সময়: বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভয়েস অব আমেরিকাকে ড. ইউনূস:‘সরকারের মেয়াদ কতদিন হবে, তা সরকারই নির্ধারণ করবে’

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ০২:১৭:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর ২০২৪
  • / ৯১ Time View

ভয়েস অব আমেরিকাকে ড. ইউনূস

সম্প্রতি ভয়েস অব আমেরিকাকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। ছবি: ভিওএ

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান। এরপর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়, যা প্রায় দুই মাসের বেশি সময় ধরে পরিচালিত হচ্ছে। ড. ইউনূস সম্প্রতি দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ভয়েস অব আমেরিকাকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। এই সাক্ষাৎকারটি ৩০ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হয়, এবং এটি নিয়েছেন আনিস আহমেদ।

সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, সশস্ত্র বাহিনীকে যে সময়ের জন্য এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যেই পুলিশ ঘুরে দাঁড়াবে বলে তিনি আশা করছেন। পুলিশ কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর পর, তবে যারা অন্যায় করেছে, তাদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়া হবে। বাকি পুলিশ সদস্যদের গ্রহণযোগ্যতা পুনরুদ্ধারে সময় লাগবে। এর আগে, সাময়িকভাবে সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে শান্তি বজায় রাখতে।

গণঅভ্যুত্থানে তরুণদের ভূমিকা এবং সরকার পরিচালনায় তাদের অংশগ্রহণের বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, “তরুণদের হাতেই ক্ষমতা থাকা উচিত। বয়োজ্যেষ্ঠদের আর কোনো কাজ নেই, কারণ তারা এখন পর্যন্ত শুধু ভুল করেছে। তরুণদের নেতৃত্বেই ভবিষ্যত তৈরি হবে এবং শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা বিশ্বেই তরুণদের হাতে দায়িত্ব দেওয়া উচিত।”

সরকারের মেয়াদ সম্পর্কে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, “সরকারের মেয়াদ বা নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণে কোনো সিদ্ধান্ত এখনো নেওয়া হয়নি। উপদেষ্টা পরিষদে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, তবে সঠিক তারিখ তখনই জানানো হবে যখন সরকার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা আসবে।”

ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন নিয়ে কাজ করছে বর্তমান সরকার, এমনকি শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান। শেখ হাসিনার দেশে ফেরার বিষয়টি আইনের মাধ্যমে সমাধান করা হবে।

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ সম্পর্কে জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, এই বৈঠক ছিল একটি সার্কভুক্ত দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। তিনি বলেন, “এটা কোনো পরিবর্তনের ইঙ্গিত নয়।”

একাত্তরের গণহত্যার বিষয়ে পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নে ড. ইউনূস বলেন, “এটা পৃথক ইস্যু। সার্ক একটি প্রতিষ্ঠিত সংস্থা, এবং আমরা চাই এটি শক্তিশালী হোক। এ বিষয়ে আলোচনা হবে পাকিস্তানের সঙ্গে।”

গণঅভ্যুত্থানের সময় ছাত্র-জনতা এবং পুলিশ সদস্যদের হতাহতের বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, “যে অপরাধ করেছে, সে শাস্তি পাবে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি অবসানের জন্যই এই অভ্যুত্থান হয়েছে। অপরাধ করলে শাস্তি পেতেই হবে।”

পার্বত্য চট্টগ্রামের অস্থিরতা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা সব জায়গায় শান্তি চাই। যেখানে সমস্যা হয়েছে, সেটি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি চুক্তি মানা না হলে নতুন করে শান্তি চুক্তি করতে হবে। তবে এই অল্প সময়ের সরকার সেটা সমাধান করতে পারবে না, পরবর্তীতে নির্বাচিত সরকার এ দায়িত্ব পালন করবে।”

রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, “আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো তাদের শরণার্থী মর্যাদা দিয়েছে এবং বাংলাদেশ তাদের গ্রহণ করবে। এটি একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা, এবং আন্তর্জাতিক আইন মেনেই সমাধান খুঁজতে হবে।”

সংবিধান সংশোধন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আগের সরকার সবকিছু ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। পুনর্গঠনের জন্য আমরা ছয়টি কমিশন গঠন করেছি, এর মধ্যে একটি সংবিধান সংশোধনের জন্য। তবে সারাদেশে বিতর্কের সুযোগ তৈরি করতে হবে, যেন রাজনৈতিক দলগুলোও অংশগ্রহণ করতে পারে।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন যে স্বাধীনতা বিরোধীরা রাজনীতিতে ফিরে আসছে, তবে সংবিধান অনুযায়ী তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। “অপরাধ করলে শাস্তি দেওয়া হবে, তবে মত প্রকাশের অধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না,” বলেন ড. ইউনূস।

ড. ইউনূস সাক্ষাৎকারের শেষে জানান, এই সরকারের মূল লক্ষ্য হলো সংস্কার কার্যক্রম শেষ করে নির্বাচন আয়োজন করা এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

ভয়েস অব আমেরিকাকে ড. ইউনূস:‘সরকারের মেয়াদ কতদিন হবে, তা সরকারই নির্ধারণ করবে’

Update Time : ০২:১৭:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর ২০২৪
সম্প্রতি ভয়েস অব আমেরিকাকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। ছবি: ভিওএ

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান। এরপর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়, যা প্রায় দুই মাসের বেশি সময় ধরে পরিচালিত হচ্ছে। ড. ইউনূস সম্প্রতি দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ভয়েস অব আমেরিকাকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। এই সাক্ষাৎকারটি ৩০ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হয়, এবং এটি নিয়েছেন আনিস আহমেদ।

সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, সশস্ত্র বাহিনীকে যে সময়ের জন্য এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যেই পুলিশ ঘুরে দাঁড়াবে বলে তিনি আশা করছেন। পুলিশ কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর পর, তবে যারা অন্যায় করেছে, তাদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়া হবে। বাকি পুলিশ সদস্যদের গ্রহণযোগ্যতা পুনরুদ্ধারে সময় লাগবে। এর আগে, সাময়িকভাবে সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে শান্তি বজায় রাখতে।

গণঅভ্যুত্থানে তরুণদের ভূমিকা এবং সরকার পরিচালনায় তাদের অংশগ্রহণের বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, “তরুণদের হাতেই ক্ষমতা থাকা উচিত। বয়োজ্যেষ্ঠদের আর কোনো কাজ নেই, কারণ তারা এখন পর্যন্ত শুধু ভুল করেছে। তরুণদের নেতৃত্বেই ভবিষ্যত তৈরি হবে এবং শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা বিশ্বেই তরুণদের হাতে দায়িত্ব দেওয়া উচিত।”

সরকারের মেয়াদ সম্পর্কে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, “সরকারের মেয়াদ বা নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণে কোনো সিদ্ধান্ত এখনো নেওয়া হয়নি। উপদেষ্টা পরিষদে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, তবে সঠিক তারিখ তখনই জানানো হবে যখন সরকার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা আসবে।”

ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন নিয়ে কাজ করছে বর্তমান সরকার, এমনকি শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান। শেখ হাসিনার দেশে ফেরার বিষয়টি আইনের মাধ্যমে সমাধান করা হবে।

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ সম্পর্কে জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, এই বৈঠক ছিল একটি সার্কভুক্ত দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। তিনি বলেন, “এটা কোনো পরিবর্তনের ইঙ্গিত নয়।”

একাত্তরের গণহত্যার বিষয়ে পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নে ড. ইউনূস বলেন, “এটা পৃথক ইস্যু। সার্ক একটি প্রতিষ্ঠিত সংস্থা, এবং আমরা চাই এটি শক্তিশালী হোক। এ বিষয়ে আলোচনা হবে পাকিস্তানের সঙ্গে।”

গণঅভ্যুত্থানের সময় ছাত্র-জনতা এবং পুলিশ সদস্যদের হতাহতের বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, “যে অপরাধ করেছে, সে শাস্তি পাবে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি অবসানের জন্যই এই অভ্যুত্থান হয়েছে। অপরাধ করলে শাস্তি পেতেই হবে।”

পার্বত্য চট্টগ্রামের অস্থিরতা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা সব জায়গায় শান্তি চাই। যেখানে সমস্যা হয়েছে, সেটি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি চুক্তি মানা না হলে নতুন করে শান্তি চুক্তি করতে হবে। তবে এই অল্প সময়ের সরকার সেটা সমাধান করতে পারবে না, পরবর্তীতে নির্বাচিত সরকার এ দায়িত্ব পালন করবে।”

রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, “আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো তাদের শরণার্থী মর্যাদা দিয়েছে এবং বাংলাদেশ তাদের গ্রহণ করবে। এটি একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা, এবং আন্তর্জাতিক আইন মেনেই সমাধান খুঁজতে হবে।”

সংবিধান সংশোধন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আগের সরকার সবকিছু ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। পুনর্গঠনের জন্য আমরা ছয়টি কমিশন গঠন করেছি, এর মধ্যে একটি সংবিধান সংশোধনের জন্য। তবে সারাদেশে বিতর্কের সুযোগ তৈরি করতে হবে, যেন রাজনৈতিক দলগুলোও অংশগ্রহণ করতে পারে।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন যে স্বাধীনতা বিরোধীরা রাজনীতিতে ফিরে আসছে, তবে সংবিধান অনুযায়ী তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। “অপরাধ করলে শাস্তি দেওয়া হবে, তবে মত প্রকাশের অধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না,” বলেন ড. ইউনূস।

ড. ইউনূস সাক্ষাৎকারের শেষে জানান, এই সরকারের মূল লক্ষ্য হলো সংস্কার কার্যক্রম শেষ করে নির্বাচন আয়োজন করা এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।