স্ত্রীর মোহরানা: আমাদের সমাজের প্রচলিত ধারণা এবং করণীয়

- Update Time : ১০:২১:৫৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪
- / ৯৯ Time View
মোহরানা (মাহর) ইসলামে স্ত্রীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অধিকার। এটি শুধুমাত্র আর্থিক লেনদেন নয় বরং স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীর প্রতি সম্মান ও দায়িত্বশীলতার প্রতীক। মোহরানা স্ত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং বৈবাহিক জীবনের ভিত্তি মজবুত করে। কিন্তু আমাদের সমাজে মোহরানা নিয়ে অনেক ভুল ধারণা ও অসঙ্গতি দেখা যায়। এই প্রবন্ধে কুরআন ও হাদিসের আলোকে মোহরানার গুরুত্ব, সমাজের প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা এবং ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী করণীয় তুলে ধরা হলো।
মোহরানার সংজ্ঞা ও গুরুত্ব
মোহরানা বলতে এমন একটি আর্থিক পরিমাণ বোঝায় যা স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্বশীলতার প্রতীক হিসেবে নির্ধারিত হয়। এটি স্ত্রীর মৌলিক অধিকার এবং তা সম্মানের সাথে প্রদান করা বাধ্যতামূলক।
আল-কুরআনের নির্দেশনা:
আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً
“আর নারীদের তাদের মোহর আনন্দের সাথে প্রদান কর।”
— (সূরা আন-নিসা: ৪:৪)
এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ স্পষ্ট করেছেন যে মোহর প্রদান করা স্বামীর জন্য বাধ্যতামূলক এবং তা আনন্দচিত্তে দিতে হবে।
আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেন:
فَإِن طِبْنَ لَكُمْ عَن شَيْءٍ مِّنْهُ نَفْسًا فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَّرِيئًا
“যদি তারা (স্ত্রীরা) স্বেচ্ছায় মোহরের একটি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা আনন্দের সাথে গ্রহণ করো।”
— (সূরা আন-নিসা: ৪:৪)
এই আয়াত থেকে বোঝা যায় যে স্ত্রী স্বেচ্ছায় কিছু অংশ ক্ষমা করলে তবেই তা গ্রহণ করা বৈধ।
হাদিসের নির্দেশনা:
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
إِنَّ أَعْظَمَ النِّكَاحِ بَرَكَةً أَيْسَرُهُ مَئُونَةً
“সবচেয়ে বরকতময় বিয়ে হলো সেই বিয়ে, যেখানে মোহর ও খরচ কম থাকে।”
— (ইবনে হিব্বান, ৪০৭৯)
অন্য এক হাদিসে তিনি বলেন:
مِنْ حَقِّ الْمَرْأَةِ عَلَى زَوْجِهَا أَنْ يُؤَدِّيَ إِلَيْهَا صَدَاقَهَا
“স্ত্রীর প্রতি স্বামীর অধিকার হলো তার মোহরানা প্রদান করা।”
— (তিরমিজি, ১১০১)
সমাজের প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা ও চর্চা
বর্তমানে মোহরানা নিয়ে আমাদের সমাজে কিছু ভুল ধারণা দেখা যায়, যেমন:
১. অতিরিক্ত মোহর নির্ধারণ:
অনেক ক্ষেত্রে আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনা না করেই অযৌক্তিকভাবে বেশি মোহর নির্ধারণ করা হয়। এটি স্বামীকে আর্থিক চাপে ফেলে এবং পরবর্তীতে সমস্যা সৃষ্টি করে।
২. মোহর আদায়ে অবহেলা:
বিয়ের সময় মোহর নির্ধারণ হলেও তা আদায়ে গড়িমসি করা হয়। এটি স্পষ্টভাবে ইসলামী বিধানের লঙ্ঘন।
৩. প্রথাগত চাপ:
অনেক সময় সামাজিক মর্যাদা রক্ষার জন্য এমন মোহর নির্ধারণ করা হয় যা বাস্তবসম্মত নয়।
মোহরানা নিয়ে করণীয়
১. ইসলামের নির্দেশনা মেনে চলা:
মোহর নির্ধারণের ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান মেনে চলা জরুরি। আর্থিক সামর্থ্য ও স্ত্রীর সম্মতির ভিত্তিতে ন্যায্য পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে।
২. অহংকার পরিহার:
মোহর নিয়ে প্রতিযোগিতা বা সামাজিক মর্যাদা রক্ষার জন্য অযৌক্তিক নির্ধারণ করা উচিত নয়।
৩. মোহর আদায় নিশ্চিত করা:
স্বামীদের উচিত মোহর দ্রুত ও সঠিকভাবে প্রদান করা। এটি বৈবাহিক জীবনে সুখ ও আস্থা তৈরি করে।
৪. সচেতনতা বৃদ্ধি:
মোহরানার বিষয়ে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষাগুলো পরিবার ও সমাজে প্রচার করা প্রয়োজন।
