সময়: বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মিনা ফারাহকে জামায়াত আমিরের ফোনকল: কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং সাক্ষ্যবহুল আলাপচারিতা

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ১০:৩১:৫৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪
  • / ৭৭ Time View

aac85c796fb388e2b405fc2ac45ad4b1 674298872d759

 

বিশিষ্ট কলামিস্ট, অনলাইন এক্টিভিস্ট এবং মানবাধিকারকর্মী মিনা ফারাহকে ফোন করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। দেশের রাজনৈতিক সংকট এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের কঠিন সময়ে জামায়াতের পাশে থাকার জন্য তিনি মিনা ফারাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

ফেসবুকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন মিনা ফারাহ

শনিবার (২৩ নভেম্বর) রাতে মিনা ফারাহ নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এই তথ্য প্রকাশ করেন। তিনি লেখেন, সত্যের পক্ষে কাজ করার জন্য জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান আমাকে ফোন করেছেন। এই পোস্টের সঙ্গে তাদের ৪ মিনিট ৪৯ সেকেন্ডের ফোনালাপের একটি ভিডিও যুক্ত করেন তিনি।

ফোনালাপে কী বললেন জামায়াত আমির?

ফোনালাপে ডা. শফিকুর রহমান বলেন:
যোদ্ধা হিসেবে নয়, একজন সেনাপতি হিসেবে আপনার ভূমিকার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। এই কৃতজ্ঞতা জানাতে অনেক দেরি হয়ে গেছে, এজন্য আমাকে ক্ষমা করবেন। দলের পক্ষ থেকে, আমার পক্ষ থেকে এবং বাংলাদেশে যারা মজলুম অবস্থায় রয়েছেন তাদের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমাদের কঠিন সময়ে যখন কেউ পাশে ছিল না, আপনি ছিলেন। আপনার এই ঋণ আমরা কোনোদিন শোধ করতে পারবো না।

মিনা ফারাহর প্রতিক্রিয়া

ফোনালাপে মিনা ফারাহ জামায়াত আমিরকে ভাই বলে সম্বোধন করেন এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন:
জামায়াতের মতো এত বড় একটি দায়িত্বশীল জায়গা থেকে আপনি আমাকে ফোন করেছেন, এজন্য আমি কৃতজ্ঞ। আজকে আমি খুব শান্তি পাচ্ছি। ২০১১ সালে যখন আমি প্রথম অত্যাচারী স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে লেখালেখি শুরু করি, তখন আমার বাড়ি ব্লক করে দেওয়া হয় এবং দেশে ফেরার পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন:
জামায়াত নেতা কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে সাক্ষী না দেওয়ায় আমাকে অনেক হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। আমি দেশে যেতে চাই এবং সত্য প্রকাশের জন্য তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য

দিতে প্রস্তুত। শেখ হাসিনার গণহত্যার বিষয়ে আমি একজন প্রত্যক্ষ সাক্ষী। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ফিরিয়ে এনে তাদের মুখোমুখি করা হোক।

সত্য প্রকাশের আহ্বান

মিনা ফারাহ দাবি করেন, কামরুজ্জামান মানুষ হত্যা করেননি। মিথ্যা সাক্ষ্য না দেওয়ার কারণে আমাকে মামলায় জড়ানো হয়েছে। এই অন্যায় বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক মানের একটি নিরপেক্ষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা প্রয়োজন।

