এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দেবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

- Update Time : ০৯:৪৯:৩৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৬৭ Time View
সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত চারটি কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এসব প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে আগামী এক মাসের মধ্যে সংস্কারের একটি রোডম্যাপ প্রকাশ করবে অন্তর্বর্তী সরকার। বুধবার (১৫ জানুয়ারি) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে চারটি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান পরিবেশ উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান।
প্রতিবেদন প্রকাশ এবং জনসাধারণের জন্য উন্মুক্তকরণ
রিজওয়ানা হাসান বলেন, “জমা হওয়া প্রতিবেদনগুলোর সারমর্ম আজই জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। এর মধ্যে সরকার কতটা সংস্কার করবে, তা আগামী এক মাসের মধ্যে একটি রোডম্যাপ আকারে প্রকাশ করা হবে।” তিনি আরও বলেন যে, এই প্রতিবেদনগুলো কমিশন প্রধানরা স্বাধীনভাবে তৈরি করেছেন এবং তারা প্রয়োজনীয় প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেছেন।
কমিশনের কাজের মেয়াদ বাড়ানোর ঘোষণা
পরিবেশ উপদেষ্টা জানান, “আগামীকাল আরও ছয়টি কমিশনের কাজের সময় এক মাস বাড়ানো হবে। এতে তারা আরও সময় পাবে এবং তাদের কাজ আরও ফলপ্রসূ হবে।”
সংস্কারের প্রক্রিয়া এবং গণঅভ্যুত্থানের চেতনা
সংস্কারের প্রক্রিয়ার কনটেক্সট তুলে ধরে রিজওয়ানা হাসান বলেন, “সংস্কারের যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তার কনটেক্সটা যেন আমরা ভুলে না যাই। এটি এসেছে একটি গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে। যদি শুধুমাত্র সংবিধানের আইনি কাঠামো অনুসরণ করে সংস্কার করা হয়, তাহলে গণঅভ্যুত্থানের যে চেতনা এবং আকাঙ্ক্ষা ছিল, তা হারিয়ে যেতে পারে। আমরা গণঅভ্যুত্থানকেই আমাদের হৃদয়ে ধারণ করেছি।”
সব রাজনৈতিক দলের মতামতের প্রতিফলন
রিজওয়ানা হাসান জানান, সংস্কার কমিশনগুলো তাদের প্রতিবেদনে সব রাজনৈতিক দলের লিখিত মতামতের প্রতিফলন ঘটিয়েছে। তবে এই প্রক্রিয়া এখানেই শেষ নয়। তিনি বলেন, “এটা নিয়ে আলোচনা করার আরও কয়েকটি ধাপ রয়েছে।”
আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের বক্তব্য
ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, “আমাদের সংস্কার পরিকল্পনার চারটি ধাপ রয়েছে। প্রথম ধাপ হলো কমিশনগুলোর রিপোর্ট প্রণয়ন এবং সুপারিশ প্রদান। দ্বিতীয় ধাপ হলো এই সুপারিশগুলোর ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা। তৃতীয় ধাপে ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় আইন ও নীতি প্রণয়ন করা হবে। চতুর্থ এবং শেষ ধাপে সেই আইন বাস্তবায়ন করা হবে। আমাদের প্রত্যাশা রয়েছে যে, আমরা পুরো কাজটি সম্পন্ন করতে পারব। তবে এটি নির্ভর করছে রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতার ওপর।”
রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের বিষয়ে বক্তব্য
রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের বিষয়ে রিজওয়ানা হাসান বলেন, “কোনো রাজনৈতিক দলকে টার্গেট করে বিচার করা হচ্ছে না। স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচার কার্যক্রম চলছে। আমরা কোনো দলকে নিষিদ্ধ করিনি। তাই কোন দল রাজনীতিতে কী অবস্থানে থাকবে, তা সেই দলগুলোর নিজস্ব সিদ্ধান্ত। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর এটি নির্ভর করছে না।”
ব্রিফিংয়ে উপস্থিত অন্যান্য উপদেষ্টা
ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তাদের উপস্থিতিতে কমিশনের প্রতিবেদন এবং সরকারের সংস্কার পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
সংস্কারের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা
সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টারা জানান, সংস্কারের এই প্রক্রিয়াটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ায় কেবল রাজনৈতিক দল নয়, নাগরিক সমাজ, ব্যবসায়ী সমাজ এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন সংস্থার মতামতও বিবেচনায় নেওয়া হবে। তারা বলেন, “এই প্রক্রিয়া থেকে দেশের অর্থনীতি, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা ও বিচারব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন আশা করা হচ্ছে।”
