে ফ্যাসিস্টদের তৈরি করা পরিবেশের মধ্যে আমাদের প্রতিদিনের জীবন চলছে। সরকার ও প্রশাসনের অনেক অংশ, এমনকি দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর, ফ্যাসিস্টদের সমর্থক বা তাদের সহযোগীদের দ্বারা পূর্ণ। এমনকি অনেক আমলাও তাদেরই সঙ্গে যুক্ত, যারা এই পরিবেশকে আরও খারাপ করে চলেছে। আমাদের দেশের জনগণের মধ্যে আশা ছিল, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কারের মাধ্যমে কিছু পরিবর্তন নিয়ে আসবে, একটা নতুন দিশা দেখাবে। আমরা সবাই অনেক খুশি হয়েছিলাম, কারণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ছিল একটি সম্ভাবনা, যে কিছুটা হলেও আমাদের সমস্যার সমাধান করতে পারবে। কিন্তু আজ, যত দেরি হচ্ছে, তত ফ্যাসিস্টরা তাদের পুরোনো সহযোগীদের হাত ধরে আবার ক্ষমতায় ফিরে আসতে চাইছে এবং চেষ্টা করছে প্রতিনিয়ত।
আর তাই, যখন আমরা দেখছি, ফ্যাসিস্টদের দোসররা এখনো আমাদের সমাজে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, তখন সত্যিই অবাক লাগে। কেন তারা গ্রেফতার হচ্ছে না? কেন তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না? আজও তাদের অবস্থান অনেক শক্তিশালী, আর এই শক্তি তারা ব্যবহার করছে নিজেদের স্বার্থে। যেহেতু এরা সমাজের এক বড় অংশ, তারা নিজেদের অবস্থান শক্ত করার জন্য আরও বেশি অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের প্রশ্ন, যখন দেশের উন্নতির জন্য এসব অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি, তখন কেন তারা ছাড়া পাচ্ছে? তাদের যদি শাস্তি না হয়, তাহলে আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা কি কখনো পূর্ণ হবে? দেশের ভবিষ্যৎ কি সত্যিই বিপন্ন হবে না? আজ যদি ফ্যাসিস্টদের মোকাবিলা না করা যায়, তাহলে ভবিষ্যতে এই শক্তি আরও বেড়ে যাবে এবং সমাজে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের মন্তব্য যে, “ফ্যাসিস্টদের মাথা দেশ থেকে চলে গেলেও শরীরটা দেশে রয়ে গেছে,” এটি একদিকে যেমন দেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা ও পরিস্থিতি সম্পর্কে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করছে, তেমনি এটি দেশের ভেতরকার শক্তি সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইঙ্গিতও দেয়। তারেক রহমানের এই বক্তব্য আসলে এক গভীর তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের প্রতিফলন, যেখানে তিনি দেশে শোষণ, নির্যাতন ও অপশাসনের দীর্ঘদিনের প্রভাবের কথা উল্লেখ করছেন। তিনি এখানে জানাচ্ছেন যে, ফ্যাসিস্ট শক্তির ক্ষমতা হয়তো বিলুপ্ত হয়েছে, তবে তাদের সমর্থকরা এখনও সমাজের বিভিন্ন স্তরে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করছে, এবং তারা একসময় পুনরায় শক্তিশালী হতে পারে, যা দেশের গণতন্ত্র এবং নাগরিক স্বাধীনতার জন্য মারাত্মক হুমকি হতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে, দেশের সাধারণ জনগণের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হওয়া অস্বাভাবিক নয়, কারণ এ ধরনের রাজনৈতিক শক্তি যখন সক্রিয় থাকে, তখন জাতির উন্নতি এবং স্বাধীনতার জন্য বিপদ সৃষ্টি হয়। এই ফ্যাসিস্ট শক্তির ‘শরীর’ এখনও সক্রিয় থাকার কারণে, দেশের আইনের শাসন, গণতন্ত্র, বিচার ব্যবস্থা, এবং মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো বিপদের মুখে পড়ছে। তাদের চালিত অপশাসন এবং দুর্নীতি জাতির জন্য বিপর্যয়কর প্রভাব ফেলতে পারে, যা একসময় জাতিকে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিকভাবে পিছিয়ে ফেলতে পারে।
