যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে নজিরবিহীন ক্ষমা: বিদায়লগ্নে পরিবারের সদস্য ও কর্মকর্তাদের রক্ষায় বাইডেনের সাহসী সিদ্ধান্ত

- Update Time : ১০:১৯:০৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৮০ Time View
ক্ষমতা হস্তান্তরের কয়েক ঘণ্টা আগে বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এমন এক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ইতিহাসে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তিনি তাঁর পরিবারের সদস্যসহ অসংখ্য ব্যক্তি এবং কর্মকর্তাকে ক্ষমা করেছেন। বাইডেনের এ সিদ্ধান্ত রাজনীতিক, আইনজীবী এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। অনেকে একে সাহসী ও সঠিক পদক্ষেপ বলে আখ্যা দিলেও, অন্যরা এটিকে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার অপব্যবহার হিসেবে দেখছেন।
ক্ষমার তালিকায় কারা ছিলেন?
বাইডেন যে ব্যক্তিদের ক্ষমা করেছেন, তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত নাম তাঁর পরিবারের সদস্যরা। তালিকায় রয়েছেন তাঁর দুই ভাই জেমস বাইডেন এবং ফ্র্যাঙ্ক বাইডেন, তাঁর বোন ভ্যালেরি বাইডেন, এবং তাঁদের স্বামী ও স্ত্রীরা।
তবে বাইডেনের ক্ষমা শুধু পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। ক্ষমার আওতায় আরও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন:
- লিজ চেনি, রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য এবং ৬ জানুয়ারির ক্যাপিটল হামলার তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী। তিনি ট্রাম্পের সমালোচক এবং তাঁর বিদ্রোহী মনোভাবের কারণে প্রায়শই আলোচনায় থাকতেন।
- জেনারেল মার্ক মিলি, সাবেক জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান, যিনি ট্রাম্প প্রশাসনের সময় বিভিন্ন বিতর্কিত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন।
- ড. অ্যান্থনি ফাউচি, কোভিড-১৯ মহামারির সময় হোয়াইট হাউসের প্রধান চিকিৎসা উপদেষ্টা। তিনি মহামারি মোকাবিলায় ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছিলেন।
এছাড়া ৬ জানুয়ারির ক্যাপিটল হামলার ঘটনা তদন্তের দায়িত্বে থাকা কংগ্রেশনাল সিলেক্ট কমিটির সব আইনপ্রণেতা ক্ষমা পেয়েছেন। এই কমিটির সদস্যরা ট্রাম্প প্রশাসনের বিরোধিতার কারণে চাপে ছিলেন।
বাইডেনের সিদ্ধান্তের পেছনের কারণ
বাইডেনের ঘনিষ্ঠ সূত্র থেকে জানা গেছে, ট্রাম্প ইতোমধ্যে বাইডেন এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে তদন্ত পরিচালনার জন্য একজন বিশেষ কৌঁসুলি নিয়োগ করেছেন। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ বাইডেন এবং তাঁর পরিবারের উপর সম্ভাব্য রাজনৈতিক প্রতিশোধ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এক বিবৃতিতে বাইডেন বলেছেন:
“আমার
বাইডেন তাঁর সিদ্ধান্তকে ন্যায়সংগত দাবি করে বলেছেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে রক্ষা পেতে এটি প্রয়োজনীয় ছিল। তাঁর মতে, এমন তদন্ত পরিচালনা হলে অভিযুক্তরা আর্থিক ও সামাজিকভাবে অপরিমেয় ক্ষতির মুখোমুখি হবেন, এমনকি তাঁরা নির্দোষ প্রমাণিত হলেও।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান ও প্রেসিডেন্টের ক্ষমা দেওয়ার অধিকার
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান প্রেসিডেন্টকে অপরাধীদের ক্ষমা করার একচেটিয়া অধিকার দেয়। এই ক্ষমতা সাধারণত এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, যাঁরা ফেডারেল অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। তবে প্রেসিডেন্ট চাইলে বিচার শুরু হওয়ার আগেই কোনো ব্যক্তিকে ক্ষমা করতে পারেন।
