শহরের আলোর কারণে বাড়তে পারে আলঝেইমারের ঝুঁকি

- Update Time : ১২:১২:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / ৮৫ Time View

বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় গানের কথা মনে পড়ে—”ঢাকা শহর আইসা আমার আশা ফুরাইছে/ লাল-লাল, নীল-নীল বাতি দেইখা নয়ন জুড়াইছে।” শহরের ঝলমলে বাতির এই সৌন্দর্যের পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের রাশ ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের গবেষণায় উঠে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য—শহরের আলো বিশেষ করে রাতের আলোকদূষণ আলঝেইমার রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
গবেষণার মূল বিষয়বস্তু
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৮টি অঙ্গরাজ্যের রাতের আলোর পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে গবেষকেরা জানিয়েছেন, শহরের রাস্তাগুলোতে ব্যবহৃত নিয়ন আলোসহ অন্যান্য কৃত্রিম আলোর কারণে আলঝেইমারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যেতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, বিশেষ করে ৬৫ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে এই ঝুঁকি বেশি। কারণ, এ বয়সীদের মস্তিষ্ক রাতের আলোর প্রতি বিশেষভাবে সংবেদনশীল।
আলঝেইমার রোগ ও আলোকদূষণের সম্পর্ক
আলঝেইমার হলো মস্তিষ্কের একটি ক্ষয়জনিত রোগ, যা স্মৃতিশক্তি ও সাধারণ কর্মক্ষমতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। স্মৃতির হ্রাস পাওয়া ছাড়াও রোগী প্রায়ই বিভ্রান্ত বোধ করে এবং দৈনন্দিন কাজ করতে অসুবিধা হয়। গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, উচ্চ রক্তচাপ ও স্থূলত্বও আলঝেইমারের ঝুঁকি বাড়ায়। তবে নতুন এই গবেষণায় আলো যোগ হয়েছে আরও এক নতুন ঝুঁকি হিসেবে।
বিশেষ করে ঘরের বাইরের নিয়ন বাতি, স্ট্রিট লাইট এবং অন্যান্য কৃত্রিম আলো আলঝেইমারের বিস্তারে ভূমিকা রাখছে। গবেষকেরা শহরবাসীর জীবনের নানা দিক পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পেয়েছেন, শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে যারা নিয়মিতভাবে বেশি আলোর সংস্পর্শে থাকেন, তাদের মধ্যে আলঝেইমারের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি।
কেন অল্পবয়সীরা বেশি ঝুঁকিতে?
গবেষণায় বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, অল্পবয়সী ব্যক্তিরা শহরের কৃত্রিম আলো এবং আলোকদূষণের প্রতি বেশি সংবেদনশীল। বিশেষজ্ঞদের মতে, তাদের মস্তিষ্কের আলোর সংবেদনশীলতা বৃদ্ধির ফলে রাতে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিশ্রাম প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, যা স্মৃতিশক্তির ওপর দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। এ কারণেই অল্পবয়সীরা বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।
সচেতনতা ও প্রতিরোধ
রাশ ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী রবিন ভয়গট-জুওয়ালা বলেন, “রাতের আলোকদূষণ আলঝেইমার রোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকির কারণ হতে পারে।” তিনি আরও বলেন, শহরের মানুষের জীবনধারার পরিবর্তন করা অত্যন্ত জরুরি। রাতে কম আলোতে ঘুমানো এবং কৃত্রিম আলোর ব্যবহারে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে **ফ্রন্টিয়ার্স ইন নিউরোসায়েন্স** জার্নালে, যেখানে বিজ্ঞানীরা শহরের ঝলমলে আলোর সাথে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত নানা প্রভাব নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।
করণীয় কী?
শহরের বাসিন্দাদের জন্য বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন, বিশেষত যারা নিয়মিতভাবে রাতের বেলায় ঘরের বাইরের আলোতে থাকেন। আলঝেইমারের মতো মস্তিষ্কের রোগ প্রতিরোধে শহরের আলো কমানো, ঘুমের সময় সঠিক পরিবেশ বজায় রাখা, এবং ব্যক্তিগত সচেতনতা বৃদ্ধি করা গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া, রাতে অন্ধকারে বা ন্যূনতম আলোতে ঘুমানোর অভ্যাস করা উচিত, যাতে মস্তিষ্ক পর্যাপ্ত বিশ্রাম পায় এবং অপ্রয়োজনীয় আলোর প্রভাব থেকে রক্ষা পায়।
এভাবেই শহরের আলো শুধু সৌন্দর্যের প্রতীক নয়, বরং তা স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপও হতে পারে, যদি এর ব্যবহারে যথেষ্ট সতর্কতা না অবলম্বন করা হয়।
Please Share This Post in Your Social Media

