সময়: বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভারত শেখ হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে অস্বীকৃতি জানাতে পারে-দ্য ডিপ্লোম্যাটের প্রতিবেদন

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ১০:৩৫:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ২৯৩ Time View

HAINA MODI 2024

 

ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগ করে ভারত চলে যান শেখ হাসিনা। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে তিনি সেখানে অবস্থান করছেন। এই গণআন্দোলন মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বিরোধীদের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে সংগঠিত হয়েছে। আন্দোলনের নেতৃস্থানীয়রা দাবি করছেন, শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হোক।

শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের ক্রমবর্ধমান দাবির প্রেক্ষিতে ভারত এখন একটি কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। এই বিষয়টি বাংলাদেশের সাথে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে পরীক্ষার মুখে ফেলতে পারে। ভারতের ওপর চাপ বাড়ছে, এবং প্রশ্ন উঠছে—ভারত কি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আনুষ্ঠানিক অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে পারবে?

সংবাদমাধ্যম দ্য ডিপ্লোম্যাটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তি ২০১৩ সালে স্বাক্ষরিত হয় এবং ২০১৬ সালে এটি সংশোধিত হয়। এই চুক্তির মূল উদ্দেশ্য ছিল দুই দেশের সীমান্তে বিদ্রোহ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার জন্য একটি কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করা। সংশোধিত ধারার অধীনে ভারত চাইলে শেখ হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে অস্বীকৃতি জানাতে পারে।

চুক্তির মূল উদ্দেশ্য ছিল পলাতক এবং অপরাধীদের, বিশেষ করে যারা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ, তাদের প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া সহজতর করা। চুক্তিতে উল্লেখ রয়েছে যে, যদি কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় এবং সেই অভিযোগে এক বছরের বেশি কারাদণ্ড হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে তাকে ফেরত দিতে হবে। চুক্তিতে অপরাধের সহযোগী, সহায়তাকারী এবং প্ররোচনাকারীরাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

এদিকে, বাংলাদেশে হত্যা, গুম এবং গণহত্যার মতো গুরুতর অভিযোগের মুখোমুখি শেখ হাসিনা বর্তমানে একটি অনিশ্চিত অবস্থানে রয়েছেন। এই অভিযোগের প্রকৃতির কারণে ভারতে আশ্রয় চাওয়া তার জন্য চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। তবে, ২০১৬ সালের সংশোধনীর ফলে প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়ায় কিছু পরিবর্তন এসেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, অনুরোধকারী দেশের উপযুক্ত আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার প্রয়োজনীয়তা।

প্রত্যর্পণ চুক্তির ৬ নং অনুচ্ছেদে রাজনৈতিক অপরাধের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। যদি অপরাধটি ‘রাজনৈতিক প্রকৃতির’ বলে বিবেচিত হয়, তাহলে ভারত প্রত্যর্পণ প্রত্যাখ্যান করতে পারে। তবে, এই বিশেষ ছাড়ের ক্ষেত্রে কিছু কঠোর সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। যেমন, হত্যা, সন্ত্রাসবাদ এবং অপহরণের মতো গুরুতর অপরাধগুলো রাজনৈতিক অভিযোগ হিসেবে গণ্য হবে না। এই কারণে, ভারত সম্ভবত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগকে রাজনৈতিক অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করতে পারে না।

চুক্তির আরেক অনুচ্ছেদ ৪-এ বলা হয়েছে, যদি কোনো মামলা ‘অসৎ নিয়তে’ করা হয়, তাহলে প্রত্যর্পণ প্রত্যাখ্যান করা যেতে পারে। ভারত এই ধারাটি ব্যবহার করে দাবি করতে পারে যে হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়নি সৎ নিয়তে, এবং তাই তাকে ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানাতে পারে।

ভারতের আইন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক কূটনীতিকরা বলেছেন, শেখ হাসিনাকে ফেরত না পাঠানোর সিদ্ধান্ত ভারত ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি ঘটাতে পারে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে, আইনি প্রক্রিয়ার চেয়ে জাতীয় স্বার্থ অনেক সময় বেশি গুরুত্ব পায়।

