সময়: বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জুলাই-আগস্ট গণহত্যা: শেখ হাসিনাসহ জড়িতদের কল রেকর্ড প্রসিকিউশনের হাতে, গুমের তথ্য-প্রমাণও মিলেছে

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ০৫:০৪:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫
  • / ৬৮ Time View

1736753088 9637d0924734b14b482a60947f988014

 

ঢাকা: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিম জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের সময় সংগঠিত গণহত্যার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ কল রেকর্ড হাতে পেয়েছে। একইসঙ্গে গুমের ঘটনায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-প্রমাণও সংগ্রহ করা হয়েছে।

সোমবার (১৩ জানুয়ারি) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যা ও গুমের তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান প্রসিকিউটর তানভীর জ্বোহা। তিনি বলেন, “গুমের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-প্রমাণ আমরা পেয়েছি। হত্যাকাণ্ডের আলামত মুছে ফেলতে সব ধরনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তবে প্রমাণ লুকানোর চেষ্টার পরও আমরা বেশ কিছু শক্তিশালী আলামত সংগ্রহ করতে পেরেছি।”

কল রেকর্ডের ফরেনসিক পরীক্ষার নির্দেশ

প্রসিকিউশন টিম জানিয়েছে, শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পাওয়া কল রেকর্ড ইতোমধ্যেই সিআইডি-কে পাঠানো হয়েছে। এসব কল রেকর্ডের ফরেনসিক পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার।

ট্রাইব্যুনালের নির্দেশ অনুযায়ী, এসব কল রেকর্ডের মাধ্যমে গণহত্যার সময়কার যোগাযোগ, পরিকল্পনা এবং নির্দেশনার বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করা হবে। প্রসিকিউটর বি এম সুলতান মাহমুদ বলেন, “অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এবং বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী শেখ হাসিনাসহ আরও কয়েকজনের গুরুত্বপূর্ণ কল রেকর্ড আমরা সংগ্রহ করেছি। ট্রাইব্যুনাল এসব রেকর্ডের ফরেনসিক পরীক্ষার অনুমতি দিয়েছেন। এর মাধ্যমে সত্যতা যাচাই করা হবে।”

তথ্য প্রদানে সংস্থাগুলোর অসহযোগিতা

প্রসিকিউশন টিমের অভিযোগ, গণহত্যা ও গুমের তদন্তে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করতে অসহযোগিতা করছে। প্রসিকিউটর তানভীর জ্বোহা বলেন, “আমরা বিভিন্ন সংস্থার কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য চেয়ে বারবার আবেদন করেছি। কিন্তু অনেক সংস্থা সহযোগিতা করেনি। তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে অসহযোগিতার এই প্রবণতা তদন্ত প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করছে।”

গুমের ঘটনায় নতুন মোড়

গণহত্যার পাশাপাশি জুলাই-আগস্টের সময় নিখোঁজ ব্যক্তিদের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে প্রসিকিউশন টিম। প্রসিকিউটর তানভীর জ্বোহা বলেন, “গুমের ঘটনায় বেশ কিছু নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে আমরা তথ্য পেয়েছি। এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে আমরা নিশ্চিত হতে পেরেছি, পরিকল্পিতভাবে এসব হত্যাকাণ্ডের আলামত মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে।”

পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আগামী সপ্তাহে গণহত্যা এবং গুমের মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করবে। প্রসিকিউটর টিম আশা করছে, ফরেনসিক পরীক্ষার প্রতিবেদন হাতে এলে তদন্তে আরও অগ্রগতি হবে এবং দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব হবে।

এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোও নজরদারি করছে। তারা বলছে, “গণহত্যা ও গুমের সঠিক তদন্ত হলে সত্য উদঘাটিত হবে এবং এই নৃশংস অপরাধের দায়ীদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।”

জনমনে প্রতিক্রিয়া

জুলাই-আগস্ট গণহত্যার তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপ্রাপ্তির খবরে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। অনেকে মনে করছেন, এই তদন্ত প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে তদন্ত সঠিকভাবে পরিচালিত হলে বিচারের মাধ্যমে সত্য উন্মোচিত হবে বলে আশা করছেন সাধারণ মানুষ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, “গণহত্যা ও গুমের ঘটনায় যাঁরা জড়িত, তাঁদের বিচারের আওতায় আনতে হলে প্রসিকিউশনকে শক্তিশালী প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে। আর এই প্রক্রিয়ায় অসহযোগিতা বন্ধ হওয়া জরুরি।”

পরবর্তী ধাপ
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ফরেনসিক পরীক্ষার প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর তদন্তের পরবর্তী ধাপ নির্ধারণ করবে। প্রসিকিউটর টিম জানিয়েছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র দাখিলের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

