ড. ইউনূসের সাক্ষাৎকার ভারত ভালোভাবে নেয়নি, বৈঠক অনিশ্চিত

- Update Time : ১০:৫০:১৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / ২৯০ Time View

সম্প্রতি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) দেওয়া এক সাক্ষাৎকার ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ড. ইউনূস সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সীমান্ত হত্যা, তিস্তার পানি বণ্টনসহ ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের নানা স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন, যা ভারতের সরকার ও রাজনৈতিক মহল ভালোভাবে নেয়নি। এর প্রেক্ষিতে ড. ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বিপক্ষীয় বৈঠক এখন অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
সাক্ষাৎকারের প্রতিক্রিয়া ও ভারত সরকারের অসন্তোষ
হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ড. ইউনূসের সাক্ষাৎকারে দেওয়া মন্তব্যগুলির কারণে জাতিসংঘের অধিবেশনের ফাঁকে তার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির বৈঠকটি হতে নাও পারে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই ভারতকে এই বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছিল, কিন্তু ভারতের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো উত্তর আসেনি। বৈঠক আয়োজন নিয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি, তবে ড. ইউনূসের বক্তব্য ভারতে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।
ড. ইউনূসের বক্তব্যের মূল বিষয়বস্তু
ড. ইউনূসের সাক্ষাৎকারের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিশেষ করে শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয় নেওয়া এবং বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের বিভিন্ন দিক। ড. ইউনূস তার বক্তব্যে সমালোচনামূলক দৃষ্টিকোণ থেকে শেখ হাসিনার কর্মকাণ্ডের বিশ্লেষণ করেন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ভারতে বসে যে দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন তা অনুচিত এবং তিনি হাসিনাকে চুপ থাকার আহ্বান জানান। ড. ইউনূস আরও বলেন, শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে সবার সামনে বিচার করা হবে।
এছাড়াও, ড. ইউনূস সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট করেন যে, ভারতের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ ব্যতীত অন্য রাজনৈতিক দলগুলিকে ইসলামিক দল হিসাবে চিহ্নিত করাকে তিনি সঠিক মনে করেন না। তার মতে, এই ধারণাটি ভারতের রাজনীতিতে বাংলাদেশ সম্পর্কিত ভুল বোঝাবুঝির সূচনা করতে পারে।
শেখ হাসিনার দেশত্যাগ ও রাজনৈতিক পটপরিবর্তন
ড. ইউনূসের বক্তব্যটি এমন সময় এসেছে যখন শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশ ত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা দেশত্যাগে বাধ্য হন এবং দিল্লিতে অবস্থান করতে থাকেন। তার দেশত্যাগের তিন দিন পর, অর্থাৎ ৮ আগস্ট, ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেন।
দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ও মোদি-ইউনূস আলোচনা
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ১৬ আগস্ট ড. ইউনূসকে ফোন করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা, বিশেষ করে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। মোদি বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করেন। তবে ড. ইউনূসের সাম্প্রতিক বক্তব্যের প্রেক্ষিতে, জাতিসংঘের অধিবেশনের সময় মোদির সাথে তার বৈঠকটি আদৌ হবে কি না তা এখন যথেষ্ট সন্দেহের মধ্যে রয়েছে।
ভবিষ্যৎ সম্পর্কের সম্ভাবনা
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক সবসময়ই বিভিন্ন ইস্যুতে সংবেদনশীল থেকেছে, বিশেষ করে তিস্তার পানি বণ্টন এবং সীমান্ত হত্যা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিতর্ক বিদ্যমান। ড. ইউনূসের সাম্প্রতিক মন্তব্যগুলো এই সম্পর্কের উপর নতুন চাপ সৃষ্টি করেছে। ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে ইউনূসের বক্তব্য কিভাবে গ্রহণ করা হচ্ছে, এবং এর ফলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক কোন দিকে মোড় নেবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এখন গভীর পর্যবেক্ষণে রয়েছেন।
সাম্প্রতিক এই বিতর্ক জাতিসংঘ অধিবেশনের ফাঁকে মোদি-ইউনূস বৈঠককে কিভাবে প্রভাবিত করে তা সময়ই বলে দেবে।
Please Share This Post in Your Social Media