মোহরানার উদাহরণ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনে
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বিয়েগুলোতে তিনি স্ত্রীর জন্য উপযুক্ত মোহর নির্ধারণ করতেন। তাঁর স্ত্রীদের মধ্যে উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.)-এর মোহর ছিল ৫০০ দিরহাম।
আল-কুরআনের উদাহরণ:
আল্লাহ বলেন:
وَإِنْ أَرَدْتُمُ اسْتِبْدَالَ زَوْجٍ مَكَانَ زَوْجٍ وَآتَيْتُمْ إِحْدَاهُنَّ قِنطَارًا فَلَا تَأْخُذُوا مِنْهُ شَيْئًا
“যদি তোমরা এক স্ত্রীকে অন্য স্ত্রী দিয়ে পরিবর্তন করতে চাও এবং একজনকে মোহর হিসেবে অনেক অর্থ দিয়েছ, তবুও তা থেকে কিছুই ফেরত নিও না।”
— (সূরা আন-নিসা: ৪:২০)
উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা সুস্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন যে, স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দেওয়া মোহর একটি অপরিবর্তনীয় অধিকার। যদি কোনো কারণে স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে নতুন বিয়ে করতে চায়, তবে পূর্বের স্ত্রীর মোহর থেকে কিছুই ফেরত নেওয়া যাবে না। এটি স্ত্রীর প্রতি সম্মান ও ন্যায্যতার প্রতীক এবং ইসলামের আর্থিক বিধানগুলোর অন্যতম। আয়াতটি স্পষ্ট করে যে, মোহর স্ত্রীর একটি পবিত্র অধিকার এবং এর লঙ্ঘন ইসলামী নীতিমালার পরিপন্থী।
মোহরানা না দেওয়ার পরিণাম
মোহরানা স্ত্রীর প্রতি স্বামীর একটি বাধ্যতামূলক অধিকার, যা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধানগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি পরিশোধে অবহেলা করা কেবল স্ত্রীর প্রতি অন্যায় নয়, বরং আল্লাহর আদেশের সরাসরি অমান্যতা। কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَوْفُوا بِالْعُقُودِ
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা প্রতিশ্রুতি পূরণ কর।”
— (সূরা আল-মায়েদা: ৫:১)
এই আয়াতে প্রতিশ্রুতি পূরণের বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যেখানে মোহরানা একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত। মোহর না পরিশোধ করা আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করার শামিল।
হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) মোহরানা পরিশোধ না করার কঠোর পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করে বলেছেন:
“কোনো ব্যক্তি যদি স্ত্রীকে মোহর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা না দেয়, তবে কিয়ামতের দিন তাকে প্রতারক হিসেবে উপস্থিত করা হবে।”
— (তিরমিজি, হাদিস: ১২১১)
এ থেকে বোঝা যায়, মোহর না দেওয়া কিয়ামতের দিন অপমানজনক অবস্থার কারণ হতে পারে এবং এটি একটি গুনাহ হিসেবে গণ্য হবে। মোহরানা পরিশোধে অবহেলা করা স্ত্রীর প্রতি আর্থিক ও সামাজিক অবিচারের সমান।
এ ছাড়াও, রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন:
“কোনো ব্যক্তি যদি কারও অধিকার আদায়ে অবহেলা করে, তবে কিয়ামতের দিন তার নেক আমল থেকে ওই ব্যক্তির পাওনা আদায় করা হবে।”
— (বুখারি ও মুসলিম)
এই হাদিস মোহর না দেওয়ার ন্যায় অন্য যে কোনো অধিকার লঙ্ঘনের শাস্তি সম্পর্কেও আমাদের সতর্ক করে। সুতরাং, মুসলিম স্বামীদের উচিত যথাসময়ে স্ত্রীর মোহরানা পরিশোধ করা এবং এই দায়িত্বকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার তৌফিক দিন। আমিন।
শেষকথা, মোহরানা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান যা স্ত্রীর সম্মান ও অধিকার রক্ষায় ভূমিকা রাখে। সমাজের প্রচলিত ভুল চর্চা বাদ দিয়ে ইসলামের সঠিক নির্দেশনা মেনে চলা আমাদের জন্য অত্যাবশ্যক।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে ইসলামের আদেশ যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দিন। আমিন।
