সময়: বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ১০ দেশ

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ১২:০৫:১০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ অক্টোবর ২০২৪
  • / ১২৯ Time View

LUXEMBURG

লুক্সেমবার্গ ইউরোপের দেশ। মাথাপিছু জিডিপি (পিপিপি) ১ লাখ ৪৩ হাজার ৭৪০ মার্কিন ডলারফাইল ছবি: রয়টার্স

 

বিশ্বের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও উন্নয়নের নিরিখে ধনী দেশগুলোর স্থান নির্ধারণের একাধিক উপায় রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো মাথাপিছু জিডিপি, বিশেষত ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে সমন্বিত জিডিপি (PPP)। মাথাপিছু জিডিপি একটি দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক স্বাস্থ্য, নাগরিকদের জীবনের মান, এবং সরকারের সক্ষমতা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ধারণা প্রদান করে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ১০টি দেশ তালিকাভুক্ত হয়েছে। এই তালিকায় বিভিন্ন মহাদেশের দেশগুলো অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যা তাদের অর্থনৈতিক কাঠামোর শক্তিশালী অবস্থান নির্দেশ করে। আসুন, দেখে নেওয়া যাক এই দেশের বিস্তারিত তথ্য।

১. লুক্সেমবার্গ 

ইউরোপের একটি ক্ষুদ্র দেশ লুক্সেমবার্গ বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ হিসেবে তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করেছে। এই দেশের মাথাপিছু জিডিপি (পিপিপি) ১ লাখ ৪৩ হাজার ৭৪০ মার্কিন ডলার, যা এর শক্তিশালী অর্থনীতির সূচক। লুক্সেমবার্গের অর্থনীতি মূলত উচ্চমানের ব্যাংকিং, বাণিজ্য, এবং শিল্প খাতের ওপর নির্ভরশীল। এখানে বিশ্বের অনেক বড় কোম্পানির সদর দপ্তর অবস্থিত, যা দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের অবদান রাখছে।

২. ম্যাকাও 

চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল ম্যাকাও মূলত ক্যাসিনো ও পর্যটনের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ। এখানে মাথাপিছু জিডিপি (পিপিপি) ১ লাখ ৩৪ হাজার ১৪০ মার্কিন ডলার। পর্যটন খাত, বিশেষ করে ক্যাসিনো শিল্প, ম্যাকাউকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। শহরটি এশিয়ার গেমিং রাজধানী হিসেবেও পরিচিত।

৩. আয়ারল্যান্ড 

ইউরোপের আয়ারল্যান্ড তার প্রযুক্তি, ঔষধ, এবং আর্থিক সেবার মাধ্যমে একটি শক্তিশালী অর্থনীতি গড়ে তুলেছে। এর মাথাপিছু জিডিপি (পিপিপি) ১ লাখ ৩৩ হাজার ৯০০ মার্কিন ডলার। আয়ারল্যান্ডের সরকার তার কর নীতিতে উদারতা দেখানোর কারণে অনেক আন্তর্জাতিক কোম্পানি এখানে তাদের সদর দপ্তর স্থাপন করেছে।

৪. সিঙ্গাপুর 

এশিয়ার বাণিজ্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্র সিঙ্গাপুরও বিশ্বের ধনী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে। মাথাপিছু জিডিপি (পিপিপি) ১ লাখ ৩৩ হাজার ৭৪০ মার্কিন ডলার। সিঙ্গাপুর তার উদ্ভাবনী প্রযুক্তি, শক্তিশালী ব্যাংকিং ব্যবস্থা, এবং বাণিজ্যিক খাতের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত। দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ এবং ব্যবসায়িক সুবিধাগুলো বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয়।

৫. কাতার 

মধ্যপ্রাচ্যের ধনী দেশ কাতার মূলত তেল ও গ্যাস রপ্তানির মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ। এর মাথাপিছু জিডিপি (পিপিপি) ১ লাখ ১২ হাজার ২৮০ মার্কিন ডলার। কাতার সরকারের বিনিয়োগে আধুনিক অবকাঠামো গড়ে উঠেছে, যা দেশের অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করেছে।

৬. সংযুক্ত আরব আমিরাত 

সংযুক্ত আরব আমিরাত, বিশেষ করে দুবাই ও আবুধাবি, তেল শিল্পের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ। মাথাপিছু জিডিপি (পিপিপি) ৯৬ হাজার ৮৫০ মার্কিন ডলার। দেশের বৈচিত্র্যময় অর্থনীতির কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তি ব্যবহার বেড়েছে।

৭. সুইজারল্যান্ড 

সুইজারল্যান্ড একটি উন্নত দেশ হিসেবে পরিচিত, যার ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের জন্য বিশ্বজুড়ে খ্যাতি রয়েছে। মাথাপিছু জিডিপি (পিপিপি) ৯১ হাজার ৯৩০ মার্কিন ডলার। সুইজারল্যান্ডের উচ্চমানের জীবনযাপন এবং শিক্ষার মান আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত।

৮. সান মারিনো 

সান মারিনো একটি ক্ষুদ্র ইউরোপীয় দেশ, যা বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন দেশ। মাথাপিছু জিডিপি (পিপিপি) ৮৬ হাজার ৯৯০ মার্কিন ডলার। দেশের অর্থনীতি মূলত পর্যটন এবং শিল্প খাতের উপর নির্ভরশীল।

৯. যুক্তরাষ্ট্র 

যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ, যেখানে মাথাপিছু জিডিপি (পিপিপি) ৮৫ হাজার ৩৭০ মার্কিন ডলার। প্রযুক্তি, উৎপাদন, এবং আর্থিক খাতে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

১০. সংযুক্ত আরব আমিরাত

নরওয়ে প্রাকৃতিক সম্পদ, বিশেষ করে তেল ও গ্যাস উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। এর মাথাপিছু জিডিপি (পিপিপি) ৮২ হাজার ৮৩০ মার্কিন ডলার। নরওয়ের সরকার সামাজিক কল্যাণে বিনিয়োগ করে থাকে, যা নাগরিকদের উচ্চমানের জীবনযাপন নিশ্চিত করে।

এই তালিকা থেকে বোঝা যায়, মাথাপিছু জিডিপির ভিত্তিতে উন্নত দেশগুলো বেশিরভাগই ইউরোপ ও এশিয়ায় অবস্থিত। এসব দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোর শক্তি, বিদ্যমান সম্পদ এবং সঠিক নীতিমালা তাদের উন্নতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। তেলের ওপর নির্ভরশীলতা, উচ্চমানের প্রযুক্তি, এবং শক্তিশালী আর্থিক সেবা ক্ষেত্রগুলো বিশ্বের এসব ধনী দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি তৈরি করেছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ১০ দেশ

Update Time : ১২:০৫:১০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ অক্টোবর ২০২৪
লুক্সেমবার্গ ইউরোপের দেশ। মাথাপিছু জিডিপি (পিপিপি) ১ লাখ ৪৩ হাজার ৭৪০ মার্কিন ডলারফাইল ছবি: রয়টার্স

 

বিশ্বের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও উন্নয়নের নিরিখে ধনী দেশগুলোর স্থান নির্ধারণের একাধিক উপায় রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো মাথাপিছু জিডিপি, বিশেষত ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে সমন্বিত জিডিপি (PPP)। মাথাপিছু জিডিপি একটি দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক স্বাস্থ্য, নাগরিকদের জীবনের মান, এবং সরকারের সক্ষমতা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ধারণা প্রদান করে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ১০টি দেশ তালিকাভুক্ত হয়েছে। এই তালিকায় বিভিন্ন মহাদেশের দেশগুলো অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যা তাদের অর্থনৈতিক কাঠামোর শক্তিশালী অবস্থান নির্দেশ করে। আসুন, দেখে নেওয়া যাক এই দেশের বিস্তারিত তথ্য।

১. লুক্সেমবার্গ 

ইউরোপের একটি ক্ষুদ্র দেশ লুক্সেমবার্গ বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ হিসেবে তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করেছে। এই দেশের মাথাপিছু জিডিপি (পিপিপি) ১ লাখ ৪৩ হাজার ৭৪০ মার্কিন ডলার, যা এর শক্তিশালী অর্থনীতির সূচক। লুক্সেমবার্গের অর্থনীতি মূলত উচ্চমানের ব্যাংকিং, বাণিজ্য, এবং শিল্প খাতের ওপর নির্ভরশীল। এখানে বিশ্বের অনেক বড় কোম্পানির সদর দপ্তর অবস্থিত, যা দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের অবদান রাখছে।

২. ম্যাকাও 

চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল ম্যাকাও মূলত ক্যাসিনো ও পর্যটনের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ। এখানে মাথাপিছু জিডিপি (পিপিপি) ১ লাখ ৩৪ হাজার ১৪০ মার্কিন ডলার। পর্যটন খাত, বিশেষ করে ক্যাসিনো শিল্প, ম্যাকাউকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। শহরটি এশিয়ার গেমিং রাজধানী হিসেবেও পরিচিত।

৩. আয়ারল্যান্ড 

ইউরোপের আয়ারল্যান্ড তার প্রযুক্তি, ঔষধ, এবং আর্থিক সেবার মাধ্যমে একটি শক্তিশালী অর্থনীতি গড়ে তুলেছে। এর মাথাপিছু জিডিপি (পিপিপি) ১ লাখ ৩৩ হাজার ৯০০ মার্কিন ডলার। আয়ারল্যান্ডের সরকার তার কর নীতিতে উদারতা দেখানোর কারণে অনেক আন্তর্জাতিক কোম্পানি এখানে তাদের সদর দপ্তর স্থাপন করেছে।

৪. সিঙ্গাপুর 

এশিয়ার বাণিজ্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্র সিঙ্গাপুরও বিশ্বের ধনী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে। মাথাপিছু জিডিপি (পিপিপি) ১ লাখ ৩৩ হাজার ৭৪০ মার্কিন ডলার। সিঙ্গাপুর তার উদ্ভাবনী প্রযুক্তি, শক্তিশালী ব্যাংকিং ব্যবস্থা, এবং বাণিজ্যিক খাতের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত। দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ এবং ব্যবসায়িক সুবিধাগুলো বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয়।

৫. কাতার 

মধ্যপ্রাচ্যের ধনী দেশ কাতার মূলত তেল ও গ্যাস রপ্তানির মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ। এর মাথাপিছু জিডিপি (পিপিপি) ১ লাখ ১২ হাজার ২৮০ মার্কিন ডলার। কাতার সরকারের বিনিয়োগে আধুনিক অবকাঠামো গড়ে উঠেছে, যা দেশের অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করেছে।

৬. সংযুক্ত আরব আমিরাত 

সংযুক্ত আরব আমিরাত, বিশেষ করে দুবাই ও আবুধাবি, তেল শিল্পের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ। মাথাপিছু জিডিপি (পিপিপি) ৯৬ হাজার ৮৫০ মার্কিন ডলার। দেশের বৈচিত্র্যময় অর্থনীতির কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তি ব্যবহার বেড়েছে।

৭. সুইজারল্যান্ড 

সুইজারল্যান্ড একটি উন্নত দেশ হিসেবে পরিচিত, যার ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের জন্য বিশ্বজুড়ে খ্যাতি রয়েছে। মাথাপিছু জিডিপি (পিপিপি) ৯১ হাজার ৯৩০ মার্কিন ডলার। সুইজারল্যান্ডের উচ্চমানের জীবনযাপন এবং শিক্ষার মান আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত।

৮. সান মারিনো 

সান মারিনো একটি ক্ষুদ্র ইউরোপীয় দেশ, যা বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন দেশ। মাথাপিছু জিডিপি (পিপিপি) ৮৬ হাজার ৯৯০ মার্কিন ডলার। দেশের অর্থনীতি মূলত পর্যটন এবং শিল্প খাতের উপর নির্ভরশীল।

৯. যুক্তরাষ্ট্র 

যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ, যেখানে মাথাপিছু জিডিপি (পিপিপি) ৮৫ হাজার ৩৭০ মার্কিন ডলার। প্রযুক্তি, উৎপাদন, এবং আর্থিক খাতে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

১০. সংযুক্ত আরব আমিরাত

নরওয়ে প্রাকৃতিক সম্পদ, বিশেষ করে তেল ও গ্যাস উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। এর মাথাপিছু জিডিপি (পিপিপি) ৮২ হাজার ৮৩০ মার্কিন ডলার। নরওয়ের সরকার সামাজিক কল্যাণে বিনিয়োগ করে থাকে, যা নাগরিকদের উচ্চমানের জীবনযাপন নিশ্চিত করে।

এই তালিকা থেকে বোঝা যায়, মাথাপিছু জিডিপির ভিত্তিতে উন্নত দেশগুলো বেশিরভাগই ইউরোপ ও এশিয়ায় অবস্থিত। এসব দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোর শক্তি, বিদ্যমান সম্পদ এবং সঠিক নীতিমালা তাদের উন্নতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। তেলের ওপর নির্ভরশীলতা, উচ্চমানের প্রযুক্তি, এবং শক্তিশালী আর্থিক সেবা ক্ষেত্রগুলো বিশ্বের এসব ধনী দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি তৈরি করেছে।