Please Share This Post in Your Social Media

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দেবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত চারটি কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এসব প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে আগামী এক মাসের মধ্যে সংস্কারের একটি রোডম্যাপ প্রকাশ করবে অন্তর্বর্তী সরকার। বুধবার (১৫ জানুয়ারি) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে চারটি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান পরিবেশ উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান।
প্রতিবেদন প্রকাশ এবং জনসাধারণের জন্য উন্মুক্তকরণ
রিজওয়ানা হাসান বলেন, “জমা হওয়া প্রতিবেদনগুলোর সারমর্ম আজই জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। এর মধ্যে সরকার কতটা সংস্কার করবে, তা আগামী এক মাসের মধ্যে একটি রোডম্যাপ আকারে প্রকাশ করা হবে।” তিনি আরও বলেন যে, এই প্রতিবেদনগুলো কমিশন প্রধানরা স্বাধীনভাবে তৈরি করেছেন এবং তারা প্রয়োজনীয় প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেছেন।
কমিশনের কাজের মেয়াদ বাড়ানোর ঘোষণা
পরিবেশ উপদেষ্টা জানান, “আগামীকাল আরও ছয়টি কমিশনের কাজের সময় এক মাস বাড়ানো হবে। এতে তারা আরও সময় পাবে এবং তাদের কাজ আরও ফলপ্রসূ হবে।”
সংস্কারের প্রক্রিয়া এবং গণঅভ্যুত্থানের চেতনা
সংস্কারের প্রক্রিয়ার কনটেক্সট তুলে ধরে রিজওয়ানা হাসান বলেন, “সংস্কারের যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তার কনটেক্সটা যেন আমরা ভুলে না যাই। এটি এসেছে একটি গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে। যদি শুধুমাত্র সংবিধানের আইনি কাঠামো অনুসরণ করে সংস্কার করা হয়, তাহলে গণঅভ্যুত্থানের যে চেতনা এবং আকাঙ্ক্ষা ছিল, তা হারিয়ে যেতে পারে। আমরা গণঅভ্যুত্থানকেই আমাদের হৃদয়ে ধারণ করেছি।”
সব রাজনৈতিক দলের মতামতের প্রতিফলন
রিজওয়ানা হাসান জানান, সংস্কার কমিশনগুলো তাদের প্রতিবেদনে সব রাজনৈতিক দলের লিখিত মতামতের প্রতিফলন ঘটিয়েছে। তবে এই প্রক্রিয়া এখানেই শেষ নয়। তিনি বলেন, “এটা নিয়ে আলোচনা করার আরও কয়েকটি ধাপ রয়েছে।”
আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের বক্তব্য
ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, “আমাদের সংস্কার পরিকল্পনার চারটি ধাপ রয়েছে। প্রথম ধাপ হলো কমিশনগুলোর রিপোর্ট প্রণয়ন এবং সুপারিশ প্রদান। দ্বিতীয় ধাপ হলো এই সুপারিশগুলোর ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা। তৃতীয় ধাপে ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় আইন ও নীতি প্রণয়ন করা হবে। চতুর্থ এবং শেষ ধাপে সেই আইন বাস্তবায়ন করা হবে। আমাদের প্রত্যাশা রয়েছে যে, আমরা পুরো কাজটি সম্পন্ন করতে পারব। তবে এটি নির্ভর করছে রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতার ওপর।”
রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের বিষয়ে বক্তব্য
রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের বিষয়ে রিজওয়ানা হাসান বলেন, “কোনো রাজনৈতিক দলকে টার্গেট করে বিচার করা হচ্ছে না। স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচার কার্যক্রম চলছে। আমরা কোনো দলকে নিষিদ্ধ করিনি। তাই কোন দল রাজনীতিতে কী অবস্থানে থাকবে, তা সেই দলগুলোর নিজস্ব সিদ্ধান্ত। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর এটি নির্ভর করছে না।”
ব্রিফিংয়ে উপস্থিত অন্যান্য উপদেষ্টা
ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তাদের উপস্থিতিতে কমিশনের প্রতিবেদন এবং সরকারের সংস্কার পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
সংস্কারের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা
সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টারা জানান, সংস্কারের এই প্রক্রিয়াটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ায় কেবল রাজনৈতিক দল নয়, নাগরিক সমাজ, ব্যবসায়ী সমাজ এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন সংস্থার মতামতও বিবেচনায় নেওয়া হবে। তারা বলেন, “এই প্রক্রিয়া থেকে দেশের অর্থনীতি, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা ও বিচারব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন আশা করা হচ্ছে।”