আন্দোলনকারী কর্মকর্তাদের প্রতি কঠোর বার্তা দিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়

- Update Time : ০৪:৫৪:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ৬৮ Time View
ঢাকা, ২৬ ডিসেম্বর:
পদ ও পদোন্নতি–সংক্রান্ত দাবিতে জনপ্রশাসনে উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে কঠোর বার্তা দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সরকারি কর্মচারীদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে মন্ত্রণালয় জানায়, এমন কর্মকাণ্ড অসদাচরণ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আজ, মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর), মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা উল্লেখ করে।
আন্দোলনের পটভূমি
জনপ্রশাসনে বর্তমানে দুটি পক্ষ দাবি আদায়ের আন্দোলনে সক্রিয়। একটি পক্ষ প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা, যারা মূলত প্রশাসনিক পদ ও পদোন্নতিতে নিজেদের অগ্রাধিকার দাবি করছেন। অন্যদিকে, ২৫টি ক্যাডারের সমন্বয়ে গঠিত আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ, যারা নিজেদের জন্য সমঅধিকার এবং বৈষম্য দূর করার দাবি জানাচ্ছেন।
এই উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি মূলত ১৭ ডিসেম্বর জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের কিছু সুপারিশ প্রকাশিত হওয়ার পর শুরু হয়। এই সুপারিশগুলো বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈষম্যের অভিযোগকে আরও জটিল করে তোলে।
২৬টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা তাঁদের দাবির পক্ষে প্রতিবাদ সভা, মানববন্ধন, কলম বিরতিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। তাঁদের দাবি, জনপ্রশাসনে সকল ক্যাডারের জন্য ন্যায্যতা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কঠোর বার্তা
মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “কিছু সরকারি কর্মচারী সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে কর্মসূচি পালন করছেন, যা সরকারি কর্মচারীদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। এছাড়া, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করা এবং আদেশ বাস্তবায়নের আগে তা নিয়ে আলোচনায় অংশ নেওয়া সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালার সরাসরি লঙ্ঘন।”
বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা অনুযায়ী:
- সরকারি কর্মচারীরা জনসমক্ষে সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত বা আদেশের বিরুদ্ধে আপত্তি উত্থাপন করতে পারবেন না।
- তাঁরা অন্য কোনো ব্যক্তিকে সরকারবিরোধী মন্তব্য বা কর্মসূচি পালনে প্ররোচিত করতে পারবেন না।
- কোনো সরকারি সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার আগে তা নিয়ে আলোচনা বা বিরূপ মন্তব্য করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
বিধিমালার এ বিধান লঙ্ঘনকে অসদাচরণ হিসেবে গণ্য করা হবে এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
আন্দোলনের পরবর্তী ধাপ
আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ ৩ জানুয়ারি ঢাকায় বড় ধরনের সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে। এ সমাবেশ নিয়ে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। একদিকে, আন্দোলনকারী কর্মকর্তারা নিজেদের দাবির পক্ষে সোচ্চার, অন্যদিকে সরকারের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কঠোর অবস্থান উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন।
সরকারের অবস্থান
সরকার স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, শৃঙ্খলা ও নিয়ম বজায় রাখতে তাদের অবস্থান কঠোর। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “সরকারি কর্মচারীদের শৃঙ্খলাবহির্ভূত আচরণ কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না। এমন কার্যকলাপ কর্মচারীদের ভাবমূর্তির পাশাপাশি সরকারের কর্মকাণ্ডের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।”
বিশেষজ্ঞদের মতামত
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জনপ্রশাসনে চলমান এই অস্থিরতা সরকারি কার্যক্রম ও নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তারা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য সরকারের উচিত সকল পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসে একটি সমঝোতা খুঁজে বের করা।
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নির্ধারিত আচরণবিধি কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হলেও তাঁদের যুক্তিসঙ্গত দাবিগুলো বিবেচনায় নিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাধানের প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
Please Share This Post in Your Social Media

আন্দোলনকারী কর্মকর্তাদের প্রতি কঠোর বার্তা দিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়

ঢাকা, ২৬ ডিসেম্বর:
পদ ও পদোন্নতি–সংক্রান্ত দাবিতে জনপ্রশাসনে উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে কঠোর বার্তা দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সরকারি কর্মচারীদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে মন্ত্রণালয় জানায়, এমন কর্মকাণ্ড অসদাচরণ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আজ, মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর), মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা উল্লেখ করে।
আন্দোলনের পটভূমি
জনপ্রশাসনে বর্তমানে দুটি পক্ষ দাবি আদায়ের আন্দোলনে সক্রিয়। একটি পক্ষ প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা, যারা মূলত প্রশাসনিক পদ ও পদোন্নতিতে নিজেদের অগ্রাধিকার দাবি করছেন। অন্যদিকে, ২৫টি ক্যাডারের সমন্বয়ে গঠিত আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ, যারা নিজেদের জন্য সমঅধিকার এবং বৈষম্য দূর করার দাবি জানাচ্ছেন।
এই উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি মূলত ১৭ ডিসেম্বর জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের কিছু সুপারিশ প্রকাশিত হওয়ার পর শুরু হয়। এই সুপারিশগুলো বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈষম্যের অভিযোগকে আরও জটিল করে তোলে।
২৬টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা তাঁদের দাবির পক্ষে প্রতিবাদ সভা, মানববন্ধন, কলম বিরতিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। তাঁদের দাবি, জনপ্রশাসনে সকল ক্যাডারের জন্য ন্যায্যতা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কঠোর বার্তা
মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “কিছু সরকারি কর্মচারী সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে কর্মসূচি পালন করছেন, যা সরকারি কর্মচারীদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। এছাড়া, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করা এবং আদেশ বাস্তবায়নের আগে তা নিয়ে আলোচনায় অংশ নেওয়া সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালার সরাসরি লঙ্ঘন।”
বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা অনুযায়ী:
- সরকারি কর্মচারীরা জনসমক্ষে সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত বা আদেশের বিরুদ্ধে আপত্তি উত্থাপন করতে পারবেন না।
- তাঁরা অন্য কোনো ব্যক্তিকে সরকারবিরোধী মন্তব্য বা কর্মসূচি পালনে প্ররোচিত করতে পারবেন না।
- কোনো সরকারি সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার আগে তা নিয়ে আলোচনা বা বিরূপ মন্তব্য করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
বিধিমালার এ বিধান লঙ্ঘনকে অসদাচরণ হিসেবে গণ্য করা হবে এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
আন্দোলনের পরবর্তী ধাপ
আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ ৩ জানুয়ারি ঢাকায় বড় ধরনের সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে। এ সমাবেশ নিয়ে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। একদিকে, আন্দোলনকারী কর্মকর্তারা নিজেদের দাবির পক্ষে সোচ্চার, অন্যদিকে সরকারের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কঠোর অবস্থান উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন।
সরকারের অবস্থান
সরকার স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, শৃঙ্খলা ও নিয়ম বজায় রাখতে তাদের অবস্থান কঠোর। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “সরকারি কর্মচারীদের শৃঙ্খলাবহির্ভূত আচরণ কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না। এমন কার্যকলাপ কর্মচারীদের ভাবমূর্তির পাশাপাশি সরকারের কর্মকাণ্ডের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।”
বিশেষজ্ঞদের মতামত
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জনপ্রশাসনে চলমান এই অস্থিরতা সরকারি কার্যক্রম ও নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তারা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য সরকারের উচিত সকল পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসে একটি সমঝোতা খুঁজে বের করা।
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নির্ধারিত আচরণবিধি কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হলেও তাঁদের যুক্তিসঙ্গত দাবিগুলো বিবেচনায় নিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাধানের প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।