আজানের সময় কুকুর ডাকার কারণ

- Update Time : ০৯:৩৩:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪
- / ১০৬ Time View
আজানের সময় কুকুরের ডাকের বিষয়ে মানুষের মনে বহু প্রশ্ন দেখা দেয়। বেশিরভাগ সময়েই দেখা যায়, আজানের সুমধুর ধ্বনি শোনা মাত্রই কুকুরগুলো আকাশের দিকে মুখ তুলে ডাকতে শুরু করে। কুরআন ও হাদিসে এই প্রশ্নের বিস্তারিত ব্যাখ্যা পাওয়া যায়, যা আমাদের দৃষ্টি খুলে দেয় এবং আল্লাহ তাআলার নিদর্শন সম্পর্কে সচেতন করে।
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একটি হাদিসে এই বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, “যখন আজান দেয়া হয়, তখন শয়তান বায়ু ত্যাগ করতে করতে পালিয়ে যায়।” কুকুরের ডাক এই শয়তানের পালানোর একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। অর্থাৎ, আজানের শব্দে শয়তান এতটাই বিরক্ত হয় যে, সে তৎক্ষণাৎ স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। এই হাদিসটি বুখারী, মুসলিম এবং মিশকাত শরীফে উল্লেখিত হয়েছে।
আরো একটি হাদিসে, আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “কুকুর এবং গাধা যখন অনিষ্টকারী জিন বা শয়তানকে দেখে তখন চিৎকার করে।” অর্থাৎ, তাদের একটি অতিপ্রাকৃত অনুভূতি রয়েছে, যা তাদেরকে আমাদের অদৃশ্য সত্ত্বা বা শক্তিগুলোর উপস্থিতি সম্পর্কে জানান দেয়। যখন তারা শয়তান বা জিনদের উপস্থিতি অনুভব করে, তখনই তারা শব্দ করে সতর্ক করতে থাকে। আবু দাউদ এবং মিশকাত শরীফে এই হাদিসটির বর্ণনা পাওয়া যায়।
অন্য একটি উল্লেখযোগ্য হাদিস:
হযরত জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, “যখন তোমরা রাত্রে কুকুরের চিৎকার এবং গাধার ডাক শুনতে পাবে, তখন আল্লাহর কাছে অভিশপ্ত শয়তান হতে পানাহ্ চাইবে। কেননা, তারা এমন কিছু দেখতে পায় যা তোমরা দেখতে পাওনা।” (মিশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা-৩৭৩)
এই হাদিসগুলো থেকে আমাদের কাছে এটি সুস্পষ্ট হয় যে, কুকুর এবং গাধা আল্লাহ তাআলার দেয়া এক বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী, যা তাদের অদৃশ্য শক্তি এবং জগত সম্পর্কে অবগত করে। বিশেষ করে রাতের অন্ধকারে, যখন মানবজাতি এই অদৃশ্য সত্ত্বাদের ব্যাপারে সচেতন নয়, তখন আল্লাহর কাছে শয়তান হতে পানাহ চাওয়ার গুরুত্ব ও তাৎপর্য আরও বৃদ্ধি পায়।
মূল হাদিসসমূহের উল্লেখ:
١. حَدِيثُ أَبِي هُرَيْرَةَ (رَضِيَ ٱللَّهُ عَنْهُ): إِنَّ الشَّيْطَانَ يَفِرُّ عِنْدَ سَمَاعِ ٱلْأَذَانِ وَيَتَغَوَّطُ. *“যখন আজান দেয়া হয়, তখন শয়তান পালিয়ে যায় এবং বায়ু ত্যাগ করে।”* — [বুখারী, মুসলিম]
٢. حَدِيثُ جَابِرٍ (رَضِيَ ٱللَّهُ عَنْهُ): إِذَا سَمِعْتُمْ نَبَاحَ ٱلْكِلَابِ وَنَهِيقَ ٱلْحِمَارِ فِي ٱللَّيْلِ فَتَعَوَّذُوا بِٱللَّهِ فَإِنَّهُمْ يَرَوْنَ مَا لَا تَرَوْنَ. *“যখন তোমরা রাত্রে কুকুরের চিৎকার এবং গাধার ডাক শুনতে পাবে, তখন আল্লাহর কাছে অভিশপ্ত শয়তান হতে পানাহ্ চাইবে। কেননা, তারা এমন কিছু দেখতে পায় যা তোমরা দেখতে পাওনা।”* — [মিশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা-৩৭৩]
এখানে আল্লাহ তাআলা মানুষকে নির্দেশ দিয়েছেন এই ধরনের পরিস্থিতিতে শয়তানের প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তার কাছে পানাহ চাওয়ার। আজানের মাধ্যমে শয়তান দূরে চলে যায় এবং শয়তানের সেই বিরক্তি এবং প্রতিক্রিয়া কুকুরের আওয়াজে প্রকাশিত হয়।
এই হাদিসগুলো শুধু কুকুর বা গাধার ডাকের কারণ বোঝায় না, বরং আমাদের আল্লাহ তাআলার বিশেষ সুরক্ষা ও হেফাজতের বার্তাও পৌঁছে দেয়। আজানের সময় কুকুরের ডাক এবং আল্লাহর কাছে পানাহ চাওয়ার মাধ্যমে আমরা আত্মার শক্তি এবং বিশ্বাসের ভিত্তি তৈরি করতে পারি, যা আমাদেরকে প্রতিটি অবস্থায় সুরক্ষা প্রদান করে।
Please Share This Post in Your Social Media

