আওয়ামী লীগের ১৫ বছরে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি ব্যাংক খাতে: শ্বেতপত্রের তথ্য

- Update Time : ০৮:৪৫:৪৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ৯৯ Time View
গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে ব্যাংক খাত দুর্নীতির প্রধান কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ব্যাংকিং খাতে ঋণ কেলেঙ্কারি, প্রতারণা, ভুয়া ঋণ, এবং ঋণের অপব্যবহারের মতো গুরুতর অপরাধের ঘটনা। এসব অনিয়ম থেকে লুট করা অর্থের একটি বড় অংশ বিদেশে পাচার হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
দুর্নীতির মূল ক্ষেত্রসমূহ
১. ব্যাংকিং খাতের লুটপাট:
ব্যাংকিং খাতে ঋণ অনুমোদন ও ব্যবস্থাপনায় নিয়ম লঙ্ঘন ছিল সাধারণ ঘটনা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে:
- ঋণ কেলেঙ্কারি এবং ভুয়া প্রতিষ্ঠানকে বড় অঙ্কের ঋণ প্রদান।
- রাজনৈতিক মদদে ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা।
- অনিয়মিত পদ্ধতিতে ঋণ পুনঃতফসিল।
২. বড় অবকাঠামো প্রকল্পে দুর্নীতি:
পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো প্রকল্পগুলোতে অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে অবৈধ জমি অধিগ্রহণ এবং প্রকল্পের খরচ কৃত্রিমভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে।
- প্রকল্পের নামে অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো।
- প্রতিযোগিতাহীন দরপত্রের মাধ্যমে নিজেদের পছন্দের লোকদের কাজ দেওয়া।
- প্রকল্প পরিচালক নিয়োগে রাজনৈতিক প্রভাব।
৩. বাজার ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম:
বাজারে পণ্যের স্বাভাবিক সরবরাহব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছে। বিশেষ গোষ্ঠীর আর্থিক লাভের জন্য:
- সরকারের গোপন তথ্য ফাঁস।
- বাজার কারসাজির সরবরাহ প্রক্রিয়া গড়ে তোলা।
৪. বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দুর্নীতি:
অনুপযোগী প্রকল্প অনুমোদন এবং খরচ বৃদ্ধি বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতির প্রধান দিক।
শ্বেতপত্র প্রণয়নের প্রেক্ষাপট
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা তুলে ধরার উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠিত হয়, যার উদ্দেশ্য দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার বিশদ বিশ্লেষণ।
প্রতিবেদনে উল্লিখিত
- জিডিপি প্রবৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতি।
- ব্যাংকিং ও পুঁজিবাজারের অবস্থা।
- বড় প্রকল্প এবং অর্থ পাচারের তথ্য।
প্রতিবেদনের সুপারিশমালা
শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি দুর্নীতি ও অনিয়ম রোধে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করেছে:
- ব্যাংকিং খাতের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
- বাজার ব্যবস্থায় প্রতিযোগিতা ও নীতিমালার কার্যকারিতা প্রতিষ্ঠা।
- বড় প্রকল্পের অনুমোদন ও বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা বজায় রাখা।
- রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া।
- অর্থপাচার রোধে কার্যকর আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ।
প্রতিবেদনটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক দুর্বলতা চিহ্নিত করার পাশাপাশি সমস্যার সমাধানের পথ নির্দেশ করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে দেশের অর্থনীতি আরও সংকটে পড়তে পারে। অন্তর্বর্তী সরকার এ প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়নে কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
Please Share This Post in Your Social Media

আওয়ামী লীগের ১৫ বছরে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি ব্যাংক খাতে: শ্বেতপত্রের তথ্য

গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে ব্যাংক খাত দুর্নীতির প্রধান কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ব্যাংকিং খাতে ঋণ কেলেঙ্কারি, প্রতারণা, ভুয়া ঋণ, এবং ঋণের অপব্যবহারের মতো গুরুতর অপরাধের ঘটনা। এসব অনিয়ম থেকে লুট করা অর্থের একটি বড় অংশ বিদেশে পাচার হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
দুর্নীতির মূল ক্ষেত্রসমূহ
১. ব্যাংকিং খাতের লুটপাট:
ব্যাংকিং খাতে ঋণ অনুমোদন ও ব্যবস্থাপনায় নিয়ম লঙ্ঘন ছিল সাধারণ ঘটনা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে:
- ঋণ কেলেঙ্কারি এবং ভুয়া প্রতিষ্ঠানকে বড় অঙ্কের ঋণ প্রদান।
- রাজনৈতিক মদদে ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা।
- অনিয়মিত পদ্ধতিতে ঋণ পুনঃতফসিল।
২. বড় অবকাঠামো প্রকল্পে দুর্নীতি:
পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো প্রকল্পগুলোতে অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে অবৈধ জমি অধিগ্রহণ এবং প্রকল্পের খরচ কৃত্রিমভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে।
- প্রকল্পের নামে অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো।
- প্রতিযোগিতাহীন দরপত্রের মাধ্যমে নিজেদের পছন্দের লোকদের কাজ দেওয়া।
- প্রকল্প পরিচালক নিয়োগে রাজনৈতিক প্রভাব।
৩. বাজার ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম:
বাজারে পণ্যের স্বাভাবিক সরবরাহব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছে। বিশেষ গোষ্ঠীর আর্থিক লাভের জন্য:
- সরকারের গোপন তথ্য ফাঁস।
- বাজার কারসাজির সরবরাহ প্রক্রিয়া গড়ে তোলা।
৪. বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দুর্নীতি:
অনুপযোগী প্রকল্প অনুমোদন এবং খরচ বৃদ্ধি বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতির প্রধান দিক।
শ্বেতপত্র প্রণয়নের প্রেক্ষাপট
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা তুলে ধরার উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠিত হয়, যার উদ্দেশ্য দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার বিশদ বিশ্লেষণ।
প্রতিবেদনে
- জিডিপি প্রবৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতি।
- ব্যাংকিং ও পুঁজিবাজারের অবস্থা।
- বড় প্রকল্প এবং অর্থ পাচারের তথ্য।
প্রতিবেদনের সুপারিশমালা
শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি দুর্নীতি ও অনিয়ম রোধে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করেছে:
- ব্যাংকিং খাতের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
- বাজার ব্যবস্থায় প্রতিযোগিতা ও নীতিমালার কার্যকারিতা প্রতিষ্ঠা।
- বড় প্রকল্পের অনুমোদন ও বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা বজায় রাখা।
- রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া।
- অর্থপাচার রোধে কার্যকর আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ।
প্রতিবেদনটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক দুর্বলতা চিহ্নিত করার পাশাপাশি সমস্যার সমাধানের পথ নির্দেশ করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে দেশের অর্থনীতি আরও সংকটে পড়তে পারে। অন্তর্বর্তী সরকার এ প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়নে কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।