সময়: বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়া-তারেক রহমানসহ সব আসামি খালাস

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ১২:৪২:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫
  • / ৭১ Time View

1736914476 85d2842454d54b92e1703bf8516c7ea6

 

খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান

 

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার সব আসামি খালাস পেয়েছেন। বুধবার (১৫ জানুয়ারি) আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ এ রায় দেন। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন এই বেঞ্চ হাইকোর্টের দেওয়া ১০ বছরের কারাদণ্ড বাতিল করে তাদের খালাস দেন।

রায় ঘোষণার প্রক্রিয়া

আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, বদরুদ্দোজা বাদল, রুহুল কুদ্দুস কাজল ও কায়সার কামাল। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আসিফ হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদুর রউফ ও অনীক আর হক।

রায়ের পর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, এই মামলায় কোনো ভিত্তিই ছিল না। হাইকোর্ট অন্যায়ভাবে পাঁচ বছরের সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেছিলেন। আজ আপিল বিভাগ সেই অন্যায় রায় বাতিল করেছেন। এটি বিচার বিভাগের স্বাধীনতার উদাহরণ।

দুদকের আইনজীবী আসিফ হাসান জানান, চারটি আপিল মঞ্জুর করা হয়েছে এবং বিচারিক আদালতের সব রায় বাতিল করা হয়েছে। তিনি বলেন, আদালত পুরো মামলাটিকে বিদ্বেষপূর্ণ প্রতিহিংসামূলক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তাই সব আসামিকেই খালাস দেওয়া হয়েছে।

মামলার পটভূমি

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। একই মামলায় তারেক রহমানসহ অন্য আসামিদের ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

পরে হাইকোর্ট ওই বছরের ৩০ অক্টোবর খালেদা জিয়ার সাজা পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করেন। হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া আপিল করেন। একই বছরের ১১ নভেম্বর আপিল বিভাগ তার আপিল শুনানির অনুমতি দিয়ে হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করেন।

আইনজীবীদের

প্রতিক্রিয়া

রায়ের পর খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জানান, এই রায় দেশে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রমাণ। জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, বিচার বিভাগ ফ্যাসিস্ট সরকারের চাপে কাজ করছিল। আজকের রায়ে প্রমাণ হলো, বিচার ব্যবস্থা নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারে। এই মামলাটি ছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

দুদকের পক্ষে আইনজীবী আসিফ হাসান বলেন, আদালত মামলাটিকে বিদ্বেষমূলক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তাই যারা আপিল করতে পারেননি, তারাও খালাস পেয়েছেন।

প্রথম মামলার রায় এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমা

অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় দেওয়ার পর ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ আরেকটি রায়ে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন।

পরে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ দুটি মামলাতেই খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ করেন। তবে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জানান, তিনি আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

এই রায়কে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিএনপি নেতারা এটিকে বিচারের বিজয় বলে অভিহিত করেছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতারা অভিযোগ করেছেন যে বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হয়েছে।

দুদকের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ

দুদক জানিয়েছে, তারা রায়ের অনুলিপি হাতে পেয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করবে। আইনজীবী আসিফ হাসান বলেন, আমরা এখনো রায়ের অনুলিপি পাইনি। পাওয়ার পর কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। তবে আদালত যখন বলেছেন এটি বিদ্বেষমূলক মামলা, তখন আপিল করার সুযোগ কম।

বিচার বিভাগের স্বাধীনতার বার্তা

আইনজীবীরা মনে করছেন, এই রায় বাংলাদেশের বিচার বিভাগের স্বাধীনতার একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। তারা বলছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দায়ের করা মামলাগুলো আদালতে টেকেনি।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি ও এই মামলায় খালাস পাওয়ার বিষয়টি বিএনপির জন্য রাজনৈতিক প্রভাব ফেলতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। তবে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, এটি আদালতের বিষয় এবং সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালাস পাওয়া দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনা তৈরি করেছে। দীর্ঘদিন ধরে চলা এই মামলার রায় বিএনপির জন্য যেমন স্বস্তির, তেমনি এর বিচারিক প্রক্রিয়া দেশের বিচার বিভাগের ওপর নতুন আস্থার জন্ম দিয়েছে। তবে এই রায় ভবিষ্যতে দুদকের মামলা দায়েরের প্রক্রিয়াকে কীভাবে প্রভাবিত করবে, তা দেখার বিষয়।

