মার্কিন নাগরিকত্ব হারাতে যাচ্ছেন লাখ লাখ ভারতীয়: ট্রাম্পের নতুন নির্বাহী আদেশ

- Update Time : ০৯:৩৯:০২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৭০ Time View
দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পরপরই একাধিক কঠোর নির্বাহী আদেশে সই করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার মধ্য অন্যতম হলো জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্বের নীতি বাতিলের উদ্যোগ। এর ফলে লাখ লাখ ভারতীয় তাদের মার্কিন নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন।
জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের উদ্যোগ
বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ নেওয়ার দিনই এই নীতি বাতিলের কার্যক্রম শুরুর আদেশে সই করেন। এ নির্দেশনার মাধ্যমে তিনি ১৪তম সংশোধনীতে সুরক্ষিত ১৫০ বছরের পুরোনো নাগরিকত্ব নীতিকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। এই সংশোধনী অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী প্রত্যেক ব্যক্তি জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিক বলে বিবেচিত হন।
তবে ট্রাম্পের মতে, এই নিয়ম যুগের চাহিদা মেটাতে সক্ষম নয়। তিনি একে “হাস্যকর” বলে আখ্যায়িত করে ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, এই নীতির অপব্যবহার রোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
১৬ লাখ ভারতীয়ের নাগরিকত্ব সংকট
মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চের তথ্য অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে প্রায় ৪৮ লাখ ভারতীয়-আমেরিকান বাস করছেন, যার মধ্যে ১৬ লাখই জন্মসূত্রে নাগরিক। যদি এই নীতি চূড়ান্তভাবে বাতিল করা হয়, তবে এই বিপুলসংখ্যক ভারতীয় তাদের নাগরিকত্ব হারাতে পারেন।
ট্রাম্পের বক্তব্য অনুসারে, জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের সুযোগের কারণে অনেক অভিবাসী পরিবার তাদের সন্তানদের মার্কিন নাগরিকত্বের সুবিধা পাওয়ার উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রে সন্তানের জন্ম দেয়। এটি বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
ভারতীয়–আমেরিকানদের ভবিষ্যৎ
ট্রাম্পের নতুন সিদ্ধান্ত ভারতীয়-আমেরিকানদের মধ্যে তীব্র উদ্বেগ তৈরি করেছে। বর্তমানে অনেক ভারতীয় অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা, প্রযুক্তি, গবেষণা, এবং রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। কিন্তু নাগরিকত্ব হারানোর শঙ্কায় তাদের অনেকেই তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
একাধিক অভিবাসন বিশেষজ্ঞের মতে, যদি এই নীতি কার্যকর হয়, তবে তা ভারতীয়-আমেরিকান সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাদের কর্মসংস্থান এবং শিক্ষার সুযোগ সীমিত হয়ে যেতে পারে। একই সঙ্গে বৈধ বসবাসের অনুমতিপ্রাপ্ত অভিভাবকদেরও দেশ ছেড়ে যেতে হতে পারে।
মার্কিন অভিবাসন নীতিতে পরিবর্তন
মার্কিন মুলুকে সন্তান জন্ম দিয়ে নাগরিকত্ব পাওয়া দীর্ঘদিন ধরে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জন্য অন্যতম সহজ পথ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। শিশু জন্মানোর পর তার বয়স ১৮ বছর পর্যন্ত অভিভাবকদের বৈধ বসবাসের অনুমতি দেওয়া হয়, যা পরবর্তীতে নাগরিকত্বের পথ সুগম করে। ট্রাম্পের নতুন সিদ্ধান্তে এই পথ বন্ধ হয়ে গেলে অভিবাসী পরিবারের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
কঠোর অবস্থান: ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি
ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত শুধু ভারতীয়দের নয়, বরং সব অভিবাসী পরিবারের ওপর প্রভাব ফেলবে। অভিবাসন নীতিতে তার কঠোর অবস্থান বিভিন্ন সময়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তিনি এর আগে অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেছেন, “পরিবারগুলোকে বিচ্ছিন্ন করার পরিবর্তে সবাইকে একসঙ্গে ফেরত পাঠানোই সঠিক সিদ্ধান্ত।”
বিশ্ব রাজনীতিতে ট্রাম্পের ভূমিকা
জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব নীতির পাশাপাশি ট্রাম্প তার দ্বিতীয় শপথের দিন আরও বেশ কিছু কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- দক্ষিণ সীমান্তে জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করা।
- প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহার।
- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহার।
এছাড়াও শপথ অনুষ্ঠানের পর তিনি পানামা খাল দখলে নেওয়ার হুমকি দেন। তিনি বলেন, “এই খাল চীন পরিচালনা করছে। আমরা এটি চীনকে দিইনি। আমরা এটি ফিরিয়ে নেব।”
শেষ কথা
ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের উদ্যোগ মার্কিন অভিবাসন নীতিতে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে চলেছে। যদিও এই সিদ্ধান্তের চূড়ান্ত বাস্তবায়ন আইনি বাধার মুখে পড়বে, তবুও এটি লক্ষ লক্ষ অভিবাসীর জীবনে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। বিশেষ করে ভারতীয়-আমেরিকান সম্প্রদায়ের জন্য এটি এক গভীর সংকটের কারণ হতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপ কীভাবে অভিবাসন ব্যবস্থাকে পুনর্গঠিত করবে এবং বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তিকে প্রভাবিত করবে, তা সময়ই বলে দেবে।
Please Share This Post in Your Social Media

