ডেসটিনির রফিকুলের সাজা শুরুর আগেই শেষ?

- Update Time : ০৫:১১:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৭২ Time View

২০১২ সালে ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের গাছ বিক্রির টাকা আত্মসাতের মামলায় সব আসামিকে ১২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বহুল আলোচিত বহু স্তর বিপণন (এমএলএম) প্রতিষ্ঠান ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমিন এবং চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন এই মামলার প্রধান আসামি। তবে দীর্ঘদিন কারাগারে থাকার কারণে তাদের সাজার মেয়াদ ইতোমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে বলে আদালত জানিয়েছেন।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪০-এর বিচারক মো. রবিউল আলম এ রায় দেন। আদালতের বেঞ্চ সহকারী বেলাল হোসেন গণমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রায়ের বিশদ বিবরণ
মামলার রায়ে আদালত বলেছেন, ডেসটিনি গ্রুপের এমডি রফিকুল আমিন এবং চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন ২০১২ সালের ১৪ অক্টোবর থেকে কারাগারে আছেন। ফলে তাদের সাজার মেয়াদ ইতোমধ্যে পূর্ণ হয়েছে। আদালত কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন, এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে।
তবে রায় অনুযায়ী, আসামিদের আগামী ছয় মাসের মধ্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে চার হাজার ৫১৫ কোটি ৫৭ লাখ ৫৪ হাজার ৪৫৪ টাকা জমা দিতে হবে। আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, মামলায় আত্মসাৎকৃত অর্থের দ্বিগুণ পরিমাণ অর্থ জমা দিতে হবে।
আসামিদের তালিকা ও সাজা কার্যকর
মামলায় মোট ১৯ জন আসামি ছিলেন। তাদের সবাইকে ১২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে আসামিদের মধ্যে কেউ কারাগারে থাকায় এবং কেউ জামিনে ছিলেন।
ডেসটিনি গ্রুপের প্রভাবশালী কর্মকর্তা এবং সাবেক সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) হারুন–অর–রশিদ জামিনে ছিলেন। রায়ের দিন তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। সাজা ঘোষণার পর তাকে সাজা পরোয়ানাসহ কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আদালত আরও উল্লেখ করেছেন, যেসব আসামি আগে থেকেই কারাগারে ছিলেন, তাদের সাজার মেয়াদ থেকে সেই সময় বাদ যাবে।
আদালতের পর্যবেক্ষণ
আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন, ডেসটিনি গ্রুপের এমএলএম ব্যবসার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে সেই অর্থ বিনিয়োগ না করে ব্যক্তিগত স্বার্থে আত্মসাৎ করা হয়েছে। এই ধরনের অর্থনৈতিক অপরাধ দেশের অর্থনীতির জন্য বিপজ্জনক।
আদালত বলেন, “অর্থ আত্মসাতের ঘটনা শুধু ব্যক্তি নয়, রাষ্ট্রের আর্থিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।“ তাই মামলাটির বিচার দ্রুত শেষ করা হয়েছে এবং অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হয়েছে।
ডেসটিনি কেলেঙ্কারির পটভূমি
ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড একটি বহু স্তর বিপণন (এমএলএম) প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তারা বিভিন্ন প্রকল্পের নামে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল অর্থ সংগ্রহ করে। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত প্রকল্প ছিল ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন।
কোম্পানিটি গ্রাহকদের মুনাফার লোভ দেখিয়ে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করেছিল। তবে পরে অভিযোগ ওঠে, গ্রাহকদের অর্থ প্রকল্পে বিনিয়োগ না করে ব্যক্তিগতভাবে আত্মসাৎ করেছেন কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তারা।
২০১২ সালে ডেসটিনির বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি দেশের অন্যতম আলোচিত অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারিতে পরিণত হয়।
রাষ্ট্রীয় কোষাগারে অর্থ ফেরতের নির্দেশ
আদালত রায়ে উল্লেখ করেছেন, ডেসটিনি গ্রুপের আসামিরা যে পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন, তার দ্বিগুণ অর্থ আগামী ছয় মাসের মধ্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে হবে।
রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “এই অর্থ যদি আদায় করা সম্ভব হয়, তাহলে এটি দেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় ইতিবাচক দিক হবে।“