তথ্যসূত্র: দ্য ডিপ্লোম্যাট

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

ভারত শেখ হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে অস্বীকৃতি জানাতে পারে-দ্য ডিপ্লোম্যাটের প্রতিবেদন

Update Time : ১০:৩৫:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

 

ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগ করে ভারত চলে যান শেখ হাসিনা। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে তিনি সেখানে অবস্থান করছেন। এই গণআন্দোলন মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বিরোধীদের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে সংগঠিত হয়েছে। আন্দোলনের নেতৃস্থানীয়রা দাবি করছেন, শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হোক।

শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের ক্রমবর্ধমান দাবির প্রেক্ষিতে ভারত এখন একটি কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। এই বিষয়টি বাংলাদেশের সাথে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে পরীক্ষার মুখে ফেলতে পারে। ভারতের ওপর চাপ বাড়ছে, এবং প্রশ্ন উঠছে—ভারত কি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আনুষ্ঠানিক অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে পারবে?

সংবাদমাধ্যম দ্য ডিপ্লোম্যাটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তি ২০১৩ সালে স্বাক্ষরিত হয় এবং ২০১৬ সালে এটি সংশোধিত হয়। এই চুক্তির মূল উদ্দেশ্য ছিল দুই দেশের সীমান্তে বিদ্রোহ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার জন্য একটি কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করা। সংশোধিত ধারার অধীনে ভারত চাইলে শেখ হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে অস্বীকৃতি জানাতে পারে।

চুক্তির মূল উদ্দেশ্য ছিল পলাতক এবং অপরাধীদের, বিশেষ করে যারা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ, তাদের প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া সহজতর করা। চুক্তিতে উল্লেখ রয়েছে যে, যদি কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় এবং সেই অভিযোগে এক বছরের বেশি কারাদণ্ড হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে তাকে ফেরত দিতে হবে। চুক্তিতে অপরাধের সহযোগী, সহায়তাকারী এবং প্ররোচনাকারীরাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

এদিকে, বাংলাদেশে হত্যা, গুম এবং গণহত্যার মতো গুরুতর অভিযোগের মুখোমুখি শেখ হাসিনা বর্তমানে একটি অনিশ্চিত অবস্থানে রয়েছেন। এই অভিযোগের প্রকৃতির কারণে ভারতে আশ্রয় চাওয়া তার জন্য চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। তবে, ২০১৬ সালের সংশোধনীর ফলে প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়ায় কিছু পরিবর্তন এসেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, অনুরোধকারী দেশের উপযুক্ত আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার প্রয়োজনীয়তা।

প্রত্যর্পণ চুক্তির ৬ নং অনুচ্ছেদে রাজনৈতিক অপরাধের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। যদি অপরাধটি ‘রাজনৈতিক প্রকৃতির’ বলে বিবেচিত হয়, তাহলে ভারত প্রত্যর্পণ প্রত্যাখ্যান করতে পারে। তবে, এই বিশেষ ছাড়ের ক্ষেত্রে কিছু কঠোর সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। যেমন, হত্যা, সন্ত্রাসবাদ এবং অপহরণের মতো গুরুতর অপরাধগুলো রাজনৈতিক অভিযোগ হিসেবে গণ্য হবে না। এই কারণে, ভারত সম্ভবত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগকে রাজনৈতিক অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করতে পারে না।

চুক্তির আরেক অনুচ্ছেদ ৪-এ বলা হয়েছে, যদি কোনো মামলা ‘অসৎ নিয়তে’ করা হয়, তাহলে প্রত্যর্পণ প্রত্যাখ্যান করা যেতে পারে। ভারত এই ধারাটি ব্যবহার করে দাবি করতে পারে যে হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়নি সৎ নিয়তে, এবং তাই তাকে ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানাতে পারে।

ভারতের আইন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক কূটনীতিকরা বলেছেন, শেখ হাসিনাকে ফেরত না পাঠানোর সিদ্ধান্ত ভারত ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি ঘটাতে পারে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে, আইনি প্রক্রিয়ার চেয়ে জাতীয় স্বার্থ অনেক সময় বেশি গুরুত্ব পায়।

তথ্যসূত্র: দ্য ডিপ্লোম্যাট