৩ লাখ কোটির খোঁজে দুই সংস্থা: ১৫ বছরে বিপুল পাচার টাকা নিয়ে অনুসন্ধানে দুদক ও সিআইডি

- Update Time : ১২:৪৪:০৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪
- / ৯৩ Time View
গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩ হাজার কোটি ডলার বা ৩ লাখ কোটি টাকা পাচারের তথ্য উঠে এসেছে, যা দেশের অর্থনীতির ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হওয়ায়, দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়েছে এবং বৈদেশিক মুদ্রার অভাবে অর্থনৈতিক চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) যৌথভাবে অনুসন্ধানে নামলেও, অর্থপাচারের চক্র এখনো কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। নিচে এই অর্থপাচারের কারণ, প্রভাব এবং চলমান পদক্ষেপগুলো পরিসংখ্যানসহ আলোচনা করা হলো:
১. অর্থ পাচারের ইতিহাস ও কারণ
বাংলাদেশের অর্থ পাচারের ঘটনা বিগত দুই দশকে ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৪ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে বছরে গড়ে প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ৭০০০ কোটি টাকা) পাচার হয়েছে। ২০১২ সালের গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফআই) একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শুধুমাত্র ২০১০ সালেই বাংলাদেশ থেকে ৮.৪১ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। অর্থ পাচারের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে—ট্যাক্স ফাঁকি, রাজনৈতিক প্রভাব, অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন, এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের আড়ালে টাকা পাচারের কৌশল।
২. দুই সংস্থার (দুদক ও সিআইডি) ভূমিকা
দুদক এবং সিআইডি, অর্থ পাচার প্রতিরোধে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। দুদকের প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৩ সালে তারা ১৫৪টি মামলা দায়ের করেছে যেখানে পাচারের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। সিআইডি প্রধান মতিউর রহমান জানান, তারা বর্তমানে পাচারকৃত অর্থ পুনরুদ্ধারের জন্য ৫০টি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে। দুদক এই উদ্যোগে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তা নিয়ে ফরেনসিক এনালাইসিস এবং সাইবার ক্রাইম তদন্ত করছে, যাতে পাচারের প্রকৃত উৎস ও গন্তব্য নির্ধারণ সহজ হয়।
৩. বৈঠক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা
পাচার রোধে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা গ্রহণ করা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে দেখা গেছে, ২০২২ সালে দুদক ও সিআইডি এফবিআই, ইউএনওডিসি এবং বিশ্বব্যাংকের সাথে মিলিতভাবে বৈঠক করেছে। বৈঠকে বিদেশে পাচারকৃত প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ২০,০০০ কোটি টাকা) পুনরুদ্ধারে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নও অর্থপাচার এবং সাইবার ক্রাইম মোকাবিলায় বাংলাদেশকে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে।
৪. কর ফাঁকি ও আমদানি-রপ্তানিতে কারচুপি
দেশে কর ফাঁকি এবং আমদানি-রপ্তানিতে কারচুপি অর্থ পাচারের বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ২০২০ সালের একটি রিপোর্টে দেখা যায়, বাংলাদেশে মোট রপ্তানি ব্যবসার ২০% আমদানি-রপ্তানিতে ভিন্ন হিসাব দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করা হয়েছে। এর ফলে বছরে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে, যা অর্থনীতির স্থিতিশীলতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
৫. সেকেন্ড হোম কর্মসূচি ও অভিবাসন
বাংলাদেশের ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম কর্মসূচির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশি নাগরিকরা বছরে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বৈধভাবে সেখানে স্থানান্তর করেছে, যার প্রভাব দেশের রেমিটেন্স প্রবাহে পড়ছে। এছাড়াও কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রবাসী কর্মসূচির আড়ালে বৈধ-অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করা হচ্ছে।
৬. করের সুখস্বর্গে গচ্ছিত অর্থ
ট্যাক্স হেভেন বা কর স্বর্গ দেশগুলোতে পাচারকৃত অর্থ গচ্ছিত রাখা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। ২০২২ সালের একটি জিএফআই রিপোর্ট অনুসারে, বাংলাদেশ থেকে বছরে প্রায় ৬-৮ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৬০-৮০ হাজার কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়ে সুইজারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের ব্যাংকগুলোতে স্থানান্তরিত হয়েছে। এরমধ্যে শুধু সুইজারল্যান্ডেই বাংলাদেশি নাগরিকদের ব্যাংক গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার বলে ধারণা করা হয়।
৭. ব্যাংক কেলেঙ্কারি ও লোপাট
দেশে ব্যাংকিং সেক্টরে দুর্নীতির প্রভাবে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ হয়েছে। ২০২৩ সালে প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত ১৫ বছরে প্রায় ১৯টি ব্যাংকে ২৪টি ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে এবং প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার বেশি অর্থ পাচার করা হয়েছে। এই কেলেঙ্কারিগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি উচ্চপ্রোফাইল কেসও রয়েছে, যা দেশের ব্যাংকিং সেক্টরের স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকিপূর্ণ করেছে।
৮. মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা
২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের আওতায়, দেশের বাইরে পাচারকৃত সম্পদ পুনরুদ্ধার সম্ভব হলেও বাস্তবায়নে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে পাওয়া পরিসংখ্যান অনুসারে, গত পাঁচ বছরে ১০০টিরও বেশি পাচারকারী মামলা রুজু করা হয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ছাড়া এই পাচার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া কঠিন। দেশের ভেতরে বিশেষ টাস্কফোর্সের মাধ্যমে চলমান এ প্রক্রিয়া আরও বেগবান করা হচ্ছে।
৯. সাম্প্রতিক অগ্রগতি
সাম্প্রতিক সময়ে সিআইডি পাচারকৃত অর্থ নিয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে এবং ৫০টি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। সিআইডি-এর কর্মকর্তারা জানান, প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার পুনরুদ্ধারে প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে এবং প্রথম পর্যায়ে কয়েকজন উচ্চপদস্থ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সরকারের কঠোর অবস্থানের ফলে অর্থপাচার প্রতিরোধে জনমনে আশার সঞ্চার হয়েছে।
গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের ঘটনায় অর্থনীতি অনেকাংশে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাচারকৃত অর্থ পুনরুদ্ধার এবং অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে, দুদক, সিআইডি, এনবিআর এবং বিএফআইইউ সহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বিত পদক্ষেপ অপরিহার্য। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, শক্তিশালী আইন এবং প্রশাসনিক সততা নিশ্চিতের মাধ্যমে পাচার রোধে আরও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।
Please Share This Post in Your Social Media

৩ লাখ কোটির খোঁজে দুই সংস্থা: ১৫ বছরে বিপুল পাচার টাকা নিয়ে অনুসন্ধানে দুদক ও সিআইডি

গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩ হাজার কোটি ডলার বা ৩ লাখ কোটি টাকা পাচারের তথ্য উঠে এসেছে, যা দেশের অর্থনীতির ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হওয়ায়, দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়েছে এবং বৈদেশিক মুদ্রার অভাবে অর্থনৈতিক চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) যৌথভাবে অনুসন্ধানে নামলেও, অর্থপাচারের চক্র এখনো কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। নিচে এই অর্থপাচারের কারণ, প্রভাব এবং চলমান পদক্ষেপগুলো পরিসংখ্যানসহ আলোচনা করা হলো:
১. অর্থ পাচারের ইতিহাস ও কারণ
বাংলাদেশের অর্থ পাচারের ঘটনা বিগত দুই দশকে ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৪ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে বছরে গড়ে প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ৭০০০ কোটি টাকা) পাচার হয়েছে। ২০১২ সালের গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফআই) একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শুধুমাত্র ২০১০ সালেই বাংলাদেশ থেকে ৮.৪১ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। অর্থ পাচারের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে—ট্যাক্স ফাঁকি, রাজনৈতিক প্রভাব, অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন, এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের আড়ালে টাকা পাচারের কৌশল।
২. দুই সংস্থার (দুদক ও সিআইডি) ভূমিকা
দুদক এবং সিআইডি, অর্থ পাচার প্রতিরোধে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। দুদকের প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৩ সালে তারা ১৫৪টি মামলা দায়ের করেছে যেখানে পাচারের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। সিআইডি প্রধান মতিউর রহমান জানান, তারা বর্তমানে পাচারকৃত অর্থ পুনরুদ্ধারের জন্য ৫০টি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে। দুদক এই উদ্যোগে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তা নিয়ে ফরেনসিক এনালাইসিস এবং সাইবার ক্রাইম তদন্ত করছে, যাতে পাচারের প্রকৃত উৎস ও গন্তব্য নির্ধারণ সহজ হয়।
