১৩টি সেবা পেতে আর লাগবে না আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণ

- Update Time : ০৭:৫৬:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫
- / ১৫২ Time View
২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে নাগরিকদের জন্য বড় ধরনের স্বস্তির ঘোষণা দিয়েছে সরকার। চলতি অর্থবছরের বাজেটে প্রণীত ‘অর্থ অধ্যাদেশ–২০২৫’ অনুযায়ী, এখন থেকে ১৩টি সরকারি ও বেসরকারি সেবা পেতে আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণ দেখাতে হবে না। আগে এসব ক্ষেত্রে রিটার্ন জমা দেওয়ার সনদ বাধ্যতামূলক ছিল।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বলছে, সাধারণ জনগণের হয়রানি কমাতে এবং ডিজিটাল সেবাকে আরও সহজ করতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে যেমন স্বল্প আয়ের মানুষ উপকৃত হবেন, তেমনি অর্থনীতির আনুষ্ঠানিক খাতে অন্তর্ভুক্তিও বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে সংস্থাটি।
নিচে উল্লেখ করা হলো সেই ১৩টি সেবা, যেগুলো নিতে এখন থেকে আয়কর রিটার্নের প্রমাণপত্র লাগবে না:
১. ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কেনা
সঞ্চয়পত্র কিনতে রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা ছিল। এখন থেকে কেউ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কিনলে তাকে আর আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণ দেখাতে হবে না।
২. ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত মেয়াদি আমানত (এফডিআর) খোলা বা বহাল রাখা
এফডিআর বা ফিক্সড ডিপোজিটে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগে রিটার্ন প্রমাণপত্রের প্রয়োজন হবে না। ব্যাংক কর্মকর্তাও আর তা চেয়ে বসবেন না।
৩. যেকোনো ধরনের ক্রেডিট কার্ড নেওয়া ও নবায়ন
আগে ক্রেডিট কার্ড নিতে হলে বাধ্যতামূলকভাবে রিটার্ন দাখিলের সনদ দেখাতে হতো। এখন থেকে সব ধরনের ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ বা নবায়নের ক্ষেত্রে রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রমাণ লাগবে না।
৪. সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা এলাকায় ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ
ব্যবসা বা পেশাগত কাজের জন্য ট্রেড লাইসেন্স নিতে গেলেই রিটার্ন চাওয়া হতো। এখন নতুন ট্রেড লাইসেন্স নিতে গেলে রিটার্ন সনদ লাগবে না।
৫. সমবায় সমিতি নিবন্ধন
সমবায় সমিতি গঠনের জন্য আগেও নানা কাগজপত্রের পাশাপাশি রিটার্ন লাগত। এখন তা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
৬. সাধারণ বিমা কোম্পানির তালিকাভুক্ত সার্ভেয়ার হিসেবে নতুন লাইসেন্স গ্রহণ
এ ধরনের লাইসেন্স নিতে আগেও রিটার্ন সনদ দেখাতে হতো। এখন এই বাধ্যবাধকতা শিথিল করা হয়েছে।
৭. স্বীকৃত পেশাজীবী সংগঠনের সদস্যপদ গ্রহণ
চিকিৎসক, আইনজীবী, প্রকৌশলী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট, অ্যাকচুয়ারি, স্থপতি, সার্ভেয়ারসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনে সদস্যপদ নিতে এখন রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র আর লাগবে না।
৮. পাঁচ লাখ টাকার বেশি পোস্ট অফিস সঞ্চয়ী হিসাব খোলা
ডাকঘরের সঞ্চয়ী হিসাব খোলার ক্ষেত্রেও ৫ লাখ টাকার বেশি আমানতের জন্য রিটার্ন বাধ্যতামূলক ছিল, এখন তা বাতিল করা হয়েছে।
৯. এমপিওভুক্ত দশম গ্রেড বা তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার সরকারি অর্থপ্রাপ্তি
