সময়: শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

‘নিঃশর্ত ক্ষমা’ চেয়ে প্রধানের কাছে গেলেন এনবিআর কর্মকর্তারা

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ১২:৫০:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫
  • / ১৩১ Time View

d8c608f19d1ce960474636293ac991e1 686f4f11cfa18

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

d8c608f19d1ce960474636293ac991e1 686f4f11cfa18

 

দীর্ঘ প্রায় দুই মাস ধরে চলা এনবিআর সংস্কার আন্দোলনের অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ‘নিঃশর্ত ক্ষমা’ চেয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আন্দোলনরত কর্মকর্তারা। তারা সরাসরি এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং ভবিষ্যতে রাষ্ট্রীয় স্বার্থে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন।

বুধবার (৯ জুলাই) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত এনবিআরের রাজস্ব ভবনে দুই দফায় প্রায় ১০০ জন কর্মকর্তা চেয়ারম্যানের দফতরে উপস্থিত হয়ে তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। প্রথম দফায় সকাল ৯টার দিকে আয়কর ক্যাডারের প্রায় ৫০ জন কর্মকর্তা দেখা করেন, এরপর সোয়া ৯টার দিকে কাস্টমস ও ভ্যাট ক্যাডারের আরও প্রায় ৫০ জন কর্মকর্তা একইভাবে দেখা করেন।

জানা গেছে, এরা সবাই বিসিএস (আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট) ক্যাডারের কর্মকর্তা এবং ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এই প্ল্যাটফর্মের ব্যানারেই বিগত দুই মাসজুড়ে এনবিআরের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চেয়ারম্যানের পদত্যাগসহ ব্যাপক কাঠামোগত সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন।

আন্দোলনের দায় স্বীকার দুঃখ প্রকাশ

সাক্ষাতে কর্মকর্তারা বলেন, চলমান আন্দোলনের ফলে রাজস্ব আদায়ে যে ব্যাঘাত ঘটেছে এবং দেশের অর্থনীতিতে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, তার জন্য তারা অনুতপ্ত ও দুঃখিত। তারা ভবিষ্যতে সরকারের নির্দেশনা মেনে চলবেন এবং ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করবেন বলে অঙ্গীকার করেন।

তারা আরও বলেন, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে এনবিআরের ভাবমূর্তি রক্ষা করা সকল কর্মকর্তার দায়িত্ব। অতীতের ভুল শুধরে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা আবারো রাজস্ব আদায়ের কাজে সক্রিয় হতে চান।

চেয়ারম্যানের প্রতিক্রিয়া

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) এক প্রতিক্রিয়ায় এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেছিলেন, “যারা সত্যিকারের অনুশোচনায় ক্ষমা চায়, আমি তাদের ক্ষমা করেছি। তবে যারা রাষ্ট্রবিরোধী আচরণ করেছেন, তাদের ক্ষমা করবে কিনা, সেটা রাষ্ট্রের বিষয়।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা সবাই যদি দেশকে ভালোবাসি, তবে রাজস্ব আদায়কে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। দেশের উন্নয়নের অক্সিজেন হলো রাজস্ব। এনবিআরের প্রতিটি কর্মকর্তার উচিত দেশের অর্থনীতিকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার জন্য নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা।”

আন্দোলনের ইতি এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

গত ২৯ জুন ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’ আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের “কমপ্লিট শাটডাউন” এবং “মার্চ টু এনবিআর” কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয়। এর পরদিন, ৩০ জুন, এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান নিজের দফতরে ফিরে আসেন এবং কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, “যা কিছু হয়েছে তা ভুলে গিয়ে এখন রাষ্ট্রীয় স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এনবিআরের ভবিষ্যৎ যেন আর কখনো এমন সংকটে না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে হবে।”

এই ঘটনায় এনবিআরের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা, নেতৃত্ব ও অংশগ্রহণের সংস্কৃতিতে একটি বড় প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হলেও, নিঃশর্ত ক্ষমা ও সমঝোতার মধ্য দিয়ে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এনবিআর ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এখন রাজস্ব আদায়ের কাজে মনোনিবেশ করে এই অস্থিরতা কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রস্তুত বলেই ধারণা করা হচ্ছে। সংস্থাটির শীর্ষ কর্মকর্তা ও মাঠ পর্যায়ের কর্মচারীদের মধ্যে নতুন করে ঐক্য গড়ে উঠবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন অনেকেই।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

