সন্তানকে যোগ্য মানুষ করতে দায়িত্বশীলতার শিক্ষা দিন

- Update Time : ০৮:৫৫:৪০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৪
- / ৯৪ Time View
৯০ এর দশকের যারা আমাদের মধ্যে আছেন, তাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, টিভিতে নাটক দেখার সময় বড়দের কথার গুরুত্ব কতটা ছিল। যখন বড়রা কথা বলতেন, তখন ছোটদের অন্য ঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হতো। রাস্তায় সিগারেট খাওয়ার সময় যদি মুরুব্বি কাউকে দেখা যেত, তবে সিগারেট লুকিয়ে ফেলা হতো। হয়তো সেই মুরুব্বিও সিগারেট খেতেন, কিন্তু এটি সভ্য মানুষের পরিচয় প্রদানের একটি নিদর্শন ছিল।
বাসায় যদি মাছ-মাংস রান্না হতো, মা-চাচীরা সবসময় মাছের মাথাটা বাবার জন্য তুলে রাখতেন। এতে বোঝা যেত, তিনি পরিবারের প্রধান, এবং তাকে সম্মান দেখাতে হবে। তার সামনে কখনো উচ্চস্বরে কথা বলা হতো না। ঘরের প্রধানের সিদ্ধান্ত যদি পছন্দ না হতো, তবে তার সঙ্গে উচ্চস্বরে কথা বলার সাহস কেউই পেত না।
দাদা-দাদী, নানা-নানি এবং পরিবারের বড়দের প্রতি শ্রদ্ধার শিক্ষাও দেওয়া হতো। মা অথবা বড় বোন বলতেন, সিনিয়ররা জুনিয়রদের চেয়ে অধিক শ্রদ্ধা পাওয়ার অধিকার রাখেন। যদিও বাসায় সাহায্যকারী কর্মী ছিল, তবুও খুব অল্প বয়স থেকেই আমরা নিজেদের কাপড় পরিষ্কার করা, পড়ার টেবিল গুছানো এবং ছোট ভাই-বোনদের দেখাশোনা শিখে নিতাম। এইসব অভ্যাস থেকেই আমাদের মধ্যে কাজের প্রতি শ্রদ্ধা এবং দায়িত্ববোধ গড়ে উঠত, এবং আমরা টেরও পেতাম না কখন এসব শিক্ষা আমাদের জীবনের অঙ্গ হয়ে গেছে।
এইভাবে, একদম সাধারণ কাজগুলোই আমাদের সন্তানদের মধ্যে দায়িত্বশীলতার ভিত্তি তৈরি করতে সাহায্য করবে। তাদের শেখানো উচিত যে, পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের প্রতি শ্রদ্ধা ও দায়িত্ববোধ থাকা একটি সভ্য সমাজের অন্যতম স্তম্ভ।
বর্তমানে: সময় বদলেছে, নাকি আমরা?
আজকের পরিস্থিতি, সময়ের পরিবর্তনের আলোচনা চলতেই থাকে। কিন্তু কি আসলেই সময় বদলেছে? না, সময় এবং দিনগুলো ঠিক আছে। পরিবর্তন এসেছে আমাদের মানসিকতা ও আচরণে। আমাদের কৃতকর্মই আজ আমাদের একটি অসুস্থ পরিবেশে নিয়ে এসেছে
বর্তমান সময়ের পিতামাতাকে যদি প্রশ্ন করা হয়, “আপনার পরিবারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য কে?” তারা এক বাক্যে উত্তর দেবে—তাদের সন্তান। সন্তানের মূল্য এখন সোনার টুকরা, হীরার টুকরা, কিংবা প্লাটিনামের টুকরা হিসেবে দেখা হয়। ধারণা এমন যে, পরিবার মানেই বাবা-মা, যারা অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ, আর সন্তানই একমাত্র মূল বিষয়। অথচ, একটি পরিবার গঠনের মূল কথা হলো সবাই মিলে কাজ করা, যেখানে প্রত্যেকের গুরুত্ব সমান।
যদি জানতে চাও, কেন শিশুরা এত গুরুত্বপূর্ণ? তারা কী এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছে যে তাদের এত প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে? অধিকাংশ সময়ই কেউ সঠিক উত্তর দিতে পারবেনা। এইভাবে, আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যোগ্যভাবে গড়ে তুলতে ব্যর্থ হচ্ছি এবং কোনও যোগ্যতা অর্জন ছাড়াই সন্তানদেরকে পরিবারের প্রথম শ্রেণীর সদস্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছি, যা আমাদের, পরিবার এবং সমাজের জন্য ক্ষতিকর।
এই বিশাল ক্ষতির প্রতিফলন আমরা এখন সমাজে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। এক অফিসে যদি সিনিয়রের তুলনায় জুনিয়রদের বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়, তাহলে সেই অফিসের অবস্থা সহজেই অনুমেয়। কথায় আছে, “বারো গাড়ি আর্মি আর তেরো গাড়ি মেজর,” অর্থাৎ সেনা জেনারেলের চেয়ে তার অধীনস্থ সৈন্যরা বেশি গুরুত্ব পেলে, সেই সেনাবাহিনী দিয়ে যুদ্ধ হেরে যাওয়াই স্বাভাবিক।
এভাবেই, আমাদের বর্তমান সমাজের কাঠামোও বিপরীত দিকে চলছে। আমাদের উচিত নিজেদের ফিরিয়ে দেখা এবং নতুন প্রজন্মকে সঠিক পথে গড়ে তোলার দায়িত্ব গ্রহণ করা।
সন্তান: পরিবার ও সমাজের অঙ্গ
একজন সন্তান কেবল তার পিতামাতার নয়; সে আসলে পুরো সমাজের। সমাজের প্রতিটি সদস্যই তাকে বড় করতে সহায়তা করে। তার ভাষা, আচরণ, গালি এবং বিবেচনা—সবকিছুই সে সমাজ থেকে নিজের অজান্তেই শিখে নেয়।
যদি আমাদের সন্তানরা এই ধারণা নিয়ে বড় হয় যে তারা পরিবারের প্রথম শ্রেণীর সদস্য এবং তাদের সুবিধা দেখার জন্যই তাদের বাবা-মাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাহলে তারা অন্য সদস্যদের গুরুত্বের দিক থেকে তেমন কিছু ভাববে না। যখন তারা দেখে যে তারা কোন যোগ্যতা অর্জন ছাড়াই পরিবারের প্রথম শ্রেণীর সদস্য, তখন তাদের মধ্যে আত্মকেন্দ্রিকতার উদ্ভব ঘটে। তারা যোগ্যতা অর্জনের প্রয়োজন অনুভব করবে না এবং পরিবার ও সমাজের বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রতি তাদের ব্যবহার কিভাবে হতে হবে, সে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে।
বর্তমানে অনেক সময় শোনা যায়, সন্তানরা মা-বাবার সঙ্গে জেদ করে এবং স্কুল শেষ না হতেই দামি বাইক, মোবাইল ফোন অথবা ল্যাপটপের জন্য চাপ সৃষ্টি করে। যদি তাদের এসব জিনিস না দেওয়া হয়, তাহলে তারা অনেক সময় আত্মহত্যার মত ভয়াবহ সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কিন্তু একটু গভীরভাবে ভাবলে দেখা যায়, তারা এরকম আচরণ করছে কারণ তারা বড় হচ্ছে এই ধারণা নিয়ে যে তাদের সুবিধা দেওয়া তাদের বাবা-মার দায়িত্ব। তাদের দায়িত্ব পালন করাটা তাদের সমস্যা—এটাই তাদের ভাবনা।
আজকাল বাবা-মায়েরা আর চান না যে তাদের সন্তান একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হোক। তারা কখনো সন্তানদের তাদের সামাজিক অবস্থান সম্পর্কে সচেতন করে না এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে কিছু বলেন না। বরং সন্তানকে বলা হয়, “তোমাকে বিসিএস ক্যাডার, ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে।”
এভাবে, সন্তানদের ভবিষ্যৎ গঠন করার এই প্রক্রিয়া আমাদের সমাজে একটি বড় পরিবর্তনের প্রয়োজন। আমাদের উচিত সন্তানদের দায়িত্বশীলতা, সামাজিক সংবেদনশীলতা এবং পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের শিক্ষা দেয়া। সেই সঙ্গে, আমাদের উচিত সন্তানদেরকে শেখানো যে তারা শুধুমাত্র পরিবারের সদস্য নয়, বরং সমাজেরও একজন গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
সন্তানকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব
কতজন বাবা-মা আছেন যারা তাদের সন্তানদের বলেন, “তোমরা ভালো মানুষ হও”? পরিবারের মধ্যে দায়িত্ববোধহীনতা এবং সামাজিক সম্পর্কহীনতার কারণে এই সন্তানরা কীভাবে পরিবার ও সমাজকে শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে উজ্জ্বল করবে? তারা বরং যে কোনো সময় সুবিধাজনক অবস্থানে নিজেদের নিয়ে অহংকার করবে।
এদের মধ্যে লজ্জাবোধ এবং অহংকারের মধ্যে পার্থক্য করার ক্ষমতা নেই। একজন বাবা-মার প্রাথমিক দায়িত্ব হলো তাদের সন্তানকে একজন সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। এই কাজটি শুধুমাত্র বড় চাকুরিজীবি বা ব্যবসায়ী তৈরি করার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। একজন সন্তানকে দায়িত্বশীল, বিবেকবান এবং সহানুভূতিশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব প্রতিটি বাবা-মা এবং সমাজের সকল সদস্যের।
সন্তানদেরকে শেখাতে হবে যে সমাজে তাদের ভূমিকা কী এবং কিভাবে তারা অন্যদের প্রতি সদয় এবং সহযোগিতাপূর্ণ হতে পারে। সামাজিক দায়িত্ববোধ এবং মানবিক গুণাবলীর বিকাশই একজন সন্তানের জীবনকে সার্থক ও অর্থপূর্ণ করে। এজন্য প্রয়োজন সঠিক শিক্ষার পরিবেশ, যেখানে তারা মূল্যবোধ এবং নৈতিকতা সম্পর্কে ধারণা পাবে।
এটি কেবল পরিবারেই নয়, বরং সমাজের প্রতিটি স্তরে এটি নিশ্চিত করা আমাদের কর্তব্য। তবেই আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম সত্যিকার অর্থেই ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে।
Please Share This Post in Your Social Media

সন্তানকে যোগ্য মানুষ করতে দায়িত্বশীলতার শিক্ষা দিন

৯০ এর দশকের যারা আমাদের মধ্যে আছেন, তাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, টিভিতে নাটক দেখার সময় বড়দের কথার গুরুত্ব কতটা ছিল। যখন বড়রা কথা বলতেন, তখন ছোটদের অন্য ঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হতো। রাস্তায় সিগারেট খাওয়ার সময় যদি মুরুব্বি কাউকে দেখা যেত, তবে সিগারেট লুকিয়ে ফেলা হতো। হয়তো সেই মুরুব্বিও সিগারেট খেতেন, কিন্তু এটি সভ্য মানুষের পরিচয় প্রদানের একটি নিদর্শন ছিল।
বাসায় যদি মাছ-মাংস রান্না হতো, মা-চাচীরা সবসময় মাছের মাথাটা বাবার জন্য তুলে রাখতেন। এতে বোঝা যেত, তিনি পরিবারের প্রধান, এবং তাকে সম্মান দেখাতে হবে। তার সামনে কখনো উচ্চস্বরে কথা বলা হতো না। ঘরের প্রধানের সিদ্ধান্ত যদি পছন্দ না হতো, তবে তার সঙ্গে উচ্চস্বরে কথা বলার সাহস কেউই পেত না।
দাদা-দাদী, নানা-নানি এবং পরিবারের বড়দের প্রতি শ্রদ্ধার শিক্ষাও দেওয়া হতো। মা অথবা বড় বোন বলতেন, সিনিয়ররা জুনিয়রদের চেয়ে অধিক শ্রদ্ধা পাওয়ার অধিকার রাখেন। যদিও বাসায় সাহায্যকারী কর্মী ছিল, তবুও খুব অল্প বয়স থেকেই আমরা নিজেদের কাপড় পরিষ্কার করা, পড়ার টেবিল গুছানো এবং ছোট ভাই-বোনদের দেখাশোনা শিখে নিতাম। এইসব অভ্যাস থেকেই আমাদের মধ্যে কাজের প্রতি শ্রদ্ধা এবং দায়িত্ববোধ গড়ে উঠত, এবং আমরা টেরও পেতাম না কখন এসব শিক্ষা আমাদের জীবনের অঙ্গ হয়ে গেছে।
এইভাবে, একদম সাধারণ কাজগুলোই আমাদের সন্তানদের মধ্যে দায়িত্বশীলতার ভিত্তি তৈরি করতে সাহায্য করবে। তাদের শেখানো উচিত যে, পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের প্রতি শ্রদ্ধা ও দায়িত্ববোধ থাকা একটি সভ্য সমাজের অন্যতম স্তম্ভ।
বর্তমানে: সময় বদলেছে, নাকি আমরা?