এমপিওভুক্ত শিক্ষক বা কর্মকর্তা যারা দশম গ্রেড বা তদূর্ধ্ব পদে রয়েছেন, তারা রিটার্ন ছাড়াই সরকারি অর্থ নিতে পারবেন।
১০. মোবাইল ব্যাংকিং বা ই–উপায় লেনদেনের মাধ্যমে কমিশন, ফি বা আর্থিক সুবিধা গ্রহণ
নগদ, বিকাশ, রকেট বা অন্য যেকোনো মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (MFS) ব্যবহার করে কমিশন বা ফি নেওয়ার ক্ষেত্রে রিটার্ন সনদ আর বাধ্যতামূলক নয়।
১১. স্ট্যাম্প, কোর্ট ও কার্টিজ পেপারের ভেন্ডর বা দলিল লেখক হিসেবে তালিকাভুক্তি
এই পেশাগুলোর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের তালিকাভুক্তির সময়ও রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র আর লাগবে না।
১২. ত্রিচক্র মোটরযান (অটোরিকশা) নিবন্ধন, মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নবায়ন
অটো রিকশা মালিকদের জন্য নিবন্ধন, মালিকানা হস্তান্তর বা ফিটনেস নবায়নে রিটার্ন জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা বাতিল করা হয়েছে।
১৩. ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ই–কমার্স ব্যবসার জন্য লাইসেন্স গ্রহণ
অনলাইন ব্যবসা করতে গেলে লাইসেন্স নিতে হতো, যার জন্য আগে রিটার্ন প্রয়োজন ছিল। এখন থেকে ই-কমার্স ব্যবসার লাইসেন্সও রিটার্ন ছাড়াই গ্রহণ করা যাবে।
এই সিদ্ধান্ত দেশের সাধারণ ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী ও উদ্যোক্তাদের জন্য স্বস্তির খবর। বিশেষ করে যারা এখনো আয়কর রিটার্নের আওতায় পড়েন না বা রিটার্ন দিতে অভ্যস্ত নন, তাদের জন্য এটি বড় সুবিধা। সরকারের এ উদ্যোগ অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি ও সেবায় জটিলতা কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
Please Share This Post in Your Social Media

১৩টি সেবা পেতে আর লাগবে না আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণ

২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে নাগরিকদের জন্য বড় ধরনের স্বস্তির ঘোষণা দিয়েছে সরকার। চলতি অর্থবছরের বাজেটে প্রণীত ‘অর্থ অধ্যাদেশ–২০২৫’ অনুযায়ী, এখন থেকে ১৩টি সরকারি ও বেসরকারি সেবা পেতে আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণ দেখাতে হবে না। আগে এসব ক্ষেত্রে রিটার্ন জমা দেওয়ার সনদ বাধ্যতামূলক ছিল।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বলছে, সাধারণ জনগণের হয়রানি কমাতে এবং ডিজিটাল সেবাকে আরও সহজ করতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে যেমন স্বল্প আয়ের মানুষ উপকৃত হবেন, তেমনি অর্থনীতির আনুষ্ঠানিক খাতে অন্তর্ভুক্তিও বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে সংস্থাটি।
নিচে উল্লেখ করা হলো সেই ১৩টি সেবা, যেগুলো নিতে এখন থেকে আয়কর রিটার্নের প্রমাণপত্র লাগবে না:
১. ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কেনা
সঞ্চয়পত্র কিনতে রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা ছিল। এখন থেকে কেউ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কিনলে তাকে আর আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণ দেখাতে হবে না।
২. ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত মেয়াদি আমানত (এফডিআর) খোলা বা বহাল রাখা
এফডিআর বা ফিক্সড ডিপোজিটে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগে রিটার্ন প্রমাণপত্রের প্রয়োজন হবে না। ব্যাংক কর্মকর্তাও আর তা চেয়ে বসবেন না।
৩. যেকোনো ধরনের ক্রেডিট কার্ড নেওয়া ও নবায়ন
আগে ক্রেডিট কার্ড নিতে হলে বাধ্যতামূলকভাবে রিটার্ন দাখিলের সনদ দেখাতে হতো। এখন থেকে সব ধরনের ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ বা নবায়নের ক্ষেত্রে রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রমাণ লাগবে না।
৪. সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা এলাকায় ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ
ব্যবসা বা পেশাগত কাজের জন্য ট্রেড লাইসেন্স নিতে গেলেই রিটার্ন চাওয়া হতো। এখন নতুন ট্রেড লাইসেন্স নিতে গেলে রিটার্ন সনদ লাগবে না।
৫. সমবায় সমিতি নিবন্ধন
সমবায় সমিতি গঠনের জন্য আগেও নানা কাগজপত্রের পাশাপাশি রিটার্ন লাগত। এখন তা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
৬. সাধারণ বিমা কোম্পানির তালিকাভুক্ত সার্ভেয়ার হিসেবে নতুন লাইসেন্স গ্রহণ
এ ধরনের লাইসেন্স নিতে আগেও রিটার্ন সনদ দেখাতে হতো। এখন এই বাধ্যবাধকতা শিথিল করা হয়েছে।
৭. স্বীকৃত পেশাজীবী সংগঠনের সদস্যপদ গ্রহণ
চিকিৎসক, আইনজীবী, প্রকৌশলী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট, অ্যাকচুয়ারি, স্থপতি, সার্ভেয়ারসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনে সদস্যপদ নিতে এখন রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র আর লাগবে না।
৮. পাঁচ লাখ টাকার বেশি পোস্ট অফিস সঞ্চয়ী হিসাব খোলা
ডাকঘরের সঞ্চয়ী হিসাব খোলার ক্ষেত্রেও ৫ লাখ টাকার বেশি আমানতের জন্য রিটার্ন বাধ্যতামূলক ছিল, এখন তা বাতিল করা হয়েছে।
৯. এমপিওভুক্ত দশম গ্রেড বা তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার সরকারি অর্থপ্রাপ্তি
এমপিওভুক্ত শিক্ষক বা কর্মকর্তা যারা দশম গ্রেড বা তদূর্ধ্ব পদে রয়েছেন, তারা রিটার্ন ছাড়াই সরকারি অর্থ নিতে পারবেন।
১০. মোবাইল ব্যাংকিং বা ই–উপায় লেনদেনের মাধ্যমে কমিশন, ফি বা আর্থিক সুবিধা গ্রহণ
নগদ, বিকাশ, রকেট বা অন্য যেকোনো মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (MFS) ব্যবহার করে কমিশন বা ফি নেওয়ার ক্ষেত্রে রিটার্ন সনদ আর বাধ্যতামূলক নয়।
১১. স্ট্যাম্প, কোর্ট ও কার্টিজ পেপারের ভেন্ডর বা দলিল লেখক হিসেবে তালিকাভুক্তি
এই পেশাগুলোর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের তালিকাভুক্তির সময়ও রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র আর লাগবে না।
১২. ত্রিচক্র মোটরযান (অটোরিকশা) নিবন্ধন, মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নবায়ন
অটো রিকশা মালিকদের জন্য নিবন্ধন, মালিকানা হস্তান্তর বা ফিটনেস নবায়নে রিটার্ন জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা বাতিল করা হয়েছে।
১৩. ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ই–কমার্স ব্যবসার জন্য লাইসেন্স গ্রহণ
অনলাইন ব্যবসা করতে গেলে লাইসেন্স নিতে হতো, যার জন্য আগে রিটার্ন প্রয়োজন ছিল। এখন থেকে ই-কমার্স ব্যবসার লাইসেন্সও রিটার্ন ছাড়াই গ্রহণ করা যাবে।
এই সিদ্ধান্ত দেশের সাধারণ ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী ও উদ্যোক্তাদের জন্য স্বস্তির খবর। বিশেষ করে যারা এখনো আয়কর রিটার্নের আওতায় পড়েন না বা রিটার্ন দিতে অভ্যস্ত নন, তাদের জন্য এটি বড় সুবিধা। সরকারের এ উদ্যোগ অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি ও সেবায় জটিলতা কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।