মালয়েশিয়ায় ভারতীয় পুরোহিতের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ, সাহসী প্রতিবাদে সরব লিশালিনী কানারান

- Update Time : ০৬:২০:৫১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫
- / ৫৬ Time View
মালয়েশিয়ায় এক ভারতীয় পুরোহিতের বিরুদ্ধে গুরুতর যৌন হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ এনেছেন মিস গ্র্যান্ড মালয়েশিয়া ২০২১ বিজয়িনী ও অভিনেত্রী লিশালিনী কানারান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে তিনি জানান, আশীর্বাদের নাম করে ওই পুরোহিত তার শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেন এবং অশালীন আচরণ করেন।
কী ঘটেছিল সেদিন?
লিশালিনী জানান, ২১ জুন মালয়েশিয়ার সেপাং জেলার মারিয়ামান মন্দিরে এই ঘটনা ঘটে। মন্দিরটি কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছাকাছি এলাকায় অবস্থিত। ওইদিন তিনি একাই মন্দিরে গিয়েছিলেন পূজা দিতে। তার মা তখন ভারতে অবস্থান করছিলেন।
ইনস্টাগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে লিশালিনী লিখেছেন,
“আমি মন্দিরে নিয়মিত যাই না, তাই অনেক রীতি-নীতি জানতাম না। ওই পুরোহিত আমাকে সহায়তা করতেন, তাই আমি কৃতজ্ঞও ছিলাম। কিন্তু সেদিন হঠাৎ তিনি আমাকে বললেন, তার কাছে পবিত্র জল রয়েছে এবং তিনি আমাকে আশীর্বাদ দিয়ে ‘প্রোটেকশন স্ট্রিং’ পরাবেন। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই তিনি আমার ব্লাউজের ভেতর হাত ঢুকিয়ে দেন।”
তিনি আরও বলেন, “আমি এতটাই হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম যে প্রথমে কিছু বলতে পারিনি। তবে পরে নিজেকে সামলে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিই—এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হবো।”
পুলিশের
ঘটনার পরপরই লিশালিনী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিস্তারিত ঘটনা তুলে ধরেন এবং সেপাং জেলার পুলিশ স্টেশনে অভিযোগ দায়ের করেন। সেপাং জেলা পুলিশের প্রধান এ.সি.পি নোরহিজাম বাহামান মালয় মেইলকে বলেন,
“অভিযুক্ত একজন ভারতীয় নাগরিক। মন্দিরের স্থায়ী পুরোহিত বিদেশে অবস্থান করায় তিনি অস্থায়ীভাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন। তার খোঁজে পুলিশের অভিযান চলছে।”
পুলিশ আরও জানায়, ওই পুরোহিত মালয়েশিয়ায় এসেছেন অস্থায়ী পূজার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য। এখন তিনি আত্মগোপনে চলে গেছেন, এবং তার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন ও অশালীন আচরণের ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।
সমাজের প্রতিক্রিয়া
ঘটনার পর মালয়েশিয়া ও ভারতের সমাজে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই লিশালিনীর সাহসের প্রশংসা করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, “ধর্মীয় স্থানেও নারীরা এখন নিরাপদ নয়—এই ঘটনার মাধ্যমে সেটা আবারও প্রমাণিত হলো।”
অন্যরা মন্তব্য করেছেন, “মন্দির, মসজিদ, গির্জা—যে ধর্মস্থানই হোক, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার জন্য নিরাপদ ও পবিত্র পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা জরুরি।”
সাহসিকতার প্রতীক হয়ে উঠছেন লিশালিনী
নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া এই ভয়ংকর অভিজ্ঞতা সামাজিক মাধ্যমে তুলে ধরে লিশালিনী শুধু একজন ভুক্তভোগী নন, বরং হয়ে উঠেছেন নারী অধিকার ও আত্মসম্মানের প্রতীক। তার পোস্ট ভাইরাল হওয়ার পর অনেক নারীরা উৎসাহিত হচ্ছেন নিজেদের অভিজ্ঞতা সামনে আনতে।
এই ঘটনা ধর্মীয় পরিবেশে নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। একজন পুরোহিতের মতো পবিত্র দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি যদি তার অবস্থানকে এমনভাবে ব্যবহার করেন, তা সমাজের জন্য একটি ভয়ংকর বার্তা বহন করে। তবে লিশালিনীর সাহসিকতা ও আইনি পদক্ষেপ এই বার্তা দিচ্ছে—নারীদের চুপ থাকলে চলবে না, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
এখন দেখার বিষয়—অভিযুক্ত পুরোহিতকে কত দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হয় এবং এই ঘটনার মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আসে কি না।
Please Share This Post in Your Social Media

মালয়েশিয়ায় ভারতীয় পুরোহিতের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ, সাহসী প্রতিবাদে সরব লিশালিনী কানারান

মালয়েশিয়ায় এক ভারতীয় পুরোহিতের বিরুদ্ধে গুরুতর যৌন হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ এনেছেন মিস গ্র্যান্ড মালয়েশিয়া ২০২১ বিজয়িনী ও অভিনেত্রী লিশালিনী কানারান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে তিনি জানান, আশীর্বাদের নাম করে ওই পুরোহিত তার শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেন এবং অশালীন আচরণ করেন।
কী ঘটেছিল সেদিন?
লিশালিনী জানান, ২১ জুন মালয়েশিয়ার সেপাং জেলার মারিয়ামান মন্দিরে এই ঘটনা ঘটে। মন্দিরটি কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছাকাছি এলাকায় অবস্থিত। ওইদিন তিনি একাই মন্দিরে গিয়েছিলেন পূজা দিতে। তার মা তখন ভারতে অবস্থান করছিলেন।
ইনস্টাগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে লিশালিনী লিখেছেন,
“আমি মন্দিরে নিয়মিত যাই না, তাই অনেক রীতি-নীতি জানতাম না। ওই পুরোহিত আমাকে সহায়তা করতেন, তাই আমি কৃতজ্ঞও ছিলাম। কিন্তু সেদিন হঠাৎ তিনি আমাকে বললেন, তার কাছে পবিত্র জল রয়েছে এবং তিনি আমাকে আশীর্বাদ দিয়ে ‘প্রোটেকশন স্ট্রিং’ পরাবেন। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই তিনি আমার ব্লাউজের ভেতর হাত ঢুকিয়ে দেন।”
তিনি আরও বলেন, “আমি এতটাই হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম যে প্রথমে কিছু বলতে পারিনি। তবে পরে নিজেকে সামলে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিই—এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হবো।”
পুলিশের
ঘটনার পরপরই লিশালিনী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিস্তারিত ঘটনা তুলে ধরেন এবং সেপাং জেলার পুলিশ স্টেশনে অভিযোগ দায়ের করেন। সেপাং জেলা পুলিশের প্রধান এ.সি.পি নোরহিজাম বাহামান মালয় মেইলকে বলেন,
“অভিযুক্ত একজন ভারতীয় নাগরিক। মন্দিরের স্থায়ী পুরোহিত বিদেশে অবস্থান করায় তিনি অস্থায়ীভাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন। তার খোঁজে পুলিশের অভিযান চলছে।”
পুলিশ আরও জানায়, ওই পুরোহিত মালয়েশিয়ায় এসেছেন অস্থায়ী পূজার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য। এখন তিনি আত্মগোপনে চলে গেছেন, এবং তার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন ও অশালীন আচরণের ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।
সমাজের প্রতিক্রিয়া
ঘটনার পর মালয়েশিয়া ও ভারতের সমাজে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই লিশালিনীর সাহসের প্রশংসা করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, “ধর্মীয় স্থানেও নারীরা এখন নিরাপদ নয়—এই ঘটনার মাধ্যমে সেটা আবারও প্রমাণিত হলো।”
অন্যরা মন্তব্য করেছেন, “মন্দির, মসজিদ, গির্জা—যে ধর্মস্থানই হোক, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার জন্য নিরাপদ ও পবিত্র পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা জরুরি।”
সাহসিকতার প্রতীক হয়ে উঠছেন লিশালিনী
নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া এই ভয়ংকর অভিজ্ঞতা সামাজিক মাধ্যমে তুলে ধরে লিশালিনী শুধু একজন ভুক্তভোগী নন, বরং হয়ে উঠেছেন নারী অধিকার ও আত্মসম্মানের প্রতীক। তার পোস্ট ভাইরাল হওয়ার পর অনেক নারীরা উৎসাহিত হচ্ছেন নিজেদের অভিজ্ঞতা সামনে আনতে।
এই ঘটনা ধর্মীয় পরিবেশে নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। একজন পুরোহিতের মতো পবিত্র দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি যদি তার অবস্থানকে এমনভাবে ব্যবহার করেন, তা সমাজের জন্য একটি ভয়ংকর বার্তা বহন করে। তবে লিশালিনীর সাহসিকতা ও আইনি পদক্ষেপ এই বার্তা দিচ্ছে—নারীদের চুপ থাকলে চলবে না, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
এখন দেখার বিষয়—অভিযুক্ত পুরোহিতকে কত দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হয় এবং এই ঘটনার মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আসে কি না।