মার্কিন নাগরিকত্ব হারাতে যাচ্ছেন লাখ লাখ ভারতীয়: ট্রাম্পের নতুন নির্বাহী আদেশ

দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পরপরই একাধিক কঠোর নির্বাহী আদেশে সই করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার মধ্য অন্যতম হলো জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্বের নীতি বাতিলের উদ্যোগ। এর ফলে লাখ লাখ ভারতীয় তাদের মার্কিন নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন।
জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের উদ্যোগ
বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ নেওয়ার দিনই এই নীতি বাতিলের কার্যক্রম শুরুর আদেশে সই করেন। এ নির্দেশনার মাধ্যমে তিনি ১৪তম সংশোধনীতে সুরক্ষিত ১৫০ বছরের পুরোনো নাগরিকত্ব নীতিকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। এই সংশোধনী অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী প্রত্যেক ব্যক্তি জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিক বলে বিবেচিত হন।
তবে ট্রাম্পের মতে, এই নিয়ম যুগের চাহিদা মেটাতে সক্ষম নয়। তিনি একে “হাস্যকর” বলে আখ্যায়িত করে ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, এই নীতির অপব্যবহার রোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
১৬ লাখ ভারতীয়ের নাগরিকত্ব সংকট
মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চের তথ্য অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে প্রায় ৪৮ লাখ ভারতীয়-আমেরিকান বাস করছেন, যার মধ্যে ১৬ লাখই জন্মসূত্রে নাগরিক। যদি এই নীতি চূড়ান্তভাবে বাতিল করা হয়, তবে এই বিপুলসংখ্যক ভারতীয় তাদের নাগরিকত্ব হারাতে পারেন।
ট্রাম্পের বক্তব্য অনুসারে, জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের সুযোগের কারণে অনেক অভিবাসী পরিবার তাদের সন্তানদের মার্কিন নাগরিকত্বের সুবিধা পাওয়ার উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রে সন্তানের জন্ম দেয়। এটি বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
ভারতীয়–আমেরিকানদের ভবিষ্যৎ
ট্রাম্পের নতুন সিদ্ধান্ত ভারতীয়-আমেরিকানদের মধ্যে তীব্র উদ্বেগ তৈরি করেছে। বর্তমানে অনেক ভারতীয় অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা, প্রযুক্তি, গবেষণা, এবং রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। কিন্তু নাগরিকত্ব হারানোর শঙ্কায় তাদের অনেকেই তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
একাধিক অভিবাসন বিশেষজ্ঞের মতে, যদি এই নীতি কার্যকর হয়, তবে তা ভারতীয়-আমেরিকান সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাদের কর্মসংস্থান এবং শিক্ষার সুযোগ সীমিত হয়ে যেতে পারে। একই সঙ্গে বৈধ বসবাসের অনুমতিপ্রাপ্ত অভিভাবকদেরও দেশ ছেড়ে যেতে হতে পারে।
মার্কিন অভিবাসন নীতিতে পরিবর্তন
মার্কিন মুলুকে সন্তান জন্ম দিয়ে নাগরিকত্ব পাওয়া দীর্ঘদিন ধরে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জন্য অন্যতম সহজ পথ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। শিশু জন্মানোর পর তার বয়স ১৮ বছর পর্যন্ত অভিভাবকদের বৈধ বসবাসের অনুমতি দেওয়া হয়, যা পরবর্তীতে নাগরিকত্বের পথ সুগম করে। ট্রাম্পের নতুন সিদ্ধান্তে এই পথ বন্ধ হয়ে গেলে অভিবাসী পরিবারের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
কঠোর অবস্থান: ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি
ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত শুধু ভারতীয়দের নয়, বরং সব অভিবাসী পরিবারের ওপর প্রভাব ফেলবে। অভিবাসন নীতিতে তার কঠোর অবস্থান বিভিন্ন সময়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তিনি এর আগে অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেছেন, “পরিবারগুলোকে বিচ্ছিন্ন করার পরিবর্তে সবাইকে একসঙ্গে ফেরত পাঠানোই সঠিক সিদ্ধান্ত।”
বিশ্ব রাজনীতিতে ট্রাম্পের ভূমিকা
জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব নীতির পাশাপাশি ট্রাম্প তার দ্বিতীয় শপথের দিন আরও বেশ কিছু কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- দক্ষিণ সীমান্তে জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করা।
- প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহার।
- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহার।
এছাড়াও শপথ অনুষ্ঠানের পর তিনি পানামা খাল দখলে নেওয়ার হুমকি দেন। তিনি বলেন, “এই খাল চীন পরিচালনা করছে। আমরা এটি চীনকে দিইনি। আমরা এটি ফিরিয়ে নেব।”
শেষ কথা
ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের উদ্যোগ মার্কিন অভিবাসন নীতিতে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে চলেছে। যদিও এই সিদ্ধান্তের চূড়ান্ত বাস্তবায়ন আইনি বাধার মুখে পড়বে, তবুও এটি লক্ষ লক্ষ অভিবাসীর জীবনে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। বিশেষ করে ভারতীয়-আমেরিকান সম্প্রদায়ের জন্য এটি এক গভীর সংকটের কারণ হতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপ কীভাবে অভিবাসন ব্যবস্থাকে পুনর্গঠিত করবে এবং বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তিকে প্রভাবিত করবে, তা সময়ই বলে দেবে।