অর্থ ফেরত না দিলে পরবর্তী পদক্ষেপ
যদি আসামিরা আদালতের রায় অনুযায়ী নির্ধারিত অর্থ ছয় মাসের মধ্যে ফেরত না দেন, তাহলে রাষ্ট্র তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার মতো কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারে।
আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী:
- আসামিদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি বিক্রি করে অর্থ আদায় করা হবে।
- প্রয়োজনে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হবে।
- আত্মসাৎ করা অর্থ পুনরুদ্ধারে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা হতে পারে।
জামিনপ্রাপ্ত আসামিদের অবস্থা
মামলার আসামিদের মধ্যে যেসব ব্যক্তি জামিনে ছিলেন, তাদের রায় ঘোষণার পর থেকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বিশেষ করে সাবেক সেনা কর্মকর্তা হারুন-অর-রশিদকে সাজা ঘোষণার পরপরই কারাগারে নেওয়া হয়েছে।
বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিশ্লেষকরা যা বলছেন
আইন বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ডেসটিনি মামলার রায় দেশের বিচার ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। তারা বলছেন, এই রায় অর্থনৈতিক অপরাধ দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং জনগণের মধ্যে বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা বাড়াবে।
বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, “ডেসটিনির মতো কেলেঙ্কারি ভবিষ্যতে রোধ করতে হলে, আরও কঠোর আইন প্রয়োগ এবং দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে।“
ডেসটিনি গ্রুপের এমডি রফিকুল আমিন ও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেনের সাজা শুরুর আগেই শেষ হয়েছে। তবে মামলার রায়ে যে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে, তা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এই রায় অর্থনৈতিক অপরাধ দমনে একটি বড় উদাহরণ হয়ে থাকবে।
জনগণ এখন দেখছে, কীভাবে সরকার এই অর্থ ফেরত আদায়ের ব্যবস্থা নেয়। আদালতের নির্দেশনা যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়, তাহলে এটি দেশের অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
Please Share This Post in Your Social Media

ডেসটিনির রফিকুলের সাজা শুরুর আগেই শেষ?


২০১২ সালে ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের গাছ বিক্রির টাকা আত্মসাতের মামলায় সব আসামিকে ১২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বহুল আলোচিত বহু স্তর বিপণন (এমএলএম) প্রতিষ্ঠান ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমিন এবং চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন এই মামলার প্রধান আসামি। তবে দীর্ঘদিন কারাগারে থাকার কারণে তাদের সাজার মেয়াদ ইতোমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে বলে আদালত জানিয়েছেন।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪০-এর বিচারক মো. রবিউল আলম এ রায় দেন। আদালতের বেঞ্চ সহকারী বেলাল হোসেন গণমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রায়ের বিশদ বিবরণ
মামলার রায়ে আদালত বলেছেন, ডেসটিনি গ্রুপের এমডি রফিকুল আমিন এবং চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন ২০১২ সালের ১৪ অক্টোবর থেকে কারাগারে আছেন। ফলে তাদের সাজার মেয়াদ ইতোমধ্যে পূর্ণ হয়েছে। আদালত কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন, এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে।
তবে রায় অনুযায়ী, আসামিদের আগামী ছয় মাসের মধ্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে চার হাজার ৫১৫ কোটি ৫৭ লাখ ৫৪ হাজার ৪৫৪ টাকা জমা দিতে হবে। আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, মামলায় আত্মসাৎকৃত অর্থের দ্বিগুণ পরিমাণ অর্থ জমা দিতে হবে।
আসামিদের তালিকা ও সাজা কার্যকর
মামলায় মোট ১৯ জন আসামি ছিলেন। তাদের সবাইকে ১২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে আসামিদের মধ্যে কেউ কারাগারে থাকায় এবং কেউ জামিনে ছিলেন।
ডেসটিনি গ্রুপের প্রভাবশালী কর্মকর্তা এবং সাবেক সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) হারুন–অর–রশিদ জামিনে ছিলেন। রায়ের দিন তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। সাজা ঘোষণার পর তাকে সাজা পরোয়ানাসহ কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আদালত আরও উল্লেখ করেছেন, যেসব আসামি আগে থেকেই কারাগারে ছিলেন, তাদের সাজার মেয়াদ থেকে সেই সময় বাদ যাবে।
