সময়: বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আল–জাজিরাকে ড. ইউনূস: অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ চার বছরের কম হবে, আরও কম হতে পারে

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ১০:৪০:৩৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪
  • / ৯২ Time View

prothomalo bangla 2024 11 17 3ljm86ta 1

সম্প্রতি আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন (কপ২৯)-এর ফাঁকে কাতারভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম আল–জাজিরাকে একটি সাক্ষাৎকার দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আল–জাজিরার প্রকাশিত ভিডিও থেকে নেওয়া একটি ছবিও এই সাক্ষাৎকারের সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছে। 

ড. ইউনূস জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ চার বছরের কম হবে এবং এটি আরও সংক্ষিপ্ত হতে পারে। সাক্ষাৎকারটি গতকাল রোববার সম্প্রচারিত হয়, যেখানে তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশ যে সংকটগুলো মোকাবিলা করছে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করেন। একইসঙ্গে তিনি বাংলাদেশে চলমান সংস্কারপ্রক্রিয়া, আসন্ন নির্বাচন, পরিবর্তিত আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক সম্পর্ক, এবং যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়েও কথা বলেন।

বাংলাদেশে আগামী নির্বাচনের নির্দিষ্ট সময় সম্পর্কে ড. মুহাম্মদ ইউনূস কোনো মতামত দিয়েছেন কি না—এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘না। আমার মাথায় এমন কিছু নেই।’ 

অন্তর্বর্তী সরকারের সময়সীমা নিয়ে জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা অন্তর্বর্তী সরকার। আমরা স্থায়ী সরকার নই। নিয়মিত সরকারের মেয়াদ সাধারণত পাঁচ বছর হয়। তবে নতুন সংবিধানে সরকারের মেয়াদ সম্ভবত চার বছর হতে পারে। কারণ, মানুষ চায় সরকারের মেয়াদ কম হোক। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ চার বছরের কম হওয়া উচিত, এটা নিশ্চিত। এটি আরও কম হতে পারে। তবে এটা পুরোপুরি নির্ভর করছে মানুষ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর চাহিদার ওপর।’ 

তিনি আরও যোগ করেন, ‘যদি রাজনৈতিক দলগুলো বলে যে সংস্কার প্রক্রিয়া বাদ দিয়ে দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে, তাহলে সেটাই করা হবে।’

তাহলে, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ সম্পর্কে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমি বলিনি যে চার বছর। আমি বলেছি, এটা সর্বোচ্চ মেয়াদ হতে পারে। তবে আমাদের উদ্দেশ্য তা নয়। আমাদের উদ্দেশ্য হলো যত দ্রুত সম্ভব কাজ শেষ করা।’ 

চলমান সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘পুরো সরকারব্যবস্থা সংস্কার করা হবে। মানুষ নতুন কিছু চায়। সেখানে সব ক্ষেত্রে সংস্কার হবে। এমনকি সংবিধানও সংস্কার করা হচ্ছে।’ তিনি এ লক্ষ্যে বিভিন্ন সংস্কার কমিশন গঠনের কথা উল্লেখ করেন এবং জানান, ‘দুটো প্রক্রিয়া একসঙ্গে চলছে—নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং সব সংস্কার শেষ করার প্রস্তুতি।’ 

 

দেশের মানুষের নতুন কিছু চাওয়ার কথা উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশ শুধু নির্বাচনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়।’

এখানে কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে না, এমনটি উল্লেখ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের মানুষের কাছে জানতে চাইছি, তোমরা কি এখনই নির্বাচনে যেতে চাও নাকি এসব সংস্কার শেষ করা হোক তা চাও।’ তিনি আরও জানান, ‘সবকিছু জনগণের সঙ্গে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করে তাদের মতামতের ভিত্তিতেই হচ্ছে।’ 

 

সাক্ষাৎকারে ছাত্র–জনতার আন্দোলনের মুখে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার প্রসঙ্গও উঠে আসে। এই বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, ‘তিনি বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন। সেখান থেকে বাংলাদেশে বিক্ষোভের ডাক দিচ্ছেন। এগুলো বাংলাদেশের জন্য উপকারী নয়। তাই ভারতের কাছে তাঁরা এসব বিষয়ে বলছেন। তাঁকে আশ্রয় দিচ্ছে, ঠিক আছে। কিন্তু এমনটা হতে থাকলে তাঁদের কাছে আবার অভিযোগ করা হবে।’

১০ নভেম্বর শহীদ নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের এক বিবৃতিতে শেখ হাসিনাকে ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এই বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) নিজেকে অনেক কিছু বলতে পারেন। কিন্তু বাস্তবতা তা নয়। এমনকি ভারতও তাঁকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেছে। সুতরাং আশ্রয়দাতাও তাঁকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ছাড়া কিছু বলছে না।’

শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আইনি প্রক্রিয়া চলছে। দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁর প্রত্যাবর্তন চাওয়া হবে।’ 

ভারতের সঙ্গে মিলে অভিন্ন নদীগুলোর পানি ব্যবস্থাপনা করার আগ্রহ প্রকাশ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘গত ১৬ বছরে দুর্নীতির নিমজ্জিত ছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে দেশকে বের করে আনার জন্য আমাদের সরকার চেষ্টা করছে।’

