সময়: বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থনৈতিক সংলাপের পরিকল্পনা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ০৫:৪১:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ১০১ Time View

DR YUNUS NEW

ড. ইউনূসের সঙ্গে অর্থনৈতিক সংলাপের পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের

 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে অর্থনৈতিক সংলাপ শুরু করার পরিকল্পনা করেছে, যাতে নেতৃত্বে থাকবেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার লক্ষ্যে এই সংলাপ আগামী সপ্তাহেই শুরু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস তাদের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে, বাংলাদেশের আর্থিক খাত এবং মুদ্রানীতি বিষয়ে এই উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা হবে, যা দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক পরিকল্পনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম প্রধান পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে পরিচিত। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বজায় রাখতে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজনীয়। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই সংলাপের মাধ্যমে বাংলাদেশকে সহায়তা করার একটি কাঠামো তৈরি করতে চায়। এই আলোচনার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে তার আর্থিক খাতের বিভিন্ন দুর্বলতা মোকাবিলায় সহযোগিতা করতে এবং দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ করবে।

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে এই সংলাপ আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ৫ আগস্ট শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতার আন্দোলনের মুখে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকা সরকারের পতন ঘটে। শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং ভারতে পালিয়ে যাওয়ার তিনদিন পর ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এই সরকার এখন দেশের অর্থনৈতিক পুনর্গঠন ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে সাজানোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

আগামী ১৪ এবং ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের মাঝে প্রথমবারের মতো উচ্চ পর্যায়ের এই অর্থনৈতিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এতে অংশ নেবেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার সরকারের অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তারা। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মার্কিন প্রতিনিধি দলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ, পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা থাকবেন। ইউএসএআইডি-এর কর্মকর্তারাও প্রতিনিধি দলের অংশ হিসেবে এই সংলাপে যোগ দেবেন।

এই সংলাপে মূলত বাংলাদেশের আর্থিক ও মুদ্রানীতির পাশাপাশি আর্থিক খাতের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। মার্কিন রাজস্ব ও অর্থ দপ্তরের আন্তর্জাতিক অর্থায়নবিষয়ক সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যান এই সংলাপকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের আর্থিক দুর্বলতাগুলো মোকাবিলা করতে এবং দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করতে সংস্কারমূলক পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি।

নেইম্যান আরও জানান, আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা রয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি জোরদার করতে পারে এবং অর্থনৈতিক খাতের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারে। মার্কিন প্রশাসনের আশা, এই সংলাপের মাধ্যমে বাংলাদেশ আর্থিক খাতে কার্যকর পরিবর্তন আনতে এবং দুর্নীতির মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সক্ষম হবে।

এই সংলাপের সফল বাস্তবায়ন বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার অর্থনৈতিক সহযোগিতার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থনৈতিক সংলাপের পরিকল্পনা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের

Update Time : ০৫:৪১:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
ড. ইউনূসের সঙ্গে অর্থনৈতিক সংলাপের পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের

 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে অর্থনৈতিক সংলাপ শুরু করার পরিকল্পনা করেছে, যাতে নেতৃত্বে থাকবেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার লক্ষ্যে এই সংলাপ আগামী সপ্তাহেই শুরু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস তাদের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে, বাংলাদেশের আর্থিক খাত এবং মুদ্রানীতি বিষয়ে এই উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা হবে, যা দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক পরিকল্পনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম প্রধান পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে পরিচিত। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বজায় রাখতে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজনীয়। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই সংলাপের মাধ্যমে বাংলাদেশকে সহায়তা করার একটি কাঠামো তৈরি করতে চায়। এই আলোচনার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে তার আর্থিক খাতের বিভিন্ন দুর্বলতা মোকাবিলায় সহযোগিতা করতে এবং দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ করবে।

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে এই সংলাপ আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ৫ আগস্ট শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতার আন্দোলনের মুখে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকা সরকারের পতন ঘটে। শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং ভারতে পালিয়ে যাওয়ার তিনদিন পর ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এই সরকার এখন দেশের অর্থনৈতিক পুনর্গঠন ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে সাজানোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

আগামী ১৪ এবং ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের মাঝে প্রথমবারের মতো উচ্চ পর্যায়ের এই অর্থনৈতিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এতে অংশ নেবেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার সরকারের অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তারা। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মার্কিন প্রতিনিধি দলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ, পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা থাকবেন। ইউএসএআইডি-এর কর্মকর্তারাও প্রতিনিধি দলের অংশ হিসেবে এই সংলাপে যোগ দেবেন।

এই সংলাপে মূলত বাংলাদেশের আর্থিক ও মুদ্রানীতির পাশাপাশি আর্থিক খাতের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। মার্কিন রাজস্ব ও অর্থ দপ্তরের আন্তর্জাতিক অর্থায়নবিষয়ক সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যান এই সংলাপকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের আর্থিক দুর্বলতাগুলো মোকাবিলা করতে এবং দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করতে সংস্কারমূলক পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি।

নেইম্যান আরও জানান, আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা রয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি জোরদার করতে পারে এবং অর্থনৈতিক খাতের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারে। মার্কিন প্রশাসনের আশা, এই সংলাপের মাধ্যমে বাংলাদেশ আর্থিক খাতে কার্যকর পরিবর্তন আনতে এবং দুর্নীতির মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সক্ষম হবে।

এই সংলাপের সফল বাস্তবায়ন বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার অর্থনৈতিক সহযোগিতার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।