রয়টার্সকে সাক্ষাৎকার: ‘যাই ঘটুক’, অন্তর্বর্তী সরকারকে পূর্ণ সমর্থনের অঙ্গীকার সেনাপ্রধানের

- Update Time : ১১:১০:১৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / ৮৭ Time View

রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, ‘যাই ঘটুক না কেন,’ তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি তাঁর পূর্ণ সমর্থন অব্যাহত রাখবেন। ৫ আগস্ট ছাত্র ও জনসাধারণের তীব্র বিক্ষোভের পর শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারিত হন এবং সামরিক হেলিকপ্টারে করে ভারত পালিয়ে যান, যেখানে তিনি এখনও অবস্থান করছেন। হাসিনার দেশত্যাগের পর নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়, যারা ইতোমধ্যেই দেশের প্রধান খাতে সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শেখ হাসিনার পতনের পর ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেওয়া প্রধান প্রধান সংস্কারগুলো সম্পন্ন করতে সাহায্য করার জন্য বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ‘যাই হোক না কেন’ তাদের সমর্থন করার অঙ্গীকার করেছেন, যাতে আগামী ১৮ মাসের মধ্যে দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। রয়টার্স জানায়, গত আগস্ট মাসের শুরুর দিকে জেনারেল ওয়াকার ও তার সেনাবাহিনী ছাত্রদের নেতৃত্বাধীন হাসিনা-বিরোধী বিক্ষোভে পাশে দাঁড়ায়, যা হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটায় এবং তাকে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে।
সোমবার রাজধানী ঢাকায় রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জানান, নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি তার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। তিনি বলেন, “আমি তার (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) পাশে থাকব, যাই হোক না কেন, যাতে তিনি তার মিশন সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারেন।”
জেনারেল ওয়াকার, যিনি শেখ হাসিনার পদত্যাগের কয়েক সপ্তাহ আগে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন, আরও উল্লেখ করেন যে সংস্কার শেষে গণতন্ত্রে উত্তরণ এক বছরের মধ্যে বা দেড় বছরের মধ্যে হওয়া উচিত। তবে তিনি এই সময়ে ধৈর্যের গুরুত্বের ওপর বিশেষভাবে জোর দেন।
রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, “আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, আমি বলব—এই সময়সীমার মধ্যেই আমাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করা উচিত।” তিনি আরও জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার মধ্যে প্রতি সপ্তাহে বৈঠক হয়, এবং তাদের মধ্যে খুবই ভালো সম্পর্ক রয়েছে। সেনাপ্রধান বলেন, “দেশকে স্থিতিশীল করতে সরকারের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। আমি নিশ্চিত, যদি আমরা একসঙ্গে কাজ করি, তাহলে আমাদের ব্যর্থ হওয়ার কোনো কারণ নেই।”
তিনি আরও বলেন, “আমি এমন কিছু করব না যা আমার সংস্থার ক্ষতি করবে। আমি একজন পেশাদার সৈনিক, এবং আমি আমার সেনাবাহিনীকে পেশাদার রাখতে চাই।”
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান আরও বলেন, কোনো সেনাবাহিনীর সদস্য দোষী সাব্যস্ত হলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি উল্লেখ করেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সরাসরি নিয়ন্ত্রিত সংস্থাগুলোতে কাজ করার সময় কিছু সামরিক কর্মকর্তা অন্যায় কাজে জড়িত থাকতে পারেন।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দীর্ঘ মেয়াদে জেনারেল ওয়াকার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে দূরে রাখতে চান। বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ১ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি সৈন্য রয়েছে, এবং জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ অন্যতম প্রধান সেনা প্রেরণকারী দেশ হিসেবে ভূমিকা পালন করছে।
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, “এটি কেবল তখনই সম্ভব, যখন রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার কিছুটা ভারসাম্য থাকে, যেখানে সশস্ত্র বাহিনীকে সরাসরি রাষ্ট্রপতির অধীনে রাখা যায়।” তিনি আরও বলেন, সামগ্রিকভাবে সামরিক বাহিনীকে কখনোই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা উচিত নয়। একজন সৈনিকের রাজনীতিতে লিপ্ত হওয়া উচিত নয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, সেনাবাহিনীকে সর্বদা পেশাদার এবং নিরপেক্ষ থাকতে হবে।
Please Share This Post in Your Social Media

রয়টার্সকে সাক্ষাৎকার: ‘যাই ঘটুক’, অন্তর্বর্তী সরকারকে পূর্ণ সমর্থনের অঙ্গীকার সেনাপ্রধানের


রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, ‘যাই ঘটুক না কেন,’ তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি তাঁর পূর্ণ সমর্থন অব্যাহত রাখবেন। ৫ আগস্ট ছাত্র ও জনসাধারণের তীব্র বিক্ষোভের পর শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারিত হন এবং সামরিক হেলিকপ্টারে করে ভারত পালিয়ে যান, যেখানে তিনি এখনও অবস্থান করছেন। হাসিনার দেশত্যাগের পর নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়, যারা ইতোমধ্যেই দেশের প্রধান খাতে সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শেখ হাসিনার পতনের পর ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেওয়া প্রধান প্রধান সংস্কারগুলো সম্পন্ন করতে সাহায্য করার জন্য বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ‘যাই হোক না কেন’ তাদের সমর্থন করার অঙ্গীকার করেছেন, যাতে আগামী ১৮ মাসের মধ্যে দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। রয়টার্স জানায়, গত আগস্ট মাসের শুরুর দিকে জেনারেল ওয়াকার ও তার সেনাবাহিনী ছাত্রদের নেতৃত্বাধীন হাসিনা-বিরোধী বিক্ষোভে পাশে দাঁড়ায়, যা হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটায় এবং তাকে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে।
সোমবার রাজধানী ঢাকায় রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জানান, নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি তার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। তিনি বলেন, “আমি তার (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) পাশে থাকব, যাই হোক না কেন, যাতে তিনি তার মিশন সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারেন।”
জেনারেল ওয়াকার, যিনি শেখ হাসিনার পদত্যাগের কয়েক সপ্তাহ আগে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন, আরও উল্লেখ করেন যে সংস্কার শেষে গণতন্ত্রে উত্তরণ এক বছরের মধ্যে বা দেড় বছরের মধ্যে হওয়া উচিত। তবে তিনি এই সময়ে ধৈর্যের গুরুত্বের ওপর বিশেষভাবে জোর দেন।
রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, “আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, আমি বলব—এই সময়সীমার মধ্যেই আমাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করা উচিত।” তিনি আরও জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার মধ্যে প্রতি সপ্তাহে বৈঠক হয়, এবং তাদের মধ্যে খুবই ভালো সম্পর্ক রয়েছে। সেনাপ্রধান বলেন, “দেশকে স্থিতিশীল করতে সরকারের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। আমি নিশ্চিত, যদি আমরা একসঙ্গে কাজ করি, তাহলে আমাদের ব্যর্থ হওয়ার কোনো কারণ নেই।”
তিনি আরও বলেন, “আমি এমন কিছু করব না যা আমার সংস্থার ক্ষতি করবে। আমি একজন পেশাদার সৈনিক, এবং আমি আমার সেনাবাহিনীকে পেশাদার রাখতে চাই।”
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান আরও বলেন, কোনো সেনাবাহিনীর সদস্য দোষী সাব্যস্ত হলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি উল্লেখ করেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সরাসরি নিয়ন্ত্রিত সংস্থাগুলোতে কাজ করার সময় কিছু সামরিক কর্মকর্তা অন্যায় কাজে জড়িত থাকতে পারেন।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দীর্ঘ মেয়াদে জেনারেল ওয়াকার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে দূরে রাখতে চান। বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ১ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি সৈন্য রয়েছে, এবং জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ অন্যতম প্রধান সেনা প্রেরণকারী দেশ হিসেবে ভূমিকা পালন করছে।
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, “এটি কেবল তখনই সম্ভব, যখন রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার কিছুটা ভারসাম্য থাকে, যেখানে সশস্ত্র বাহিনীকে সরাসরি রাষ্ট্রপতির অধীনে রাখা যায়।” তিনি আরও বলেন, সামগ্রিকভাবে সামরিক বাহিনীকে কখনোই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা উচিত নয়। একজন সৈনিকের রাজনীতিতে লিপ্ত হওয়া উচিত নয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, সেনাবাহিনীকে সর্বদা পেশাদার এবং নিরপেক্ষ থাকতে হবে।