রেলওয়ের রানিং স্টাফদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার

- Update Time : ০৮:৪৪:০০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৫
- / ১১৬ Time View
বুধবারের মধ্যে দাবি পূরণের আশ্বাসে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিয়েছেন রেলওয়ের রানিং স্টাফরা। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের বাসায় বৈঠক শেষে মঙ্গলবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ধর্মঘট তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন।
ধর্মঘট প্রত্যাহারের প্রেক্ষাপট
ধর্মঘট প্রত্যাহারের আগে রেলপথ উপদেষ্টার সঙ্গে শ্রমিক নেতা ও ছাত্র প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে রানিং স্টাফদের দাবি-দাওয়া ও কর্মবিরতি নিয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের নেতাদের দীর্ঘ আলোচনা হয়।
পরে রাত আড়াইটার দিকে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘উপদেষ্টা মহোদয় কথা দিয়েছেন, আগামীকালের (বুধবার) মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দ্রুত আমাদের বিষয়টি সমাধান করবেন। আগে আমরা যেসব সুবিধা পেয়েছি, সেসব বহাল থাকবে। আমরা এখন থেকে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নিলাম। রানিং স্টাফ ভাইদের বলব, তাঁরা যেন কাজে ফিরে যান।’
রেল চলাচলে স্থবিরতা ও যাত্রীদের দুর্ভোগ
রানিং স্টাফদের কর্মবিরতির কারণে সোমবার মধ্যরাতের পর থেকেই রাজধানীর কমলাপুরসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রেলস্টেশন থেকে ট্রেন ছেড়ে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। অনেক যাত্রী আগে থেকে টিকিট কেটে রেখেও গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেননি। বিশেষ করে কর্মস্থলগামী যাত্রীদের দুর্ভোগ ছিল মারাত্মক।
রানিং স্টাফদের দাবিসমূহ
মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন এবং আনুতোষিক-সুবিধা দেওয়ার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন রানিং স্টাফরা। তাঁরা দাবি করেন, ট্রেনে দায়িত্ব পালনকালে অতিরিক্ত সময় কাজ করলে তাঁদের ন্যায্য অর্থপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া অবসরের পর তাদের বেতন কাঠামো আগের নিয়ম অনুযায়ী পুনর্বহাল রাখতে হবে।
গত ২২ জানুয়ারি চট্টগ্রামে পুরোনো রেলস্টেশনে সংবাদ সম্মেলন করে ২৭ জানুয়ারির মধ্যে দাবি মানার শর্ত দেয় রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন। অন্যথায় ২৮ জানুয়ারি থেকে রেল চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেয় তারা।
রানিং স্টাফদের ভূমিকা ও বর্তমান সংকট
এই রানিং স্টাফরা হলেন গার্ড, ট্রেনচালক (লোকোমাস্টার), সহকারী চালক ও টিকিট পরিদর্শক (টিটিই)। তাঁরা সাধারণত দীর্ঘ সময় ট্রেনে দায়িত্ব পালন করেন। দৈনিক আট ঘণ্টার বেশি কাজ করলে বেসিকের (মূল বেতন) হিসেবে বাড়তি অর্থ পেতেন তাঁরা।
এ ছাড়া অবসরের পর বেসিকের সঙ্গে এর ৭৫ শতাংশ অর্থ যোগ করে অবসরকালীন অর্থের হিসাব হতো। তবে ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের নতুন নীতিমালায় এই সুবিধা সীমিত করা হয়। এ কারণেই রানিং স্টাফদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয় এবং তারা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হন।
ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ ও পরিস্থিতির পর্যালোচনা
শ্রমিক নেতারা জানিয়েছেন, যদি দাবিগুলো পূরণ না হয়, তবে তারা পুনরায় কর্মবিরতিতে যাবেন। তবে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে, দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করা হবে।
অন্যদিকে, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ধর্মঘট প্রত্যাহারের ফলে ধাপে ধাপে রেল চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যাবে। যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে বাড়তি ট্রেন পরিচালনার পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে।
Please Share This Post in Your Social Media

রেলওয়ের রানিং স্টাফদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার

বুধবারের মধ্যে দাবি পূরণের আশ্বাসে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিয়েছেন রেলওয়ের রানিং স্টাফরা। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের বাসায় বৈঠক শেষে মঙ্গলবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ধর্মঘট তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন।
ধর্মঘট প্রত্যাহারের প্রেক্ষাপট
ধর্মঘট প্রত্যাহারের আগে রেলপথ উপদেষ্টার সঙ্গে শ্রমিক নেতা ও ছাত্র প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে রানিং স্টাফদের দাবি-দাওয়া ও কর্মবিরতি নিয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের নেতাদের দীর্ঘ আলোচনা হয়।
পরে রাত আড়াইটার দিকে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘উপদেষ্টা মহোদয় কথা দিয়েছেন, আগামীকালের (বুধবার) মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দ্রুত আমাদের বিষয়টি সমাধান করবেন। আগে আমরা যেসব সুবিধা পেয়েছি, সেসব বহাল থাকবে। আমরা এখন থেকে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নিলাম। রানিং স্টাফ ভাইদের বলব, তাঁরা যেন কাজে ফিরে যান।’
রেল চলাচলে স্থবিরতা ও যাত্রীদের দুর্ভোগ
রানিং স্টাফদের কর্মবিরতির কারণে সোমবার মধ্যরাতের পর থেকেই রাজধানীর কমলাপুরসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রেলস্টেশন থেকে ট্রেন ছেড়ে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। অনেক যাত্রী আগে থেকে টিকিট কেটে রেখেও গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেননি। বিশেষ করে কর্মস্থলগামী যাত্রীদের দুর্ভোগ ছিল মারাত্মক।
রানিং স্টাফদের দাবিসমূহ
মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন এবং আনুতোষিক-সুবিধা দেওয়ার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন রানিং স্টাফরা। তাঁরা দাবি করেন, ট্রেনে দায়িত্ব পালনকালে অতিরিক্ত সময় কাজ করলে তাঁদের ন্যায্য অর্থপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া অবসরের পর তাদের বেতন কাঠামো আগের নিয়ম অনুযায়ী পুনর্বহাল রাখতে হবে।
গত ২২ জানুয়ারি চট্টগ্রামে পুরোনো রেলস্টেশনে সংবাদ সম্মেলন করে ২৭ জানুয়ারির মধ্যে দাবি মানার শর্ত দেয় রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন। অন্যথায় ২৮ জানুয়ারি থেকে রেল চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেয় তারা।
রানিং স্টাফদের ভূমিকা ও বর্তমান সংকট
এই রানিং স্টাফরা হলেন গার্ড, ট্রেনচালক (লোকোমাস্টার), সহকারী চালক ও টিকিট পরিদর্শক (টিটিই)। তাঁরা সাধারণত দীর্ঘ সময় ট্রেনে দায়িত্ব পালন করেন। দৈনিক আট ঘণ্টার বেশি কাজ করলে বেসিকের (মূল বেতন) হিসেবে বাড়তি অর্থ পেতেন তাঁরা।
এ ছাড়া অবসরের পর বেসিকের সঙ্গে এর ৭৫ শতাংশ অর্থ যোগ করে অবসরকালীন অর্থের হিসাব হতো। তবে ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের নতুন নীতিমালায় এই সুবিধা সীমিত করা হয়। এ কারণেই রানিং স্টাফদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয় এবং তারা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হন।
ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ ও পরিস্থিতির পর্যালোচনা
শ্রমিক নেতারা জানিয়েছেন, যদি দাবিগুলো পূরণ না হয়, তবে তারা পুনরায় কর্মবিরতিতে যাবেন। তবে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে, দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করা হবে।
অন্যদিকে, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ধর্মঘট প্রত্যাহারের ফলে ধাপে ধাপে রেল চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যাবে। যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে বাড়তি ট্রেন পরিচালনার পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে।