সময়: বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জাতিসংঘ মঞ্চে নেতানিয়াহুর উপস্থিতিতে বিশ্বনেতাদের ওয়াকআউট: কেন এই প্রতিবাদ?

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ১০:৪৯:৩৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ৯৫ Time View

UN

অধিবেশন কক্ষ থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন বিশ্বনেতারা

 

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ২৭ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে ভাষণ দিয়েছেন। তবে তার মঞ্চে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্বনেতাদের মধ্যে থেকে অনেকেই প্রতিবাদস্বরূপ অধিবেশন কক্ষ ত্যাগ করেন। এই ঘটনাটি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তাৎক্ষণিক আলোচনার সৃষ্টি করে, এবং অনেকেই প্রশ্ন করেন, কেন নেতানিয়াহুর বক্তব্য এই ধরনের প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়লো। এর পেছনে থাকা মূল কারণগুলো কী এবং কীভাবে এই ঘটনা আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মঞ্চে নতুন আলোচনার জন্ম দিলো?

 তুরস্কের নেতৃত্বে ওয়াকআউটের সূচনা

নেতানিয়াহু তার বক্তব্য শুরু করার কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রথমত তুরস্কের স্থায়ী প্রতিনিধি অধিবেশন কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান। তার এই পদক্ষেপ ছিল নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগকে সামনে রেখে একটি প্রতীকী প্রতিবাদ। আনাদোলু এজেন্সি জানিয়েছে, তুরস্কের এই পদক্ষেপের মাধ্যমে তারা নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে তাদের কঠোর অবস্থানের প্রকাশ ঘটায়, যার ফলে অন্যান্য দেশ ও প্রতিনিধিরাও কক্ষ ত্যাগ করেন।

 হামাসের আহ্বান: নেতানিয়াহুর কারাগারে থাকা উচিত

নেতানিয়াহুর জাতিসংঘে ভাষণ দেওয়ার আগে, ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস বিশ্বনেতাদের প্রতি তার ভাষণ প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানায়। হামাসের মতে, নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনিদের ওপর ব্যাপক হত্যাকাণ্ড চালিয়েছেন, এবং তাদের বক্তব্যে বলা হয়েছে, “তার জায়গা জাতিসংঘ নয়, বরং কারাগারে হওয়া উচিত।” হামাসের এই আহ্বান আরব বিশ্বের অনেক নেতার মনোযোগ আকর্ষণ করে, যারা পরে কক্ষ ত্যাগ করেন।

 মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্রপ্রধানদের প্রতিবাদ

মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের নেতারাও এই প্রতিবাদে অংশ নেন, বিশেষ করে গাজা যুদ্ধ এবং সম্প্রতি লেবাননে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করার জন্য। মিডল ইস্ট মনিটরের প্রতিবেদন অনুসারে, নেতানিয়াহু যখন তার বক্তব্য শুরু করেন, তখন অধিকাংশ কূটনীতিক এবং রাষ্ট্রপ্রধান কক্ষ ত্যাগ করেন। এ ঘটনাটি বিশ্ব নেতাদের সমন্বিত প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ হিসেবে দেখা যায়, যেখানে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের প্রতি তাদের স্পষ্ট আপত্তি জানানো হয়। বিশেষ করে আরব এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো, যাদের এই অঞ্চলের নিরাপত্তা এবং মানবিক সংকট নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে, তারা এই প্রতিক্রিয়ায় নেতৃত্ব দিয়েছে।

 নেতানিয়াহুর বক্তব্য: হামাস হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে কড়া সমালোচনা

প্রায় আধা ঘণ্টার বক্তব্যে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হামাস এবং হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি ইসরায়েলের চলমান সামরিক অভিযানের পক্ষে অবস্থান নেন এবং স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন যে, চূড়ান্ত বিজয় না আসা পর্যন্ত ইসরায়েল গাজার বিরুদ্ধে তাদের সামরিক কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। যুদ্ধবিরতির যে কোনো সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে নেতানিয়াহু বলেন, “আমাদের লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চলতে থাকবে।” সেই সঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, লেবাননে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক সামরিক অভিযানের কার্যক্রমও অব্যাহত থাকবে।

 বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া: প্রতিবাদের ভাষা

নেতানিয়াহুর বক্তব্যের সময় বিশ্বনেতাদের এই সমন্বিত এবং ব্যাপকভাবে সংগঠিত প্রতিবাদ দেখায় যে, ইসরায়েলের বর্তমান নীতির প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ রয়েছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর নেতারা, যারা ফিলিস্তিনের পরিস্থিতি এবং লেবাননের সামরিক অভিযানের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন, তারা এই প্রতিবাদে নেতৃত্ব দেন।

বিশ্বনেতাদের এই প্রতিবাদ ছিল মূলত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে একটি শক্তিশালী বার্তা, যেখানে তারা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের প্রেক্ষিতে নেতানিয়াহুর নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন। এর মাধ্যমে, তারা ইসরায়েলের নীতি এবং নেতানিয়াহুর যুদ্ধপন্থার প্রতি তাদের আপত্তি প্রকাশ করেন। এছাড়াও, এই প্রতিবাদের ফলে আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং কূটনৈতিক মঞ্চে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পৌঁছে যায়, যেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং সামরিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান গ্রহণ করা হয়।

এই প্রতিবাদ নেতানিয়াহুর জন্য একটি কঠিন বার্তা বহন করে, কারণ তার সামরিক পদক্ষেপ এবং যুদ্ধ নীতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হচ্ছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

জাতিসংঘ মঞ্চে নেতানিয়াহুর উপস্থিতিতে বিশ্বনেতাদের ওয়াকআউট: কেন এই প্রতিবাদ?

Update Time : ১০:৪৯:৩৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
অধিবেশন কক্ষ থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন বিশ্বনেতারা

 

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ২৭ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে ভাষণ দিয়েছেন। তবে তার মঞ্চে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্বনেতাদের মধ্যে থেকে অনেকেই প্রতিবাদস্বরূপ অধিবেশন কক্ষ ত্যাগ করেন। এই ঘটনাটি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তাৎক্ষণিক আলোচনার সৃষ্টি করে, এবং অনেকেই প্রশ্ন করেন, কেন নেতানিয়াহুর বক্তব্য এই ধরনের প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়লো। এর পেছনে থাকা মূল কারণগুলো কী এবং কীভাবে এই ঘটনা আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মঞ্চে নতুন আলোচনার জন্ম দিলো?

 তুরস্কের নেতৃত্বে ওয়াকআউটের সূচনা

নেতানিয়াহু তার বক্তব্য শুরু করার কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রথমত তুরস্কের স্থায়ী প্রতিনিধি অধিবেশন কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান। তার এই পদক্ষেপ ছিল নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগকে সামনে রেখে একটি প্রতীকী প্রতিবাদ। আনাদোলু এজেন্সি জানিয়েছে, তুরস্কের এই পদক্ষেপের মাধ্যমে তারা নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে তাদের কঠোর অবস্থানের প্রকাশ ঘটায়, যার ফলে অন্যান্য দেশ ও প্রতিনিধিরাও কক্ষ ত্যাগ করেন।

 হামাসের আহ্বান: নেতানিয়াহুর কারাগারে থাকা উচিত

নেতানিয়াহুর জাতিসংঘে ভাষণ দেওয়ার আগে, ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস বিশ্বনেতাদের প্রতি তার ভাষণ প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানায়। হামাসের মতে, নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনিদের ওপর ব্যাপক হত্যাকাণ্ড চালিয়েছেন, এবং তাদের বক্তব্যে বলা হয়েছে, “তার জায়গা জাতিসংঘ নয়, বরং কারাগারে হওয়া উচিত।” হামাসের এই আহ্বান আরব বিশ্বের অনেক নেতার মনোযোগ আকর্ষণ করে, যারা পরে কক্ষ ত্যাগ করেন।

 মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্রপ্রধানদের প্রতিবাদ

মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের নেতারাও এই প্রতিবাদে অংশ নেন, বিশেষ করে গাজা যুদ্ধ এবং সম্প্রতি লেবাননে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করার জন্য। মিডল ইস্ট মনিটরের প্রতিবেদন অনুসারে, নেতানিয়াহু যখন তার বক্তব্য শুরু করেন, তখন অধিকাংশ কূটনীতিক এবং রাষ্ট্রপ্রধান কক্ষ ত্যাগ করেন। এ ঘটনাটি বিশ্ব নেতাদের সমন্বিত প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ হিসেবে দেখা যায়, যেখানে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের প্রতি তাদের স্পষ্ট আপত্তি জানানো হয়। বিশেষ করে আরব এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো, যাদের এই অঞ্চলের নিরাপত্তা এবং মানবিক সংকট নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে, তারা এই প্রতিক্রিয়ায় নেতৃত্ব দিয়েছে।

 নেতানিয়াহুর বক্তব্য: হামাস হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে কড়া সমালোচনা

প্রায় আধা ঘণ্টার বক্তব্যে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হামাস এবং হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি ইসরায়েলের চলমান সামরিক অভিযানের পক্ষে অবস্থান নেন এবং স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন যে, চূড়ান্ত বিজয় না আসা পর্যন্ত ইসরায়েল গাজার বিরুদ্ধে তাদের সামরিক কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। যুদ্ধবিরতির যে কোনো সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে নেতানিয়াহু বলেন, “আমাদের লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চলতে থাকবে।” সেই সঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, লেবাননে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক সামরিক অভিযানের কার্যক্রমও অব্যাহত থাকবে।

 বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া: প্রতিবাদের ভাষা

নেতানিয়াহুর বক্তব্যের সময় বিশ্বনেতাদের এই সমন্বিত এবং ব্যাপকভাবে সংগঠিত প্রতিবাদ দেখায় যে, ইসরায়েলের বর্তমান নীতির প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ রয়েছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর নেতারা, যারা ফিলিস্তিনের পরিস্থিতি এবং লেবাননের সামরিক অভিযানের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন, তারা এই প্রতিবাদে নেতৃত্ব দেন।

বিশ্বনেতাদের এই প্রতিবাদ ছিল মূলত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে একটি শক্তিশালী বার্তা, যেখানে তারা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের প্রেক্ষিতে নেতানিয়াহুর নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন। এর মাধ্যমে, তারা ইসরায়েলের নীতি এবং নেতানিয়াহুর যুদ্ধপন্থার প্রতি তাদের আপত্তি প্রকাশ করেন। এছাড়াও, এই প্রতিবাদের ফলে আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং কূটনৈতিক মঞ্চে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পৌঁছে যায়, যেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং সামরিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান গ্রহণ করা হয়।

এই প্রতিবাদ নেতানিয়াহুর জন্য একটি কঠিন বার্তা বহন করে, কারণ তার সামরিক পদক্ষেপ এবং যুদ্ধ নীতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হচ্ছে।