সময়: বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আজানের সময় কুকুর ডাকার কারণ

বিল্লাল হোসেন
  • Update Time : ০৯:৩৩:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪
  • / ১০৬ Time View

Dog

আজানের সময় কুকুরের ডাকের বিষয়ে মানুষের মনে বহু প্রশ্ন দেখা দেয়। বেশিরভাগ সময়েই দেখা যায়, আজানের সুমধুর ধ্বনি শোনা মাত্রই কুকুরগুলো আকাশের দিকে মুখ তুলে ডাকতে শুরু করে। কুরআন ও হাদিসে এই প্রশ্নের বিস্তারিত ব্যাখ্যা পাওয়া যায়, যা আমাদের দৃষ্টি খুলে দেয় এবং আল্লাহ তাআলার নিদর্শন সম্পর্কে সচেতন করে।

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একটি হাদিসে এই বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, “যখন আজান দেয়া হয়, তখন শয়তান বায়ু ত্যাগ করতে করতে পালিয়ে যায়।” কুকুরের ডাক এই শয়তানের পালানোর একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। অর্থাৎ, আজানের শব্দে শয়তান এতটাই বিরক্ত হয় যে, সে তৎক্ষণাৎ স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। এই হাদিসটি বুখারী, মুসলিম এবং মিশকাত শরীফে উল্লেখিত হয়েছে।

আরো একটি হাদিসে, আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “কুকুর এবং গাধা যখন অনিষ্টকারী জিন বা শয়তানকে দেখে তখন চিৎকার করে।” অর্থাৎ, তাদের একটি অতিপ্রাকৃত অনুভূতি রয়েছে, যা তাদেরকে আমাদের অদৃশ্য সত্ত্বা বা শক্তিগুলোর উপস্থিতি সম্পর্কে জানান দেয়। যখন তারা শয়তান বা জিনদের উপস্থিতি অনুভব করে, তখনই তারা শব্দ করে সতর্ক করতে থাকে। আবু দাউদ এবং মিশকাত শরীফে এই হাদিসটির বর্ণনা পাওয়া যায়।

অন্য একটি উল্লেখযোগ্য হাদিস:

হযরত জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, “যখন তোমরা রাত্রে কুকুরের চিৎকার এবং গাধার ডাক শুনতে পাবে, তখন আল্লাহর কাছে অভিশপ্ত শয়তান হতে পানাহ্ চাইবে। কেননা, তারা এমন কিছু দেখতে পায় যা তোমরা দেখতে পাওনা।” (মিশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা-৩৭৩)

এই হাদিসগুলো থেকে আমাদের কাছে এটি সুস্পষ্ট হয় যে, কুকুর এবং গাধা আল্লাহ তাআলার দেয়া এক বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী, যা তাদের অদৃশ্য শক্তি এবং জগত সম্পর্কে অবগত করে। বিশেষ করে রাতের অন্ধকারে, যখন মানবজাতি এই অদৃশ্য সত্ত্বাদের ব্যাপারে সচেতন নয়, তখন আল্লাহর কাছে শয়তান হতে পানাহ চাওয়ার গুরুত্ব ও তাৎপর্য আরও বৃদ্ধি পায়।

মূল হাদিসসমূহের উল্লেখ:

١. حَدِيثُ أَبِي هُرَيْرَةَ (رَضِيَ ٱللَّهُ عَنْهُ): إِنَّ الشَّيْطَانَ يَفِرُّ عِنْدَ سَمَاعِ ٱلْأَذَانِ وَيَتَغَوَّطُ. *“যখন আজান দেয়া হয়, তখন শয়তান পালিয়ে যায় এবং বায়ু ত্যাগ করে।”* — [বুখারী, মুসলিম]

٢. حَدِيثُ جَابِرٍ (رَضِيَ ٱللَّهُ عَنْهُ): إِذَا سَمِعْتُمْ نَبَاحَ ٱلْكِلَابِ وَنَهِيقَ ٱلْحِمَارِ فِي ٱللَّيْلِ فَتَعَوَّذُوا بِٱللَّهِ فَإِنَّهُمْ يَرَوْنَ مَا لَا تَرَوْنَ. *“যখন তোমরা রাত্রে কুকুরের চিৎকার এবং গাধার ডাক শুনতে পাবে, তখন আল্লাহর কাছে অভিশপ্ত শয়তান হতে পানাহ্ চাইবে। কেননা, তারা এমন কিছু দেখতে পায় যা তোমরা দেখতে পাওনা।”* — [মিশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা-৩৭৩]