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আল–জাজিরাকে ড. ইউনূস: অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ চার বছরের কম হবে, আরও কম হতে পারে

Update Time : ১০:৪০:৩৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

সম্প্রতি আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন (কপ২৯)-এর ফাঁকে কাতারভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম আল–জাজিরাকে একটি সাক্ষাৎকার দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আল–জাজিরার প্রকাশিত ভিডিও থেকে নেওয়া একটি ছবিও এই সাক্ষাৎকারের সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছে। 

ড. ইউনূস জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ চার বছরের কম হবে এবং এটি আরও সংক্ষিপ্ত হতে পারে। সাক্ষাৎকারটি গতকাল রোববার সম্প্রচারিত হয়, যেখানে তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশ যে সংকটগুলো মোকাবিলা করছে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করেন। একইসঙ্গে তিনি বাংলাদেশে চলমান সংস্কারপ্রক্রিয়া, আসন্ন নির্বাচন, পরিবর্তিত আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক সম্পর্ক, এবং যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়েও কথা বলেন।

বাংলাদেশে আগামী নির্বাচনের নির্দিষ্ট সময় সম্পর্কে ড. মুহাম্মদ ইউনূস কোনো মতামত দিয়েছেন কি না—এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘না। আমার মাথায় এমন কিছু নেই।’ 

অন্তর্বর্তী সরকারের সময়সীমা নিয়ে জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা অন্তর্বর্তী সরকার। আমরা স্থায়ী সরকার নই। নিয়মিত সরকারের মেয়াদ সাধারণত পাঁচ বছর হয়। তবে নতুন সংবিধানে সরকারের মেয়াদ সম্ভবত চার বছর হতে পারে। কারণ, মানুষ চায় সরকারের মেয়াদ কম হোক। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ চার বছরের কম হওয়া উচিত, এটা নিশ্চিত। এটি আরও কম হতে পারে। তবে এটা পুরোপুরি নির্ভর করছে মানুষ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর চাহিদার ওপর।’ 

তিনি আরও যোগ করেন, ‘যদি রাজনৈতিক দলগুলো বলে যে সংস্কার প্রক্রিয়া বাদ দিয়ে দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে, তাহলে সেটাই করা হবে।’

তাহলে, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ সম্পর্কে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমি বলিনি যে চার বছর। আমি বলেছি, এটা সর্বোচ্চ মেয়াদ হতে পারে। তবে আমাদের উদ্দেশ্য তা নয়। আমাদের উদ্দেশ্য হলো যত দ্রুত সম্ভব কাজ শেষ করা।’ 

চলমান সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘পুরো সরকারব্যবস্থা সংস্কার করা হবে। মানুষ নতুন কিছু চায়। সেখানে সব ক্ষেত্রে সংস্কার হবে। এমনকি সংবিধানও সংস্কার করা হচ্ছে।’ তিনি এ লক্ষ্যে বিভিন্ন সংস্কার কমিশন গঠনের কথা উল্লেখ করেন এবং জানান, ‘দুটো প্রক্রিয়া একসঙ্গে চলছে—নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং সব সংস্কার শেষ করার প্রস্তুতি।’ 

 

দেশের মানুষের নতুন কিছু চাওয়ার কথা উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশ শুধু নির্বাচনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়।’

এখানে কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে না, এমনটি উল্লেখ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের মানুষের কাছে জানতে চাইছি, তোমরা কি এখনই নির্বাচনে যেতে চাও নাকি এসব সংস্কার শেষ করা হোক তা চাও।’ তিনি আরও জানান, ‘সবকিছু জনগণের সঙ্গে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করে তাদের মতামতের ভিত্তিতেই হচ্ছে।’ 

 

সাক্ষাৎকারে ছাত্র–জনতার আন্দোলনের মুখে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার প্রসঙ্গও উঠে আসে। এই বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, ‘তিনি বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন। সেখান থেকে বাংলাদেশে বিক্ষোভের ডাক দিচ্ছেন। এগুলো বাংলাদেশের জন্য উপকারী নয়। তাই ভারতের কাছে তাঁরা এসব বিষয়ে বলছেন। তাঁকে আশ্রয় দিচ্ছে, ঠিক আছে। কিন্তু এমনটা হতে থাকলে তাঁদের কাছে আবার অভিযোগ করা হবে।’

১০ নভেম্বর শহীদ নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের এক বিবৃতিতে শেখ হাসিনাকে ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এই বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) নিজেকে অনেক কিছু বলতে পারেন। কিন্তু বাস্তবতা তা নয়। এমনকি ভারতও তাঁকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেছে। সুতরাং আশ্রয়দাতাও তাঁকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ছাড়া কিছু বলছে না।’

শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আইনি প্রক্রিয়া চলছে। দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁর প্রত্যাবর্তন চাওয়া হবে।’ 

ভারতের সঙ্গে মিলে অভিন্ন নদীগুলোর পানি ব্যবস্থাপনা করার আগ্রহ প্রকাশ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘গত ১৬ বছরে দুর্নীতির নিমজ্জিত ছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে দেশকে বের করে আনার জন্য আমাদের সরকার চেষ্টা করছে।’