সময়: বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যুক্তরাষ্ট্রে আদানির বিরুদ্ধে পরোয়ানার পর কেনিয়ার চুক্তি বাতিল, বাংলাদেশ কী করবে?

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ০৮:২২:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪
  • / ৮২ Time View

5c6f16714f26ed79a4e8fc938615f219 674071c4658bb

ভারতীয় শিল্পপতি ও আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানির বিরুদ্ধে আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, ভারতের সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ পেতে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রায় ২,০২৯ কোটি রুপি ঘুষ দেওয়ার প্রস্তাব দেন তিনি। আদানি ও তার ভাতিজা সাগর আদানির বিরুদ্ধে এই পরোয়ানা জারি করা হয়। বুধবার (২০ নভেম্বর) মার্কিন আদালত তাকে অভিযুক্ত করে। এই খবরটি দ্য হিন্দু, হিন্দুস্তান টাইমস এবং আল জাজিরার মতো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

মার্কিন বিচার বিভাগ জানায়, সৌর বিদ্যুৎ সরবরাহের বড় প্রকল্প পেতে ভারতীয় কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়েছেন গৌতম আদানি। এর ফলে তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

কেনিয়া চুক্তি বাতিল করল

যুক্তরাষ্ট্রে আদানির বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারির একদিন পর কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো আদানি গ্রুপের সঙ্গে হওয়া দুটি বড় চুক্তি বাতিল করেন। এই চুক্তির অধীনে আদানি গ্রুপ কেনিয়ার প্রধান বিমানবন্দর পরিচালনায় ১.৮৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা করেছিল এবং বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণের জন্য আরও ৭৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তি ছিল।

বাংলাদেশের অবস্থান কী?

বাংলাদেশে আদানি গ্রুপ ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করেছে। কিন্তু কোম্পানিটির সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি নিয়ে শুরু থেকেই সমালোচনা চলছে। সম্প্রতি ঢাকার একটি আদালত আদানি গ্রুপের সঙ্গে হওয়া বিদ্যুৎ চুক্তিতে কোনো দুর্নীতি হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং বুয়েটের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই আইনি পদক্ষেপ বাংলাদেশের জন্য একটি সুযোগ হতে পারে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে আদানি গ্রুপের চুক্তিটি বিতর্কিত ছিল, কারণ এটি কোনো টেন্ডার ছাড়াই সম্পন্ন হয়। এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের উপর চুক্তি পুনর্মূল্যায়নের জন্য চাপ বাড়বে।

চুক্তির অর্থনৈতিক বিতর্ক

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে ঝাড়খণ্ডের গোড্ডায় আদানি পাওয়ার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। এটি শুধুমাত্র বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণের জন্য নির্মিত। চুক্তি অনুযায়ী, আদানি কয়লা আমদানি করে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করবে। কিন্তু কয়লার দাম নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্ক রয়েছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) জানিয়েছে, অন্যান্য কেন্দ্রের তুলনায় আদানির প্রস্তাবিত দাম অনেক বেশি।

২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিপিডিবি বিদ্যুতের দাম পুনর্মূল্যায়নের প্রস্তাব দেয়। বিপরীতে আদানি জানায়, তারা প্রতি মেট্রিক টন কয়লা ৪০০ ডলারে কিনছে। তবে বিপিডিবি দাবি করে, অন্যান্য কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো একই কয়লা ২৫০ ডলারের কম দামে পাচ্ছে।

বাংলাদেশ কি আদানি চুক্তি বাতিল করবে?

আদালতের তদন্তের নির্দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের আইনি পদক্ষেপের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের জন্য চুক্তি পর্যালোচনা বা প্রয়োজন হলে বাতিল করার পথ উন্মুক্ত হতে পারে। কেনিয়ার মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া বাংলাদেশের জন্য সহজ হবে না, কারণ ভারতের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক এবং অর্থনৈতিক চুক্তির জটিলতা এতে জড়িত। তবে, এই প্রেক্ষাপটে সরকারের জন্য স্বচ্ছতা বজায় রাখা এবং দেশের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেওয়া অপরিহার্য।

বাংলাদেশ এখন আদানি গ্রুপের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির প্রতিটি দিক খতিয়ে দেখবে, যাতে এর আর্থিক এবং কৌশলগত প্রভাব ভালোভাবে বোঝা যায়।

 

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

যুক্তরাষ্ট্রে আদানির বিরুদ্ধে পরোয়ানার পর কেনিয়ার চুক্তি বাতিল, বাংলাদেশ কী করবে?