এখানে আল্লাহ তাআলা মানুষকে নির্দেশ দিয়েছেন এই ধরনের পরিস্থিতিতে শয়তানের প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তার কাছে পানাহ চাওয়ার। আজানের মাধ্যমে শয়তান দূরে চলে যায় এবং শয়তানের সেই বিরক্তি এবং প্রতিক্রিয়া কুকুরের আওয়াজে প্রকাশিত হয়।

এই হাদিসগুলো শুধু কুকুর বা গাধার ডাকের কারণ বোঝায় না, বরং আমাদের আল্লাহ তাআলার বিশেষ সুরক্ষা ও হেফাজতের বার্তাও পৌঁছে দেয়। আজানের সময় কুকুরের ডাক এবং আল্লাহর কাছে পানাহ চাওয়ার মাধ্যমে আমরা আত্মার শক্তি এবং বিশ্বাসের ভিত্তি তৈরি করতে পারি, যা আমাদেরকে প্রতিটি অবস্থায় সুরক্ষা প্রদান করে।

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

বিল্লাল হোসেন

বিল্লাল হোসেন, একজন প্রজ্ঞাবান পেশাজীবী, যিনি গণিতের ওপর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন এবং ব্যাংকার, অর্থনীতিবিদ, ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিশেষজ্ঞ হিসেবে একটি সমৃদ্ধ ও বহুমুখী ক্যারিয়ার গড়ে তুলেছেন। তার আর্থিক খাতে যাত্রা তাকে নেতৃত্বের ভূমিকায় নিয়ে গেছে, বিশেষ করে সৌদি আরবের আল-রাজি ব্যাংকিং Inc. এবং ব্যাংক-আল-বিলাদে বিদেশী সম্পর্ক ও করেসপন্ডেন্ট মেইন্টেনেন্স অফিসার হিসেবে। প্রথাগত অর্থনীতির গণ্ডির বাইরে, বিল্লাল একজন প্রখ্যাত লেখক ও বিশ্লেষক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন, বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টালে মননশীল কলাম ও গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করে। তার দক্ষতা বিস্তৃত বিষয় জুড়ে রয়েছে, যেমন অর্থনীতির জটিলতা, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, প্রবাসী শ্রমিকদের দুঃখ-কষ্ট, রেমিটেন্স, রিজার্ভ এবং অন্যান্য সম্পর্কিত দিক। বিল্লাল তার লেখায় একটি অনন্য বিশ্লেষণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আসেন, যা ব্যাংকিং ক্যারিয়ারে অর্জিত বাস্তব জ্ঞানকে একত্রিত করে একাডেমিক কঠোরতার সাথে। তার প্রবন্ধগুলো শুধুমাত্র জটিল বিষয়গুলির উপর গভীর বোঝাপড়ার প্রতিফলন নয়, বরং পাঠকদের জন্য জ্ঞানপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে, যা তত্ত্ব ও বাস্তব প্রয়োগের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে। বিল্লাল হোসেনের অবদান তার প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করে যে, তিনি আমাদের আন্তঃসংযুক্ত বিশ্বের জটিলতাগুলি উন্মোচন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটের একটি বিস্তৃত এবং আরও সূক্ষ্ম বোঝাপড়ার দিকে মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে।

আজানের সময় কুকুর ডাকার কারণ

Update Time : ০৯:৩৩:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪

আজানের সময় কুকুরের ডাকের বিষয়ে মানুষের মনে বহু প্রশ্ন দেখা দেয়। বেশিরভাগ সময়েই দেখা যায়, আজানের সুমধুর ধ্বনি শোনা মাত্রই কুকুরগুলো আকাশের দিকে মুখ তুলে ডাকতে শুরু করে। কুরআন ও হাদিসে এই প্রশ্নের বিস্তারিত ব্যাখ্যা পাওয়া যায়, যা আমাদের দৃষ্টি খুলে দেয় এবং আল্লাহ তাআলার নিদর্শন সম্পর্কে সচেতন করে।

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একটি হাদিসে এই বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, “যখন আজান দেয়া হয়, তখন শয়তান বায়ু ত্যাগ করতে করতে পালিয়ে যায়।” কুকুরের ডাক এই শয়তানের পালানোর একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। অর্থাৎ, আজানের শব্দে শয়তান এতটাই বিরক্ত হয় যে, সে তৎক্ষণাৎ স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। এই হাদিসটি বুখারী, মুসলিম এবং মিশকাত শরীফে উল্লেখিত হয়েছে।