শহরের আলোর কারণে বাড়তে পারে আলঝেইমারের ঝুঁকি


বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় গানের কথা মনে পড়ে—”ঢাকা শহর আইসা আমার আশা ফুরাইছে/ লাল-লাল, নীল-নীল বাতি দেইখা নয়ন জুড়াইছে।” শহরের ঝলমলে বাতির এই সৌন্দর্যের পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের রাশ ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের গবেষণায় উঠে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য—শহরের আলো বিশেষ করে রাতের আলোকদূষণ আলঝেইমার রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
গবেষণার মূল বিষয়বস্তু
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৮টি অঙ্গরাজ্যের রাতের আলোর পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে গবেষকেরা জানিয়েছেন, শহরের রাস্তাগুলোতে ব্যবহৃত নিয়ন আলোসহ অন্যান্য কৃত্রিম আলোর কারণে আলঝেইমারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যেতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, বিশেষ করে ৬৫ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে এই ঝুঁকি বেশি। কারণ, এ বয়সীদের মস্তিষ্ক রাতের আলোর প্রতি বিশেষভাবে সংবেদনশীল।
আলঝেইমার রোগ ও আলোকদূষণের সম্পর্ক
আলঝেইমার হলো মস্তিষ্কের একটি ক্ষয়জনিত রোগ, যা স্মৃতিশক্তি ও সাধারণ কর্মক্ষমতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। স্মৃতির হ্রাস পাওয়া ছাড়াও রোগী প্রায়ই বিভ্রান্ত বোধ করে এবং দৈনন্দিন কাজ করতে অসুবিধা হয়। গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, উচ্চ রক্তচাপ ও স্থূলত্বও আলঝেইমারের ঝুঁকি বাড়ায়। তবে নতুন এই গবেষণায় আলো যোগ হয়েছে আরও এক নতুন ঝুঁকি হিসেবে।
বিশেষ করে ঘরের বাইরের নিয়ন বাতি, স্ট্রিট লাইট এবং অন্যান্য কৃত্রিম আলো আলঝেইমারের বিস্তারে ভূমিকা রাখছে। গবেষকেরা শহরবাসীর জীবনের নানা দিক পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পেয়েছেন, শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে যারা নিয়মিতভাবে বেশি আলোর সংস্পর্শে থাকেন, তাদের মধ্যে আলঝেইমারের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি।
কেন অল্পবয়সীরা বেশি ঝুঁকিতে?
গবেষণায় বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, অল্পবয়সী ব্যক্তিরা শহরের কৃত্রিম আলো এবং আলোকদূষণের প্রতি বেশি সংবেদনশীল। বিশেষজ্ঞদের মতে, তাদের মস্তিষ্কের আলোর সংবেদনশীলতা বৃদ্ধির ফলে রাতে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিশ্রাম প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, যা স্মৃতিশক্তির ওপর দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। এ কারণেই অল্পবয়সীরা বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।
সচেতনতা ও প্রতিরোধ
রাশ ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী রবিন ভয়গট-জুওয়ালা বলেন, “রাতের আলোকদূষণ আলঝেইমার রোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকির কারণ হতে পারে।” তিনি আরও বলেন, শহরের মানুষের জীবনধারার পরিবর্তন করা অত্যন্ত জরুরি। রাতে কম আলোতে ঘুমানো এবং কৃত্রিম আলোর ব্যবহারে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে **ফ্রন্টিয়ার্স ইন নিউরোসায়েন্স** জার্নালে, যেখানে বিজ্ঞানীরা শহরের ঝলমলে আলোর সাথে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত নানা প্রভাব নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।
করণীয় কী?
শহরের বাসিন্দাদের জন্য বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন, বিশেষত যারা নিয়মিতভাবে রাতের বেলায় ঘরের বাইরের আলোতে থাকেন। আলঝেইমারের মতো মস্তিষ্কের রোগ প্রতিরোধে শহরের আলো কমানো, ঘুমের সময় সঠিক পরিবেশ বজায় রাখা, এবং ব্যক্তিগত সচেতনতা বৃদ্ধি করা গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া, রাতে অন্ধকারে বা ন্যূনতম আলোতে ঘুমানোর অভ্যাস করা উচিত, যাতে মস্তিষ্ক পর্যাপ্ত বিশ্রাম পায় এবং অপ্রয়োজনীয় আলোর প্রভাব থেকে রক্ষা পায়।
এভাবেই শহরের আলো শুধু সৌন্দর্যের প্রতীক নয়, বরং তা স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপও হতে পারে, যদি এর ব্যবহারে যথেষ্ট সতর্কতা না অবলম্বন করা হয়।