আজকের পরিস্থিতি, সময়ের পরিবর্তনের আলোচনা চলতেই থাকে। কিন্তু কি আসলেই সময় বদলেছে? না, সময় এবং দিনগুলো ঠিক আছে। পরিবর্তন এসেছে আমাদের মানসিকতা ও আচরণে। আমাদের কৃতকর্মই আজ আমাদের একটি অসুস্থ পরিবেশে নিয়ে এসেছে
বর্তমান সময়ের পিতামাতাকে যদি প্রশ্ন করা হয়, “আপনার পরিবারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য কে?” তারা এক বাক্যে উত্তর দেবে—তাদের সন্তান। সন্তানের মূল্য এখন সোনার টুকরা, হীরার টুকরা, কিংবা প্লাটিনামের টুকরা হিসেবে দেখা হয়। ধারণা এমন যে, পরিবার মানেই বাবা-মা, যারা অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ, আর সন্তানই একমাত্র মূল বিষয়। অথচ, একটি পরিবার গঠনের মূল কথা হলো সবাই মিলে কাজ করা, যেখানে প্রত্যেকের গুরুত্ব সমান।
যদি জানতে চাও, কেন শিশুরা এত গুরুত্বপূর্ণ? তারা কী এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছে যে তাদের এত প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে? অধিকাংশ সময়ই কেউ সঠিক উত্তর দিতে পারবেনা। এইভাবে, আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যোগ্যভাবে গড়ে তুলতে ব্যর্থ হচ্ছি এবং কোনও যোগ্যতা অর্জন ছাড়াই সন্তানদেরকে পরিবারের প্রথম শ্রেণীর সদস্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছি, যা আমাদের, পরিবার এবং সমাজের জন্য ক্ষতিকর।
এই বিশাল ক্ষতির প্রতিফলন আমরা এখন সমাজে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। এক অফিসে যদি সিনিয়রের তুলনায় জুনিয়রদের বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়, তাহলে সেই অফিসের অবস্থা সহজেই অনুমেয়। কথায় আছে, “বারো গাড়ি আর্মি আর তেরো গাড়ি মেজর,” অর্থাৎ সেনা জেনারেলের চেয়ে তার অধীনস্থ সৈন্যরা বেশি গুরুত্ব পেলে, সেই সেনাবাহিনী দিয়ে যুদ্ধ হেরে যাওয়াই স্বাভাবিক।
এভাবেই, আমাদের বর্তমান সমাজের কাঠামোও বিপরীত দিকে চলছে। আমাদের উচিত নিজেদের ফিরিয়ে দেখা এবং নতুন প্রজন্মকে সঠিক পথে গড়ে তোলার দায়িত্ব গ্রহণ করা।
সন্তান: পরিবার ও সমাজের অঙ্গ
একজন সন্তান কেবল তার পিতামাতার নয়; সে আসলে পুরো সমাজের। সমাজের প্রতিটি সদস্যই তাকে বড় করতে সহায়তা করে। তার ভাষা, আচরণ, গালি এবং বিবেচনা—সবকিছুই সে সমাজ থেকে নিজের অজান্তেই শিখে নেয়।
যদি আমাদের সন্তানরা এই ধারণা নিয়ে বড় হয় যে তারা পরিবারের প্রথম শ্রেণীর সদস্য এবং তাদের সুবিধা দেখার জন্যই তাদের বাবা-মাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাহলে তারা অন্য সদস্যদের গুরুত্বের দিক থেকে তেমন কিছু ভাববে না। যখন তারা দেখে যে তারা কোন যোগ্যতা অর্জন ছাড়াই পরিবারের প্রথম শ্রেণীর সদস্য, তখন তাদের মধ্যে আত্মকেন্দ্রিকতার উদ্ভব ঘটে। তারা যোগ্যতা অর্জনের প্রয়োজন অনুভব করবে না এবং পরিবার ও সমাজের বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রতি তাদের ব্যবহার কিভাবে হতে হবে, সে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে।