Update Time : ০৮:২২:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

ভারতীয় শিল্পপতি ও আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানির বিরুদ্ধে আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, ভারতের সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ পেতে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রায় ২,০২৯ কোটি রুপি ঘুষ দেওয়ার প্রস্তাব দেন তিনি। আদানি ও তার ভাতিজা সাগর আদানির বিরুদ্ধে এই পরোয়ানা জারি করা হয়। বুধবার (২০ নভেম্বর) মার্কিন আদালত তাকে অভিযুক্ত করে। এই খবরটি দ্য হিন্দু, হিন্দুস্তান টাইমস এবং আল জাজিরার মতো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

মার্কিন বিচার বিভাগ জানায়, সৌর বিদ্যুৎ সরবরাহের বড় প্রকল্প পেতে ভারতীয় কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়েছেন গৌতম আদানি। এর ফলে তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

কেনিয়া চুক্তি বাতিল করল

যুক্তরাষ্ট্রে আদানির বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারির একদিন পর কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো আদানি গ্রুপের সঙ্গে হওয়া দুটি বড় চুক্তি বাতিল করেন। এই চুক্তির অধীনে আদানি গ্রুপ কেনিয়ার প্রধান বিমানবন্দর পরিচালনায় ১.৮৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা করেছিল এবং বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণের জন্য আরও ৭৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তি ছিল।

বাংলাদেশের অবস্থান কী?

বাংলাদেশে আদানি গ্রুপ ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করেছে। কিন্তু কোম্পানিটির সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি নিয়ে শুরু থেকেই সমালোচনা চলছে। সম্প্রতি ঢাকার একটি আদালত আদানি গ্রুপের সঙ্গে হওয়া বিদ্যুৎ চুক্তিতে কোনো দুর্নীতি হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং বুয়েটের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই আইনি পদক্ষেপ বাংলাদেশের জন্য একটি সুযোগ হতে পারে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে আদানি গ্রুপের চুক্তিটি বিতর্কিত ছিল, কারণ এটি কোনো টেন্ডার ছাড়াই সম্পন্ন হয়। এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের উপর চুক্তি পুনর্মূল্যায়নের জন্য চাপ বাড়বে।

চুক্তির অর্থনৈতিক বিতর্ক

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে ঝাড়খণ্ডের গোড্ডায় আদানি পাওয়ার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। এটি শুধুমাত্র বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণের জন্য নির্মিত। চুক্তি অনুযায়ী, আদানি কয়লা আমদানি করে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করবে। কিন্তু কয়লার দাম নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্ক রয়েছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) জানিয়েছে, অন্যান্য কেন্দ্রের তুলনায় আদানির প্রস্তাবিত দাম অনেক বেশি।

২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিপিডিবি বিদ্যুতের দাম পুনর্মূল্যায়নের প্রস্তাব দেয়। বিপরীতে আদানি জানায়, তারা প্রতি মেট্রিক টন কয়লা ৪০০ ডলারে কিনছে। তবে বিপিডিবি দাবি করে, অন্যান্য কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো একই কয়লা ২৫০ ডলারের কম দামে পাচ্ছে।

বাংলাদেশ কি আদানি চুক্তি বাতিল করবে?

আদালতের তদন্তের নির্দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের আইনি পদক্ষেপের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের জন্য চুক্তি পর্যালোচনা বা প্রয়োজন হলে বাতিল করার পথ উন্মুক্ত হতে পারে। কেনিয়ার মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া বাংলাদেশের জন্য সহজ হবে না, কারণ ভারতের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক এবং অর্থনৈতিক চুক্তির জটিলতা এতে জড়িত। তবে, এই প্রেক্ষাপটে সরকারের জন্য স্বচ্ছতা বজায় রাখা এবং দেশের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেওয়া অপরিহার্য।

বাংলাদেশ এখন আদানি গ্রুপের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির প্রতিটি দিক খতিয়ে দেখবে, যাতে এর আর্থিক এবং কৌশলগত প্রভাব ভালোভাবে বোঝা যায়।