রিয়াদে কাবা সদৃশ কালো ঘরের সামনে নাচগান: নিন্দা ও বিতর্কের ঝড়

- Update Time : ০৪:৪৫:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪
- / ৮৯ Time View
সম্প্রতি সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চে পবিত্র কাবা ঘরের আদলে তৈরি একটি কালো ঘরের প্রদর্শন করা হয়। এই ঘরের সামনে নৃত্যশিল্পীদের নাচ এবং গানের পরিবেশনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়। এর ফলে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের মধ্যে ক্ষোভ ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
পবিত্র কাবার প্রতি অসম্মানের অভিযোগ
মুসলিমদের ইবাদতের কেন্দ্রস্থল এবং ইসলামের পবিত্রতম স্থান হিসেবে কাবা শরীফের মর্যাদা অপরিসীম। তাই এই কালো ঘরের রেপ্লিকার সামনে নাচগান পরিবেশনার বিষয়টি অনেকের কাছে ইসলামের প্রতি অবমাননাকর বলে মনে হয়েছে। ঘটনাটি নিয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের একাংশ তীব্র নিন্দা প্রকাশ করেছেন।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা এবং পবিত্র প্রতীকের প্রতি অবমাননার অভিযোগে অনেকে এই উদ্যোগের সমালোচনা করেছেন। তারা মনে করেন, পবিত্র কাবার সঙ্গে সম্পর্কিত যে কোনো বিষয়কে বিনোদন বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের চেষ্টা একেবারেই অনুচিত।
সামাজিক মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া
ঘটনার পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই আয়োজনের বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় ওঠে। বিভিন্ন ব্যক্তি এবং সংগঠন তাদের প্রতিক্রিয়া জানাতে থাকেন। মুহাম্মাদ হাবিবুল্লাহ আল জিহাদ লিখেছেন,
“নাচ গানের মঞ্চে কাবা শরীফের রেপ্লিকা বানিয়ে সৌদি মুনাফিকরা যে বেয়াদবি করেছে, এমন সাহস কোনো বিধর্মীও দেখায়নি।”
আরেকজন মন্তব্যকারী, আল আমীন, বলেন,
“আল্লাহ, যারা এই কাজ করেছে ওই জালিমদের তুমি এই দুনিয়াতেই বিচার করে দেখাও। আমিন।”
অনেকেই এমন ঘটনায় সৌদি আরবের ধর্মীয় নেতাদের নিরব ভূমিকা নিয়েও সমালোচনা করেছেন। তাদের মতে, এই ধরনের বিষয়ে সৌদি ধর্মীয় নেতাদের প্রতিক্রিয়া জানানো উচিত ছিল।
বিতর্কিত আয়োজনের পেছনের প্রেক্ষাপট
রিয়াদ এন্টারটেইনমেন্ট সিজন সৌদি আরবের সবচেয়ে বড় বিনোদনমূলক ইভেন্টগুলোর একটি। প্রতি বছর এই আয়োজন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে। আয়োজকরা দাবি করেছেন, ইভেন্টের লক্ষ্য ছিল সৌদি সংস্কৃতি এবং আধুনিকায়নের প্রতি আন্তর্জাতিক আগ্রহ সৃষ্টি করা।
তবে এবারের ইভেন্টে বিশাল কালো ঘরের সামনে নৃত্যশিল্পী এবং মডেলদের পারফরম্যান্স ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের জন্য দুঃখজনক এবং আপত্তিকর বলে মনে হয়েছে। অনেকের মতে, এটি পবিত্র কাবা শরীফের প্রতি বিদ্রূপ করার শামিল।
আধুনিকায়ন বনাম ধর্মীয় অনুভূতি
সৌদি আরব বর্তমানে ভিশন ২০৩০-এর আওতায় একটি আধুনিক ও বহুমুখী অর্থনীতি গড়ার প্রচেষ্টায় লিপ্ত। এর অংশ হিসেবে দেশটি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও বিনোদনমূলক কার্যক্রম শুরু করেছে। কিন্তু এই আধুনিকায়নের পথে কিছু উদ্যোগ স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে ধর্মীয় বিতর্ক সৃষ্টি করছে।
সৌদি আরবের ঐতিহ্যগত রক্ষণশীল সমাজে এমন বিনোদনমূলক আয়োজন অনেক সময় ধর্মীয় অনুভূতির সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। রিয়াদের এই বিতর্কিত ঘটনাও তেমনই একটি উদাহরণ।
ধর্মীয় প্রতীকের বাণিজ্যিক ব্যবহার নিষিদ্ধ
এই বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি সরকার একটি নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। গতকাল জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়েছে:
“জাতীয়, ধর্মীয় ও পবিত্র প্রতীক কোনো ধরনের প্রচার, প্রচারণা বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে না।”
এই সিদ্ধান্তকে অনেকে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, এটি ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের বিতর্ক এড়াতে সাহায্য করবে।
ধর্মীয় সংবেদনশীলতা বনাম আধুনিকায়নের টানাপোড়েন
রিয়াদে ঘটে যাওয়া এই ঘটনা সৌদি আরবের ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের সঙ্গে আধুনিকায়নের সংঘাতকে আরও গভীরভাবে তুলে ধরেছে। একদিকে দেশটি বিশ্বমঞ্চে নিজেদের আধুনিক এবং প্রগতিশীল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়, অন্যদিকে ধর্মীয় বিশ্বাস এবং ঐতিহ্য রক্ষার চাপও রয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে সৌদি আরব কীভাবে ধর্মীয় অনুভূতি এবং আধুনিকায়নের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করবে, সেটি এখন সময়ের দাবি।
Please Share This Post in Your Social Media