৩. বৈঠক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা
পাচার রোধে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা গ্রহণ করা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে দেখা গেছে, ২০২২ সালে দুদক ও সিআইডি এফবিআই, ইউএনওডিসি এবং বিশ্বব্যাংকের সাথে মিলিতভাবে বৈঠক করেছে। বৈঠকে বিদেশে পাচারকৃত প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ২০,০০০ কোটি টাকা) পুনরুদ্ধারে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নও অর্থপাচার এবং সাইবার ক্রাইম মোকাবিলায় বাংলাদেশকে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে।
৪. কর ফাঁকি ও আমদানি-রপ্তানিতে কারচুপি
দেশে কর ফাঁকি এবং আমদানি-রপ্তানিতে কারচুপি অর্থ পাচারের বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ২০২০ সালের একটি রিপোর্টে দেখা যায়, বাংলাদেশে মোট রপ্তানি ব্যবসার ২০% আমদানি-রপ্তানিতে ভিন্ন হিসাব দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করা হয়েছে। এর ফলে বছরে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে, যা অর্থনীতির স্থিতিশীলতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
৫. সেকেন্ড হোম কর্মসূচি ও অভিবাসন
বাংলাদেশের ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম কর্মসূচির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশি নাগরিকরা বছরে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বৈধভাবে সেখানে স্থানান্তর করেছে, যার প্রভাব দেশের রেমিটেন্স প্রবাহে পড়ছে। এছাড়াও কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রবাসী কর্মসূচির আড়ালে বৈধ-অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করা হচ্ছে।
৬. করের সুখস্বর্গে গচ্ছিত অর্থ
ট্যাক্স হেভেন বা কর স্বর্গ দেশগুলোতে পাচারকৃত অর্থ গচ্ছিত রাখা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। ২০২২ সালের একটি জিএফআই রিপোর্ট অনুসারে, বাংলাদেশ থেকে বছরে প্রায় ৬-৮ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৬০-৮০ হাজার কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়ে সুইজারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের ব্যাংকগুলোতে স্থানান্তরিত হয়েছে। এরমধ্যে শুধু সুইজারল্যান্ডেই বাংলাদেশি নাগরিকদের ব্যাংক গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার বলে ধারণা করা হয়।
৭. ব্যাংক কেলেঙ্কারি ও লোপাট
দেশে ব্যাংকিং সেক্টরে দুর্নীতির প্রভাবে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ হয়েছে। ২০২৩ সালে প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত ১৫ বছরে প্রায় ১৯টি ব্যাংকে ২৪টি ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে এবং প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার বেশি অর্থ পাচার করা হয়েছে। এই কেলেঙ্কারিগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি উচ্চপ্রোফাইল কেসও রয়েছে, যা দেশের ব্যাংকিং সেক্টরের স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকিপূর্ণ করেছে।
৮. মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা
২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের আওতায়, দেশের বাইরে পাচারকৃত সম্পদ পুনরুদ্ধার সম্ভব হলেও বাস্তবায়নে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে পাওয়া পরিসংখ্যান অনুসারে, গত পাঁচ বছরে ১০০টিরও বেশি পাচারকারী মামলা রুজু করা হয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ছাড়া এই পাচার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া কঠিন। দেশের ভেতরে বিশেষ টাস্কফোর্সের মাধ্যমে চলমান এ প্রক্রিয়া আরও বেগবান করা হচ্ছে।
৯. সাম্প্রতিক অগ্রগতি
সাম্প্রতিক সময়ে সিআইডি পাচারকৃত অর্থ নিয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে এবং ৫০টি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। সিআইডি-এর কর্মকর্তারা জানান, প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার পুনরুদ্ধারে প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে এবং প্রথম পর্যায়ে কয়েকজন উচ্চপদস্থ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সরকারের কঠোর অবস্থানের ফলে অর্থপাচার প্রতিরোধে জনমনে আশার সঞ্চার হয়েছে।
গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের ঘটনায় অর্থনীতি অনেকাংশে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাচারকৃত অর্থ পুনরুদ্ধার এবং অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে, দুদক, সিআইডি, এনবিআর এবং বিএফআইইউ সহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বিত পদক্ষেপ অপরিহার্য। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, শক্তিশালী আইন এবং প্রশাসনিক সততা নিশ্চিতের মাধ্যমে পাচার রোধে আরও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।