সময়: বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষে কাজে ফেরা: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়

সাজেদা আক্তার
  • Update Time : ০৪:৫২:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর ২০২৪
  • / ১১৪ Time View

মাতকালিন

মাতৃত্বকালীন ছুটি প্রতিটি মায়ের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধুমাত্র সন্তানের যত্ন নেওয়ার সুযোগ নয়, মায়ের শারীরিক ও মানসিক পুনরুদ্ধারের জন্যও সময়। এই ছুটির সময়ে একজন মা যেমন সন্তানকে যত্ন করেন, তেমনি নিজেকে শারীরিকভাবে পুনরুজ্জীবিত করার জন্যও সময় পান। তবে, ছুটি শেষে কাজে ফেরা অনেক মা-ই চ্যালেঞ্জ হিসেবে অনুভব করেন। কাজের জগতে ফেরার পর পরিবারের দায়িত্ব পালন এবং কর্মক্ষেত্রে নিজের জায়গা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা মায়েদের জন্য বেশ কঠিন হতে পারে।

কিন্তু কিছু সহজ করণীয় এবং পরিকল্পনা নিয়ে এগোলে এই চ্যালেঞ্জগুলো সফলভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব।

 কাজে ফেরার চ্যালেঞ্জগুলো

 ১. নতুন রুটিনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া

মাতৃত্বের পর প্রতিদিনের জীবনে এক বিশাল পরিবর্তন আসে। সন্তানের সময়মত যত্ন নেওয়া, খাবার খাওয়ানো, ঘুমানোর সময় সবকিছুই মায়ের নতুন দিনের সঙ্গী হয়ে ওঠে। একই সময়ে অফিসের কাজের চাপ সামলানো এবং ঘরকন্নার দায়িত্ব নেওয়া অনেক মায়ের জন্য বেশ কঠিন হয়ে যায়। নতুন এই রুটিনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া প্রথম চ্যালেঞ্জ।

 ২. শারীরিক মানসিক চাপ

মাতৃত্বের পর মায়ের শরীর অনেক দুর্বল থাকে, ঘুমের অভাব এবং মানসিক চাপ এই সময়ে বৃদ্ধি পায়। আবার দীর্ঘ বিরতির পর কাজে ফেরা মানসিক চাপ বাড়াতে পারে। চাকরির প্রয়োজনীয়তা, অফিসের কাজ এবং সন্তানের প্রতি দায়িত্ব সবকিছু মিলিয়ে মা-দের ওপর শারীরিক ও মানসিক ধকল বেড়ে যায়।

 ৩. কাজের দক্ষতা ফিরে পাওয়া

দীর্ঘ মাতৃত্বকালীন ছুটি অনেক সময় কাজের দক্ষতা বা পেশাদারিত্বে প্রভাব ফেলতে পারে। চাকরি ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে পরিবর্তনগুলো ধরা পড়তে সময় লাগে এবং নতুন জ্ঞানের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে হয়। এজন্য কাজে পুনরায় ফিরতে অনেক মা-ই সমস্যার সম্মুখীন হন।

 ৪. আবেগপ্রবণতা এবং অপরাধবোধ

অনেক মা-ই কাজের জগতে ফিরে যাওয়ার পর সন্তানকে বাসায় রেখে যাওয়ার কারণে একধরনের আবেগপ্রবণতা ও অপরাধবোধে ভোগেন। তারা অনুভব করেন যে, সন্তানের প্রয়োজনের সময় তারা হয়তো যথাযথ ভাবে পাশে থাকতে পারছেন না। এই অপরাধবোধ অনেক সময় তাদের কাজের মনোযোগ নষ্ট করতে পারে।

 কীভাবে মোকাবিলা করবেন এই চ্যালেঞ্জগুলো?