Please Share This Post in Your Social Media

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

‘নিঃশর্ত ক্ষমা’ চেয়ে প্রধানের কাছে গেলেন এনবিআর কর্মকর্তারা

Update Time : ১২:৫০:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫
শেয়ার করুনঃ
Pin Share

d8c608f19d1ce960474636293ac991e1 686f4f11cfa18

 

দীর্ঘ প্রায় দুই মাস ধরে চলা এনবিআর সংস্কার আন্দোলনের অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ‘নিঃশর্ত ক্ষমা’ চেয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আন্দোলনরত কর্মকর্তারা। তারা সরাসরি এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং ভবিষ্যতে রাষ্ট্রীয় স্বার্থে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন।

বুধবার (৯ জুলাই) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত এনবিআরের রাজস্ব ভবনে দুই দফায় প্রায় ১০০ জন কর্মকর্তা চেয়ারম্যানের দফতরে উপস্থিত হয়ে তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। প্রথম দফায় সকাল ৯টার দিকে আয়কর ক্যাডারের প্রায় ৫০ জন কর্মকর্তা দেখা করেন, এরপর সোয়া ৯টার দিকে কাস্টমস ও ভ্যাট ক্যাডারের আরও প্রায় ৫০ জন কর্মকর্তা একইভাবে দেখা করেন।

জানা গেছে, এরা সবাই বিসিএস (আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট) ক্যাডারের কর্মকর্তা এবং ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এই প্ল্যাটফর্মের ব্যানারেই বিগত দুই মাসজুড়ে এনবিআরের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চেয়ারম্যানের পদত্যাগসহ ব্যাপক কাঠামোগত সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন।

আন্দোলনের দায় স্বীকার দুঃখ প্রকাশ

সাক্ষাতে কর্মকর্তারা বলেন, চলমান আন্দোলনের ফলে রাজস্ব আদায়ে যে ব্যাঘাত ঘটেছে এবং দেশের অর্থনীতিতে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, তার জন্য তারা অনুতপ্ত ও দুঃখিত। তারা ভবিষ্যতে সরকারের নির্দেশনা মেনে চলবেন এবং ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করবেন বলে অঙ্গীকার করেন।

তারা আরও বলেন, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে এনবিআরের ভাবমূর্তি রক্ষা করা সকল কর্মকর্তার দায়িত্ব। অতীতের ভুল শুধরে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা আবারো রাজস্ব আদায়ের কাজে সক্রিয় হতে চান।

চেয়ারম্যানের প্রতিক্রিয়া

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) এক প্রতিক্রিয়ায় এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেছিলেন, “যারা সত্যিকারের অনুশোচনায় ক্ষমা চায়, আমি তাদের ক্ষমা করেছি। তবে যারা রাষ্ট্রবিরোধী আচরণ করেছেন, তাদের ক্ষমা করবে কিনা, সেটা রাষ্ট্রের বিষয়।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা সবাই যদি দেশকে ভালোবাসি, তবে রাজস্ব আদায়কে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। দেশের উন্নয়নের অক্সিজেন হলো রাজস্ব। এনবিআরের প্রতিটি কর্মকর্তার উচিত দেশের অর্থনীতিকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার জন্য নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা।”

আন্দোলনের ইতি এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

গত ২৯ জুন ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’ আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের “কমপ্লিট শাটডাউন” এবং “মার্চ টু এনবিআর” কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয়। এর পরদিন, ৩০ জুন, এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান নিজের দফতরে ফিরে আসেন এবং কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, “যা কিছু হয়েছে তা ভুলে গিয়ে এখন রাষ্ট্রীয় স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এনবিআরের ভবিষ্যৎ যেন আর কখনো এমন সংকটে না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে হবে।”

এই ঘটনায় এনবিআরের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা, নেতৃত্ব ও অংশগ্রহণের সংস্কৃতিতে একটি বড় প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হলেও, নিঃশর্ত ক্ষমা ও সমঝোতার মধ্য দিয়ে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এনবিআর ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এখন রাজস্ব আদায়ের কাজে মনোনিবেশ করে এই অস্থিরতা কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রস্তুত বলেই ধারণা করা হচ্ছে। সংস্থাটির শীর্ষ কর্মকর্তা ও মাঠ পর্যায়ের কর্মচারীদের মধ্যে নতুন করে ঐক্য গড়ে উঠবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন অনেকেই।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share