Please Share This Post in Your Social Media

স্ত্রীর মোহরানা: আমাদের সমাজের প্রচলিত ধারণা এবং করণীয়

মোহরানা (মাহর) ইসলামে স্ত্রীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অধিকার। এটি শুধুমাত্র আর্থিক লেনদেন নয় বরং স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীর প্রতি সম্মান ও দায়িত্বশীলতার প্রতীক। মোহরানা স্ত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং বৈবাহিক জীবনের ভিত্তি মজবুত করে। কিন্তু আমাদের সমাজে মোহরানা নিয়ে অনেক ভুল ধারণা ও অসঙ্গতি দেখা যায়। এই প্রবন্ধে কুরআন ও হাদিসের আলোকে মোহরানার গুরুত্ব, সমাজের প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা এবং ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী করণীয় তুলে ধরা হলো।
মোহরানার সংজ্ঞা ও গুরুত্ব
মোহরানা বলতে এমন একটি আর্থিক পরিমাণ বোঝায় যা স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্বশীলতার প্রতীক হিসেবে নির্ধারিত হয়। এটি স্ত্রীর মৌলিক অধিকার এবং তা সম্মানের সাথে প্রদান করা বাধ্যতামূলক।
আল-কুরআনের নির্দেশনা:
আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً
“আর নারীদের তাদের মোহর আনন্দের সাথে প্রদান কর।”
— (সূরা আন-নিসা: ৪:৪)
এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ স্পষ্ট করেছেন যে মোহর প্রদান করা স্বামীর জন্য বাধ্যতামূলক এবং তা আনন্দচিত্তে দিতে হবে।
আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেন:
فَإِن طِبْنَ لَكُمْ عَن شَيْءٍ مِّنْهُ نَفْسًا فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَّرِيئًا
“যদি তারা (স্ত্রীরা) স্বেচ্ছায় মোহরের একটি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা আনন্দের সাথে গ্রহণ করো।”
— (সূরা আন-নিসা: ৪:৪)
এই আয়াত থেকে বোঝা যায় যে স্ত্রী স্বেচ্ছায় কিছু অংশ ক্ষমা করলে তবেই তা গ্রহণ করা বৈধ।
হাদিসের নির্দেশনা:
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
إِنَّ أَعْظَمَ النِّكَاحِ بَرَكَةً أَيْسَرُهُ مَئُونَةً
“সবচেয়ে বরকতময় বিয়ে হলো সেই বিয়ে, যেখানে মোহর ও খরচ কম থাকে।”
— (ইবনে হিব্বান, ৪০৭৯)
অন্য এক হাদিসে তিনি বলেন:
مِنْ حَقِّ الْمَرْأَةِ عَلَى زَوْجِهَا أَنْ يُؤَدِّيَ إِلَيْهَا صَدَاقَهَا
“স্ত্রীর প্রতি স্বামীর অধিকার হলো তার মোহরানা প্রদান করা।”
— (তিরমিজি, ১১০১)
সমাজের প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা ও চর্চা
বর্তমানে মোহরানা নিয়ে আমাদের সমাজে কিছু ভুল ধারণা দেখা যায়, যেমন:
১. অতিরিক্ত মোহর নির্ধারণ:
অনেক ক্ষেত্রে আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনা না করেই অযৌক্তিকভাবে বেশি মোহর নির্ধারণ করা হয়। এটি স্বামীকে আর্থিক চাপে ফেলে এবং পরবর্তীতে সমস্যা সৃষ্টি করে।
২. মোহর আদায়ে অবহেলা:
বিয়ের সময় মোহর নির্ধারণ হলেও তা আদায়ে গড়িমসি করা হয়। এটি স্পষ্টভাবে ইসলামী বিধানের লঙ্ঘন।
৩. প্রথাগত চাপ:
অনেক সময় সামাজিক মর্যাদা রক্ষার জন্য এমন মোহর নির্ধারণ করা হয় যা বাস্তবসম্মত নয়।
মোহরানা নিয়ে করণীয়
১. ইসলামের নির্দেশনা মেনে চলা:
মোহর নির্ধারণের ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান মেনে চলা জরুরি। আর্থিক সামর্থ্য ও স্ত্রীর সম্মতির ভিত্তিতে ন্যায্য পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে।
২. অহংকার পরিহার:
মোহর নিয়ে প্রতিযোগিতা বা সামাজিক মর্যাদা রক্ষার জন্য অযৌক্তিক নির্ধারণ করা উচিত নয়।
৩. মোহর আদায় নিশ্চিত করা:
স্বামীদের উচিত মোহর দ্রুত ও সঠিকভাবে প্রদান করা। এটি বৈবাহিক জীবনে সুখ ও আস্থা তৈরি করে।
৪. সচেতনতা বৃদ্ধি:
মোহরানার বিষয়ে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষাগুলো পরিবার ও সমাজে প্রচার করা প্রয়োজন।
মোহরানার উদাহরণ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনে
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বিয়েগুলোতে তিনি স্ত্রীর জন্য উপযুক্ত মোহর নির্ধারণ করতেন। তাঁর স্ত্রীদের মধ্যে উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.)-এর মোহর ছিল ৫০০ দিরহাম।
আল-কুরআনের উদাহরণ:
আল্লাহ বলেন:
وَإِنْ أَرَدْتُمُ اسْتِبْدَالَ زَوْجٍ مَكَانَ زَوْجٍ وَآتَيْتُمْ إِحْدَاهُنَّ قِنطَارًا فَلَا تَأْخُذُوا مِنْهُ شَيْئًا
“যদি তোমরা এক স্ত্রীকে অন্য স্ত্রী দিয়ে পরিবর্তন করতে চাও এবং একজনকে মোহর হিসেবে অনেক অর্থ দিয়েছ, তবুও তা থেকে কিছুই ফেরত নিও না।”
— (সূরা আন-নিসা: ৪:২০)
উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা সুস্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন যে, স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দেওয়া মোহর একটি অপরিবর্তনীয় অধিকার। যদি কোনো কারণে স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে নতুন বিয়ে করতে চায়, তবে পূর্বের স্ত্রীর মোহর থেকে কিছুই ফেরত নেওয়া যাবে না। এটি স্ত্রীর প্রতি সম্মান ও ন্যায্যতার প্রতীক এবং ইসলামের আর্থিক বিধানগুলোর অন্যতম। আয়াতটি স্পষ্ট করে যে, মোহর স্ত্রীর একটি পবিত্র অধিকার এবং এর লঙ্ঘন ইসলামী নীতিমালার পরিপন্থী।
মোহরানা না দেওয়ার পরিণাম
মোহরানা স্ত্রীর প্রতি স্বামীর একটি বাধ্যতামূলক অধিকার, যা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধানগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি পরিশোধে অবহেলা করা কেবল স্ত্রীর প্রতি অন্যায় নয়, বরং আল্লাহর আদেশের সরাসরি অমান্যতা। কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَوْفُوا بِالْعُقُودِ
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা প্রতিশ্রুতি পূরণ কর।”
— (সূরা আল-মায়েদা: ৫:১)
এই আয়াতে প্রতিশ্রুতি পূরণের বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যেখানে মোহরানা একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত। মোহর না পরিশোধ করা আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করার শামিল।
হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) মোহরানা পরিশোধ না করার কঠোর পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করে বলেছেন:
“কোনো ব্যক্তি যদি স্ত্রীকে মোহর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা না দেয়, তবে কিয়ামতের দিন তাকে প্রতারক হিসেবে উপস্থিত করা হবে।”
— (তিরমিজি, হাদিস: ১২১১)
এ থেকে বোঝা যায়, মোহর না দেওয়া কিয়ামতের দিন অপমানজনক অবস্থার কারণ হতে পারে এবং এটি একটি গুনাহ হিসেবে গণ্য হবে। মোহরানা পরিশোধে অবহেলা করা স্ত্রীর প্রতি আর্থিক ও সামাজিক অবিচারের সমান।
এ ছাড়াও, রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন:
“কোনো ব্যক্তি যদি কারও অধিকার আদায়ে অবহেলা করে, তবে কিয়ামতের দিন তার নেক আমল থেকে ওই ব্যক্তির পাওনা আদায় করা হবে।”
— (বুখারি ও মুসলিম)
এই হাদিস মোহর না দেওয়ার ন্যায় অন্য যে কোনো অধিকার লঙ্ঘনের শাস্তি সম্পর্কেও আমাদের সতর্ক করে। সুতরাং, মুসলিম স্বামীদের উচিত যথাসময়ে স্ত্রীর মোহরানা পরিশোধ করা এবং এই দায়িত্বকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার তৌফিক দিন। আমিন।
শেষকথা, মোহরানা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান যা স্ত্রীর সম্মান ও অধিকার রক্ষায় ভূমিকা রাখে। সমাজের প্রচলিত ভুল চর্চা বাদ দিয়ে ইসলামের সঠিক নির্দেশনা মেনে চলা আমাদের জন্য অত্যাবশ্যক।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে ইসলামের আদেশ যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দিন। আমিন।