বর্তমানে অনেক সময় শোনা যায়, সন্তানরা মা-বাবার সঙ্গে জেদ করে এবং স্কুল শেষ না হতেই দামি বাইক, মোবাইল ফোন অথবা ল্যাপটপের জন্য চাপ সৃষ্টি করে। যদি তাদের এসব জিনিস না দেওয়া হয়, তাহলে তারা অনেক সময় আত্মহত্যার মত ভয়াবহ সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কিন্তু একটু গভীরভাবে ভাবলে দেখা যায়, তারা এরকম আচরণ করছে কারণ তারা বড় হচ্ছে এই ধারণা নিয়ে যে তাদের সুবিধা দেওয়া তাদের বাবা-মার দায়িত্ব। তাদের দায়িত্ব পালন করাটা তাদের সমস্যা—এটাই তাদের ভাবনা।
আজকাল বাবা-মায়েরা আর চান না যে তাদের সন্তান একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হোক। তারা কখনো সন্তানদের তাদের সামাজিক অবস্থান সম্পর্কে সচেতন করে না এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে কিছু বলেন না। বরং সন্তানকে বলা হয়, “তোমাকে বিসিএস ক্যাডার, ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে।”
এভাবে, সন্তানদের ভবিষ্যৎ গঠন করার এই প্রক্রিয়া আমাদের সমাজে একটি বড় পরিবর্তনের প্রয়োজন। আমাদের উচিত সন্তানদের দায়িত্বশীলতা, সামাজিক সংবেদনশীলতা এবং পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের শিক্ষা দেয়া। সেই সঙ্গে, আমাদের উচিত সন্তানদেরকে শেখানো যে তারা শুধুমাত্র পরিবারের সদস্য নয়, বরং সমাজেরও একজন গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
সন্তানকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব
কতজন বাবা-মা আছেন যারা তাদের সন্তানদের বলেন, “তোমরা ভালো মানুষ হও”? পরিবারের মধ্যে দায়িত্ববোধহীনতা এবং সামাজিক সম্পর্কহীনতার কারণে এই সন্তানরা কীভাবে পরিবার ও সমাজকে শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে উজ্জ্বল করবে? তারা বরং যে কোনো সময় সুবিধাজনক অবস্থানে নিজেদের নিয়ে অহংকার করবে।
এদের মধ্যে লজ্জাবোধ এবং অহংকারের মধ্যে পার্থক্য করার ক্ষমতা নেই। একজন বাবা-মার প্রাথমিক দায়িত্ব হলো তাদের সন্তানকে একজন সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। এই কাজটি শুধুমাত্র বড় চাকুরিজীবি বা ব্যবসায়ী তৈরি করার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। একজন সন্তানকে দায়িত্বশীল, বিবেকবান এবং সহানুভূতিশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব প্রতিটি বাবা-মা এবং সমাজের সকল সদস্যের।
সন্তানদেরকে শেখাতে হবে যে সমাজে তাদের ভূমিকা কী এবং কিভাবে তারা অন্যদের প্রতি সদয় এবং সহযোগিতাপূর্ণ হতে পারে। সামাজিক দায়িত্ববোধ এবং মানবিক গুণাবলীর বিকাশই একজন সন্তানের জীবনকে সার্থক ও অর্থপূর্ণ করে। এজন্য প্রয়োজন সঠিক শিক্ষার পরিবেশ, যেখানে তারা মূল্যবোধ এবং নৈতিকতা সম্পর্কে ধারণা পাবে।
এটি কেবল পরিবারেই নয়, বরং সমাজের প্রতিটি স্তরে এটি নিশ্চিত করা আমাদের কর্তব্য। তবেই আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম সত্যিকার অর্থেই ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে।