২০২৫ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ: পাসের হার ৬৮.৪৫ শতাংশ, মেয়েদের দাপট সর্বত্র

- Update Time : ০৫:৪৭:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫
- / ১০২ Time View
২০২৫ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে। দুপুর ২টার দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এ বছর পরীক্ষায় পাসের হার ৬৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ, যা গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম। তবে ফলাফলে সবচেয়ে নজরকাড়া দিক হলো—প্রায় সব সূচকেই ছেলেদের ছাড়িয়ে গেছে মেয়েরা।
মোট পরীক্ষার্থী ও পাসের সংখ্যা
চলতি বছর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেয় মোট ১৯ লাখ ৪ হাজার ৮৬ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে পাস করেছে ১৩ লাখ ৩ হাজার ৪২৬ জন। পাসের হার ৬৮.৪৫ শতাংশ হলেও আগের বছরের তুলনায় সামান্য নিম্নমুখী। তবে, এই পরিসংখ্যানে মেয়েদের সাফল্য ছিল লক্ষণীয়।
জিপিএ–৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা
এ বছর মোট জিপিএ-৫ (গ্রেড পয়েন্ট এভারেজ) পেয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩২ জন শিক্ষার্থী। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন। অর্থাৎ, জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা এ বছর ৪৩ হাজার ৯৭ জন কমেছে। ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই হ্রাসের মধ্যেও মেয়েরা নিজেদের আধিপত্য ধরে রেখেছে।
মেয়েদের সাফল্যের পরিসংখ্যান
মেয়েদের পাসের হার এবং জিপিএ-৫ অর্জনের দিক থেকে ছেলেদের চেয়ে অনেক এগিয়ে।
- পাসের হারে মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে ৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
- জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ছাত্রী সংখ্যা ৭৩ হাজার ৬১৬, যা ছেলেদের তুলনায় ৮ হাজার ২০০ জন বেশি।
- ছেলেদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬৫ হাজার ৪১৬ জন।
এই পরিসংখ্যানে বোঝা যায়, শিক্ষাক্ষেত্রে মেয়েদের অগ্রযাত্রা ক্রমাগত শক্তিশালী হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মেয়েদের এই সাফল্যের পেছনে অভিভাবক ও শিক্ষকদের সচেতনতা, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, এবং স্কুলভিত্তিক অনুশীলনের পরিমাণ বাড়ানোর মতো নানা ইতিবাচক দিক ভূমিকা রেখেছে।
শিক্ষা বিশ্লেষকদের প্রতিক্রিয়া
শিক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, মেয়েদের ধারাবাহিক এই সাফল্য দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বে তাদের ভূমিকা বাড়াবে। তবে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়াকে তারা একটি সতর্কবার্তা হিসেবে দেখছেন। তারা মনে করছেন, পাঠ্যপুস্তকের কাঠামো, প্রশ্নপত্রের মান, ও মূল্যায়ন পদ্ধতির আরও উন্নয়ন প্রয়োজন।
সরকার ও শিক্ষা বোর্ডের মন্তব্য
ফলাফল ঘোষণার সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ফলাফলের এই পরিসংখ্যান শিক্ষাব্যবস্থার বাস্তব প্রতিফলন। তারা আরও জানান, আগামী বছর থেকে পাঠ্যসূচি ও পরীক্ষাপদ্ধতিতে কিছু কাঠামোগত পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা ও বিশ্লেষণক্ষমতা আরও বাড়ে।
ফলাফল পাওয়া যাবে যেসব মাধ্যমে
শিক্ষার্থীরা তাদের ফলাফল সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট, নির্ধারিত এসএমএস পদ্ধতি এবং নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান থেকেও জানতে পারছে।
সার্বিকভাবে ২০২৫ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে শিক্ষার মান নিয়ে যেমন কিছু প্রশ্ন উঠে এসেছে, তেমনি মেয়েদের অগ্রযাত্রা দেশব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে। এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হলে ভবিষ্যতে আরও মনোযোগ দিতে হবে পাঠ্যক্রমের আধুনিকায়ন, শিক্ষকের মান উন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীদের মানসিক ও একাডেমিক সহায়তার দিকে।
Please Share This Post in Your Social Media

