৯ ব্যাংকে তারল্য ঘাটতি ১৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়াল

- Update Time : ০৫:২৮:৩২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / ৯৫ Time View
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, দেশের ৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের চলতি হিসাবের তারল্য ঘাটতি ১৮ হাজার কোটি টাকা অতিক্রম করেছে। সোমবার (তারিখ উল্লেখ করুন) বাংলাদেশ ব্যাংক এই তথ্য প্রকাশ করে, যা দেশের ব্যাংকিং খাতে চলমান আর্থিক সংকটের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিককে তুলে ধরে।
যেসব ব্যাংক তারল্য ঘাটতির সম্মুখীন
যে ৯টি ব্যাংক এই তারল্য ঘাটতিতে ভুগছে, সেগুলো হলো:
- ইসলামী ব্যাংক
- এক্সিম ব্যাংক
- ন্যাশনাল ব্যাংক
- ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক
- সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক
- ইউনিয়ন ব্যাংক
- কমার্স ব্যাংক
- পদ্মা ব্যাংক
- আইসিবি ইসলামী ব্যাংক
চুক্তি ও সহায়তা
এর মধ্যে ৫টি ব্যাংক ইতোমধ্যে তারল্য সংকট কাটাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে গ্যারান্টি চুক্তি সম্পন্ন করেছে। এই ব্যাংকগুলো হলো:
– ন্যাশনাল ব্যাংক
– ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক
– সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক
– ইউনিয়ন ব্যাংক
– কমার্স ব্যাংক
অন্যদিকে, ইসলামী ব্যাংক এবং এক্সিম ব্যাংক গ্যারান্টি চুক্তি করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন করেছে। পদ্মা ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামী ব্যাংক এখন পর্যন্ত গ্যারান্টি চুক্তির জন্য আবেদন করেনি।
তারল্য সংকট মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোকে সহায়তা করার জন্য ভালো ব্যাংকগুলো থেকে অর্থ ধার নিয়ে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই ঋণের গ্যারান্টি প্রদান করবে। ইতোমধ্যে পাঁচটি ব্যাংকের সঙ্গে এমন ঋণ গ্যারান্টির চুক্তি সই হয়েছে, যা তাদের নির্ধারিত মেয়াদে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে বিশেষ ধার গ্রহণের সুযোগ করে দেবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, “পাঁচটি ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে এবং আরও দুইটি ব্যাংক চুক্তির জন্য আবেদন করেছে। এখনও দুটি ব্যাংকের চুক্তি সম্পন্ন হয়নি।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা তারল্য সংকট মোকাবেলার বিষয়ে বলেন, “এই সহায়তা কবে প্রদান করা হবে, তা এখনই নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। তবে ব্যাংকগুলো যখন অর্থ ধার দিতে সম্মত হবে, তখনই তারা সহায়তা পাবে।” এটি ইঙ্গিত দেয় যে, সহায়তা প্রদানের সময়সূচি নির্ভর করবে সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোর আন্তরিকতা এবং তাদের প্রয়োজনের ভিত্তিতে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের উপর।
তিনি আরও বলেন যে, বর্তমানে তারল্য ঘাটতির পরিমাণ প্রতিদিন পরিবর্তিত হচ্ছে। আজকের হিসাব অনুযায়ী যে ঘাটতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হচ্ছে, তা আগামীকাল একই থাকবে না। এর মানে হলো, দেশের অর্থনৈতিক ও ব্যাংকিং পরিস্থিতি খুবই গতিশীল, এবং প্রতিদিন নতুন পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে। অর্থনৈতিক চাহিদা, মুদ্রা সরবরাহ, এবং অভ্যন্তরীণ বা আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে এই ঘাটতি বাড়তে বা কমতে পারে।
এ প্রসঙ্গে হুসনে আরা শিখা আরও উল্লেখ করেন, “তারল্য সহায়তার পরিমাণ এখনই নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। এটা পরে পরিস্থিতি অনুযায়ী নির্ধারণ করা হবে।” এই মন্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক খুব সতর্কতার সঙ্গে তারল্য সহায়তার পরিমাণ নির্ধারণ করবে। এর মাধ্যমে তারা অর্থনীতিতে ভারসাম্য বজায় রাখতে চায় এবং সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে অত্যাবশ্যকীয় সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতাও নিশ্চিত করতে চায়।
এই পরিস্থিতি থেকে প্রমাণিত হচ্ছে যে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বর্তমানে একটি সমন্বিত নীতি গ্রহণ করছে, যেখানে তারা ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকটের গভীরতা বুঝে ধীরে ধীরে এবং সঠিক সময়ে সহায়তা প্রদান করবে। তাদের লক্ষ্য হলো সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে পুনরুদ্ধার করতে এবং একইসাথে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করা।
Please Share This Post in Your Social Media

৯ ব্যাংকে তারল্য ঘাটতি ১৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়াল

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, দেশের ৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের চলতি হিসাবের তারল্য ঘাটতি ১৮ হাজার কোটি টাকা অতিক্রম করেছে। সোমবার (তারিখ উল্লেখ করুন) বাংলাদেশ ব্যাংক এই তথ্য প্রকাশ করে, যা দেশের ব্যাংকিং খাতে চলমান আর্থিক সংকটের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিককে তুলে ধরে।
যেসব ব্যাংক তারল্য ঘাটতির সম্মুখীন
যে ৯টি ব্যাংক এই তারল্য ঘাটতিতে ভুগছে, সেগুলো হলো:
- ইসলামী ব্যাংক
- এক্সিম ব্যাংক
- ন্যাশনাল ব্যাংক
- ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক
- সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক
- ইউনিয়ন ব্যাংক
- কমার্স ব্যাংক
- পদ্মা ব্যাংক
- আইসিবি ইসলামী ব্যাংক
চুক্তি ও সহায়তা
এর মধ্যে ৫টি ব্যাংক ইতোমধ্যে তারল্য সংকট কাটাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে গ্যারান্টি চুক্তি সম্পন্ন করেছে। এই ব্যাংকগুলো হলো:
– ন্যাশনাল ব্যাংক
– ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক
– সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক
– ইউনিয়ন ব্যাংক
– কমার্স ব্যাংক
অন্যদিকে, ইসলামী ব্যাংক এবং এক্সিম ব্যাংক গ্যারান্টি চুক্তি করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন করেছে। পদ্মা ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামী ব্যাংক এখন পর্যন্ত গ্যারান্টি চুক্তির জন্য আবেদন করেনি।
তারল্য সংকট মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোকে সহায়তা করার জন্য ভালো ব্যাংকগুলো থেকে অর্থ ধার নিয়ে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই ঋণের গ্যারান্টি প্রদান করবে। ইতোমধ্যে পাঁচটি ব্যাংকের সঙ্গে এমন ঋণ গ্যারান্টির চুক্তি সই হয়েছে, যা তাদের নির্ধারিত মেয়াদে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে বিশেষ ধার গ্রহণের সুযোগ করে দেবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, “পাঁচটি ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে এবং আরও দুইটি ব্যাংক চুক্তির জন্য আবেদন করেছে। এখনও দুটি ব্যাংকের চুক্তি সম্পন্ন হয়নি।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা তারল্য সংকট মোকাবেলার বিষয়ে বলেন, “এই সহায়তা কবে প্রদান করা হবে, তা এখনই নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। তবে ব্যাংকগুলো যখন অর্থ ধার দিতে সম্মত হবে, তখনই তারা সহায়তা পাবে।” এটি ইঙ্গিত দেয় যে, সহায়তা প্রদানের সময়সূচি নির্ভর করবে সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোর আন্তরিকতা এবং তাদের প্রয়োজনের ভিত্তিতে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের উপর।
তিনি আরও বলেন যে, বর্তমানে তারল্য ঘাটতির পরিমাণ প্রতিদিন পরিবর্তিত হচ্ছে। আজকের হিসাব অনুযায়ী যে ঘাটতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হচ্ছে, তা আগামীকাল একই থাকবে না। এর মানে হলো, দেশের অর্থনৈতিক ও ব্যাংকিং পরিস্থিতি খুবই গতিশীল, এবং প্রতিদিন নতুন পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে। অর্থনৈতিক চাহিদা, মুদ্রা সরবরাহ, এবং অভ্যন্তরীণ বা আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে এই ঘাটতি বাড়তে বা কমতে পারে।
এ প্রসঙ্গে হুসনে আরা শিখা আরও উল্লেখ করেন, “তারল্য সহায়তার পরিমাণ এখনই নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। এটা পরে পরিস্থিতি অনুযায়ী নির্ধারণ করা হবে।” এই মন্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক খুব সতর্কতার সঙ্গে তারল্য সহায়তার পরিমাণ নির্ধারণ করবে। এর মাধ্যমে তারা অর্থনীতিতে ভারসাম্য বজায় রাখতে চায় এবং সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে অত্যাবশ্যকীয় সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতাও নিশ্চিত করতে চায়।
এই পরিস্থিতি থেকে প্রমাণিত হচ্ছে যে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বর্তমানে একটি সমন্বিত নীতি গ্রহণ করছে, যেখানে তারা ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকটের গভীরতা বুঝে ধীরে ধীরে এবং সঠিক সময়ে সহায়তা প্রদান করবে। তাদের লক্ষ্য হলো সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে পুনরুদ্ধার করতে এবং একইসাথে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করা।