আরো একটি হাদিসে, আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “কুকুর এবং গাধা যখন অনিষ্টকারী জিন বা শয়তানকে দেখে তখন চিৎকার করে।” অর্থাৎ, তাদের একটি অতিপ্রাকৃত অনুভূতি রয়েছে, যা তাদেরকে আমাদের অদৃশ্য সত্ত্বা বা শক্তিগুলোর উপস্থিতি সম্পর্কে জানান দেয়। যখন তারা শয়তান বা জিনদের উপস্থিতি অনুভব করে, তখনই তারা শব্দ করে সতর্ক করতে থাকে। আবু দাউদ এবং মিশকাত শরীফে এই হাদিসটির বর্ণনা পাওয়া যায়।

অন্য একটি উল্লেখযোগ্য হাদিস:

হযরত জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, “যখন তোমরা রাত্রে কুকুরের চিৎকার এবং গাধার ডাক শুনতে পাবে, তখন আল্লাহর কাছে অভিশপ্ত শয়তান হতে পানাহ্ চাইবে। কেননা, তারা এমন কিছু দেখতে পায় যা তোমরা দেখতে পাওনা।” (মিশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা-৩৭৩)

এই হাদিসগুলো থেকে আমাদের কাছে এটি সুস্পষ্ট হয় যে, কুকুর এবং গাধা আল্লাহ তাআলার দেয়া এক বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী, যা তাদের অদৃশ্য শক্তি এবং জগত সম্পর্কে অবগত করে। বিশেষ করে রাতের অন্ধকারে, যখন মানবজাতি এই অদৃশ্য সত্ত্বাদের ব্যাপারে সচেতন নয়, তখন আল্লাহর কাছে শয়তান হতে পানাহ চাওয়ার গুরুত্ব ও তাৎপর্য আরও বৃদ্ধি পায়।

মূল হাদিসসমূহের উল্লেখ:

١. حَدِيثُ أَبِي هُرَيْرَةَ (رَضِيَ ٱللَّهُ عَنْهُ): إِنَّ الشَّيْطَانَ يَفِرُّ عِنْدَ سَمَاعِ ٱلْأَذَانِ وَيَتَغَوَّطُ. *“যখন আজান দেয়া হয়, তখন শয়তান পালিয়ে যায় এবং বায়ু ত্যাগ করে।”* — [বুখারী, মুসলিম]

٢. حَدِيثُ جَابِرٍ (رَضِيَ ٱللَّهُ عَنْهُ): إِذَا سَمِعْتُمْ نَبَاحَ ٱلْكِلَابِ وَنَهِيقَ ٱلْحِمَارِ فِي ٱللَّيْلِ فَتَعَوَّذُوا بِٱللَّهِ فَإِنَّهُمْ يَرَوْنَ مَا لَا تَرَوْنَ. *“যখন তোমরা রাত্রে কুকুরের চিৎকার এবং গাধার ডাক শুনতে পাবে, তখন আল্লাহর কাছে অভিশপ্ত শয়তান হতে পানাহ্ চাইবে। কেননা, তারা এমন কিছু দেখতে পায় যা তোমরা দেখতে পাওনা।”* — [মিশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা-৩৭৩]

এখানে আল্লাহ তাআলা মানুষকে নির্দেশ দিয়েছেন এই ধরনের পরিস্থিতিতে শয়তানের প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তার কাছে পানাহ চাওয়ার। আজানের মাধ্যমে শয়তান দূরে চলে যায় এবং শয়তানের সেই বিরক্তি এবং প্রতিক্রিয়া কুকুরের আওয়াজে প্রকাশিত হয়।

এই হাদিসগুলো শুধু কুকুর বা গাধার ডাকের কারণ বোঝায় না, বরং আমাদের আল্লাহ তাআলার বিশেষ সুরক্ষা ও হেফাজতের বার্তাও পৌঁছে দেয়। আজানের সময় কুকুরের ডাক এবং আল্লাহর কাছে পানাহ চাওয়ার মাধ্যমে আমরা আত্মার শক্তি এবং বিশ্বাসের ভিত্তি তৈরি করতে পারি, যা আমাদেরকে প্রতিটি অবস্থায় সুরক্ষা প্রদান করে।