২০২৫ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ: পাসের হার ৬৮.৪৫ শতাংশ, মেয়েদের দাপট সর্বত্র

২০২৫ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে। দুপুর ২টার দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এ বছর পরীক্ষায় পাসের হার ৬৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ, যা গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম। তবে ফলাফলে সবচেয়ে নজরকাড়া দিক হলো—প্রায় সব সূচকেই ছেলেদের ছাড়িয়ে গেছে মেয়েরা।
মোট পরীক্ষার্থী ও পাসের সংখ্যা
চলতি বছর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেয় মোট ১৯ লাখ ৪ হাজার ৮৬ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে পাস করেছে ১৩ লাখ ৩ হাজার ৪২৬ জন। পাসের হার ৬৮.৪৫ শতাংশ হলেও আগের বছরের তুলনায় সামান্য নিম্নমুখী। তবে, এই পরিসংখ্যানে মেয়েদের সাফল্য ছিল লক্ষণীয়।
জিপিএ–৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা
এ বছর মোট জিপিএ-৫ (গ্রেড পয়েন্ট এভারেজ) পেয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩২ জন শিক্ষার্থী। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন। অর্থাৎ, জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা এ বছর ৪৩ হাজার ৯৭ জন কমেছে। ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই হ্রাসের মধ্যেও মেয়েরা নিজেদের আধিপত্য ধরে রেখেছে।
মেয়েদের সাফল্যের পরিসংখ্যান
মেয়েদের পাসের হার এবং জিপিএ-৫ অর্জনের দিক থেকে ছেলেদের চেয়ে অনেক এগিয়ে।
- পাসের হারে মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে ৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
- জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ছাত্রী সংখ্যা ৭৩ হাজার ৬১৬, যা ছেলেদের তুলনায় ৮ হাজার ২০০ জন বেশি।
- ছেলেদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬৫ হাজার ৪১৬ জন।
এই পরিসংখ্যানে বোঝা যায়, শিক্ষাক্ষেত্রে মেয়েদের অগ্রযাত্রা ক্রমাগত শক্তিশালী হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মেয়েদের এই সাফল্যের পেছনে অভিভাবক ও শিক্ষকদের সচেতনতা, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, এবং স্কুলভিত্তিক অনুশীলনের পরিমাণ বাড়ানোর মতো নানা ইতিবাচক দিক ভূমিকা রেখেছে।
শিক্ষা বিশ্লেষকদের প্রতিক্রিয়া
শিক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, মেয়েদের ধারাবাহিক এই সাফল্য দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বে তাদের ভূমিকা বাড়াবে। তবে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়াকে তারা একটি সতর্কবার্তা হিসেবে দেখছেন। তারা মনে করছেন, পাঠ্যপুস্তকের কাঠামো, প্রশ্নপত্রের মান, ও মূল্যায়ন পদ্ধতির আরও উন্নয়ন প্রয়োজন।
সরকার ও শিক্ষা বোর্ডের মন্তব্য
ফলাফল ঘোষণার সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ফলাফলের এই পরিসংখ্যান শিক্ষাব্যবস্থার বাস্তব প্রতিফলন। তারা আরও জানান, আগামী বছর থেকে পাঠ্যসূচি ও পরীক্ষাপদ্ধতিতে কিছু কাঠামোগত পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা ও বিশ্লেষণক্ষমতা আরও বাড়ে।
ফলাফল পাওয়া যাবে যেসব মাধ্যমে
শিক্ষার্থীরা তাদের ফলাফল সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট, নির্ধারিত এসএমএস পদ্ধতি এবং নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান থেকেও জানতে পারছে।
সার্বিকভাবে ২০২৫ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে শিক্ষার মান নিয়ে যেমন কিছু প্রশ্ন উঠে এসেছে, তেমনি মেয়েদের অগ্রযাত্রা দেশব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে। এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হলে ভবিষ্যতে আরও মনোযোগ দিতে হবে পাঠ্যক্রমের আধুনিকায়ন, শিক্ষকের মান উন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীদের মানসিক ও একাডেমিক সহায়তার দিকে।