বাইডেনের এই পদক্ষেপ, বিশেষ করে পরিবারের সদস্য এবং রাজনৈতিক সহযোগীদের ক্ষমা করা, সংবিধানের এই ক্ষমতার নৈতিক ও ব্যবহারিক দিক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সমালোচকরা বলছেন, এটি প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার সীমা নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।
ট্রাম্পের কড়া প্রতিক্রিয়া
বাইডেনের এই সিদ্ধান্তের পরপরই ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর প্রতিক্রিয়া জানান। এনবিসি নিউজের সাংবাদিক ক্রিস্টেন ওয়েলকারকে পাঠানো একটি বার্তায় ট্রাম্প বলেছেন:
“এটি একেবারেই অপমানজনক। যাঁদের ক্ষমা করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে অনেকেই গুরুতর অপরাধে জড়িত।“
ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই বাইডেন এবং তাঁর প্রশাসনের সমালোচক ছিলেন। তিনি বাইডেনের ক্ষমার সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে আখ্যা দিয়েছেন।
প্রতিক্রিয়া ও বিতর্ক
বাইডেনের এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। সমর্থকদের মতে, এটি একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ছিল, যা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে নিরপরাধ ব্যক্তিদের রক্ষা করবে। তাঁরা একে “রাজনৈতিক চাপের মুখে সঠিক সিদ্ধান্ত” বলে অভিহিত করেছেন।
তবে সমালোচকরা মনে করেন, বাইডেন তাঁর ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করেছেন। তাঁদের মতে, প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে ক্ষমার ব্যবহার নিয়ে নেতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।
একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত
জো বাইডেনের বিদায়ী মুহূর্তের এই পদক্ষেপ তাঁকে মার্কিন ইতিহাসে আলোচিত করে তুলেছে। এই সিদ্ধান্ত নৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে কতটা সঠিক ছিল, তা সময়ই বলে দেবে। তবে এটি নিশ্চিত যে, বাইডেনের এই নজিরবিহীন ক্ষমা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
বাইডেন তাঁর পরিবারের সদস্য এবং ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহযোগীদের রক্ষার উদ্দেশ্যে এই পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে অনেকে মনে করেন। যদিও এর প্রভাব এবং ফলাফল নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে, তবে এটি স্পষ্ট যে এই সিদ্ধান্ত মার্কিন রাজনীতিতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।
Please Share This Post in Your Social Media

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে নজিরবিহীন ক্ষমা: বিদায়লগ্নে পরিবারের সদস্য ও কর্মকর্তাদের রক্ষায় বাইডেনের সাহসী সিদ্ধান্ত

ক্ষমতা হস্তান্তরের কয়েক ঘণ্টা আগে বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এমন এক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ইতিহাসে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তিনি তাঁর পরিবারের সদস্যসহ অসংখ্য ব্যক্তি এবং কর্মকর্তাকে ক্ষমা করেছেন। বাইডেনের এ সিদ্ধান্ত রাজনীতিক, আইনজীবী এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। অনেকে একে সাহসী ও সঠিক পদক্ষেপ বলে আখ্যা দিলেও, অন্যরা এটিকে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার অপব্যবহার হিসেবে দেখছেন।
ক্ষমার তালিকায় কারা ছিলেন?
