সময়: বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা যুক্তসহ জামায়াতের নানা প্রস্তাবনা

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ০৭:০৮:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ অক্টোবর ২০২৪
  • / ১৬৯ Time View

JAMAT E ISLAMI

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দেশের সুষ্ঠু নির্বাচন এবং রাষ্ট্রের সার্বিক সংস্কারের জন্য ১০টি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা উত্থাপন করেছে। বিশেষত, সংবিধানে স্থায়ীভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা যুক্ত করার দাবি প্রধান প্রস্তাবনাগুলোর একটি। দলটি মনে করে, নির্বাচনী ব্যবস্থার পুনর্গঠন ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার করা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে, যাতে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা যায় এবং সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়।

 

 সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাবনা উপস্থাপন

বুধবার (০৯ অক্টোবর) রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের দলের ১০টি প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দলের আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ অন্যান্য শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। সম্মেলনে দলটি রাষ্ট্র সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে এবং উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের আহ্বান জানায়।

 

 নির্বাচন বিচারবিভাগ সংস্কারের প্রস্তাবনা

জামায়াত মনে করে, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন এবং বিচারবিভাগের মধ্যে ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন। তাদের প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে রয়েছে:

সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার যুক্ত করা: দলটি দাবি করে, নির্বাচনের সময়কালীন একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত না হলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা সংবিধানে স্থায়ীভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হলে তা জনগণের আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়াবে।

আইন কমিশন গঠন: সুপ্রিম কোর্টের অধীনে একটি স্বাধীন আইন কমিশন গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যাতে দেশের আইন প্রণয়ন ও কার্যক্রম আরও স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হয়।

হাইকোর্টের বেঞ্চ গঠন: বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্টের বেঞ্চ গঠন করে বিচার বিভাগের সক্ষমতা ও কার্যকারিতা বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যাতে মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি সম্ভব হয়।

– সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল: সাইবার নিরাপত্তা আইনের অযৌক্তিকতা তুলে ধরে এটি বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে।

 

 সরকারি চাকরিজীবী পুলিশ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা

সরকারি চাকরিজীবী ও পুলিশ প্রশাসনের ক্ষেত্রে দলটি একাধিক সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে:

সরকারি চাকরিজীবীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ: কোনো সরকারি কর্মকর্তা অবসরের তিন বছরের আগে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না—এই বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন: পুলিশ প্রশাসনকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যেখানে ধর্মীয় শিক্ষারও সমন্বয় করা হবে।

র‍্যাব সংস্কার: জামায়াতের প্রস্তাবনা অনুযায়ী, র‍্যাবের বিরুদ্ধে আস্থাহীনতা কাটানোর জন্য বাহিনীতে ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন। বিশেষ করে, যারা র‍্যাবের পূর্বের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাদের বাহিনীতে না রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

রিমান্ডের সময় পরিবার উপস্থিতি: জামায়াতের মতে, কোনো ব্যক্তিকে রিমান্ডে নেওয়ার সময় পরিবারের একজন প্রতিনিধি উপস্থিত থাকা নিশ্চিত করা জরুরি, যাতে মানবাধিকার লঙ্ঘন না হয়।

 

 শিক্ষা সংস্কৃতি সম্পর্কিত প্রস্তাবনা

শিক্ষা এবং সংস্কৃতির ক্ষেত্রে দলটি বেশ কিছু সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে:

শিক্ষা পাঠ্যক্রমে সংস্কার: দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় মহানবী (সা.)-এর জীবনী এবং ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। দলটি মনে করে, শিক্ষার্থীদের দেশপ্রেম এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ শিক্ষা দেওয়া অপরিহার্য।

সংস্কৃতির উন্নয়ন: জামায়াত প্রাণীর মূর্তি নির্মাণের বিরুদ্ধে এবং দেশীয় সংস্কৃতির বিকাশে আরও মনোযোগী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। তাদের মতে, দেশীয় সংস্কৃতির বিকাশই দেশের ঐতিহ্য এবং মূল্যবোধ ধরে রাখার অন্যতম উপায়।

 

 পররাষ্ট্রনীতি অর্থনৈতিক সম্পর্ক

জামায়াতের প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে রয়েছে পররাষ্ট্রনীতিতে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের আরও দৃঢ় অবস্থান নিশ্চিত করা:

বিগত চুক্তি রিভিউ কমিশন: বিগত সরকারের আমলে সম্পাদিত আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলোর সমালোচনা করে জামায়াত একটি রিভিউ কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেছে, যাতে চুক্তিগুলোর যথার্থতা যাচাই করা যায়।

বাংলাদেশকে আসিয়ানের সদস্যভুক্ত করা: অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী এবং বৈশ্বিক অঙ্গনে গুরুত্ব বাড়ানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশকে আসিয়ানের সদস্যভুক্ত করার প্রস্তাব করেছে দলটি।

জামায়াতে ইসলামী এসব প্রস্তাবনার মাধ্যমে একটি সার্বিক সংস্কারের পরিকল্পনা উত্থাপন করেছে, যা দেশের উন্নয়নে এবং জনগণের আস্থায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে দলটির আশা।

