ভোট বিলম্ব মেনে নেবে না বিএনপি: স্থায়ী কমিটির বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত

- Update Time : ১২:০৭:৪০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৯৪ Time View
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো ধরণের বিলম্বের প্রচেষ্টা প্রতিরোধে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। সোমবার রাতে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বৈঠকে নির্বাচন, সংবিধান, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা, স্থানীয় সরকার নির্বাচনসহ বিভিন্ন জাতীয় ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকের প্রেক্ষাপট
রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকটি শুরু হয় রাত ৮টা ৪০ মিনিটে এবং চলে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, যিনি লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন। বৈঠকে দলের শীর্ষ নেতৃত্বসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ভোট বিলম্বের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান
বৈঠকে বিএনপির শীর্ষ নেতারা জানান, নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরণের বিলম্ব মেনে নেওয়া হবে না। নেতারা মনে করেন, সরকার জনগণের ভোটাধিকার খর্ব করতে এবং নিজেদের ক্ষমতায় টিকে থাকতে ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বিলম্ব ঘটানোর চেষ্টা করছে। তাঁরা বলেন:
- জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের বিকল্প নেই।
- নির্বাচন পেছানোর জন্য নতুন নতুন ইস্যু তৈরি করা হচ্ছে। এ ধরনের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
- জনগণের মধ্যে একটি সুনির্দিষ্ট নির্বাচনী রোডম্যাপ এবং নির্বাচনকালীন সরকারের কাঠামো সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা জরুরি।
জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে বিতর্ক
বৈঠকে জুলাই গণঅভ্যুত্থান এবং তার প্রভাব নিয়ে আলোচনা হয়। বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন, সরকার ছাত্রদের ঘোষণাপত্র নিয়ে শুরুতে নিরপেক্ষ অবস্থান নেওয়ার কথা বললেও পরে তা প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে। নেতারা মনে করেন:
- সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোনো উদ্যোগ নিলে দেশে অস্থিতিশীলতা বাড়বে।
- অন্তর্বর্তী সরকার এবং সংবিধান পরিবর্তনের দাবি একটি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ, যা জনগণের স্বার্থবিরোধী।
- সংবিধান অনুযায়ী সব কার্যক্রম পরিচালিত হওয়া উচিত।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা
বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা হয়। নেতারা অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ সরকার শুরু থেকেই খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা করতে বাধা দিচ্ছে।
- তাঁরা মনে করেন, বেগম খালেদা জিয়া জনগণের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। তাঁর সুস্থতা দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নতুন গতি সঞ্চার করবে।
- নেতারা দেশবাসীর কাছে খালেদা জিয়ার দ্রুত আরোগ্যের জন্য দোয়া চান।
ভোটার বয়স নিয়ে বিতর্ক
বৈঠকে ভোটার হওয়ার বয়সসীমা ১৮ থেকে কমিয়ে ১৭ করার প্রস্তাব নিয়ে সমালোচনা হয়। নেতারা বলেন:
- বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই ভোটার হওয়ার সর্বনিম্ন বয়স ১৮।
- বাংলাদেশে ১৮ বছর বয়স থেকে ভোটার হওয়ার প্রথা চলমান রয়েছে, যা পরিবর্তনের কোনো প্রয়োজন নেই।
- বয়সসীমা কমানোর প্রচেষ্টা বিভ্রান্তি সৃষ্টির একটি অংশ, যা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও উদ্দেশ্য
বৈঠকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সময় এবং এর পেছনের উদ্দেশ্য নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। নেতারা প্রশ্ন তোলেন, কেন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
- তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এমনটা হয়নি।
- এটি একটি ষড়যন্ত্র হতে পারে, যাতে জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ বিঘ্নিত হয়।
নির্বাচনকালীন পরিস্থিতি ও সরকারের ভূমিকা
বিএনপি নেতারা মনে করেন, সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাচন পেছানোর চেষ্টা করছে।
- অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৫ সালের শেষ দিকে নির্বাচন আয়োজনের ইঙ্গিত দিয়েছে।
- এই ধরনের বিলম্ব জনগণের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর।
- সরকার নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পেছনে সহায়তা করছে বলে অভিযোগ উঠে আসে।
বিএনপির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বিএনপি নেতারা দেশের জনগণকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান।
- তাঁরা জনগণকে তাদের ভোটাধিকার রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
- সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের জন্য দলীয় কর্মসূচি গঠনের পরিকল্পনা করা হয়।
উপস্থিত শীর্ষ নেতারা
বৈঠকে অংশ নেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ অন্যান্য শীর্ষ নেতারা।
বিএনপি মনে করে, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেশের গণতন্ত্র রক্ষার জন্য অপরিহার্য। তাঁদের মতে, সরকার যদি নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা করে, তবে জনগণের সহযোগিতায় তীব্র আন্দোলনের মাধ্যমে তা প্রতিহত করা হবে। নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
Please Share This Post in Your Social Media

ভোট বিলম্ব মেনে নেবে না বিএনপি: স্থায়ী কমিটির বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো ধরণের বিলম্বের প্রচেষ্টা প্রতিরোধে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। সোমবার রাতে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বৈঠকে নির্বাচন, সংবিধান, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা, স্থানীয় সরকার নির্বাচনসহ বিভিন্ন জাতীয় ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকের প্রেক্ষাপট
রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকটি শুরু হয় রাত ৮টা ৪০ মিনিটে এবং চলে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, যিনি লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন। বৈঠকে দলের শীর্ষ নেতৃত্বসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ভোট বিলম্বের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান
বৈঠকে বিএনপির শীর্ষ নেতারা জানান, নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরণের বিলম্ব মেনে নেওয়া হবে না। নেতারা মনে করেন, সরকার জনগণের ভোটাধিকার খর্ব করতে এবং নিজেদের ক্ষমতায় টিকে থাকতে ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বিলম্ব ঘটানোর চেষ্টা করছে। তাঁরা বলেন:
- জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের বিকল্প নেই।
- নির্বাচন পেছানোর জন্য নতুন নতুন ইস্যু তৈরি করা হচ্ছে। এ ধরনের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
- জনগণের মধ্যে একটি সুনির্দিষ্ট নির্বাচনী রোডম্যাপ এবং নির্বাচনকালীন সরকারের কাঠামো সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা জরুরি।
জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে বিতর্ক
বৈঠকে জুলাই গণঅভ্যুত্থান এবং তার প্রভাব নিয়ে আলোচনা হয়। বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন, সরকার ছাত্রদের ঘোষণাপত্র নিয়ে শুরুতে নিরপেক্ষ অবস্থান নেওয়ার কথা বললেও পরে তা প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে। নেতারা মনে করেন:
- সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোনো উদ্যোগ নিলে দেশে অস্থিতিশীলতা বাড়বে।
- অন্তর্বর্তী সরকার এবং সংবিধান পরিবর্তনের দাবি একটি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ, যা জনগণের স্বার্থবিরোধী।
- সংবিধান অনুযায়ী সব কার্যক্রম পরিচালিত হওয়া উচিত।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা
বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা হয়। নেতারা অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ সরকার শুরু থেকেই খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা করতে বাধা দিচ্ছে।
- তাঁরা মনে করেন, বেগম খালেদা জিয়া জনগণের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। তাঁর সুস্থতা দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নতুন গতি সঞ্চার করবে।
- নেতারা দেশবাসীর কাছে খালেদা জিয়ার দ্রুত আরোগ্যের জন্য দোয়া চান।
ভোটার বয়স নিয়ে বিতর্ক
বৈঠকে ভোটার হওয়ার বয়সসীমা ১৮ থেকে কমিয়ে ১৭ করার প্রস্তাব নিয়ে সমালোচনা হয়। নেতারা বলেন:
- বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই ভোটার হওয়ার সর্বনিম্ন বয়স ১৮।
- বাংলাদেশে ১৮ বছর বয়স থেকে ভোটার হওয়ার প্রথা চলমান রয়েছে, যা পরিবর্তনের কোনো প্রয়োজন নেই।
- বয়সসীমা কমানোর প্রচেষ্টা বিভ্রান্তি সৃষ্টির একটি অংশ, যা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও উদ্দেশ্য
বৈঠকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সময় এবং এর পেছনের উদ্দেশ্য নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। নেতারা প্রশ্ন তোলেন, কেন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
- তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এমনটা হয়নি।
- এটি একটি ষড়যন্ত্র হতে পারে, যাতে জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ বিঘ্নিত হয়।
নির্বাচনকালীন পরিস্থিতি ও সরকারের ভূমিকা
বিএনপি নেতারা মনে করেন, সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাচন পেছানোর চেষ্টা করছে।
- অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৫ সালের শেষ দিকে নির্বাচন আয়োজনের ইঙ্গিত দিয়েছে।
- এই ধরনের বিলম্ব জনগণের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর।
- সরকার নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পেছনে সহায়তা করছে বলে অভিযোগ উঠে আসে।
বিএনপির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বিএনপি নেতারা দেশের জনগণকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান।
- তাঁরা জনগণকে তাদের ভোটাধিকার রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
- সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের জন্য দলীয় কর্মসূচি গঠনের পরিকল্পনা করা হয়।
উপস্থিত শীর্ষ নেতারা
বৈঠকে অংশ নেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ অন্যান্য শীর্ষ নেতারা।
বিএনপি মনে করে, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেশের গণতন্ত্র রক্ষার জন্য অপরিহার্য। তাঁদের মতে, সরকার যদি নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা করে, তবে জনগণের সহযোগিতায় তীব্র আন্দোলনের মাধ্যমে তা প্রতিহত করা হবে। নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।