সময়: বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

লন্ডন ক্লিনিক থেকে ছাড়পত্র পাচ্ছেন খালেদা জিয়া: চিকিৎসার সর্বশেষ আপডেট

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ১০:১৪:১২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫
  • / ৬৪ Time View

b3498df05acd9b43209bc7c933de5075 67939d1e1d8ff

 

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আজ শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় যুক্তরাজ্যের লন্ডন ক্লিনিক থেকে ছাড়পত্র পেয়ে তারেক রহমানের বাসায় উঠবেন বলে আশা করা হচ্ছে। দীর্ঘ একাধিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগতে থাকা ৭৯ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ গত কয়েক সপ্তাহ ধরে লন্ডনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

ছাড়পত্রের বিষয়ে চিকিৎসকদের বক্তব্য

 বৃহস্পতিবার রাতে স্থানীয় সময়ে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, যদি সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোয় এবং পরীক্ষার ফলাফল প্রত্যাশিত মানের হয়, তবে আজ সন্ধ্যায় তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হতে পারে। “এখনও সব পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল হাতে আসেনি। কিছু অতিরিক্ত পরীক্ষা চলছে, যার ওপর নির্ভর করছে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। তবে ইনশাল্লাহ, আজকের মধ্যেই ম্যাডাম ছাড়পত্র পেতে পারেন,” বলেন তিনি।

লিভার প্রতিস্থাপনসহ ভবিষ্যৎ চিকিৎসা পরিকল্পনা

খালেদা জিয়া বর্তমানে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস এবং আর্থ্রাইটিসের মতো একাধিক স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগছেন। তার চিকিৎসার নেতৃত্ব দিচ্ছেন লিভার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জন প্যাট্রিক কেনেডি। তার সঙ্গে রয়েছেন জেনিফার ক্রস এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক চিকিৎসকরা।

ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, “লিভার প্রতিস্থাপনের বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং জটিল সিদ্ধান্ত, কারণ তার বয়স এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা বিবেচনা করতে হবে।” তিনি আরও জানান, ওষুধের মাধ্যমে তার চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে লন্ডন ক্লিনিক এবং জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা মূলত একমত হয়েছেন। তবে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল এখনও পাওয়া যায়নি, যা ভবিষ্যতের চিকিৎসা পরিকল্পনা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

চিকিৎসার পরবর্তী ধাপ নজরদারি

হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর খালেদা জিয়া তার ছেলে তারেক রহমানের লন্ডনের বাসায় অবস্থান করবেন। সেখানে মেডিকেল বোর্ড তার শারীরিক অবস্থা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে। অধ্যাপক জন প্যাট্রিক কেনেডি ও জেনিফার ক্রস তাকে চিকিৎসার বিষয়ে দিকনির্দেশনা প্রদান করবেন। যুক্তরাজ্যের মেডিকেল প্রটোকল অনুসরণ করে তার চিকিৎসা অব্যাহত থাকবে।

পূর্ববর্তী চিকিৎসা পরিস্থিতি

গত ৮ জানুয়ারি কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে খালেদা জিয়াকে যুক্তরাজ্যে নিয়ে আসা হয়। এরপর তিনি লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি হন এবং একটি মেডিকেল বোর্ড তার চিকিৎসার দায়িত্ব গ্রহণ করে।

ডা. জাহিদ উল্লেখ করেন, “কারাগারে থাকাকালীন তিনি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত ছিলেন। আগেই তাকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করানো হলে তিনি অনেক দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারতেন।” তার মতে, খালেদা জিয়ার সুস্থতার ক্ষেত্রে সময়মতো সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

স্বাস্থ্যের বর্তমান অবস্থা

 খালেদা জিয়া এখন আগের চেয়ে অনেকটাই ভালো বোধ করছেন। তবে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার প্রয়োজন হবে। তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল থাকলেও চিকিৎসকরা পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন।

পরিবার দলের পক্ষ থেকে দোয়া প্রার্থনা

 বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং খালেদা জিয়ার পরিবার দেশবাসীর কাছে তার দ্রুত আরোগ্যের জন্য দোয়া চেয়েছেন। তারা বলেছেন, দেশবাসীর ভালোবাসা ও দোয়া তার চিকিৎসা ও সুস্থতার পথে সহায়ক হবে।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ভবিষ্যৎ প্রভাব

বাংলাদেশের রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি এবং চিকিৎসা নিয়ে দেশে ও বিদেশে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা চলছে। বিএনপি নেতারা তার দ্রুত সুস্থ হয়ে দেশে ফেরার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।

এই চিকিৎসা-প্রক্রিয়ার সফলতা শুধু তার শারীরিক সুস্থতার জন্য নয়, বরং দেশের রাজনীতির প্রেক্ষাপটেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

 

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

লন্ডন ক্লিনিক থেকে ছাড়পত্র পাচ্ছেন খালেদা জিয়া: চিকিৎসার সর্বশেষ আপডেট

Update Time : ১০:১৪:১২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫

 

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আজ শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় যুক্তরাজ্যের লন্ডন ক্লিনিক থেকে ছাড়পত্র পেয়ে তারেক রহমানের বাসায় উঠবেন বলে আশা করা হচ্ছে। দীর্ঘ একাধিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগতে থাকা ৭৯ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ গত কয়েক সপ্তাহ ধরে লন্ডনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

ছাড়পত্রের বিষয়ে চিকিৎসকদের বক্তব্য

 বৃহস্পতিবার রাতে স্থানীয় সময়ে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, যদি সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোয় এবং পরীক্ষার ফলাফল প্রত্যাশিত মানের হয়, তবে আজ সন্ধ্যায় তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হতে পারে। “এখনও সব পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল হাতে আসেনি। কিছু অতিরিক্ত পরীক্ষা চলছে, যার ওপর নির্ভর করছে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। তবে ইনশাল্লাহ, আজকের মধ্যেই ম্যাডাম ছাড়পত্র পেতে পারেন,” বলেন তিনি।

লিভার প্রতিস্থাপনসহ ভবিষ্যৎ চিকিৎসা পরিকল্পনা

খালেদা জিয়া বর্তমানে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস এবং আর্থ্রাইটিসের মতো একাধিক স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগছেন। তার চিকিৎসার নেতৃত্ব দিচ্ছেন লিভার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জন প্যাট্রিক কেনেডি। তার সঙ্গে রয়েছেন জেনিফার ক্রস এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক চিকিৎসকরা।

ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, “লিভার প্রতিস্থাপনের বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং জটিল সিদ্ধান্ত, কারণ তার বয়স এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা বিবেচনা করতে হবে।” তিনি আরও জানান, ওষুধের মাধ্যমে তার চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে লন্ডন ক্লিনিক এবং জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা মূলত একমত হয়েছেন। তবে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল এখনও পাওয়া যায়নি, যা ভবিষ্যতের চিকিৎসা পরিকল্পনা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

চিকিৎসার পরবর্তী ধাপ নজরদারি

হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর খালেদা জিয়া তার ছেলে তারেক রহমানের লন্ডনের বাসায় অবস্থান করবেন। সেখানে মেডিকেল বোর্ড তার শারীরিক অবস্থা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে। অধ্যাপক জন প্যাট্রিক কেনেডি ও জেনিফার ক্রস তাকে চিকিৎসার বিষয়ে দিকনির্দেশনা প্রদান করবেন। যুক্তরাজ্যের মেডিকেল প্রটোকল অনুসরণ করে তার চিকিৎসা অব্যাহত থাকবে।

পূর্ববর্তী চিকিৎসা পরিস্থিতি

গত ৮ জানুয়ারি কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে খালেদা জিয়াকে যুক্তরাজ্যে নিয়ে আসা হয়। এরপর তিনি লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি হন এবং একটি মেডিকেল বোর্ড তার চিকিৎসার দায়িত্ব গ্রহণ করে।

ডা. জাহিদ উল্লেখ করেন, “কারাগারে থাকাকালীন তিনি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত ছিলেন। আগেই তাকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করানো হলে তিনি অনেক দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারতেন।” তার মতে, খালেদা জিয়ার সুস্থতার ক্ষেত্রে সময়মতো সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

স্বাস্থ্যের বর্তমান অবস্থা

 খালেদা জিয়া এখন আগের চেয়ে অনেকটাই ভালো বোধ করছেন। তবে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার প্রয়োজন হবে। তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল থাকলেও চিকিৎসকরা পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন।

পরিবার দলের পক্ষ থেকে দোয়া প্রার্থনা

 বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং খালেদা জিয়ার পরিবার দেশবাসীর কাছে তার দ্রুত আরোগ্যের জন্য দোয়া চেয়েছেন। তারা বলেছেন, দেশবাসীর ভালোবাসা ও দোয়া তার চিকিৎসা ও সুস্থতার পথে সহায়ক হবে।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ভবিষ্যৎ প্রভাব

বাংলাদেশের রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি এবং চিকিৎসা নিয়ে দেশে ও বিদেশে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা চলছে। বিএনপি নেতারা তার দ্রুত সুস্থ হয়ে দেশে ফেরার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।

এই চিকিৎসা-প্রক্রিয়ার সফলতা শুধু তার শারীরিক সুস্থতার জন্য নয়, বরং দেশের রাজনীতির প্রেক্ষাপটেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।