২১শেআগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমানসহ সবাই খালাস: যে কারণে সাজার রায় বাতিল

- Update Time : ০৯:৪৩:৩৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ৭১ Time View
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে সংঘটিত ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ মামলার সব আসামিকে খালাস দিয়েছে বাংলাদেশের হাইকোর্ট। বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান এবং বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন। বিচারিক আদালতের পূর্ববর্তী রায় বাতিল করে আপিল গ্রহণের মাধ্যমে এই রায় প্রদান করা হয়।
রায়ের পর্যবেক্ষণ
হাইকোর্ট পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করে যে, মামলায় মুফতি হান্নানের দ্বিতীয় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে যে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করা হয়েছিল, তা আইনসঙ্গত ছিল না। আদালত জানিয়েছে, ওই জবানবন্দি গ্রহণের সময় বৈধ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি।
এছাড়া মামলায় উল্লেখযোগ্য কোনো প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য ছিল না, এবং অভিযোগপত্র গঠনে গুরুতর আইনগত ত্রুটি দেখা গেছে। আদালতের মতে, আসামিদের জবানবন্দি স্বেচ্ছামূলক বা সত্য ছিল না। পর্যাপ্ত প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও সাজা দেওয়া হয়েছিল বলে হাইকোর্ট তার রায়ে উল্লেখ করেছে।
বিচারিক আদালতের রায়ের পর্যালোচনা
২০১৮ সালের ১০ই অক্টোবর বিচারিক আদালত এই মামলার রায়ে ১৯ জন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেছিল। সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হুজি সদস্যরা ছিলেন।
এই রায়ে প্রধান আসামি হিসেবে তারেক রহমানকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। অন্যান্য দণ্ডিতদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, এবং হুজির নেতা মুফতি হান্নান।
রাষ্ট্রপক্ষের প্রতিক্রিয়া
রাষ্ট্রপক্ষের অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান রায় সম্পর্কে বলেন, “আমরা রায়ের কারণগুলো বিশ্লেষণ করছি। আপিল করা হবে কিনা, তা পরবর্তী সিদ্ধান্তে নির্ধারণ করা হবে। আপিল করা উচিত বলে মনে হচ্ছে।”
বিএনপি’র প্রতিক্রিয়া
বিএনপি এই রায়কে “ঐতিহাসিক” বলে অভিহিত করে বলেছে, এটি প্রমাণ করে যে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আনীত মামলাগুলো ছিল ষড়যন্ত্রমূলক। দলটির আইনজীবী এবং নেতারা মনে করেন, এই রায় ন্যায়বিচারের একটি উদাহরণ।
আসামিদের মুক্তি প্রক্রিয়া
আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির জানিয়েছেন, “আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি পাওয়ার পর আসামিদের মুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হবে। যদি অন্য কোনো মামলা না থাকে, তবে তাদের মুক্তি পেতে আর কোনো বাধা থাকবে না।”
রায় বাতিলের কারণ বিশ্লেষণ
হাইকোর্ট পর্যবেক্ষণ করেছে যে,
- মামলার তদন্তে ত্রুটি: মামলার দ্বিতীয় তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তি ছিল অসংগঠিত এবং আইনসঙ্গত নয়।
- প্রমাণের ঘাটতি: সাক্ষ্যপ্রমাণ ছিল অপর্যাপ্ত এবং স্বাক্ষীদের বক্তব্য ছিল অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
- আইনগত প্রক্রিয়া লঙ্ঘন: স্বীকারোক্তি গ্রহণের সময় যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি।
- প্রমাণিত ষড়যন্ত্র: মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়েছিল বলে মনে করেন রায়ের পর্যবেক্ষণকারী।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
এই রায়ের ফলে দীর্ঘদিন ধরে চলমান একটি মামলার নতুন দিক উন্মোচিত হয়েছে। বাংলাদেশের বিচারিক ব্যবস্থার কার্যকারিতা এবং রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ন্যায়বিচারের ধারণা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রায় বিচার বিভাগে স্বচ্ছতার বার্তা প্রদান করবে এবং আইনি প্রক্রিয়ার সঠিক ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরবে।
ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
রাষ্ট্রপক্ষের আপিল এবং পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই রায়ের ফলাফল নতুন মোড় নিতে পারে। দেশের রাজনীতি এবং বিচার ব্যবস্থার ওপর এই রায়ের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব লক্ষ্য করার জন্য জনমনে গভীর আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
Please Share This Post in Your Social Media

২১শেআগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমানসহ সবাই খালাস: যে কারণে সাজার রায় বাতিল

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে সংঘটিত ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ মামলার সব আসামিকে খালাস দিয়েছে বাংলাদেশের হাইকোর্ট। বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান এবং বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন। বিচারিক আদালতের পূর্ববর্তী রায় বাতিল করে আপিল গ্রহণের মাধ্যমে এই রায় প্রদান করা হয়।
রায়ের পর্যবেক্ষণ
হাইকোর্ট পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করে যে, মামলায় মুফতি হান্নানের দ্বিতীয় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে যে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করা হয়েছিল, তা আইনসঙ্গত ছিল না। আদালত জানিয়েছে, ওই জবানবন্দি গ্রহণের সময় বৈধ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি।
এছাড়া মামলায় উল্লেখযোগ্য কোনো প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য ছিল না, এবং অভিযোগপত্র গঠনে গুরুতর আইনগত ত্রুটি দেখা গেছে। আদালতের মতে, আসামিদের জবানবন্দি স্বেচ্ছামূলক বা সত্য ছিল না। পর্যাপ্ত প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও সাজা দেওয়া হয়েছিল বলে হাইকোর্ট তার রায়ে উল্লেখ করেছে।
বিচারিক আদালতের রায়ের পর্যালোচনা
২০১৮ সালের ১০ই অক্টোবর বিচারিক আদালত এই মামলার রায়ে ১৯ জন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেছিল। সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হুজি সদস্যরা ছিলেন।
এই রায়ে প্রধান আসামি হিসেবে তারেক রহমানকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। অন্যান্য দণ্ডিতদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, এবং হুজির নেতা মুফতি হান্নান।
রাষ্ট্রপক্ষের প্রতিক্রিয়া
রাষ্ট্রপক্ষের অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান রায় সম্পর্কে বলেন, “আমরা রায়ের কারণগুলো বিশ্লেষণ করছি। আপিল করা হবে কিনা, তা পরবর্তী সিদ্ধান্তে নির্ধারণ করা হবে। আপিল করা উচিত বলে মনে হচ্ছে।”
বিএনপি’র প্রতিক্রিয়া
বিএনপি এই রায়কে “ঐতিহাসিক” বলে অভিহিত করে বলেছে, এটি প্রমাণ করে যে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আনীত মামলাগুলো ছিল ষড়যন্ত্রমূলক। দলটির আইনজীবী এবং নেতারা মনে করেন, এই রায় ন্যায়বিচারের একটি উদাহরণ।
আসামিদের মুক্তি প্রক্রিয়া
আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির জানিয়েছেন, “আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি পাওয়ার পর আসামিদের মুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হবে। যদি অন্য কোনো মামলা না থাকে, তবে তাদের মুক্তি পেতে আর কোনো বাধা থাকবে না।”
রায় বাতিলের কারণ বিশ্লেষণ
হাইকোর্ট পর্যবেক্ষণ করেছে যে,
- মামলার তদন্তে ত্রুটি: মামলার দ্বিতীয় তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তি ছিল অসংগঠিত এবং আইনসঙ্গত নয়।
- প্রমাণের ঘাটতি: সাক্ষ্যপ্রমাণ ছিল অপর্যাপ্ত এবং স্বাক্ষীদের বক্তব্য ছিল অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
- আইনগত প্রক্রিয়া লঙ্ঘন: স্বীকারোক্তি গ্রহণের সময় যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি।
- প্রমাণিত ষড়যন্ত্র: মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়েছিল বলে মনে করেন রায়ের পর্যবেক্ষণকারী।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
এই রায়ের ফলে দীর্ঘদিন ধরে চলমান একটি মামলার নতুন দিক উন্মোচিত হয়েছে। বাংলাদেশের বিচারিক ব্যবস্থার কার্যকারিতা এবং রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ন্যায়বিচারের ধারণা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রায় বিচার বিভাগে স্বচ্ছতার বার্তা প্রদান করবে এবং আইনি প্রক্রিয়ার সঠিক ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরবে।
ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
রাষ্ট্রপক্ষের আপিল এবং পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই রায়ের ফলাফল নতুন মোড় নিতে পারে। দেশের রাজনীতি এবং বিচার ব্যবস্থার ওপর এই রায়ের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব লক্ষ্য করার জন্য জনমনে গভীর আগ্রহ তৈরি হয়েছে।