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা যুক্তসহ জামায়াতের নানা প্রস্তাবনা

Update Time : ০৭:০৮:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ অক্টোবর ২০২৪

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দেশের সুষ্ঠু নির্বাচন এবং রাষ্ট্রের সার্বিক সংস্কারের জন্য ১০টি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা উত্থাপন করেছে। বিশেষত, সংবিধানে স্থায়ীভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা যুক্ত করার দাবি প্রধান প্রস্তাবনাগুলোর একটি। দলটি মনে করে, নির্বাচনী ব্যবস্থার পুনর্গঠন ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার করা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে, যাতে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা যায় এবং সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়।

 

 সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাবনা উপস্থাপন

বুধবার (০৯ অক্টোবর) রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের দলের ১০টি প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দলের আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ অন্যান্য শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। সম্মেলনে দলটি রাষ্ট্র সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে এবং উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের আহ্বান জানায়।

 

 নির্বাচন বিচারবিভাগ সংস্কারের প্রস্তাবনা

জামায়াত মনে করে, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন এবং বিচারবিভাগের মধ্যে ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন। তাদের প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে রয়েছে:

সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার যুক্ত করা: দলটি দাবি করে, নির্বাচনের সময়কালীন একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত না হলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা সংবিধানে স্থায়ীভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হলে তা জনগণের আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়াবে।

আইন কমিশন গঠন: সুপ্রিম কোর্টের অধীনে একটি স্বাধীন আইন কমিশন গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যাতে দেশের আইন প্রণয়ন ও কার্যক্রম আরও স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হয়।

হাইকোর্টের বেঞ্চ গঠন: বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্টের বেঞ্চ গঠন করে বিচার বিভাগের সক্ষমতা ও কার্যকারিতা বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যাতে মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি সম্ভব হয়।

– সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল: সাইবার নিরাপত্তা আইনের অযৌক্তিকতা তুলে ধরে এটি বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে।

 

 সরকারি চাকরিজীবী পুলিশ সংক্রান্ত

প্রস্তাবনা

সরকারি চাকরিজীবী ও পুলিশ প্রশাসনের ক্ষেত্রে দলটি একাধিক সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে:

সরকারি চাকরিজীবীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ: কোনো সরকারি কর্মকর্তা অবসরের তিন বছরের আগে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না—এই বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন: পুলিশ প্রশাসনকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যেখানে ধর্মীয় শিক্ষারও সমন্বয় করা হবে।

র‍্যাব সংস্কার: জামায়াতের প্রস্তাবনা অনুযায়ী, র‍্যাবের বিরুদ্ধে আস্থাহীনতা কাটানোর জন্য বাহিনীতে ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন। বিশেষ করে, যারা র‍্যাবের পূর্বের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাদের বাহিনীতে না রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

রিমান্ডের সময় পরিবার উপস্থিতি: জামায়াতের মতে, কোনো ব্যক্তিকে রিমান্ডে নেওয়ার সময় পরিবারের একজন প্রতিনিধি উপস্থিত থাকা নিশ্চিত করা জরুরি, যাতে মানবাধিকার লঙ্ঘন না হয়।

 

 শিক্ষা সংস্কৃতি সম্পর্কিত প্রস্তাবনা

শিক্ষা এবং সংস্কৃতির ক্ষেত্রে দলটি বেশ কিছু সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে:

শিক্ষা পাঠ্যক্রমে সংস্কার: দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় মহানবী (সা.)-এর জীবনী এবং ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। দলটি মনে করে, শিক্ষার্থীদের দেশপ্রেম এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ শিক্ষা দেওয়া অপরিহার্য।

সংস্কৃতির উন্নয়ন: জামায়াত প্রাণীর মূর্তি নির্মাণের বিরুদ্ধে এবং দেশীয় সংস্কৃতির বিকাশে আরও মনোযোগী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। তাদের মতে, দেশীয় সংস্কৃতির বিকাশই দেশের ঐতিহ্য এবং মূল্যবোধ ধরে রাখার অন্যতম উপায়।

 

 পররাষ্ট্রনীতি অর্থনৈতিক সম্পর্ক

জামায়াতের প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে রয়েছে পররাষ্ট্রনীতিতে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের আরও দৃঢ় অবস্থান নিশ্চিত করা:

বিগত চুক্তি রিভিউ কমিশন: বিগত সরকারের আমলে সম্পাদিত আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলোর সমালোচনা করে জামায়াত একটি রিভিউ কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেছে, যাতে চুক্তিগুলোর যথার্থতা যাচাই করা যায়।

বাংলাদেশকে আসিয়ানের সদস্যভুক্ত করা: অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী এবং বৈশ্বিক অঙ্গনে গুরুত্ব বাড়ানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশকে আসিয়ানের সদস্যভুক্ত করার প্রস্তাব করেছে দলটি।

জামায়াতে ইসলামী এসব প্রস্তাবনার মাধ্যমে একটি সার্বিক সংস্কারের পরিকল্পনা উত্থাপন করেছে, যা দেশের উন্নয়নে এবং জনগণের আস্থায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে দলটির আশা।