রিয়াদে কাবা সদৃশ কালো ঘরের সামনে নাচগান: নিন্দা ও বিতর্কের ঝড়

সম্প্রতি সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চে পবিত্র কাবা ঘরের আদলে তৈরি একটি কালো ঘরের প্রদর্শন করা হয়। এই ঘরের সামনে নৃত্যশিল্পীদের নাচ এবং গানের পরিবেশনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়। এর ফলে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের মধ্যে ক্ষোভ ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
পবিত্র কাবার প্রতি অসম্মানের অভিযোগ
মুসলিমদের ইবাদতের কেন্দ্রস্থল এবং ইসলামের পবিত্রতম স্থান হিসেবে কাবা শরীফের মর্যাদা অপরিসীম। তাই এই কালো ঘরের রেপ্লিকার সামনে নাচগান পরিবেশনার বিষয়টি অনেকের কাছে ইসলামের প্রতি অবমাননাকর বলে মনে হয়েছে। ঘটনাটি নিয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের একাংশ তীব্র নিন্দা প্রকাশ করেছেন।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা এবং পবিত্র প্রতীকের প্রতি অবমাননার অভিযোগে অনেকে এই উদ্যোগের সমালোচনা করেছেন। তারা মনে করেন, পবিত্র কাবার সঙ্গে সম্পর্কিত যে কোনো বিষয়কে বিনোদন বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের চেষ্টা একেবারেই অনুচিত।
সামাজিক মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া
ঘটনার পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই আয়োজনের বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় ওঠে। বিভিন্ন ব্যক্তি এবং সংগঠন তাদের প্রতিক্রিয়া জানাতে থাকেন। মুহাম্মাদ হাবিবুল্লাহ আল জিহাদ লিখেছেন,
“নাচ গানের মঞ্চে কাবা শরীফের রেপ্লিকা বানিয়ে সৌদি মুনাফিকরা যে বেয়াদবি করেছে, এমন সাহস কোনো বিধর্মীও দেখায়নি।”
আরেকজন মন্তব্যকারী, আল আমীন, বলেন,
“আল্লাহ, যারা এই কাজ করেছে ওই জালিমদের তুমি এই দুনিয়াতেই বিচার করে দেখাও। আমিন।”
অনেকেই এমন ঘটনায় সৌদি আরবের ধর্মীয় নেতাদের নিরব ভূমিকা নিয়েও সমালোচনা করেছেন। তাদের মতে, এই ধরনের বিষয়ে সৌদি ধর্মীয় নেতাদের প্রতিক্রিয়া জানানো উচিত ছিল।
বিতর্কিত আয়োজনের পেছনের প্রেক্ষাপট
রিয়াদ এন্টারটেইনমেন্ট সিজন সৌদি আরবের সবচেয়ে বড় বিনোদনমূলক ইভেন্টগুলোর একটি। প্রতি বছর এই আয়োজন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে। আয়োজকরা দাবি করেছেন, ইভেন্টের লক্ষ্য ছিল সৌদি সংস্কৃতি এবং আধুনিকায়নের প্রতি আন্তর্জাতিক আগ্রহ সৃষ্টি করা।
তবে এবারের ইভেন্টে বিশাল কালো ঘরের সামনে নৃত্যশিল্পী এবং মডেলদের পারফরম্যান্স ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের জন্য দুঃখজনক এবং আপত্তিকর বলে মনে হয়েছে। অনেকের মতে, এটি পবিত্র কাবা শরীফের প্রতি বিদ্রূপ করার শামিল।
আধুনিকায়ন বনাম ধর্মীয় অনুভূতি
সৌদি আরব বর্তমানে ভিশন ২০৩০-এর আওতায় একটি আধুনিক ও বহুমুখী অর্থনীতি গড়ার প্রচেষ্টায় লিপ্ত। এর অংশ হিসেবে দেশটি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও বিনোদনমূলক কার্যক্রম শুরু করেছে। কিন্তু এই আধুনিকায়নের পথে কিছু উদ্যোগ স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে ধর্মীয় বিতর্ক সৃষ্টি করছে।
সৌদি আরবের ঐতিহ্যগত রক্ষণশীল সমাজে এমন বিনোদনমূলক আয়োজন অনেক সময় ধর্মীয় অনুভূতির সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। রিয়াদের এই বিতর্কিত ঘটনাও তেমনই একটি উদাহরণ।
ধর্মীয় প্রতীকের বাণিজ্যিক ব্যবহার নিষিদ্ধ
এই বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি সরকার একটি নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। গতকাল জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়েছে:
“জাতীয়, ধর্মীয় ও পবিত্র প্রতীক কোনো ধরনের প্রচার, প্রচারণা বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে না।”
এই সিদ্ধান্তকে অনেকে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, এটি ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের বিতর্ক এড়াতে সাহায্য করবে।
ধর্মীয় সংবেদনশীলতা বনাম আধুনিকায়নের টানাপোড়েন
রিয়াদে ঘটে যাওয়া এই ঘটনা সৌদি আরবের ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের সঙ্গে আধুনিকায়নের সংঘাতকে আরও গভীরভাবে তুলে ধরেছে। একদিকে দেশটি বিশ্বমঞ্চে নিজেদের আধুনিক এবং প্রগতিশীল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়, অন্যদিকে ধর্মীয় বিশ্বাস এবং ঐতিহ্য রক্ষার চাপও রয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে সৌদি আরব কীভাবে ধর্মীয় অনুভূতি এবং আধুনিকায়নের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করবে, সেটি এখন সময়ের দাবি।