ফ্যাসিস্টদের পুনরায় ক্ষমতায় ফিরে আসার সম্ভাবনা নিয়ে যে ভয় তৈরী হয়েছে, তা সত্যিই উদ্বেগজনক। যদি তারা তাদের আগের অবস্থান পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়, তাহলে দেশ একটি অন্ধকার যুগের দিকে এগিয়ে যাবে, যেখানে মানুষের স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে। তাদের অস্তিত্ব সমাজের শোষণকারী ও বিভাজনকারী শক্তি হিসেবে কাজ করবে, যা দেশকে শুধু ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবে না, বরং দেশের জনগণের মধ্যে অসন্তোষ এবং বিদ্বেষও ছড়িয়ে দেবে।
এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে প্রয়োজন দেশের সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সব ধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। দেশের গণতন্ত্র, সুশাসন এবং মানবাধিকার রক্ষায় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা, এবং ফ্যাসিস্ট শক্তির পুনরায় উত্থান ঠেকাতে রাজনৈতিক এবং আইনি ব্যবস্থাগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। জনগণের একত্রিত কণ্ঠে এই শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে, যাতে তারা আর কোনোদিন দেশের ভবিষ্যত বিপন্ন করতে না পারে।
ফ্যাসিস্টরা যেন কোনোভাবেই দেশে আবার ফিরে আসতে না পারে, তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি, কারণ যদি তারা আবার ফিরে আসে, তবে দেশের পরিস্থিতি আগের মতোই বিপদমুক্ত থাকবে না। জনগণের অধিকার, স্বাধীনতা এবং দেশের গণতন্ত্রের প্রতি তাদের হুমকি চিরকালী হতে পারে। তারা দেশকে পিছিয়ে দিয়ে শোষণ ও অবিচারের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারে, যা দেশের ভবিষ্যতকে অন্ধকারে ফেলে দেবে। একে কেন্দ্র করে আমরা আজ, পুরো জাতি, একত্রিত হয়ে এই বার্তা দিতে চাই—ফ্যাসিস্টদের কোনো অবস্থাতেই আবার ক্ষমতায় আসতে দেওয়া যাবে না। এর জন্য প্রয়োজন যত দ্রুত সম্ভব অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাধ্যমে সঠিক সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা এবং নির্বাচন নির্ধারণ করা।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি দ্রুত সংস্কার কার্যক্রম শুরু না করে, তাহলে ফ্যাসিস্ট শক্তির পুনরুত্থান ঠেকানো সম্ভব হবে না। দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা তাদের পুনঃপ্রতিষ্ঠিত শক্তির বিরুদ্ধে অরক্ষিত থাকবে। দেশে আইনশৃঙ্খলা, সুশাসন এবং স্বচ্ছতার অভাব থাকলে, জনগণ কোনভাবেই নিরাপদ অনুভব করবে না। তাই, সরকারের কাছে আমাদের আকুল অনুরোধ—যত দ্রুত সম্ভব এই সংস্কারগুলো শেষ করে নিরপেক্ষ ও মুক্ত নির্বাচন পরিচালনা করুন, যাতে দেশের জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে সঠিক নেতৃত্ব নির্বাচন করতে পারে। এই নির্বাচনই হতে পারে আমাদের ভবিষ্যতের পথচলার সঠিক দিকনির্দেশনা, এবং এর মাধ্যমেই আমরা একটি নতুন, শক্তিশালী, এবং শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে পারব।
যত দ্রুত নির্বাচন হবে, তত দ্রুত দেশ তার সঠিক পথে ফিরতে পারবে। এ ছাড়া, দেশের জনগণের মধ্যে আস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ঘটবে এবং দেশের উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথ সুগম হবে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসেই দেশের সুষ্ঠু ভবিষ্যত নিশ্চিত হবে, যেখানে ফ্যাসিস্টদের আর কোনো জায়গা থাকবে না।