সময়: বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ছিলাম না, ভারতের সহযোগিতায় স্বাধীনতার সুফল নিয়ে শঙ্কা ছিল : জামায়াতের আমির’

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ০৯:২৩:৪৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪
  • / ১০২ Time View

Dr SHAFIQUR RAHMAN

‘মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ছিলাম না, ভারতের সহযোগিতায় স্বাধীনতার সুফল নিয়ে শঙ্কা ছিল : জামায়াতের আমির’জামায়াতে ইসলামী মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেনি, তবে ভারতের সহযোগিতায় অর্জিত স্বাধীনতা থেকে কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া নিয়ে শঙ্কা ছিল বলে দাবি করেছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। একইসঙ্গে, বর্তমান সরকারের কাছ থেকে দলটি বিশেষ সুবিধা পাচ্ছে—এমন অভিযোগকে তিনি ‘মিথ্যা প্রচার’ বলে অভিহিত করেছেন। গত দেড় দশকে, শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি ও রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার মতো চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়েও টিকে থাকতে হয়েছে জামায়াতে ইসলামীকে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষত ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর পরিস্থিতি কিছুটা অনুকূলে এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতের অবস্থান এবং বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটসহ বিভিন্ন বিষয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের সঙ্গে আলাপচারিতায় অংশ নেন ডা. শফিকুর রহমান। সেখানে তিনি দলের বর্তমান অবস্থান ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

একাত্তরে দলের অবস্থান নিয়ে জামায়াত আমীরের খোলামেলা কথা

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে জামায়াতের অবস্থান নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছেন দলটির আমীর ডা. শফিকুর রহমান। তিনি জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় দলটি স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ছিল না, তবে ভারতের সহযোগিতায় অর্জিত স্বাধীনতা থেকে কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া নিয়ে শঙ্কা ছিল। 

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “আমরা স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ছিলাম না। আমাদের শঙ্কা ছিল, যদি ভারতের সহযোগিতায় দেশ স্বাধীন হয়, তবে স্বাধীনতার সুফল পাওয়া যাবে কি না। তবে এটা সত্য যে, জামায়াত এক পাকিস্তানের পক্ষে ছিল। কিন্তু পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়ন, নির্যাতন, খুন এবং বিভিন্ন অপকর্মের কারণে পুরো জাতি ফুসে ওঠে, যার ফলে মুক্তিযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠে।” 

তিনি আরও বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, দেশ স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশকে আমরা আমাদের অন্তর দিয়ে ভালোবেসে গ্রহণ করেছি।” মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা জনগণের ওপর ছেড়ে দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন তিনি। 

একাত্তরে দলের চিন্তা ও বর্তমান রাজনীতি নিয়ে জামায়াত আমীরের মন্তব্য 

জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান মুক্তিযুদ্ধকালে দলের অবস্থান এবং পরবর্তীতে দলটির ভূমিকা নিয়ে আরও বিস্তারিত মন্তব্য করেছেন। তিনি স্বীকার করেন, “তখনকার সময়ে আমাদের চিন্তা বিজয়ী হয়নি, সেই সময় আমাদের চিন্তা পরাজিত হয়েছে, আমাদের সিদ্ধান্ত পরাজিত হয়েছে। জনগণই মূল্যায়ন করবে আমাদের সেই ভূমিকা কতটা যথার্থ ছিল।”

তিনি আরও বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে যে শঙ্কা ছিল, তা সেসময়ের প্রেক্ষাপট থেকেই উঠে এসেছে। তবে মুক্ত বাংলাদেশকে আমরা মেনে নিয়েছি এবং ভালোবেসেছি।” 

রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের প্রসঙ্গে 

রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার বিষয়ে তিনি সরকারের নীতির সমালোচনা করে বলেন, “আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় যায়, তখন তাদের নিষিদ্ধের ঘোর পেয়ে বসে। তবে নিষিদ্ধের রাজনীতি আমাদের সমর্থনের বিষয় নয়। এটি জনগণের আকাঙ্ক্ষার বিষয়।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, “আমাদের অতীত কর্মকাণ্ডের জন্য জনগণ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করবে কিনা, সেটি সময়ই বলে দেবে। এটি জনগণের রায় এবং আকাঙ্ক্ষার ওপর নির্ভর করবে।” 

ডা. শফিকুর রহমানের এই মন্তব্যগুলো জামায়াতের অবস্থান, ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ এবং জনগণের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি করেছে।

নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে জামায়াত আমীরের অবস্থান 

নির্বাচন এবং রাজনৈতিক সংস্কার নিয়ে কথা বলতে গিয়ে জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার এবং নির্বাচিত সরকার উভয়েরই কিছু কিছু সংস্কারের দায়িত্ব আছে। তিনি বলেন, “আমরা মনে করি, বর্তমান সরকারের নৈতিক দায়বদ্ধতা রয়েছে। তারা যেন তাড়াহুড়া না করে এবং বিষয়টি টেনে দীর্ঘায়িত না করে—এ কথা আমরা বারবার বলে আসছি।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, “অন্তর্বর্তী সরকার কিছু সংস্কার করবে, আর নির্বাচিত সরকার করবে বাকিগুলো। মৌলিক সংস্কারগুলো যৌক্তিক সময়ের মধ্যে হওয়া উচিত।” 

বিএনপি-জামায়াত সম্পর্ক নিয়ে 

বিএনপি ও জামায়াতের নেতাদের সাম্প্রতিক বক্তব্যে দূরত্বের ইঙ্গিত পাওয়া গেলেও এটি অস্বীকার করেছেন ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, “দলগুলোর মধ্যে মৌলিক সংস্কার নিয়ে ভিন্নমত থাকতে পারে, তবে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে এসব সংস্কার করা জরুরি।” 

তার এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয় যে, রাজনৈতিক অঙ্গনে জামায়াতে ইসলামী তাদের অবস্থান ধরে রাখতে চায় এবং একইসঙ্গে নির্বাচন-সংস্কারের বিষয়েও তারা সক্রিয়ভাবে মত প্রকাশ করে যাচ্ছে। 

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

‘মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ছিলাম না, ভারতের সহযোগিতায় স্বাধীনতার সুফল নিয়ে শঙ্কা ছিল : জামায়াতের আমির’

Update Time : ০৯:২৩:৪৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

‘মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ছিলাম না, ভারতের সহযোগিতায় স্বাধীনতার সুফল নিয়ে শঙ্কা ছিল : জামায়াতের আমির’জামায়াতে ইসলামী মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেনি, তবে ভারতের সহযোগিতায় অর্জিত স্বাধীনতা থেকে কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া নিয়ে শঙ্কা ছিল বলে দাবি করেছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। একইসঙ্গে, বর্তমান সরকারের কাছ থেকে দলটি বিশেষ সুবিধা পাচ্ছে—এমন অভিযোগকে তিনি ‘মিথ্যা প্রচার’ বলে অভিহিত করেছেন। গত দেড় দশকে, শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি ও রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার মতো চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়েও টিকে থাকতে হয়েছে জামায়াতে ইসলামীকে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষত ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর পরিস্থিতি কিছুটা অনুকূলে এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতের অবস্থান এবং বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটসহ বিভিন্ন বিষয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের সঙ্গে আলাপচারিতায় অংশ নেন ডা. শফিকুর রহমান। সেখানে তিনি দলের বর্তমান অবস্থান ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

একাত্তরে দলের অবস্থান নিয়ে জামায়াত আমীরের খোলামেলা কথা

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে জামায়াতের অবস্থান নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছেন দলটির আমীর ডা. শফিকুর রহমান। তিনি জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় দলটি স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ছিল না, তবে ভারতের সহযোগিতায় অর্জিত স্বাধীনতা থেকে কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া নিয়ে শঙ্কা ছিল। 

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “আমরা স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ছিলাম না। আমাদের শঙ্কা ছিল, যদি ভারতের সহযোগিতায় দেশ স্বাধীন হয়, তবে স্বাধীনতার সুফল পাওয়া যাবে কি না। তবে এটা সত্য যে, জামায়াত এক পাকিস্তানের পক্ষে ছিল। কিন্তু পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়ন, নির্যাতন, খুন এবং বিভিন্ন অপকর্মের কারণে পুরো জাতি ফুসে ওঠে, যার ফলে মুক্তিযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠে।” 

তিনি আরও বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, দেশ স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশকে আমরা আমাদের অন্তর দিয়ে ভালোবেসে গ্রহণ করেছি।” মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা জনগণের ওপর ছেড়ে দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন তিনি। 

একাত্তরে দলের চিন্তা ও বর্তমান রাজনীতি নিয়ে জামায়াত আমীরের মন্তব্য 

জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান মুক্তিযুদ্ধকালে দলের অবস্থান এবং পরবর্তীতে দলটির ভূমিকা নিয়ে আরও বিস্তারিত মন্তব্য করেছেন। তিনি স্বীকার করেন, “তখনকার সময়ে আমাদের চিন্তা বিজয়ী হয়নি, সেই সময় আমাদের চিন্তা পরাজিত হয়েছে, আমাদের সিদ্ধান্ত পরাজিত হয়েছে। জনগণই মূল্যায়ন করবে আমাদের সেই ভূমিকা কতটা যথার্থ ছিল।”

তিনি আরও বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে যে শঙ্কা ছিল, তা সেসময়ের প্রেক্ষাপট থেকেই উঠে এসেছে। তবে মুক্ত বাংলাদেশকে আমরা মেনে নিয়েছি এবং ভালোবেসেছি।” 

রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের প্রসঙ্গে 

রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার বিষয়ে তিনি সরকারের নীতির সমালোচনা করে বলেন, “আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় যায়, তখন তাদের নিষিদ্ধের ঘোর পেয়ে বসে। তবে নিষিদ্ধের রাজনীতি আমাদের সমর্থনের বিষয় নয়। এটি জনগণের আকাঙ্ক্ষার বিষয়।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, “আমাদের অতীত কর্মকাণ্ডের জন্য জনগণ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করবে কিনা, সেটি সময়ই বলে দেবে। এটি জনগণের রায় এবং আকাঙ্ক্ষার ওপর নির্ভর করবে।” 

ডা. শফিকুর রহমানের এই মন্তব্যগুলো জামায়াতের অবস্থান, ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ এবং জনগণের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি করেছে।

নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে জামায়াত আমীরের অবস্থান 

নির্বাচন এবং রাজনৈতিক সংস্কার নিয়ে কথা বলতে গিয়ে জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার এবং নির্বাচিত সরকার উভয়েরই কিছু কিছু সংস্কারের দায়িত্ব আছে। তিনি বলেন, “আমরা মনে করি, বর্তমান সরকারের নৈতিক দায়বদ্ধতা রয়েছে। তারা যেন তাড়াহুড়া না করে এবং বিষয়টি টেনে দীর্ঘায়িত না করে—এ কথা আমরা বারবার বলে আসছি।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, “অন্তর্বর্তী সরকার কিছু সংস্কার করবে, আর নির্বাচিত সরকার করবে বাকিগুলো। মৌলিক সংস্কারগুলো যৌক্তিক সময়ের মধ্যে হওয়া উচিত।” 

বিএনপি-জামায়াত সম্পর্ক নিয়ে 

বিএনপি ও জামায়াতের নেতাদের সাম্প্রতিক বক্তব্যে দূরত্বের ইঙ্গিত পাওয়া গেলেও এটি অস্বীকার করেছেন ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, “দলগুলোর মধ্যে মৌলিক সংস্কার নিয়ে ভিন্নমত থাকতে পারে, তবে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে এসব সংস্কার করা জরুরি।” 

তার এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয় যে, রাজনৈতিক অঙ্গনে জামায়াতে ইসলামী তাদের অবস্থান ধরে রাখতে চায় এবং একইসঙ্গে নির্বাচন-সংস্কারের বিষয়েও তারা সক্রিয়ভাবে মত প্রকাশ করে যাচ্ছে।