সময়: বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কুরআন ও হাদিসে পানির গুরুত্ব এবং এর সঠিক ব্যবহার

বিল্লাল হোসেন
  • Update Time : ০৫:০৩:১৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারী ২০২৫
  • / ৭৬ Time View

sura mulk 30

পানি মহান আল্লাহর এক অমূল্য নেয়ামত। এটি শুধু জীবনধারণের জন্যই নয়, বরং সৃষ্টিজগতের প্রতিটি জীবের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য অপরিহার্য। কুরআনে এবং রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদিসে পানির গুরুত্ব ও এর ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি নিয়ে অসংখ্য আলোচনা পাওয়া যায়।

সূরা আলমুলক, আয়াত ৩০

আরবি আয়াত:
قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِنْ أَصْبَحَ مَاؤُكُمْ غَوْرًا فَمَنْ يَأْتِيكُمْ بِمَاءٍ مَعِينٍ

বাংলা অনুবাদ:
বলুন, তোমরা বল তো, যদি তোমাদের পানি ভূগর্ভে মিলিয়ে যায়, তবে কে তোমাদের জন্য প্রবাহিত পানি আনবে?”
(সূরা আলমুলক, আয়াত: ৩০)

এই আয়াতের ব্যাখ্যা

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা এখানে একটি গভীর ও বাস্তব প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন।

  • যদি পৃথিবীর পানি সম্পূর্ণরূপে ভূগর্ভে চলে যায় বা হারিয়ে যায়, তখন মানুষ কতটা অসহায় হয়ে পড়বে?
  • এখানে গওরান শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে, যার অর্থ হলো গভীরে মিলিয়ে যাওয়া।
  • আর মাআইন শব্দের অর্থ প্রবাহিত বা সহজলভ্য পানি।

এই আয়াতের মাধ্যমে আমাদের স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, পানি আল্লাহর দেওয়া একটি বিশেষ নিয়ামত। মানুষের সামর্থ্য অনুযায়ী তারা এটি সৃষ্টি করতে বা ফিরিয়ে আনতে পারে না। আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ এর যোগান দিতে পারে না।

কুরআনের আয়াতসমূহ পানির গুরুত্ব বোঝাতে

. পানি থেকে জীবনের সৃষ্টি:

আল্লাহ বলেন:
وَجَعَلْنَا مِنَ ٱلْمَآءِ كُلَّ شَىْءٍ حَيٍّۖ أَفَلَا يُؤْمِنُونَ
আর আমি পানি থেকে জীবিত প্রত্যেক বস্তু সৃষ্টি করেছি। তবে কি তারা ঈমান আনবে না?”
(সূরা আলআম্বিয়া, আয়াত: ৩০)

ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন যে পানি হলো জীবনের মূল উপাদান। এটি বিজ্ঞানের সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা বলে যে জীবনের প্রতিটি কোষে পানির ভূমিকা অপরিসীম।

. বৃষ্টির মাধ্যমে জীবনের পুনর্জাগরণ:

আল্লাহ বলেন:
وَأَنزَلْنَا مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءًۭ مُّبَٰرَكًۭا فَأَنۢبَتْنَا بِهِۦ جَنَّـٰتٍۢ وَحَبَّ ٱلْحَصِيدِ
আর আমি আকাশ থেকে বরকতময় পানি বর্ষণ করেছি, তারপর তার দ্বারা বাগবাগিচা শস্যক্ষেত্র উৎপন্ন করেছি।
(সূরা ক্বাফ, আয়াত: )

ব্যাখ্যা:
বৃষ্টি আল্লাহর রহমত ও বরকতের নিদর্শন। এটি পৃথিবীর শুষ্ক ভূমিকে সবুজ ও উর্বর করে তোলে এবং খাদ্য উৎপাদনে সহায়ক হয়।

. পানির সরবরাহ আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে:

আল্লাহ বলেন:
أَفَرَءَيْتُمُ ٱلْمَآءَ ٱلَّذِى تَشْرَبُونَ ﴿٦٨﴾ أَءَنتُمْ أَنزَلْتُمُوهُ مِنَ ٱلْمُزْنِ أَمْ نَحْنُ ٱلْمُنزِلُونَ
তোমরা কি ভেবে দেখেছ, তোমরা যে পানি পান করো তা কি তোমরা মেঘ থেকে নামিয়ে আনিয়েছ, না আমি তা বর্ষণ করি?”
(সূরা আলওয়াকিয়াহ, আয়াত: ৬৮৬৯)

ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আল্লাহ মানুষকে তাঁর করুণার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। পানি সরবরাহ একমাত্র আল্লাহর নিয়ন্ত্রণাধীন এবং এটি আল্লাহর অসীম কৃপা।

. বৃষ্টি দ্বারা মৃত ভূমিকে জীবন্ত করা:

আল্লাহ বলেন:
وَٱللَّهُ أَنزَلَ مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءًۭ فَأَحْيَا بِهِ ٱلْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَآۚ إِنَّ فِى ذَٰلِكَ لَءَايَةًۭ لِّقَوْمٍۢ يَسْمَعُونَ
আর আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, তারপর তার দ্বারা ভূমিকে তার মৃত্যুর পর জীবিত করেন। নিশ্চয়ই এতে ঐসব লোকের জন্য নিদর্শন রয়েছে, যারা শ্রবণ করে।
(সূরা আননাহল, আয়াত: ৬৫)

ব্যাখ্যা:
এখানে আল্লাহ পানি দ্বারা মৃত ভূমিকে জীবিত করার উদাহরণ দিয়েছেন, যা কিয়ামতের দিন পুনরুত্থানের একটি নিদর্শন।

হাদিসে পানির গুরুত্ব

. পানি অপচয় নিষেধ:

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
তুমি প্রবাহিত নদীতেও অজু করার সময় পানি অপচয় করো না।
(ইবন মাজাহ, হাদিস: ৪২৫)

ব্যাখ্যা:
এই হাদিসে পানির অপচয় নিষিদ্ধ করা হয়েছে, এমনকি যদি তা কোনো প্রাকৃতিক উৎস থেকেও আসে। এটি আমাদের পানির ব্যবহারে সতর্ক থাকার শিক্ষা দেয়।

. পানি সকলের জন্য উন্মুক্ত:

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন:
তিনটি জিনিস সকল মানুষের জন্য যৌথ: পানি, ঘাস, এবং আগুন।
(আবু দাউদ, হাদিস: ৩৪৭৭)

ব্যাখ্যা:
পানি, ঘাস ও আগুন মানবজাতির মৌলিক অধিকার। এগুলো কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি হতে পারে না।

. পানির ব্যবহার থেকে বাধা দেওয়ার শাস্তি:

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
তিন ধরনের ব্যক্তি আছে, যাদের আল্লাহ কিয়ামতের দিন দয়া করবেন না: … এবং যে ব্যক্তি পানি ব্যবহারে অন্যকে বাধা দেয়।
(সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৩২৪)

ব্যাখ্যা:
এটি পানির ব্যবহার বাধা দেওয়ার নিষেধাজ্ঞা এবং এর গুরুত্ব তুলে ধরে।

পানির আধুনিক সংকট এবং ইসলামের শিক্ষা

বর্তমান বিশ্বে পানির সংকট একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

  1. অপচয় দূষণ: নগরায়ন এবং শিল্পায়নের কারণে পানির অপচয় ও দূষণ বাড়ছে।
  2. জলবায়ু পরিবর্তন: খরা ও অতিবৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় পানির প্রাপ্যতাকে হুমকির মুখে ফেলছে।

ইসলামের শিক্ষা:

  • পানি সংরক্ষণে সচেতন হওয়া।
  • অপচয় ও দূষণ থেকে বিরত থাকা।
  • সকলের জন্য পানির ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করা।

সূরা আলমুলকএর ৩০ নম্বর আয়াত এবং অন্যান্য কুরআনের আয়াত হাদিসগুলো আমাদের পানির প্রতি কৃতজ্ঞ হতে শেখায়।

  • পানি মহান আল্লাহর এক মহা নেয়ামত।
  • এর যথাযথ ব্যবহার ও সংরক্ষণ আমাদের ধর্মীয় দায়িত্ব।
  • পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে আমরা পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারি।

আল্লাহ আমাদেরকে এই নেয়ামতের যথাযথ কদর করার তাওফিক দিন। আমিন।

 

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

বিল্লাল হোসেন

বিল্লাল হোসেন, একজন প্রজ্ঞাবান পেশাজীবী, যিনি গণিতের ওপর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন এবং ব্যাংকার, অর্থনীতিবিদ, ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিশেষজ্ঞ হিসেবে একটি সমৃদ্ধ ও বহুমুখী ক্যারিয়ার গড়ে তুলেছেন। তার আর্থিক খাতে যাত্রা তাকে নেতৃত্বের ভূমিকায় নিয়ে গেছে, বিশেষ করে সৌদি আরবের আল-রাজি ব্যাংকিং Inc. এবং ব্যাংক-আল-বিলাদে বিদেশী সম্পর্ক ও করেসপন্ডেন্ট মেইন্টেনেন্স অফিসার হিসেবে। প্রথাগত অর্থনীতির গণ্ডির বাইরে, বিল্লাল একজন প্রখ্যাত লেখক ও বিশ্লেষক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন, বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টালে মননশীল কলাম ও গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করে। তার দক্ষতা বিস্তৃত বিষয় জুড়ে রয়েছে, যেমন অর্থনীতির জটিলতা, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, প্রবাসী শ্রমিকদের দুঃখ-কষ্ট, রেমিটেন্স, রিজার্ভ এবং অন্যান্য সম্পর্কিত দিক। বিল্লাল তার লেখায় একটি অনন্য বিশ্লেষণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আসেন, যা ব্যাংকিং ক্যারিয়ারে অর্জিত বাস্তব জ্ঞানকে একত্রিত করে একাডেমিক কঠোরতার সাথে। তার প্রবন্ধগুলো শুধুমাত্র জটিল বিষয়গুলির উপর গভীর বোঝাপড়ার প্রতিফলন নয়, বরং পাঠকদের জন্য জ্ঞানপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে, যা তত্ত্ব ও বাস্তব প্রয়োগের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে। বিল্লাল হোসেনের অবদান তার প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করে যে, তিনি আমাদের আন্তঃসংযুক্ত বিশ্বের জটিলতাগুলি উন্মোচন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটের একটি বিস্তৃত এবং আরও সূক্ষ্ম বোঝাপড়ার দিকে মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে।

কুরআন ও হাদিসে পানির গুরুত্ব এবং এর সঠিক ব্যবহার

Update Time : ০৫:০৩:১৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারী ২০২৫

পানি মহান আল্লাহর এক অমূল্য নেয়ামত। এটি শুধু জীবনধারণের জন্যই নয়, বরং সৃষ্টিজগতের প্রতিটি জীবের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য অপরিহার্য। কুরআনে এবং রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদিসে পানির গুরুত্ব ও এর ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি নিয়ে অসংখ্য আলোচনা পাওয়া যায়।

সূরা আলমুলক, আয়াত ৩০

আরবি আয়াত:
قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِنْ أَصْبَحَ مَاؤُكُمْ غَوْرًا فَمَنْ يَأْتِيكُمْ بِمَاءٍ مَعِينٍ

বাংলা অনুবাদ:
বলুন, তোমরা বল তো, যদি তোমাদের পানি ভূগর্ভে মিলিয়ে যায়, তবে কে তোমাদের জন্য প্রবাহিত পানি আনবে?”
(সূরা আলমুলক, আয়াত: ৩০)

এই আয়াতের ব্যাখ্যা

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা এখানে একটি গভীর ও বাস্তব প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন।

  • যদি পৃথিবীর পানি সম্পূর্ণরূপে ভূগর্ভে চলে যায় বা হারিয়ে যায়, তখন মানুষ কতটা অসহায় হয়ে পড়বে?
  • এখানে গওরান শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে, যার অর্থ হলো গভীরে মিলিয়ে যাওয়া।
  • আর মাআইন শব্দের অর্থ প্রবাহিত বা সহজলভ্য পানি।

এই আয়াতের মাধ্যমে আমাদের স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, পানি আল্লাহর দেওয়া একটি বিশেষ নিয়ামত। মানুষের সামর্থ্য অনুযায়ী তারা এটি সৃষ্টি করতে বা ফিরিয়ে আনতে পারে না। আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ এর যোগান দিতে পারে না।

কুরআনের আয়াতসমূহ পানির গুরুত্ব বোঝাতে

. পানি থেকে জীবনের সৃষ্টি:

আল্লাহ বলেন:
وَجَعَلْنَا مِنَ ٱلْمَآءِ كُلَّ شَىْءٍ حَيٍّۖ أَفَلَا يُؤْمِنُونَ
আর আমি পানি থেকে জীবিত প্রত্যেক বস্তু সৃষ্টি করেছি। তবে কি তারা ঈমান আনবে না?”
(সূরা আলআম্বিয়া, আয়াত: ৩০)

ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন যে পানি হলো জীবনের মূল উপাদান। এটি বিজ্ঞানের সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা বলে যে জীবনের প্রতিটি কোষে পানির ভূমিকা অপরিসীম।

. বৃষ্টির মাধ্যমে জীবনের পুনর্জাগরণ:

আল্লাহ বলেন:
وَأَنزَلْنَا مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءًۭ مُّبَٰرَكًۭا فَأَنۢبَتْنَا بِهِۦ جَنَّـٰتٍۢ وَحَبَّ ٱلْحَصِيدِ
আর আমি আকাশ থেকে বরকতময় পানি বর্ষণ করেছি, তারপর তার দ্বারা বাগবাগিচা শস্যক্ষেত্র উৎপন্ন করেছি।
(সূরা ক্বাফ, আয়াত: )

ব্যাখ্যা:
বৃষ্টি আল্লাহর রহমত ও বরকতের নিদর্শন। এটি পৃথিবীর শুষ্ক ভূমিকে সবুজ ও উর্বর করে তোলে এবং খাদ্য উৎপাদনে সহায়ক হয়।

. পানির সরবরাহ আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে:

আল্লাহ বলেন:
أَفَرَءَيْتُمُ ٱلْمَآءَ ٱلَّذِى تَشْرَبُونَ ﴿٦٨﴾ أَءَنتُمْ أَنزَلْتُمُوهُ مِنَ ٱلْمُزْنِ أَمْ نَحْنُ ٱلْمُنزِلُونَ
তোমরা কি ভেবে দেখেছ, তোমরা যে পানি পান করো তা কি তোমরা মেঘ থেকে নামিয়ে আনিয়েছ, না আমি তা বর্ষণ করি?”
(সূরা আলওয়াকিয়াহ, আয়াত: ৬৮৬৯)

ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আল্লাহ মানুষকে তাঁর করুণার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। পানি সরবরাহ একমাত্র আল্লাহর নিয়ন্ত্রণাধীন এবং এটি আল্লাহর অসীম কৃপা।

. বৃষ্টি দ্বারা মৃত ভূমিকে জীবন্ত করা:

আল্লাহ বলেন:
وَٱللَّهُ أَنزَلَ مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءًۭ فَأَحْيَا بِهِ ٱلْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَآۚ إِنَّ فِى ذَٰلِكَ لَءَايَةًۭ لِّقَوْمٍۢ يَسْمَعُونَ
আর আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, তারপর তার দ্বারা ভূমিকে তার মৃত্যুর পর জীবিত করেন। নিশ্চয়ই এতে ঐসব লোকের জন্য নিদর্শন রয়েছে, যারা শ্রবণ করে।
(সূরা আননাহল, আয়াত: ৬৫)

ব্যাখ্যা:
এখানে আল্লাহ পানি দ্বারা মৃত ভূমিকে জীবিত করার উদাহরণ দিয়েছেন, যা কিয়ামতের দিন পুনরুত্থানের একটি নিদর্শন।

হাদিসে পানির গুরুত্ব

. পানি অপচয় নিষেধ:

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
তুমি প্রবাহিত নদীতেও অজু করার সময় পানি অপচয় করো না।
(ইবন মাজাহ, হাদিস: ৪২৫)

ব্যাখ্যা:
এই হাদিসে পানির অপচয় নিষিদ্ধ করা হয়েছে, এমনকি যদি তা কোনো প্রাকৃতিক উৎস থেকেও আসে। এটি আমাদের পানির ব্যবহারে সতর্ক থাকার শিক্ষা দেয়।

. পানি সকলের জন্য উন্মুক্ত:

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন:
তিনটি জিনিস সকল মানুষের জন্য যৌথ: পানি, ঘাস, এবং আগুন।
(আবু দাউদ, হাদিস: ৩৪৭৭)

ব্যাখ্যা:
পানি, ঘাস ও আগুন মানবজাতির মৌলিক অধিকার। এগুলো কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি হতে পারে না।

. পানির ব্যবহার থেকে বাধা দেওয়ার শাস্তি:

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
তিন ধরনের ব্যক্তি আছে, যাদের আল্লাহ কিয়ামতের দিন দয়া করবেন না: … এবং যে ব্যক্তি পানি ব্যবহারে অন্যকে বাধা দেয়।
(সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৩২৪)

ব্যাখ্যা:
এটি পানির ব্যবহার বাধা দেওয়ার নিষেধাজ্ঞা এবং এর গুরুত্ব তুলে ধরে।

পানির আধুনিক সংকট এবং ইসলামের শিক্ষা

বর্তমান বিশ্বে পানির সংকট একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

  1. অপচয় দূষণ: নগরায়ন এবং শিল্পায়নের কারণে পানির অপচয় ও দূষণ বাড়ছে।
  2. জলবায়ু পরিবর্তন: খরা ও অতিবৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় পানির প্রাপ্যতাকে হুমকির মুখে ফেলছে।

ইসলামের শিক্ষা:

  • পানি সংরক্ষণে সচেতন হওয়া।
  • অপচয় ও দূষণ থেকে বিরত থাকা।
  • সকলের জন্য পানির ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করা।

সূরা আলমুলকএর ৩০ নম্বর আয়াত এবং অন্যান্য কুরআনের আয়াত হাদিসগুলো আমাদের পানির প্রতি কৃতজ্ঞ হতে শেখায়।

  • পানি মহান আল্লাহর এক মহা নেয়ামত।
  • এর যথাযথ ব্যবহার ও সংরক্ষণ আমাদের ধর্মীয় দায়িত্ব।
  • পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে আমরা পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারি।

আল্লাহ আমাদেরকে এই নেয়ামতের যথাযথ কদর করার তাওফিক দিন। আমিন।