 ১. পরিকল্পিতভাবে কাজ শুরু করা

কাজে ফেরার আগে পরিকল্পিতভাবে রুটিন তৈরি করা জরুরি। সন্তানের ঘুমের সময় এবং অফিসের কাজের সময়ের মধ্যে সমন্বয় করে একটি দৈনিক রুটিন গড়ে তুলতে হবে। পারিবারিক সহায়তা থাকলে কাজ ভাগ করে নেওয়াও সহায়ক হতে পারে।

 ২. সহযোগিতা নেওয়া

কাজ এবং সন্তানের যত্ন—এই দুই কাজ একা একা করার চেষ্টা না করাই ভালো। পরিবারের সদস্য, বন্ধুবান্ধব, বা একটি দায়িত্বশীল বেবিসিটার সাহায্য নিতে পারেন। আশেপাশের লোকদের সাহায্য নিলে কাজের ভার হালকা হবে এবং মায়ের ওপর চাপ কমবে।

 ৩. স্বাস্থ্য সচেতনতা বজায় রাখা

মায়ের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করা জরুরি। প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুমানো, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, এবং মানসিক প্রশান্তির জন্য মেডিটেশন বা হালকা ব্যায়াম করা উচিত। এই ধরনের স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুললে কাজে ফেরার পর চাপ কম অনুভব করবেন।

 ৪. কাজের দক্ষতা পুনরুদ্ধার করা

কাজে ফেরার আগে প্রযুক্তি, নীতিমালা বা নতুন পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা নিতে পারেন। চাকরির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আগাম ধারণা তৈরি করা এবং নিজের দক্ষতাকে পুনরায় জাগিয়ে তোলা গুরুত্বপূর্ণ। অফিসে ফিরে আসার আগে কাজের সঙ্গে মানিয়ে নিতে কিছু প্রস্তুতি নিয়ে নিলে কাজের চাপ কম অনুভব করবেন।

 ৫. কাজ এবং সন্তানের মধ্যে ভারসাম্য রাখা

সন্তানের যত্ন এবং কাজের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য রক্ষা করা সব মা-র জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যখন আপনি অফিসে থাকবেন, তখন কাজের প্রতি মনোযোগ দিন, এবং যখন বাসায় থাকবেন, সন্তানের প্রতি সময় দিন। এই দুটি কাজের মধ্যে সঠিক সমন্বয় থাকলে আপনি চাপমুক্ত থাকতে পারবেন।

 মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষে মানসিক সমর্থন

মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষে কাজে ফেরা একাধিক মানসিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার কারণ হতে পারে। সন্তানকে ঘরে রেখে বাইরে কাজ করতে যাওয়া, পরিবারের প্রত্যাশা এবং নিজের পেশাদারিত্ব বজায় রাখার চাপে অনেক মা মানসিকভাবে অসহায় বোধ করতে পারেন। এই সময়ে মানসিক সমর্থনের গুরুত্ব অপরিসীম। পারিবারিক, সামাজিক, এবং পেশাগত সহায়তা মায়ের মানসিক চাপ কমাতে পারে এবং তাকে তার নতুন জীবনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সাহায্য করতে পারে।

 পরিবারের সমর্থন

পরিবারের সদস্যদের সহানুভূতি এবং সাহায্য একজন মায়ের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সন্তানের যত্ন নেওয়া এবং গৃহস্থালির কাজ ভাগাভাগি করার মাধ্যমে মা তার কাজের দায়িত্ব সামলাতে পারবেন। সন্তানের জন্য বাবা, দাদা-দাদি বা অন্য কোনো পরিবারের সদস্যের সহযোগিতা থাকলে কাজ এবং ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা সহজ হবে। পরিবারের এই সহযোগিতা শুধু দৈনন্দিন কাজেই নয়, বরং মানসিক শান্তি প্রদানেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

 সহকর্মীদের সহযোগিতা

কাজে ফেরার সময় সহকর্মীদের সমর্থন একটি বড় উপাদান হতে পারে। দীর্ঘ বিরতির পর কাজে ফেরার সময় নতুন কাজের চাপ, নতুন নীতি বা প্রযুক্তির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা থাকলে, সহকর্মীরা তাদের সহানুভূতিশীল মনোভাব দিয়ে সহায়ক হতে পারেন। একজন সহকর্মীর সহানুভূতি এবং দায়িত্ব ভাগাভাগি করার প্রস্তাব একজন মায়ের জন্য চাপ কমাতে পারে এবং তার মানসিক স্বাস্থ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

 বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ

মাতৃত্বকালীন ছুটি থেকে কাজে ফেরার সময় অনেক মা-ই নিজেকে বিচ্ছিন্ন মনে করতে পারেন। বন্ধুদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা এবং তাদের সঙ্গে সময় কাটানো মায়ের মানসিক প্রশান্তির জন্য সহায়ক। বন্ধুদের সঙ্গে নিজেদের অভিজ্ঞতা, উদ্বেগ এবং মানসিক চাপ শেয়ার করা মায়ের মানসিক অবস্থাকে স্বাভাবিক রাখতে সহায়ক হতে পারে। বিশেষত, যেসব বন্ধু নিজেরাও একই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছেন, তাদের পরামর্শ এবং সমর্থন অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে।

 মানসিক চাপ মোকাবিলায় পেশাদার সহায়তা

যদি মানসিক চাপ অত্যন্ত বেশি হয়, তাহলে প্রয়োজনে কাউন্সেলিং বা মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। একজন থেরাপিস্ট বা কাউন্সেলর পেশাদার পরামর্শের মাধ্যমে মানসিক চাপ মোকাবিলায় সাহায্য করতে পারেন। এই ধরনের পেশাদার সহায়তা মায়েদের জন্য আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করতে এবং মানসিকভাবে সঠিক পথে পরিচালিত হতে সহায়ক হতে পারে।

সোশ্যাল মিডিয়ার সাহায্য

অনলাইনে মায়েদের জন্য বিভিন্ন ফোরাম এবং সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপে অংশগ্রহণ করা মানসিক সমর্থনের একটি ভালো উপায় হতে পারে। যেখানে বিভিন্ন মা তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন, পরামর্শ দেন এবং একে অপরের পাশে থাকেন। এই ধরনের প্ল্যাটফর্মগুলোতে অংশ নেওয়া একটি মায়ের জন্য মানসিকভাবে সমর্থন পাওয়ার একটি সহজ মাধ্যম।

 স্ব-যত্ন এবং সময় বের করা

মায়ের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য নিজের জন্য সময় বের করাও অপরিহার্য। প্রতিদিনের ব্যস্ততার মধ্যে কিছুটা সময় নিজের জন্য রাখা এবং নিজের পছন্দের কাজ করার মাধ্যমে মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। যোগব্যায়াম, মেডিটেশন, বা কোনো শখের কাজে যুক্ত হওয়া মানসিক শান্তি এনে দিতে পারে।

মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষে কাজে ফেরা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এটি প্রথমে চ্যালেঞ্জিং মনে হলেও সঠিক প্রস্তুতি এবং পরিকল্পনার মাধ্যমে এটি সফলভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব। পরিবারের সহায়তা, শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় রেখে, এবং পেশাগত দক্ষতা পুনরুদ্ধার করে, একজন মা নিজের কর্মজীবন এবং মাতৃত্বের দায়িত্ব উভয়কেই সফলভাবে পরিচালনা করতে পারবেন।

