সময়: বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আয়নাঘরের প্রমাণ মিলেছে, মুছে ফেলা হয়েছে আলামত : গুম কমিশন

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ১০:২৪:১৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর ২০২৪
  • / ১৬৯ Time View

আয়নাঘরের প্রমাণ মিলেছে

গুমের ঘটনা নিয়ে আলোচিত একটি পদক্ষেপ হিসেবে গঠিত গুমসংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারি নতুন তথ্য প্রকাশ করেছে, যা গুম থেকে ফিরে আসা ব্যক্তিদের বর্ণনার সঙ্গে মিল পাওয়া গেছে। তারা জানান, “আয়নাঘর” নামে একটি গোপন বন্দিশালার সন্ধান পাওয়া গেছে, যা ডিজিএফআইয়ের জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল (জেআইসি) হিসেবে পরিচিত। তবে অনেক আলামত ইতোমধ্যে মুছে ফেলা হয়েছে, বিশেষ করে দেয়ালের লেখাগুলো পেইন্ট করে নষ্ট করা হয়েছে।

 ৪০০টি অভিযোগ জমা, তদন্ত অব্যাহত

৩ অক্টোবর গুলশানে এক সংবাদ সম্মেলনে গুম কমিশনের সভাপতি, হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, জানান, গুমসংক্রান্ত কমিশনে ইতোমধ্যে ৪০০টি গুমের অভিযোগ জমা পড়েছে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হাতে গুম হওয়া ব্যক্তিদের অভিযোগগুলো নিয়ে তারা কাজ করছেন। এসব অভিযোগ তদন্ত করে অভিযুক্তদের তলবের জন্য সমন দেওয়া হবে। অভিযোগগুলোতে র‍্যাব, ডিজিএফআই, ডিবি ও সিটিটিসির ভূমিকা নিয়ে বেশি অভিযোগ পাওয়া গেছে।

 আয়নাঘর পরিদর্শন আলামত মুছে ফেলার ঘটনা

গত ২৫ সেপ্টেম্বর কমিশনের সদস্যরা ডিজিএফআইয়ের আয়নাঘর পরিদর্শন করেন। তারা ১ অক্টোবর ডিবি ও সিটিটিসিও পরিদর্শন করেন। এসব স্থানে কোনো বন্দিকে পাওয়া যায়নি। মইনুল ইসলাম চৌধুরী জানান, ধারণা করা হচ্ছে ৫ আগস্টের পর সেখান থেকে সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

কমিশনের আরেক সদস্য সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আয়নাঘরের বর্ণনা ভুক্তভোগীদের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে মিলেছে। তবে কিছু পরিবর্তনও করা হয়েছে। বিশেষ করে দেয়ালে লেখা প্রমাণগুলো পেইন্ট করে মুছে ফেলা হয়েছে। তিনি জানান, তারা ডিজিএফআই কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছেন যাতে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো পরিবর্তন করা না হয়।

 কমিশনের কাজের অগ্রগতি

গুম কমিশনের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে ৭৫ জন ব্যক্তি সরাসরি এসে বিবৃতি দিয়েছেন। অনেকে ডাকযোগে ও ই-মেইলে অভিযোগ পাঠিয়েছেন। কমিশনের সদস্য নাবিলা ইদ্রিস বলেন, নতুন কিছু বিষয় তাদের সামনে এসেছে, যা আগে কখনো বলা হয়নি। অনেক অভিযোগ ঢাকার বাইরের এলাকা থেকেও আসছে।

কমিশনের সদস্য নূর খান বলেন, তারা প্রতিটি অভিযোগ গুরুত্বসহকারে শুনছেন এবং এসব অভিযোগের সত্যতা বের করার চেষ্টা করছেন। কীভাবে গোপনে আইন লঙ্ঘন করে লোকজনকে বন্দি করে রাখা হয়েছে, সেটিও বুঝতে চান।

 কমিশনের গঠন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

এই কমিশন গঠন করা হয়েছিল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান এবং ঘটনার তদন্তের জন্য। কমিশনের গঠনের পর মাত্র ১৩ কর্মদিবসে ৪০০টির বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে। ভুক্তভোগীদের দেয়া অভিযোগের ভিত্তিতে কমিশন গোপন বন্দিশালা সম্পর্কে জানতে পারে, যা ডিজিএফআইয়ের সদর দপ্তরের ভেতরে ছিল।

গুমের ঘটনাগুলো তদন্তে কমিশন ইতোমধ্যে নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। তবে কমিশনের কাজের অগ্রগতি এবং পরবর্তী তদন্তের জন্য তারা আরও সময় নিচ্ছে। ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অভিযোগ জমা দেওয়ার সময়সীমা ছিল, যা ১০ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

 সমাপ্তি

আয়নাঘর নামে পরিচিত গোপন বন্দিশালা নিয়ে পাওয়া তথ্য এবং আলামত মুছে ফেলার ঘটনাগুলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। কমিশনের কাজ এবং এর অগ্রগতি ভবিষ্যতে এ ধরনের গুমের ঘটনার স্বচ্ছ তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আয়নাঘরের প্রমাণ মিলেছে, মুছে ফেলা হয়েছে আলামত : গুম কমিশন

Update Time : ১০:২৪:১৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর ২০২৪

গুমের ঘটনা নিয়ে আলোচিত একটি পদক্ষেপ হিসেবে গঠিত গুমসংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারি নতুন তথ্য প্রকাশ করেছে, যা গুম থেকে ফিরে আসা ব্যক্তিদের বর্ণনার সঙ্গে মিল পাওয়া গেছে। তারা জানান, “আয়নাঘর” নামে একটি গোপন বন্দিশালার সন্ধান পাওয়া গেছে, যা ডিজিএফআইয়ের জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল (জেআইসি) হিসেবে পরিচিত। তবে অনেক আলামত ইতোমধ্যে মুছে ফেলা হয়েছে, বিশেষ করে দেয়ালের লেখাগুলো পেইন্ট করে নষ্ট করা হয়েছে।

 ৪০০টি অভিযোগ জমা, তদন্ত অব্যাহত

৩ অক্টোবর গুলশানে এক সংবাদ সম্মেলনে গুম কমিশনের সভাপতি, হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, জানান, গুমসংক্রান্ত কমিশনে ইতোমধ্যে ৪০০টি গুমের অভিযোগ জমা পড়েছে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হাতে গুম হওয়া ব্যক্তিদের অভিযোগগুলো নিয়ে তারা কাজ করছেন। এসব অভিযোগ তদন্ত করে অভিযুক্তদের তলবের জন্য সমন দেওয়া হবে। অভিযোগগুলোতে র‍্যাব, ডিজিএফআই, ডিবি ও সিটিটিসির ভূমিকা নিয়ে বেশি অভিযোগ পাওয়া গেছে।

 আয়নাঘর পরিদর্শন আলামত মুছে ফেলার ঘটনা

গত ২৫ সেপ্টেম্বর কমিশনের সদস্যরা ডিজিএফআইয়ের আয়নাঘর পরিদর্শন করেন। তারা ১ অক্টোবর ডিবি ও সিটিটিসিও পরিদর্শন করেন। এসব স্থানে কোনো বন্দিকে পাওয়া যায়নি। মইনুল ইসলাম চৌধুরী জানান, ধারণা করা হচ্ছে ৫ আগস্টের পর সেখান থেকে সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

কমিশনের আরেক সদস্য সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আয়নাঘরের বর্ণনা ভুক্তভোগীদের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে মিলেছে। তবে কিছু পরিবর্তনও করা হয়েছে। বিশেষ করে দেয়ালে লেখা প্রমাণগুলো পেইন্ট করে মুছে ফেলা হয়েছে। তিনি জানান, তারা ডিজিএফআই কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছেন যাতে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো পরিবর্তন করা না হয়।

 কমিশনের কাজের অগ্রগতি

গুম কমিশনের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে ৭৫ জন ব্যক্তি সরাসরি এসে বিবৃতি দিয়েছেন। অনেকে ডাকযোগে ও ই-মেইলে অভিযোগ পাঠিয়েছেন। কমিশনের সদস্য নাবিলা ইদ্রিস বলেন, নতুন কিছু বিষয় তাদের সামনে এসেছে, যা আগে কখনো বলা হয়নি। অনেক অভিযোগ ঢাকার বাইরের এলাকা থেকেও আসছে।

কমিশনের সদস্য নূর খান বলেন, তারা প্রতিটি অভিযোগ গুরুত্বসহকারে শুনছেন এবং এসব অভিযোগের সত্যতা বের করার চেষ্টা করছেন। কীভাবে গোপনে আইন লঙ্ঘন করে লোকজনকে বন্দি করে রাখা হয়েছে, সেটিও বুঝতে চান।

 কমিশনের গঠন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

এই কমিশন গঠন করা হয়েছিল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান এবং ঘটনার তদন্তের জন্য। কমিশনের গঠনের পর মাত্র ১৩ কর্মদিবসে ৪০০টির বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে। ভুক্তভোগীদের দেয়া অভিযোগের ভিত্তিতে কমিশন গোপন বন্দিশালা সম্পর্কে জানতে পারে, যা ডিজিএফআইয়ের সদর দপ্তরের ভেতরে ছিল।

গুমের ঘটনাগুলো তদন্তে কমিশন ইতোমধ্যে নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। তবে কমিশনের কাজের অগ্রগতি এবং পরবর্তী তদন্তের জন্য তারা আরও সময় নিচ্ছে। ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অভিযোগ জমা দেওয়ার সময়সীমা ছিল, যা ১০ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

 সমাপ্তি

আয়নাঘর নামে পরিচিত গোপন বন্দিশালা নিয়ে পাওয়া তথ্য এবং আলামত মুছে ফেলার ঘটনাগুলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। কমিশনের কাজ এবং এর অগ্রগতি ভবিষ্যতে এ ধরনের গুমের ঘটনার স্বচ্ছ তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।