 

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

জুলাই-আগস্ট গণহত্যা: শেখ হাসিনাসহ জড়িতদের কল রেকর্ড প্রসিকিউশনের হাতে, গুমের তথ্য-প্রমাণও মিলেছে

Update Time : ০৫:০৪:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫

 

ঢাকা: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিম জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের সময় সংগঠিত গণহত্যার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ কল রেকর্ড হাতে পেয়েছে। একইসঙ্গে গুমের ঘটনায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-প্রমাণও সংগ্রহ করা হয়েছে।

সোমবার (১৩ জানুয়ারি) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যা ও গুমের তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান প্রসিকিউটর তানভীর জ্বোহা। তিনি বলেন, “গুমের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-প্রমাণ আমরা পেয়েছি। হত্যাকাণ্ডের আলামত মুছে ফেলতে সব ধরনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তবে প্রমাণ লুকানোর চেষ্টার পরও আমরা বেশ কিছু শক্তিশালী আলামত সংগ্রহ করতে পেরেছি।”

কল রেকর্ডের ফরেনসিক পরীক্ষার নির্দেশ

প্রসিকিউশন টিম জানিয়েছে, শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পাওয়া কল রেকর্ড ইতোমধ্যেই সিআইডি-কে পাঠানো হয়েছে। এসব কল রেকর্ডের ফরেনসিক পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার।

ট্রাইব্যুনালের নির্দেশ অনুযায়ী, এসব কল রেকর্ডের মাধ্যমে গণহত্যার সময়কার যোগাযোগ, পরিকল্পনা এবং নির্দেশনার বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করা হবে। প্রসিকিউটর বি এম সুলতান মাহমুদ বলেন, “অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এবং বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী শেখ হাসিনাসহ আরও কয়েকজনের গুরুত্বপূর্ণ কল রেকর্ড আমরা সংগ্রহ করেছি। ট্রাইব্যুনাল এসব রেকর্ডের ফরেনসিক পরীক্ষার অনুমতি দিয়েছেন। এর মাধ্যমে সত্যতা যাচাই করা হবে।”

তথ্য প্রদানে সংস্থাগুলোর অসহযোগিতা

প্রসিকিউশন টিমের অভিযোগ, গণহত্যা ও গুমের তদন্তে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করতে অসহযোগিতা করছে। প্রসিকিউটর তানভীর জ্বোহা বলেন, “আমরা বিভিন্ন সংস্থার কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য চেয়ে বারবার আবেদন করেছি। কিন্তু অনেক সংস্থা সহযোগিতা করেনি। তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে অসহযোগিতার এই প্রবণতা তদন্ত প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করছে।”

গুমের ঘটনায় নতুন মোড়

গণহত্যার পাশাপাশি জুলাই-আগস্টের সময় নিখোঁজ ব্যক্তিদের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে প্রসিকিউশন টিম। প্রসিকিউটর তানভীর জ্বোহা বলেন, “গুমের ঘটনায় বেশ কিছু নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে আমরা তথ্য পেয়েছি। এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে আমরা নিশ্চিত হতে পেরেছি, পরিকল্পিতভাবে এসব হত্যাকাণ্ডের আলামত মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে।”

পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আগামী সপ্তাহে গণহত্যা এবং গুমের মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করবে। প্রসিকিউটর টিম আশা করছে, ফরেনসিক পরীক্ষার প্রতিবেদন হাতে এলে তদন্তে আরও অগ্রগতি হবে এবং দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব হবে।

এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোও নজরদারি করছে। তারা বলছে, “গণহত্যা ও গুমের সঠিক তদন্ত হলে সত্য উদঘাটিত হবে এবং এই নৃশংস অপরাধের দায়ীদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।”

জনমনে প্রতিক্রিয়া

জুলাই-আগস্ট গণহত্যার তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপ্রাপ্তির খবরে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। অনেকে মনে করছেন, এই তদন্ত প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে তদন্ত সঠিকভাবে পরিচালিত হলে বিচারের মাধ্যমে সত্য উন্মোচিত হবে বলে আশা করছেন সাধারণ মানুষ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, “গণহত্যা ও গুমের ঘটনায় যাঁরা জড়িত, তাঁদের বিচারের আওতায় আনতে হলে প্রসিকিউশনকে শক্তিশালী প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে। আর এই প্রক্রিয়ায় অসহযোগিতা বন্ধ হওয়া জরুরি।”

পরবর্তী ধাপ
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ফরেনসিক পরীক্ষার প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর তদন্তের পরবর্তী ধাপ নির্ধারণ করবে। প্রসিকিউটর টিম জানিয়েছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র দাখিলের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।