আজানের সময় কুকুর ডাকার কারণ

আজানের সময় কুকুরের ডাকের বিষয়ে মানুষের মনে বহু প্রশ্ন দেখা দেয়। বেশিরভাগ সময়েই দেখা যায়, আজানের সুমধুর ধ্বনি শোনা মাত্রই কুকুরগুলো আকাশের দিকে মুখ তুলে ডাকতে শুরু করে। কুরআন ও হাদিসে এই প্রশ্নের বিস্তারিত ব্যাখ্যা পাওয়া যায়, যা আমাদের দৃষ্টি খুলে দেয় এবং আল্লাহ তাআলার নিদর্শন সম্পর্কে সচেতন করে।
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একটি হাদিসে এই বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, “যখন আজান দেয়া হয়, তখন শয়তান বায়ু ত্যাগ করতে করতে পালিয়ে যায়।” কুকুরের ডাক এই শয়তানের পালানোর একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। অর্থাৎ, আজানের শব্দে শয়তান এতটাই বিরক্ত হয় যে, সে তৎক্ষণাৎ স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। এই হাদিসটি বুখারী, মুসলিম এবং মিশকাত শরীফে উল্লেখিত হয়েছে।
আরো একটি হাদিসে, আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “কুকুর এবং গাধা যখন অনিষ্টকারী জিন বা শয়তানকে দেখে তখন চিৎকার করে।” অর্থাৎ, তাদের একটি অতিপ্রাকৃত অনুভূতি রয়েছে, যা তাদেরকে আমাদের অদৃশ্য সত্ত্বা বা শক্তিগুলোর উপস্থিতি সম্পর্কে জানান দেয়। যখন তারা শয়তান বা জিনদের উপস্থিতি অনুভব করে, তখনই তারা শব্দ করে সতর্ক করতে থাকে। আবু দাউদ এবং মিশকাত শরীফে এই হাদিসটির বর্ণনা পাওয়া যায়।
অন্য একটি উল্লেখযোগ্য হাদিস:
হযরত জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, “যখন তোমরা রাত্রে কুকুরের চিৎকার এবং গাধার ডাক শুনতে পাবে, তখন আল্লাহর কাছে অভিশপ্ত শয়তান হতে পানাহ্ চাইবে। কেননা, তারা এমন কিছু দেখতে পায় যা তোমরা দেখতে পাওনা।” (মিশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা-৩৭৩)
এই হাদিসগুলো থেকে আমাদের কাছে এটি সুস্পষ্ট হয় যে, কুকুর এবং গাধা আল্লাহ তাআলার দেয়া এক বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী, যা তাদের অদৃশ্য শক্তি এবং জগত সম্পর্কে অবগত করে। বিশেষ করে রাতের অন্ধকারে, যখন মানবজাতি এই অদৃশ্য সত্ত্বাদের ব্যাপারে সচেতন নয়, তখন আল্লাহর কাছে শয়তান হতে পানাহ চাওয়ার গুরুত্ব ও তাৎপর্য আরও বৃদ্ধি পায়।
মূল হাদিসসমূহের উল্লেখ:
١. حَدِيثُ أَبِي هُرَيْرَةَ (رَضِيَ ٱللَّهُ عَنْهُ): إِنَّ الشَّيْطَانَ يَفِرُّ عِنْدَ سَمَاعِ ٱلْأَذَانِ وَيَتَغَوَّطُ. *“যখন আজান দেয়া হয়, তখন শয়তান পালিয়ে যায় এবং বায়ু ত্যাগ করে।”* — [বুখারী, মুসলিম]
٢. حَدِيثُ جَابِرٍ (رَضِيَ ٱللَّهُ عَنْهُ): إِذَا سَمِعْتُمْ نَبَاحَ ٱلْكِلَابِ وَنَهِيقَ ٱلْحِمَارِ فِي ٱللَّيْلِ فَتَعَوَّذُوا بِٱللَّهِ فَإِنَّهُمْ يَرَوْنَ مَا لَا تَرَوْنَ. *“যখন তোমরা রাত্রে কুকুরের চিৎকার এবং গাধার ডাক শুনতে পাবে, তখন আল্লাহর কাছে অভিশপ্ত শয়তান হতে পানাহ্ চাইবে। কেননা, তারা এমন কিছু দেখতে পায় যা তোমরা দেখতে পাওনা।”* — [মিশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা-৩৭৩]
এখানে আল্লাহ তাআলা মানুষকে নির্দেশ দিয়েছেন এই ধরনের পরিস্থিতিতে শয়তানের প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তার কাছে পানাহ চাওয়ার। আজানের মাধ্যমে শয়তান দূরে চলে যায় এবং শয়তানের সেই বিরক্তি এবং প্রতিক্রিয়া কুকুরের আওয়াজে প্রকাশিত হয়।
এই হাদিসগুলো শুধু কুকুর বা গাধার ডাকের কারণ বোঝায় না, বরং আমাদের আল্লাহ তাআলার বিশেষ সুরক্ষা ও হেফাজতের বার্তাও পৌঁছে দেয়। আজানের সময় কুকুরের ডাক এবং আল্লাহর কাছে পানাহ চাওয়ার মাধ্যমে আমরা আত্মার শক্তি এবং বিশ্বাসের ভিত্তি তৈরি করতে পারি, যা আমাদেরকে প্রতিটি অবস্থায় সুরক্ষা প্রদান করে।