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

সাজেদা আক্তার

সাজেদা আক্তার একজন বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী এবং দক্ষ কলামিস্ট, যিনি সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। বিডিবো নিউজে, তিনি সমাজ, পরিবার এবং জীবনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে লেখেন। একজন অভিজ্ঞ কলামিস্ট হিসেবে, তিনি বিভিন্ন পত্রিকায় সমাজিক বিষয়, পারিবারিক গতিশীলতা এবং বিভিন্ন জীবনধারা সম্পর্কিত ভাবনাপ্রসূত বিষয়গুলি নিয়ে লেখেন। সামাজিক প্রবণতাগুলি বিশ্লেষণ ও প্রকাশ করার ক্ষেত্রে তার দক্ষতা তাকে এই ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব হিসেবে স্থান দিয়েছে। সাজেদা আক্তারের কাজ শুধু পাঠকদের তথ্য প্রদান করে না, বরং তাদের অনুপ্রাণিতও করে, যা তাকে সাংবাদিকতা এবং সমাজবিজ্ঞানের জগতে সম্মানিত একটি কণ্ঠস্বর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষে কাজে ফেরা: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়

Update Time : ০৪:৫২:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর ২০২৪

মাতৃত্বকালীন ছুটি প্রতিটি মায়ের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধুমাত্র সন্তানের যত্ন নেওয়ার সুযোগ নয়, মায়ের শারীরিক ও মানসিক পুনরুদ্ধারের জন্যও সময়। এই ছুটির সময়ে একজন মা যেমন সন্তানকে যত্ন করেন, তেমনি নিজেকে শারীরিকভাবে পুনরুজ্জীবিত করার জন্যও সময় পান। তবে, ছুটি শেষে কাজে ফেরা অনেক মা-ই চ্যালেঞ্জ হিসেবে অনুভব করেন। কাজের জগতে ফেরার পর পরিবারের দায়িত্ব পালন এবং কর্মক্ষেত্রে নিজের জায়গা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা মায়েদের জন্য বেশ কঠিন হতে পারে।

কিন্তু কিছু সহজ করণীয় এবং পরিকল্পনা নিয়ে এগোলে এই চ্যালেঞ্জগুলো সফলভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব।

 কাজে ফেরার চ্যালেঞ্জগুলো

 ১. নতুন রুটিনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া

মাতৃত্বের পর প্রতিদিনের জীবনে এক বিশাল পরিবর্তন আসে। সন্তানের সময়মত যত্ন নেওয়া, খাবার খাওয়ানো, ঘুমানোর সময় সবকিছুই মায়ের নতুন দিনের সঙ্গী হয়ে ওঠে। একই সময়ে অফিসের কাজের চাপ সামলানো এবং ঘরকন্নার দায়িত্ব নেওয়া অনেক মায়ের জন্য বেশ কঠিন হয়ে যায়। নতুন এই রুটিনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া প্রথম চ্যালেঞ্জ।

 ২. শারীরিক মানসিক চাপ

মাতৃত্বের পর মায়ের শরীর অনেক দুর্বল থাকে, ঘুমের অভাব এবং মানসিক চাপ এই সময়ে বৃদ্ধি পায়। আবার দীর্ঘ বিরতির পর কাজে ফেরা মানসিক চাপ বাড়াতে পারে। চাকরির প্রয়োজনীয়তা, অফিসের কাজ এবং সন্তানের প্রতি দায়িত্ব সবকিছু মিলিয়ে মা-দের ওপর শারীরিক ও মানসিক ধকল বেড়ে যায়।

 ৩. কাজের দক্ষতা ফিরে পাওয়া

দীর্ঘ মাতৃত্বকালীন ছুটি অনেক সময় কাজের দক্ষতা বা পেশাদারিত্বে প্রভাব ফেলতে পারে। চাকরি ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে পরিবর্তনগুলো ধরা পড়তে সময় লাগে এবং নতুন জ্ঞানের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে হয়। এজন্য কাজে পুনরায় ফিরতে অনেক মা-ই সমস্যার সম্মুখীন হন।

 ৪. আবেগপ্রবণতা এবং অপরাধবোধ

অনেক মা-ই কাজের জগতে ফিরে যাওয়ার পর সন্তানকে বাসায় রেখে যাওয়ার কারণে একধরনের আবেগপ্রবণতা ও অপরাধবোধে ভোগেন। তারা অনুভব করেন যে, সন্তানের প্রয়োজনের সময় তারা হয়তো যথাযথ ভাবে পাশে থাকতে পারছেন না। এই অপরাধবোধ অনেক সময় তাদের কাজের মনোযোগ নষ্ট করতে পারে।

 কীভাবে মোকাবিলা করবেন এই চ্যালেঞ্জগুলো?

 ১. পরিকল্পিতভাবে কাজ শুরু করা

কাজে ফেরার আগে পরিকল্পিতভাবে রুটিন তৈরি করা জরুরি। সন্তানের ঘুমের সময় এবং অফিসের কাজের সময়ের মধ্যে সমন্বয় করে একটি দৈনিক রুটিন গড়ে তুলতে হবে। পারিবারিক সহায়তা থাকলে কাজ ভাগ করে নেওয়াও সহায়ক হতে পারে।

 ২. সহযোগিতা নেওয়া

কাজ এবং সন্তানের যত্ন—এই দুই কাজ একা একা করার চেষ্টা না করাই ভালো। পরিবারের সদস্য, বন্ধুবান্ধব, বা একটি দায়িত্বশীল বেবিসিটার সাহায্য নিতে পারেন। আশেপাশের লোকদের সাহায্য নিলে কাজের ভার হালকা হবে এবং মায়ের ওপর চাপ কমবে।

 ৩. স্বাস্থ্য সচেতনতা বজায় রাখা

মায়ের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করা জরুরি। প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুমানো, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, এবং মানসিক প্রশান্তির জন্য মেডিটেশন বা হালকা ব্যায়াম করা উচিত। এই ধরনের স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুললে কাজে ফেরার পর চাপ কম অনুভব করবেন।

 ৪. কাজের দক্ষতা পুনরুদ্ধার করা

কাজে ফেরার আগে প্রযুক্তি, নীতিমালা বা নতুন পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা নিতে পারেন। চাকরির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আগাম ধারণা তৈরি করা এবং নিজের দক্ষতাকে পুনরায় জাগিয়ে তোলা গুরুত্বপূর্ণ। অফিসে ফিরে আসার আগে কাজের সঙ্গে মানিয়ে নিতে কিছু প্রস্তুতি নিয়ে নিলে কাজের চাপ কম অনুভব করবেন।

 ৫. কাজ এবং সন্তানের মধ্যে ভারসাম্য রাখা

সন্তানের যত্ন এবং কাজের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য রক্ষা করা সব মা-র জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যখন আপনি অফিসে থাকবেন, তখন কাজের প্রতি মনোযোগ দিন, এবং যখন বাসায় থাকবেন, সন্তানের প্রতি সময় দিন। এই দুটি কাজের মধ্যে সঠিক সমন্বয় থাকলে আপনি চাপমুক্ত থাকতে পারবেন।

 মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষে মানসিক সমর্থন

মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষে কাজে ফেরা একাধিক মানসিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার কারণ হতে পারে। সন্তানকে ঘরে রেখে বাইরে কাজ করতে যাওয়া, পরিবারের প্রত্যাশা এবং নিজের পেশাদারিত্ব বজায় রাখার চাপে অনেক মা মানসিকভাবে অসহায় বোধ করতে পারেন। এই সময়ে মানসিক সমর্থনের গুরুত্ব অপরিসীম। পারিবারিক, সামাজিক, এবং পেশাগত সহায়তা মায়ের মানসিক চাপ কমাতে পারে এবং তাকে তার নতুন জীবনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সাহায্য করতে পারে।

 পরিবারের সমর্থন

পরিবারের সদস্যদের সহানুভূতি এবং সাহায্য একজন মায়ের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সন্তানের যত্ন নেওয়া এবং গৃহস্থালির কাজ ভাগাভাগি করার মাধ্যমে মা তার কাজের দায়িত্ব সামলাতে পারবেন। সন্তানের জন্য বাবা, দাদা-দাদি বা অন্য কোনো পরিবারের সদস্যের সহযোগিতা থাকলে কাজ এবং ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা সহজ হবে। পরিবারের এই সহযোগিতা শুধু দৈনন্দিন কাজেই নয়, বরং মানসিক শান্তি প্রদানেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

 সহকর্মীদের সহযোগিতা

কাজে ফেরার সময় সহকর্মীদের সমর্থন একটি বড় উপাদান হতে পারে। দীর্ঘ বিরতির পর কাজে ফেরার সময় নতুন কাজের চাপ, নতুন নীতি বা প্রযুক্তির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা থাকলে, সহকর্মীরা তাদের সহানুভূতিশীল মনোভাব দিয়ে সহায়ক হতে পারেন। একজন সহকর্মীর সহানুভূতি এবং দায়িত্ব ভাগাভাগি করার প্রস্তাব একজন মায়ের জন্য চাপ কমাতে পারে এবং তার মানসিক স্বাস্থ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

 বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ

মাতৃত্বকালীন ছুটি থেকে কাজে ফেরার সময় অনেক মা-ই নিজেকে বিচ্ছিন্ন মনে করতে পারেন। বন্ধুদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা এবং তাদের সঙ্গে সময় কাটানো মায়ের মানসিক প্রশান্তির জন্য সহায়ক। বন্ধুদের সঙ্গে নিজেদের অভিজ্ঞতা, উদ্বেগ এবং মানসিক চাপ শেয়ার করা মায়ের মানসিক অবস্থাকে স্বাভাবিক রাখতে সহায়ক হতে পারে। বিশেষত, যেসব বন্ধু নিজেরাও একই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছেন, তাদের পরামর্শ এবং সমর্থন অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে।

 মানসিক চাপ মোকাবিলায় পেশাদার সহায়তা

যদি মানসিক চাপ অত্যন্ত বেশি হয়, তাহলে প্রয়োজনে কাউন্সেলিং বা মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। একজন থেরাপিস্ট বা কাউন্সেলর পেশাদার পরামর্শের মাধ্যমে মানসিক চাপ মোকাবিলায় সাহায্য করতে পারেন। এই ধরনের পেশাদার সহায়তা মায়েদের জন্য আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করতে এবং মানসিকভাবে সঠিক পথে পরিচালিত হতে সহায়ক হতে পারে।

সোশ্যাল মিডিয়ার সাহায্য

অনলাইনে মায়েদের জন্য বিভিন্ন ফোরাম এবং সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপে অংশগ্রহণ করা মানসিক সমর্থনের একটি ভালো উপায় হতে পারে। যেখানে বিভিন্ন মা তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন, পরামর্শ দেন এবং একে অপরের পাশে থাকেন। এই ধরনের প্ল্যাটফর্মগুলোতে অংশ নেওয়া একটি মায়ের জন্য মানসিকভাবে সমর্থন পাওয়ার একটি সহজ মাধ্যম।

 স্ব-যত্ন এবং সময় বের করা

মায়ের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য নিজের জন্য সময় বের করাও অপরিহার্য। প্রতিদিনের ব্যস্ততার মধ্যে কিছুটা সময় নিজের জন্য রাখা এবং নিজের পছন্দের কাজ করার মাধ্যমে মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। যোগব্যায়াম, মেডিটেশন, বা কোনো শখের কাজে যুক্ত হওয়া মানসিক শান্তি এনে দিতে পারে।

মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষে কাজে ফেরা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এটি প্রথমে চ্যালেঞ্জিং মনে হলেও সঠিক প্রস্তুতি এবং পরিকল্পনার মাধ্যমে এটি সফলভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব। পরিবারের সহায়তা, শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় রেখে, এবং পেশাগত দক্ষতা পুনরুদ্ধার করে, একজন মা নিজের কর্মজীবন এবং মাতৃত্বের দায়িত্ব উভয়কেই সফলভাবে পরিচালনা করতে পারবেন।