জামায়াত আমিরের আশা

ফোনালাপের শেষে ডা. শফিকুর রহমান বলেন:
আমরা সেই দিনটি দেখতে চাই যেদিন খুনিরা কাঁদবে এবং মজলুমরা হাসবে।ফোনালাপের শেষে ডা. শফিকুর রহমান তার বক্তব্যে একটি মানবিক ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, “আমরা সেই দিনটি দেখতে চাই যেদিন খুনিরা কাঁদবে এবং মজলুমরা হাসবে।” এই উক্তির মাধ্যমে তিনি জোর দেন এমন একটি সময়ের প্রত্যাশায়, যখন অপরাধীরা তাদের কৃতকর্মের জন্য জবাবদিহি করবে এবং অন্যায়ভাবে নিপীড়িতরা তাদের প্রাপ্য ন্যায়বিচার পাবে। তার এই কথায় যেন উঠে আসে সমাজে দীর্ঘদিন ধরে চলমান অন্যায়, অবিচার, এবং নিপীড়নের বিরুদ্ধে একটি সাহসী অবস্থান ও প্রতিরোধ গড়ে তোলার সংকল্প। তিনি বিশ্বাস করেন, সত্য ও ন্যায়ের জয় নিশ্চিত করতে সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় প্রতিটি নিপীড়িত মানুষের মুখে হাসি ফুটানো সম্ভব, যা প্রকৃত শান্তি ও মানবতার বিজয়কে নিশ্চিত করবে।

বিশ্লেষণ এবং প্রেক্ষাপট

মিনা ফারাহর সঙ্গে জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমানের এই আলাপ দেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে গভীর তাৎপর্য বহন করে। এটি শুধু একজন মানবাধিকার কর্মীর সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে সাহসী ভূমিকার প্রতি সম্মান প্রদর্শনই নয়, বরং দেশের রাজনৈতিক সংকট ও অতীতের বিতর্কিত ঘটনাগুলোর প্রতি নতুন করে আলোকপাত করার সুযোগ তৈরি করে। তাদের কথোপকথন এমন এক সময়ে ঘটেছে, যখন ন্যায়বিচারের প্রশ্ন এবং মানবাধিকারের সুরক্ষা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। এটি বোঝায় যে, অতীতে নিপীড়িত বা অবহেলিত ব্যক্তিদের কণ্ঠস্বর এখনও প্রাসঙ্গিক এবং তা সমাজের বৃহত্তর নৈতিক পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। এ ধরনের উদ্যোগ ইতিহাসের সত্য প্রকাশে, রাজনৈতিক সংস্কারকে ত্বরান্বিত করতে এবং একটি সুষম ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করতে পারে।

 

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

মিনা ফারাহকে জামায়াত আমিরের ফোনকল: কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং সাক্ষ্যবহুল আলাপচারিতা

Update Time : ১০:৩১:৫৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

 

বিশিষ্ট কলামিস্ট, অনলাইন এক্টিভিস্ট এবং মানবাধিকারকর্মী মিনা ফারাহকে ফোন করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। দেশের রাজনৈতিক সংকট এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের কঠিন সময়ে জামায়াতের পাশে থাকার জন্য তিনি মিনা ফারাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

ফেসবুকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন মিনা ফারাহ

শনিবার (২৩ নভেম্বর) রাতে মিনা ফারাহ নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এই তথ্য প্রকাশ করেন। তিনি লেখেন, সত্যের পক্ষে কাজ করার জন্য জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান আমাকে ফোন করেছেন। এই পোস্টের সঙ্গে তাদের ৪ মিনিট ৪৯ সেকেন্ডের ফোনালাপের একটি ভিডিও যুক্ত করেন তিনি।

ফোনালাপে কী বললেন জামায়াত আমির?

ফোনালাপে ডা. শফিকুর রহমান বলেন:
যোদ্ধা হিসেবে নয়, একজন সেনাপতি হিসেবে আপনার ভূমিকার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। এই কৃতজ্ঞতা জানাতে অনেক দেরি হয়ে গেছে, এজন্য আমাকে ক্ষমা করবেন। দলের পক্ষ থেকে, আমার পক্ষ থেকে এবং বাংলাদেশে যারা মজলুম অবস্থায় রয়েছেন তাদের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমাদের কঠিন সময়ে যখন কেউ পাশে ছিল না, আপনি ছিলেন। আপনার এই ঋণ আমরা কোনোদিন শোধ করতে পারবো না।