বাইডেন যে ব্যক্তিদের ক্ষমা করেছেন, তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত নাম তাঁর পরিবারের সদস্যরা। তালিকায় রয়েছেন তাঁর দুই ভাই জেমস বাইডেন এবং ফ্র্যাঙ্ক বাইডেন, তাঁর বোন ভ্যালেরি বাইডেন, এবং তাঁদের স্বামী ও স্ত্রীরা।
তবে বাইডেনের ক্ষমা শুধু পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। ক্ষমার আওতায় আরও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন:
- লিজ চেনি, রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য এবং ৬ জানুয়ারির ক্যাপিটল হামলার তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী। তিনি ট্রাম্পের সমালোচক এবং তাঁর বিদ্রোহী মনোভাবের কারণে প্রায়শই আলোচনায় থাকতেন।
- জেনারেল মার্ক মিলি, সাবেক জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান, যিনি ট্রাম্প প্রশাসনের সময় বিভিন্ন বিতর্কিত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন।
- ড. অ্যান্থনি ফাউচি, কোভিড-১৯ মহামারির সময় হোয়াইট হাউসের প্রধান চিকিৎসা উপদেষ্টা। তিনি মহামারি মোকাবিলায় ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছিলেন।
এছাড়া ৬ জানুয়ারির ক্যাপিটল হামলার ঘটনা তদন্তের দায়িত্বে থাকা কংগ্রেশনাল সিলেক্ট কমিটির সব আইনপ্রণেতা ক্ষমা পেয়েছেন। এই কমিটির সদস্যরা ট্রাম্প প্রশাসনের বিরোধিতার কারণে চাপে ছিলেন।
বাইডেনের সিদ্ধান্তের পেছনের কারণ
বাইডেনের ঘনিষ্ঠ সূত্র থেকে জানা গেছে, ট্রাম্প ইতোমধ্যে বাইডেন এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে তদন্ত পরিচালনার জন্য একজন বিশেষ কৌঁসুলি নিয়োগ করেছেন। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ বাইডেন এবং তাঁর পরিবারের উপর সম্ভাব্য রাজনৈতিক প্রতিশোধ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এক বিবৃতিতে বাইডেন বলেছেন:
“আমার
বাইডেন তাঁর সিদ্ধান্তকে ন্যায়সংগত দাবি করে বলেছেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে রক্ষা পেতে এটি প্রয়োজনীয় ছিল। তাঁর মতে, এমন তদন্ত পরিচালনা হলে অভিযুক্তরা আর্থিক ও সামাজিকভাবে অপরিমেয় ক্ষতির মুখোমুখি হবেন, এমনকি তাঁরা নির্দোষ প্রমাণিত হলেও।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান ও প্রেসিডেন্টের ক্ষমা দেওয়ার অধিকার
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান প্রেসিডেন্টকে অপরাধীদের ক্ষমা করার একচেটিয়া অধিকার দেয়। এই ক্ষমতা সাধারণত এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, যাঁরা ফেডারেল অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। তবে প্রেসিডেন্ট চাইলে বিচার শুরু হওয়ার আগেই কোনো ব্যক্তিকে ক্ষমা করতে পারেন।
বাইডেনের এই পদক্ষেপ, বিশেষ করে পরিবারের সদস্য এবং রাজনৈতিক সহযোগীদের ক্ষমা করা, সংবিধানের এই ক্ষমতার নৈতিক ও ব্যবহারিক দিক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সমালোচকরা বলছেন, এটি প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার সীমা নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।
ট্রাম্পের কড়া প্রতিক্রিয়া
বাইডেনের এই সিদ্ধান্তের পরপরই ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর প্রতিক্রিয়া জানান। এনবিসি নিউজের সাংবাদিক ক্রিস্টেন ওয়েলকারকে পাঠানো একটি বার্তায় ট্রাম্প বলেছেন:
“এটি একেবারেই অপমানজনক। যাঁদের ক্ষমা করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে অনেকেই গুরুতর অপরাধে জড়িত।“
ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই বাইডেন এবং তাঁর প্রশাসনের সমালোচক ছিলেন। তিনি বাইডেনের ক্ষমার সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে আখ্যা দিয়েছেন।
প্রতিক্রিয়া ও বিতর্ক
বাইডেনের এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। সমর্থকদের মতে, এটি একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ছিল, যা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে নিরপরাধ ব্যক্তিদের রক্ষা করবে। তাঁরা একে “রাজনৈতিক চাপের মুখে সঠিক সিদ্ধান্ত” বলে অভিহিত করেছেন।
তবে সমালোচকরা মনে করেন, বাইডেন তাঁর ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করেছেন। তাঁদের মতে, প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে ক্ষমার ব্যবহার নিয়ে নেতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।
একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত
জো বাইডেনের বিদায়ী মুহূর্তের এই পদক্ষেপ তাঁকে মার্কিন ইতিহাসে আলোচিত করে তুলেছে। এই সিদ্ধান্ত নৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে কতটা সঠিক ছিল, তা সময়ই বলে দেবে। তবে এটি নিশ্চিত যে, বাইডেনের এই নজিরবিহীন ক্ষমা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
বাইডেন তাঁর পরিবারের সদস্য এবং ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহযোগীদের রক্ষার উদ্দেশ্যে এই পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে অনেকে মনে করেন। যদিও এর প্রভাব এবং ফলাফল নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে, তবে এটি স্পষ্ট যে এই সিদ্ধান্ত মার্কিন রাজনীতিতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।