আদালতের পর্যবেক্ষণ
আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন, ডেসটিনি গ্রুপের এমএলএম ব্যবসার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে সেই অর্থ বিনিয়োগ না করে ব্যক্তিগত স্বার্থে আত্মসাৎ করা হয়েছে। এই ধরনের অর্থনৈতিক অপরাধ দেশের অর্থনীতির জন্য বিপজ্জনক।
আদালত বলেন, “অর্থ আত্মসাতের ঘটনা শুধু ব্যক্তি নয়, রাষ্ট্রের আর্থিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।“ তাই মামলাটির বিচার দ্রুত শেষ করা হয়েছে এবং অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হয়েছে।
ডেসটিনি কেলেঙ্কারির পটভূমি
ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড একটি বহু স্তর বিপণন (এমএলএম) প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তারা বিভিন্ন প্রকল্পের নামে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল অর্থ সংগ্রহ করে। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত প্রকল্প ছিল ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন।
কোম্পানিটি গ্রাহকদের মুনাফার লোভ দেখিয়ে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করেছিল। তবে পরে অভিযোগ ওঠে, গ্রাহকদের অর্থ প্রকল্পে বিনিয়োগ না করে ব্যক্তিগতভাবে আত্মসাৎ করেছেন কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তারা।
২০১২ সালে ডেসটিনির বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি দেশের অন্যতম আলোচিত অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারিতে পরিণত হয়।
রাষ্ট্রীয় কোষাগারে অর্থ ফেরতের নির্দেশ
আদালত রায়ে উল্লেখ করেছেন, ডেসটিনি গ্রুপের আসামিরা যে পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন, তার দ্বিগুণ অর্থ আগামী ছয় মাসের মধ্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে হবে।
রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “এই অর্থ যদি আদায় করা সম্ভব হয়, তাহলে এটি দেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় ইতিবাচক দিক হবে।“
অর্থ ফেরত না দিলে পরবর্তী পদক্ষেপ
যদি আসামিরা আদালতের রায় অনুযায়ী নির্ধারিত অর্থ ছয় মাসের মধ্যে ফেরত না দেন, তাহলে রাষ্ট্র তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার মতো কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারে।
আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী:
- আসামিদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি বিক্রি করে অর্থ আদায় করা হবে।
- প্রয়োজনে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হবে।
- আত্মসাৎ করা অর্থ পুনরুদ্ধারে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা হতে পারে।
জামিনপ্রাপ্ত আসামিদের অবস্থা
মামলার আসামিদের মধ্যে যেসব ব্যক্তি জামিনে ছিলেন, তাদের রায় ঘোষণার পর থেকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বিশেষ করে সাবেক সেনা কর্মকর্তা হারুন-অর-রশিদকে সাজা ঘোষণার পরপরই কারাগারে নেওয়া হয়েছে।
বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিশ্লেষকরা যা বলছেন
আইন বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ডেসটিনি মামলার রায় দেশের বিচার ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। তারা বলছেন, এই রায় অর্থনৈতিক অপরাধ দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং জনগণের মধ্যে বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা বাড়াবে।
বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, “ডেসটিনির মতো কেলেঙ্কারি ভবিষ্যতে রোধ করতে হলে, আরও কঠোর আইন প্রয়োগ এবং দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে।“
ডেসটিনি গ্রুপের এমডি রফিকুল আমিন ও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেনের সাজা শুরুর আগেই শেষ হয়েছে। তবে মামলার রায়ে যে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে, তা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এই রায় অর্থনৈতিক অপরাধ দমনে একটি বড় উদাহরণ হয়ে থাকবে।
জনগণ এখন দেখছে, কীভাবে সরকার এই অর্থ ফেরত আদায়ের ব্যবস্থা নেয়। আদালতের নির্দেশনা যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়, তাহলে এটি দেশের অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।