ড. ইউনূসের সাক্ষাৎকার ভারত ভালোভাবে নেয়নি, বৈঠক অনিশ্চিত


সম্প্রতি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) দেওয়া এক সাক্ষাৎকার ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ড. ইউনূস সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সীমান্ত হত্যা, তিস্তার পানি বণ্টনসহ ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের নানা স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন, যা ভারতের সরকার ও রাজনৈতিক মহল ভালোভাবে নেয়নি। এর প্রেক্ষিতে ড. ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বিপক্ষীয় বৈঠক এখন অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
সাক্ষাৎকারের প্রতিক্রিয়া ও ভারত সরকারের অসন্তোষ
হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ড. ইউনূসের সাক্ষাৎকারে দেওয়া মন্তব্যগুলির কারণে জাতিসংঘের অধিবেশনের ফাঁকে তার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির বৈঠকটি হতে নাও পারে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই ভারতকে এই বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছিল, কিন্তু ভারতের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো উত্তর আসেনি। বৈঠক আয়োজন নিয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি, তবে ড. ইউনূসের বক্তব্য ভারতে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।
ড. ইউনূসের বক্তব্যের মূল বিষয়বস্তু
ড. ইউনূসের সাক্ষাৎকারের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিশেষ করে শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয় নেওয়া এবং বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের বিভিন্ন দিক। ড. ইউনূস তার বক্তব্যে সমালোচনামূলক দৃষ্টিকোণ থেকে শেখ হাসিনার কর্মকাণ্ডের বিশ্লেষণ করেন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ভারতে বসে যে দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন তা অনুচিত এবং তিনি হাসিনাকে চুপ থাকার আহ্বান জানান। ড. ইউনূস আরও বলেন, শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে সবার সামনে বিচার করা হবে।
এছাড়াও, ড. ইউনূস সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট করেন যে, ভারতের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ ব্যতীত অন্য রাজনৈতিক দলগুলিকে ইসলামিক দল হিসাবে চিহ্নিত করাকে তিনি সঠিক মনে করেন না। তার মতে, এই ধারণাটি ভারতের রাজনীতিতে বাংলাদেশ সম্পর্কিত ভুল বোঝাবুঝির সূচনা করতে পারে।
শেখ হাসিনার দেশত্যাগ ও রাজনৈতিক পটপরিবর্তন
ড. ইউনূসের বক্তব্যটি এমন সময় এসেছে যখন শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশ ত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা দেশত্যাগে বাধ্য হন এবং দিল্লিতে অবস্থান করতে থাকেন। তার দেশত্যাগের তিন দিন পর, অর্থাৎ ৮ আগস্ট, ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেন।
দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ও মোদি-ইউনূস আলোচনা
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ১৬ আগস্ট ড. ইউনূসকে ফোন করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা, বিশেষ করে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। মোদি বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করেন। তবে ড. ইউনূসের সাম্প্রতিক বক্তব্যের প্রেক্ষিতে, জাতিসংঘের অধিবেশনের সময় মোদির সাথে তার বৈঠকটি আদৌ হবে কি না তা এখন যথেষ্ট সন্দেহের মধ্যে রয়েছে।
ভবিষ্যৎ সম্পর্কের সম্ভাবনা
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক সবসময়ই বিভিন্ন ইস্যুতে সংবেদনশীল থেকেছে, বিশেষ করে তিস্তার পানি বণ্টন এবং সীমান্ত হত্যা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিতর্ক বিদ্যমান। ড. ইউনূসের সাম্প্রতিক মন্তব্যগুলো এই সম্পর্কের উপর নতুন চাপ সৃষ্টি করেছে। ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে ইউনূসের বক্তব্য কিভাবে গ্রহণ করা হচ্ছে, এবং এর ফলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক কোন দিকে মোড় নেবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এখন গভীর পর্যবেক্ষণে রয়েছেন।
সাম্প্রতিক এই বিতর্ক জাতিসংঘ অধিবেশনের ফাঁকে মোদি-ইউনূস বৈঠককে কিভাবে প্রভাবিত করে তা সময়ই বলে দেবে।