 

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়া-তারেক রহমানসহ সব আসামি খালাস

Update Time : ১২:৪২:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫

 

খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান

 

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার সব আসামি খালাস পেয়েছেন। বুধবার (১৫ জানুয়ারি) আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ এ রায় দেন। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন এই বেঞ্চ হাইকোর্টের দেওয়া ১০ বছরের কারাদণ্ড বাতিল করে তাদের খালাস দেন।

রায় ঘোষণার প্রক্রিয়া

আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, বদরুদ্দোজা বাদল, রুহুল কুদ্দুস কাজল ও কায়সার কামাল। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আসিফ হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদুর রউফ ও অনীক আর হক।

রায়ের পর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, এই মামলায় কোনো ভিত্তিই ছিল না। হাইকোর্ট অন্যায়ভাবে পাঁচ বছরের সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেছিলেন। আজ আপিল বিভাগ সেই অন্যায় রায় বাতিল করেছেন। এটি বিচার বিভাগের স্বাধীনতার উদাহরণ।

দুদকের আইনজীবী আসিফ হাসান জানান, চারটি আপিল মঞ্জুর করা হয়েছে এবং বিচারিক আদালতের সব রায় বাতিল করা হয়েছে। তিনি বলেন, আদালত পুরো মামলাটিকে বিদ্বেষপূর্ণ প্রতিহিংসামূলক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তাই সব আসামিকেই খালাস দেওয়া হয়েছে।

মামলার পটভূমি

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। একই মামলায় তারেক রহমানসহ অন্য আসামিদের ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

পরে হাইকোর্ট ওই বছরের ৩০ অক্টোবর খালেদা জিয়ার সাজা পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করেন। হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া আপিল করেন। একই বছরের ১১ নভেম্বর আপিল বিভাগ তার আপিল শুনানির অনুমতি দিয়ে হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করেন।

আইনজীবীদের

প্রতিক্রিয়া

রায়ের পর খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জানান, এই রায় দেশে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রমাণ। জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, বিচার বিভাগ ফ্যাসিস্ট সরকারের চাপে কাজ করছিল। আজকের রায়ে প্রমাণ হলো, বিচার ব্যবস্থা নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারে। এই মামলাটি ছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

দুদকের পক্ষে আইনজীবী আসিফ হাসান বলেন, আদালত মামলাটিকে বিদ্বেষমূলক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তাই যারা আপিল করতে পারেননি, তারাও খালাস পেয়েছেন।

প্রথম মামলার রায় এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমা

অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় দেওয়ার পর ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ আরেকটি রায়ে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন।

পরে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ দুটি মামলাতেই খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ করেন। তবে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জানান, তিনি আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

এই রায়কে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিএনপি নেতারা এটিকে বিচারের বিজয় বলে অভিহিত করেছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতারা অভিযোগ করেছেন যে বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হয়েছে।

দুদকের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ

দুদক জানিয়েছে, তারা রায়ের অনুলিপি হাতে পেয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করবে। আইনজীবী আসিফ হাসান বলেন, আমরা এখনো রায়ের অনুলিপি পাইনি। পাওয়ার পর কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। তবে আদালত যখন বলেছেন এটি বিদ্বেষমূলক মামলা, তখন আপিল করার সুযোগ কম।

বিচার বিভাগের স্বাধীনতার বার্তা

আইনজীবীরা মনে করছেন, এই রায় বাংলাদেশের বিচার বিভাগের স্বাধীনতার একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। তারা বলছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দায়ের করা মামলাগুলো আদালতে টেকেনি।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি ও এই মামলায় খালাস পাওয়ার বিষয়টি বিএনপির জন্য রাজনৈতিক প্রভাব ফেলতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। তবে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, এটি আদালতের বিষয় এবং সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালাস পাওয়া দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনা তৈরি করেছে। দীর্ঘদিন ধরে চলা এই মামলার রায় বিএনপির জন্য যেমন স্বস্তির, তেমনি এর বিচারিক প্রক্রিয়া দেশের বিচার বিভাগের ওপর নতুন আস্থার জন্ম দিয়েছে। তবে এই রায় ভবিষ্যতে দুদকের মামলা দায়েরের প্রক্রিয়াকে কীভাবে প্রভাবিত করবে, তা দেখার বিষয়।