মিনা ফারাহর প্রতিক্রিয়া

ফোনালাপে মিনা ফারাহ জামায়াত আমিরকে ভাই বলে সম্বোধন করেন এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন:
জামায়াতের মতো এত বড় একটি দায়িত্বশীল জায়গা থেকে আপনি আমাকে ফোন করেছেন, এজন্য আমি কৃতজ্ঞ। আজকে আমি খুব শান্তি পাচ্ছি। ২০১১ সালে যখন আমি প্রথম অত্যাচারী স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে লেখালেখি শুরু করি, তখন আমার বাড়ি ব্লক করে দেওয়া হয় এবং দেশে ফেরার পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন:
জামায়াত নেতা কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে সাক্ষী না দেওয়ায় আমাকে অনেক হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। আমি দেশে যেতে চাই এবং সত্য প্রকাশের জন্য তাদের বিরুদ্ধে

সাক্ষ্য দিতে প্রস্তুত। শেখ হাসিনার গণহত্যার বিষয়ে আমি একজন প্রত্যক্ষ সাক্ষী। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ফিরিয়ে এনে তাদের মুখোমুখি করা হোক।

সত্য প্রকাশের আহ্বান

মিনা ফারাহ দাবি করেন, কামরুজ্জামান মানুষ হত্যা করেননি। মিথ্যা সাক্ষ্য না দেওয়ার কারণে আমাকে মামলায় জড়ানো হয়েছে। এই অন্যায় বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক মানের একটি নিরপেক্ষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা প্রয়োজন।

জামায়াত আমিরের আশা

ফোনালাপের শেষে ডা. শফিকুর রহমান বলেন:
আমরা সেই দিনটি দেখতে চাই যেদিন খুনিরা কাঁদবে এবং মজলুমরা হাসবে।ফোনালাপের শেষে ডা. শফিকুর রহমান তার বক্তব্যে একটি মানবিক ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, “আমরা সেই দিনটি দেখতে চাই যেদিন খুনিরা কাঁদবে এবং মজলুমরা হাসবে।” এই উক্তির মাধ্যমে তিনি জোর দেন এমন একটি সময়ের প্রত্যাশায়, যখন অপরাধীরা তাদের কৃতকর্মের জন্য জবাবদিহি করবে এবং অন্যায়ভাবে নিপীড়িতরা তাদের প্রাপ্য ন্যায়বিচার পাবে। তার এই কথায় যেন উঠে আসে সমাজে দীর্ঘদিন ধরে চলমান অন্যায়, অবিচার, এবং নিপীড়নের বিরুদ্ধে একটি সাহসী অবস্থান ও প্রতিরোধ গড়ে তোলার সংকল্প। তিনি বিশ্বাস করেন, সত্য ও ন্যায়ের জয় নিশ্চিত করতে সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় প্রতিটি নিপীড়িত মানুষের মুখে হাসি ফুটানো সম্ভব, যা প্রকৃত শান্তি ও মানবতার বিজয়কে নিশ্চিত করবে।

বিশ্লেষণ এবং প্রেক্ষাপট

মিনা ফারাহর সঙ্গে জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমানের এই আলাপ দেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে গভীর তাৎপর্য বহন করে। এটি শুধু একজন মানবাধিকার কর্মীর সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে সাহসী ভূমিকার প্রতি সম্মান প্রদর্শনই নয়, বরং দেশের রাজনৈতিক সংকট ও অতীতের বিতর্কিত ঘটনাগুলোর প্রতি নতুন করে আলোকপাত করার সুযোগ তৈরি করে। তাদের কথোপকথন এমন এক সময়ে ঘটেছে, যখন ন্যায়বিচারের প্রশ্ন এবং মানবাধিকারের সুরক্ষা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। এটি বোঝায় যে, অতীতে নিপীড়িত বা অবহেলিত ব্যক্তিদের কণ্ঠস্বর এখনও প্রাসঙ্গিক এবং তা সমাজের বৃহত্তর নৈতিক পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। এ ধরনের উদ্যোগ ইতিহাসের সত্য প্রকাশে, রাজনৈতিক সংস্কারকে ত্বরান্বিত করতে এবং একটি সুষম ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করতে পারে।